পেনড্রাইভটা কম্পিউটারে ওপেন করতেই দেখলাম হাত, পা বাধা একটা বাচ্চা মেয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায়।ভাইয়া বাচ্চা মেয়েটার মাথায় বন্দুক তাক করে ধরে আছে।বাচ্চা মেয়েটার চোখ বাঁধা,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।ভাইয়ার মধ্যে কোনো মমতা লক্ষ্য করছি না।ভাইয়াকে এরুপ হিংস্র রুপে কখনো দেখিনি আমি।ভিডিওর সাথে সাউন্ড কানে ভেসে এলো
- যা বলছি সেটা কর,নইলে তোর মেয়েকে আজীবন ঘুম পাড়াতে দুই বার ভাববো না।
ভাইয়া এসব কি বলছে?যে ভাইয়া একটা তেলাপোকা দেখলে ভয়ে আড়াল হয়ে থাকে,বাড়িতে থাকা বিড়ালগুলিকে নিজে না খেয়ে সেই ভাত ওদের খাওয়ায়,এতোটাই কোমল স্বভাব,সে কি না এসব বলছে? তাও এতো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়েকে বেঁধে রেখে? কে এই মেয়ে? ভাইয়া কি কোনো দূর্নীতিতে যুক্ত হচ্ছে?
এসব ভাবতে ভাবতে নিচ থেকে শেখর চৌধুরী তীব্র তীব্র বলে ডাকতে লাগলেন।তীব্র তরিঘরি করে পেনড্রাইভটা আবার লকারে রেখে লকারটা বন্ধ করে নিচে আসলো।শেখর চৌধুরী তীব্রকে বললো
- এই কাগজ আনতে এতোক্ষন লাগে?
- বাবা অনেক কাগজের ভিড়ে খুজতে দেরি হয়ে গেলো।
-আচ্ছা দাও।
তীব্র হাত বাড়িতে দলিলটা দিলো।শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে ওখান থেকে রুমে চলে আসলো।বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো,"মাথায় অনেক প্যাচ জমা হয়েছে।এগুলা ছুটানো খুব দরকার"।ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমে তলিয়ে গেলো
ঘুম ভাঙলো বিকেলে।ঘুমের মাঝে ধরফর করে উঠে চশমটা চোখে দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে কাজের বুয়াকে স্যুপ বানাতে বলে ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে থাকলো।
বারবার ঘড়িতে সময় দেখছে তীব্র। "রহিমের মা,তারাতারি করো,সময় নেই " বলে কয়েকবার চিল্লাচিল্লি করে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো।তখনই লক্ষ্য করলো মিহির ভাইয়া সদর দরজা খুলে হাতে ক্যামেরায় কিছু একটা গভীর আগ্রহে দেখতে দেখতে লাগলো হেলেদুলে হাটছে।এক পা এগুচ্ছে, তারপর থামছে,আবার এগুচ্ছে এভাবেই নিজের মতো আসছে।মিহির ভাইয়ার উদ্দেশ্য তীব্র বললো
-ভাইয়া,আজকাল শুটিং নিয়ে অনেক ব্যাস্ত মনে হচ্ছে?
- হ্যা রে,প্রচুর কাজ।নতুন একটা ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছি।নাম শুনেই তুই পাগল হয়ে যাবি।
- নাম শুনতে চাচ্ছি না।পাগল হওয়ার ইচ্ছে নেই
- আরে শোন,অনেক ইন্টারেস্টিং সিরিজ।সিরিজের নাম " কিডন্যাপারের পেটে ইঁদুরের বিষ "।নামটা কেমন লাগলো?
- অনেক ইন্টারেস্টিং নাম।ভাইয়া তোমায় একটা কথা বলার ছিলো
- কি কথা?
- না মানে আমার মনে হচ্ছে তাই বললাম,কিছু মনে করবে না প্লিজ
- মনে করার মতো কি আর বলবি,বলে ফেল
- তুমি অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত হচ্ছো না তো?
- কি বলতে চাচ্ছিস তুই তীব্র
ক্যামেরার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়া।আমি স্বাভাবিক স্বরেই বললাম-
- দেখো ভাইয়া,আমি এতোটা ভেঙ্গে বলতে পারছি না।বাবার কথাটা মাথায় রেখে কাজ করিও।বাবার অপমান হবে এমন কাজ করবে না এটা আমার বিশ্বাস।
- আম..আম..আমি কিছু করিনি,আমায় এসব কেন বলছিস,? আমি তো কিছুই করিনি
- তোমার ঘরে লকারের মধ্যে পেনড্রাইভে একটা ভিডিও পেয়েছি আমি।একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় বন্দুক তাক করে রেখেছে কাউকে হুমকি দিচ্ছো।
- হ্যা,ওটাতো আমার শুটিং ছিলো।কিডনাফ করে মুক্তিপণ চাইবে,শেষে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মারা যাবে এটাই আমার নতুন সিরিজটার কনসেপ্ট।অভিনয় কেউ করতে পারছে না।তাই আমি দেখিয়ে দিয়েছিলাম কিভাবে করতে হয়।
- ওহহ আচ্ছা,সরি ভাইয়া।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অন্যায় পথে চলছো।তাই তো বলি,আমার ভাইয়ার মতো ভালো মানুষ একটাও নাই অভিনয় জগতে।
ভাইয়া মুচকি হেসে ক্যামেরায় চোখ দিয়ে নিজের রুমে গেলো।নিজের কাছে নিজেই লজ্জিতবোধ হচ্ছে। সত্যিই তো,ভাইয়া শুটিংয়ের অনেক কনসেপ্ট রেকর্ড করে রাখতেই পারে। সেটা দেখে ভাইয়াকে সন্দেহ করা ঠিক হয়নি।এসব ভাবতে ভাবতে কাজের বুয়া স্যুপটা টিফিনবাক্সে করে দিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হবো তখনি মা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে এসে বললেন
- তীব্র
- হ্যা মা,তোমার শরীরের অবস্থা কেমন? নিচে আসতে গেলে কেন?
- আমার আর শরীর।কই যাচ্ছিস?
- হসপিটালে যাচ্ছি মা
- ওই অপয়া মেয়েকে দেখতে?
- মা কিসব বলছো তুমি
- নয় তো কি? অপয়া না হলে তিন তিন বার পর্ভপাত হয়?
- এসব এখন থাক মা,আমি আসি
- দ্বারা,আমার একটা কথা আছে
- হুম বলো
- আমার,তোর বাবার তো বয়স হয়েছে,আমাদের তো ইচ্ছে করে নাতি নাতনির মুখ দেখতে? তাদের সাথে খেলা করতে,তাদের আদর করতে,বল মন চায় না?
- হ্যা
- তোর বড় ভাইয়া তার ও কোনো সন্তান নাই।এখন শেষ ভরসা তুই
- এসব নিয়ে পড়ে কথা বলি মা,এখন...
- না রে,বলতে দে আমায়।জানিস তোর বাবা রাতে ঘুমায় না এসব ভেবে।সারাক্ষণ ছটফট করে।পারে না বলতে,পারে না সইতে।বুড়ো বাপ,মার দিকে তাকিয়ে তোর কিছু একটা করা দরকার আছে কি না?
- কি করতে বলছো তোমরা বলো
- তুই আরেকটা বিয়ে কর বাবা।আমি জানি তুই নন্দিতাকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু একটা সন্তান তো প্রয়োজন তাই না? আমাদের ইচ্ছের কথা বাদ দে।তোর নিজেরও তো ইচ্ছে করে বাবা ডাক শুনতে।আমাদের কথাটা একটু শোন বাবা,আরেকটা বিয়ে করে নে।
তীব্রর কাছে এই বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।সে মাথা নিচু করে চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে প্রস্থান করলো।এরুপ প্রশ্ন উঠলেই সে নিরব থাকে।ইচ্ছে করে দূর কোথাও চলে যেতে। যেখানে তার থাকবে না কোনো পিছুটান।
"
"
"
"
"
এরপর কেটে গেলো দুইটি বছর।তীব্র লক্ষ্য করলো নন্দিতা এখন তাকে আর আগের মতো সময় দেয় না।অফিস থেকে বাসায় আসলে সে আর অধির আগ্রহে বসে থাকে না।রাতে বেশিরভাগ সময় ই কোনো কারন ছাড়াই সোফায় গিয়ে ঘুমায়।আগের মতো কথাও বলে না।এরকম আচরণ তিলে তিলে তীব্রকে জ্বালিয়ে দেয়।
অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই দেখলো নন্দিতা আয়নার সামনে বসে চুল আচরাচ্ছে।তীব্র মনে শয়তানটা ভর করে বসলো।টাওয়ানটা ঘাড়ে রেখে পেছন থেকে নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে গাঢ় একটা চুমু খায়।কোমড় থেকে তীব্রর হাতটা নন্দিতার পেটে স্পর্শ করলো।নন্দিতা কেঁপে উঠলো।মুহুর্তেই নন্দিতাকে কোলে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তীব্রর সারা শরীর নন্দিতার ওপর।নন্দিতার নড়াচড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই।তীব্র ওর হাত দিয়ে নন্দিতার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ঠোঁট গাঢ় চুমু খেতে থাকে।নন্দিতা ছটফট করছে,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।তীব্র ইচ্ছে করেই নন্দিতার ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।নন্দিতা ব্যাথায় শুধু উহু উহু করতে থাকে।ঘাড় থেকে চুলগুলি সরিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবাতেই নন্দিতা একটা ঝটকা দিয়ে তীব্রকে সরিয়ে দেয়।তীব্র এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।কশিয়ে একটা চড় মেরে বসলো নন্দিতর গালে।চড়ের তাল সামলেতে না পেরে সোফায় ধপ করে পড়ে যায়।তীব্র ওর কাছে গিয়ে গালে চাপ দিয়ে বললো
- কি সমস্যা কি তোমার? এভাবে এড়িয়ে চলো কেন আমায়? যখনি আদর করতে চাই তখনি এভাবে সরিয়ে দিচ্ছো।কেন?
- তীব্র গাল ছাড়ো,আমার লাগছে।আর কত বার বলবো আমার ভালোলাগে না এসব।
- ভালোলাগে না মানে কি? কি ভালো লাগে তোর? এখন আমার স্পর্শ ভালোলাগেনা? অন্য কাউকে পেয়েছিস নাকি? যে আমার স্পর্শ এখন আর ভালোলাগে না।অনেক সহ্য করেছি,আর না।
বলেই তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল'পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।
তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল'পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।
অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করছে।তীব্র মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।চাঁদের আলোয় আবছা আবছা তার মুখ দৃশ্যমান হতেই তীব্র হতভম্ব হয়ে যায়।মেয়েটি আর কেউ নয়,তার নিজের ভাবী।তীব্র রেগেমেগে বলে
- এটা কিরকম অসভ্যতামি ভাবী?
- তীব্র,আমি নিরুপায় হয়ে এটা করতে বাধ্য হচ্ছি।
- বাধ্য মানে,কি বলতে চাচ্ছো?
- হুম,কি করবো বলো,তোমার ভাইয়ার আমার জন্য সময় কোথায়,সেতো সারাদিন পড়ে থাকে শুটিং নিয়ে।আমার নিজেরও তো চাহিদা আছে,তাই না
- ভাবী চুপ করো,এাব বলার মানে কি, তুমি কিন্তু ভুলে গেছো আমি তোমার দেবর
- দেবরের আগে, আমি তোমার প্রেমিকা,কি ছিলাম না প্রেমিকা?
ভাবীর মুখে এরুপ কথা শুনে তীব্র চুপ করে রইলো।ভাবী বলতে লাগলো
- মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা? যখন আমরা হাতে হাত রেখে রিক্সায় ঘুরেছি,রাস্তায় রাস্তায় হেটেছি,তুমি আদর করে চুলে বেলী ফুলের মালা দিয়ে দিতে?
- এসব কথা এখন কেনো তুলছো?
- তুলছি কারন তোমার জন্য আমি আজ ভালো নেই,আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তুমি,
- আমি কি করেছি?
- কি করেছো? হাহহাহা,ভুলে গেছো সব তাইনা? বউ বানাবে বলে ছিলে,সেখানে...
- ভাবী চুপ করো প্লিজ।এখন এগুলো বলে কি বুঝাতে চাইছো?
- তীব্র, আমার আবদার তুমি আমাকে একটা সন্তানের সুখ দেবে
কথাটা শুনে তীব্রর সারা শরীর হিরহির করতে লাগলো।মনে হতে লাগলো কষে কয়েকটা চড় মারতে।তীব্র কখনো তাকে খারাপ নজরে দেখেনি।হ্যা হতে পারে একসময় সে তার প্রেমিকা ছিলো,কথার ছলে হাতটুকু ধরতে ইতস্ততবোধ হতো তীব্রর।সে নন্দিতাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কখনো এসব স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা
- আমার ইচ্ছে করছে তোমার গালে ঠাসঠাস করে কষে চড় মারতে, শুধু বড় ভাবী হও এজন্য কিছু বলতে পারছি না
- তুমি যাই করো,প্লিজ আমার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখো।তোমার যেমন বাবা না হতে পারার কষ্ট হয়,তেমনি তো আমারো ইচ্ছে করে মা হতে,মা ডাক শুনতে।আমি কথা দিচ্ছি এসব আমাদের নিজেদের মধ্যেই থাকবে।কেউ কিচ্ছু জানবে না।
তীব্র এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ঠাস করে একটা চড় মেরে স্টোর রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো।বেড় হয়ে সামনে নন্দিতাকে দেখতে পেয়ে তীব্র চরমভাবে একটা ধাক্কা খেলো।মনে হচ্ছে সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র তলিয়ে যাচ্ছে তলন সমুদ্রে।নন্দিতা চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে চোখ লাল করে কাঠ দারিয়ে আছে।তীব্র আমতা আমতা করতে বললো
- নন..নন..নন্দিতা,তু..তু..তুমি এখানে
- এসেতো অন্যায় করে ফেলছি বোধহয়।তাই না মিঃতীব্র
- নন্দিতা তেমন কিছুই নয়,যেমনটা তুমি ভাবছো
- আমার ভাবার কিছু বাকি নেই।বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়,সেটার এই মূল্য? বাহ্
- নন্দিতা আমার কথা শুনো (নন্দিতার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে)
- আমার কাছে আসবে না, একদম আসবে না।চরিত্রহীন পুরুষ। লজ্জা করলো না এসব করতে? তাও বড় ভাবীর সাথে,,ওহহ সরি উনিতো তোমার ভাবী না,পুরোনো প্রেমিক। প্রেম জেগেছে মনে,তা যাও না যা করছিলো তা করো না
- আমার কথা একটু শু..
- স্টোপ।আই সে স্টপ।ভূল ভেবেছিলাম আমি,ভেবেছিলাম কেউ আমার পাশে থাকুক না থাকুক তুমি থাকবে,কিন্তু এই সময়টাও যে দেখতে হবে,,,আমি আর থাকবো না,এল মূহুর্ত থাকবো না বাড়িতে
- নন্দিতা আমায় একটা সুযোগ দাও বলার
কথাটা বলতেই ভাবী মিহি সুরে কান্না করতে করতে ঘর থেকে বেড় হলো।তীব্র তাকালে যা দেখতে পায় সেটা সে কখনো ভাবতে পারেনি।
ভাবীর শরীরে শাড়ীটা নেই।পরনে ব্লাউজ আর পেডিকোট।ব্লাউজটাও বুকের অংশে ছেঁড়া।চোখের কাজল লেপ্টে সারা গাল হয়ে আছে।তীব্র এমন অবস্থা দেখে নিজের চোখ ভাবীর ওপর থেকে সরিয়ে নিলো।নন্দিতা রেগেমেগে নিজের রুমে চলে গেলো।তীব্রর বলার মতো কিছুই রইলো না।ভাবীকে শুধু বললো " কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করোনি,এর মাশুল তোমায় গুলতেই হবে"। উত্তরে ভাবী বললো " সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি উঠলোই না তখন না হয় আঙুল বাঁকালাম,দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়,আমার জীবনতো এমনিতেও নরক হয়ে গেছে।তুমি শান্তিতে থাকো কিভাবে সেটাও দেখবো।"
তীব্র রুমে এসে দেখলো নন্দিতা শুধু ফোনটা,আর ছোট্ট একটা ব্যাগে নিয়ে রুম থেকে বেড় হচ্ছে। তীব্র আটকাতে গেলে নন্দিতা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্রর ওপর।যে দৃষ্টিতে রয়েছে এক সাগর ঘৃনা,রাগ,অভিমানে ভর্তি।তীব্র কিছু বলতে পারলো না।
নিচে শেখর চৌধুরী খবরের কাগজ পড়ছে আর চা খাচ্ছে। নন্দিতার হাতে ব্যাগ নিয়ে নামতে দেখে তিনি বললেন
- কোথাও যাচ্ছো বউমা?
- জ্বি বাবা ( ব্যাগটা ফ্লোরে ধপাস করে রেখে দিয়ে সালাম করতে করতে বললো)
- আরে থাক থাক, সুখী হও।কিন্তু এতো রাত্রে কোথায় যাচ্ছো?
- এ বাড়িতে আমার দিন শেষ বাবা।এই বাড়ির কাউকে তো কোনোদিন আপন করতে পারিনি। রাত জাগবেন না বাবা।আসি
- বউমা এসবের মানে কি?দারাও আ....
- প্লিজ বাবা আমায় আটকাবেন না।আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না।
শেখর চৌধুরী আর আটকালেন না।স্বামী,স্ত্রীর ঝগড়া হয়,তাদের মাঝেও হয়।নন্দিতা রেগে বাবার বাড়িতে গেলে তীব্র নিয়ে আসে।বরাবর এমনটাই হয়।তাই শেখর চৌধুরী তেমন জোর করলেন না।
সারারাত তীব্র নেশায় কাটালো। একটার পর একটা সিগারেটের প্যাকেট শেষ করে।ঘরের মেঝেতে প্যাকেটগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।নন্দিতার প্রতি তার ভালোবাসার কমতি ছিলো না কখনো,তবুও নন্দিতা তার কথা না শুনেই এরকম করবে এটা তীব্র কখনো ভাবে নি।পরোক্ষণে নিজেই নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,নন্দিতাতো ঠিকি করেছে। নিজের স্বামীকে এরুপ অবস্থায় দেখলে কোনো স্ত্রীই ভালোভাবে নিবে না সেটা।কাল সকালে ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে নিয়ে আসবে,এসব ভাবতে ভাবতেইফ্লোরেই ভোর রাতে ঘুমিয়ে গেছে।
ঘুম ভাঙ্গলো চেচামেচিতে।বাইরে বেড় হয়ে দেখতে পেলো সারা বাড়ি সাজানো হচ্ছে। মুহূর্তেই তীব্রর সারা শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো।মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা।ভাবী কি আবার কোনো ফাঁদ পেতেছে তাকে বিপদে ফেলার জন্য?এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নামলো তীব্র।
পেছন ফিরতেই ভাবী তীব্রকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় চোখ টিপে মুচকি হাসলো।তীব্র শক্ত করে তার হাত ধরে সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো
- কি হচ্ছে বাড়িতে? সাজানো হচ্ছে কেন?তুমি কোনো ঝামেলা করলে কিন্তু
- আরেহ কুল, কুল।আমি কি করতে পারি সেটাতো এখনো দেখাইনি তোমায়,এখন দেখাবো।রেডি থাকো।আমার ওপর দেওয়া প্রতিটি কষ্টের হিসেব আমি নিবো।
- এখন বুঝেছি, আমার আগের দুই সন্তান নষ্ট হওয়ার পেছনে তোমার কারসাজি আছে।তোমায় আমি ছাড়বো না, (কটকটে গলায় বললো)
- ছিহ্, এতোটা নিচ ভাবনা তোমার?কিভাবে ভাবলে তুমি?যে কিনা পৃথিবীর আলোই দেখেনি তার ওপর আমি প্রতিশোধ নিবো?
- সেটা তুমিই ভালো জানো
নিচ থেকে রাবেয়া চৌধুরী চেচিয়ে ডাকতে লাগলেন " তীব্র, এই তীব্র, দেখে যা কে এসেছে।বড় বউমা দেখে যাও কে এসেছে,আমার ঘরের লক্ষী এসছে"
রাবেয়া চৌধুরীর ডাক শুনে তীব্র হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামলো।নিচে নামতেই দেখলো একজন মাঝবয়সী লোক হাতে বই নিয়ে সোফায় বসে বই পড়ছে।সাথেই বসে আছে একটা মেয়ে। মেয়েটা সুন্দরী। বেশ সুন্দরী।গায়ের গড়ন, রং-বিন্যাস সবকিছু যেন প্রকৃতি তাকে ঢেলে দিয়েছে। খোলা চুল,মাথায় ফুলের গাজরা।চোখে নীল রঙ্গের চশমা।হাল্কা লাল লিপস্টিকের রং ঠোঁটে আভাস দিচ্ছে। অবশ্য এটা লিপস্টিক নাকি মেয়েটার ঠোঁটের রং ই এরকম বোঝায় উপায় নেই।তীব্র ওর পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে নিচে নামলো।রাবেয়া চৌধুরী তীব্রর হাত ধরে টেনে ওদের সামনে নিয়ে গেলেন।অতি উৎসুক কন্ঠে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন
- আরোহী,দেখ তো চিন্তে পারিস কি না,
মেয়েটা কিঞ্চিৎ হেসে উঠলো।ঠোঁটের কোনে হাসির আভা ফুটে উঠলো।বাহ্ মেয়েটকে হাসলে দারুন মানায়।হাসি হাসি কন্ঠে বললো
- তীব্র ভাইয়া না?
রাবেয়া চৌধুরী- সেই ছোট থাকতে দেখেছিলি, আমিতো ভাবলাম চিন্তেই পারবি না
আরোহী-কি যে বলো না,তীব্র ভাইয়াকে চিনবো না? তাও আবার আমি,
তীব্র-কেমন আছিস আরোহী
আরোহী-ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
" তোরা কথা বল।আমি চা নিয়ে আসি" বলেই রাবেয়া চৌধুরী চা বানাতে চলে গেলেন।
তীব্র-হুম ভালো।তো এবার ক'দিনের ছুটি পেয়েছিস?
- পুরো এক মাস,একা বসে বসে বোর হচ্ছিলাম।তাই চলে আসলাম
- খুব ভালো করেছিস।
- ভাইয়া,নন্দিতা ভাবী কোথায়?
- ও একটু কাজে বাবার বাড়িতে গেছে।চলে আসবে কাল পরশু ( মিথ্যা বললো)
- চলো ছাঁদে যাই,এখানে ভালো লাগছে না বসে থাকতে।তোমাদের ছাঁদের পাশে ওই ছাতিম গাছটা আছে না?
- হুম আছে।ওই গাছটার কথা এখনো মনে আছে তোর?
- থাকবে না মানে,ওখানেই তো আমার... বাদ দাও চলো ঘুরে আসি।
- আঙ্কেলের সাথে একটু কথা বলতে দে
- বাবা এখন কথা বলবে না,গভীর মনোযোগে বই পড়ছে।ডিস্টার্ব করা নিষেধ।
আরোহী তীব্রর হাত ধরে টেনে ছাঁদে যেতে লাগলো।আরোহীর বাবা আহনাফ চৌধুরী বইয়ে মুখ গুজেই রইলেন।তিনি প্রচুর বই পড়েন।রিটায়ারের পর বই পড়া তার পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।খাওয়া,ঘুম ও প্রকৃতির সাড়া দেওয়া ছাড়া বাকিটুকু সময় বই পড়ে কেটে দেন।
দুপুরের কড়া রোধ ভেঙে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে।আশেপাশে ঠান্ডা বাতাসে ছেয়ে গেলো।আরোহী ছাঁদের কার্নিশ ধরে দারিয়ে আছে।তীব্র পকেটে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ছাতিম গাছটার দিকে।আরোহী বলে উঠলো
- তীব্র ভইয়া
- হুম
- মনে আছে এই গাছটার কথা?
- এসব কথা এখন তুলছিস কেন৷আচ্ছা তোর পড়াশোনা কেমন চলছে
- মোটামুটি চলছে
তখনি পেছন থেকে " আরোহী, কখন আসলে তুমি" বলতে বলতে সামনে আসলো আরহা ভাবী।আরোহী জরিয়ে ধরে বললো
- এইতে ভাবী এখনি আসলাম।তুমি তো এখন আরো সুন্দরী হয়ে গেছো ভাবী,
- হাহাহা,দেখতে হবে না কার ভাবী?
নিচ থেকে রাবেয়া চৌধুরী আরোহীকে ডাকলেন।আরোহীর ইচ্ছে করছে না যেতে।তবুও বাধ্য হয়ে নিচে গেলো।আরহা তীব্রর একদম পাশাপাশি দাড়ালো।তাচ্ছিল্যর স্বরে বললো
- কি ছোট দেবর জি, বউকে আনোনি এখনো?
(তীব্র চুপ করে রইলো)
- আহারে,, তোমাকে দেখে না আমার খুব কষ্ট হয় জানো? ভালোবাসার মানুষকে তুমি কখনো ধরে রাখতে পারলে না।
তীব্র পাশ কাটিয়ে নিচে চলে গেলো।বাইকের চাবিটা নিয়ে রওনা হলো নন্দিতার রাগ ভাঙ্গানোর একটা চেষ্টা করতে। রাগ হলে সেটা ভাঙ্গা যায়,ভুল ধারনার শেখর যে অনেক গভীর, সেটা কি এতো সহজে ভাঙতে পারবে তীব্র?
দৃশ্যপট-২
দরজায় মিহি টোকা পড়ছে।আসমা বেগম দরজা খুলতেই নন্দিতাকে দেখে তার আনন্দের সীমা রইলো না।নিজের মেয়েকে অনেকদিন পর দেখে জরিয়ে ধরলেন।নন্দিতাও নিজের কষ্টকে কিছুটা আড়াল করে মায়ের সাথে আহ্লাদী হয়ে যায়।
- কিরে মা,হঠাৎ করে? জামাই কোথায়?
- ও আসেনি
- আসেনি মানে? কেনো?তুই একাই এসেছিস নাকি ?
- হুম
- আয় ভেতরে আয়।শরীরের কি অবস্থা করেছিস।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস বোধহয়।হাত,মুখ ধুয়ে আয়,আজ আমি খাইয়ে দিবো।
নন্দিতা কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই আসমা বেগম হাতে প্লেটে খাবার সাজিয়ে উপস্থিত হলেন।কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
- কতদিন হলো খাইয়ে দিই না।নন্দু,তোর ঠোঁট ফুলা কেন? ব্যাথা পেয়েছিস?
- ও কিছু না মা।এমনিই একটু লেগেছে।তুমি খাইয়ে দাও তো।তোমার হাতে অনেকদিন খাইনা
আসমা বেগম যত্ন করে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।নন্দিতা এই স্নেহে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।আসমা বেগম নন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর নন্দিতা নিজেকে সামলে নেয়।আসমা বেগম মিহি স্বরে বলেন
- তোকে কি ও বাড়িতে কষ্ট দেয় নন্দু?
-(নন্দিতা নিরব)
- কি হলো বল? ওরা কি তোকে কষ্ট দেয়? হঠাৎ এখানে আসলি,সাথে জামাই এলো না।ঘটনাটা কি?বলবি?
- বাবা কোথায় মা? (বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে)
- বাজারে গেছে।এখনি চলে আসবে।
বলতে বলতেই রহিম মিয়া খরচের ব্যাগটা রেখে ডাকছে,"আসমা,আসমা"।
আসমা বেগম বললেন " ঘরে এসো গো,দেখো কে এসেছে "।" কে এসছে " বলতে বলতে রহিম মিয়া ঘরে ঢুকতেই নন্দিতাকে দেখে চকচক চোখে বললেন
- নন্দু মা,কখন এসেছিস মা?
- এই তো এখনি আসলাম বাবা,তুমি তে ঘেমে গেছো।এখানে বসো
- জামাই আসেনি? ( বিছানায় বসতে বসতে বললো)
- না ( নন্দিতা নিরব কন্ঠে বললো)
নন্দিতা শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলছে,।ফোনে রিং বেজেই চলেছে।নন্দিতা ফোন তুলছে না।ফোনের স্ক্রিনে তীব্র নামটা বারবার জ্বলে উঠছে।বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে গেলো নন্দিতা।বেলকনি দারিয়ে ফোনটা রিসিভ করে নিচে রাস্তায় তাকালো।দেখলো তীব্র রাস্তায় পাশে চায়ের দোকানটায় বসে চা খাচ্ছে আর ফোন কানে রেখে বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে।নন্দিতা ফোন রিসিভ করে রাগি কন্ঠে বললো
- কি সমস্যা কি?ফোন দিচ্ছো কেন?
- আমার বউকে ফোন দিয়েছি,এতে সমস্যা কি?
- লজ্জা করছে না এসব বলতে?
- নন্দিতা তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না।আমায় বলতে দিলে তবেই তো বলবো তাই না?
- আমার শোনার কিছু নেই।কখনো ফোন করবা না আর,,নেভার এভার
- এই এই ফোন কাটবা না বলে দিলাম,নইলে কিন্তু
- নইলে কি?
- নইলে আমি কি করবো তাতো জানোই,এখান থেকে এসোজা একটা গাড়ির সামনে দারিয়ে যাবো
- এসব বলে আর আমায় প্রভাবিত করতে পারবে না।সব অধিকার শেষ হওয়ার দিন এসে গেছে তীব্র ।সব কিছু থেকে আপনাকে মুক্তি দিবো আমি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো নন্দিতা।কেটে দিয়ে ঘরে আসলো।যতবার নন্দিতা রাগ করে বাবার বাড়িতে এসেছে ততবার ই তীব্র এসে তার রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে গেছে।কিন্তু এবারেরটা যে রাগ না।এটা সন্দেহ।সন্দেহ সহজে যায় না।থেকে যায়,একটু একটু করে ভাবায়,কষ্ট দেয়,শেষ করে মনের সকল অনুভূতি।একটু পর কিছু লোকের চেঁচামেচি অস্ফুট শব্দ তার কানে এলো।মনে মনে ভাবলো, তীব্র আবার কোনো পাগলামি করলো না তো? বিছানা থেকে ধরপর করে উঠে ব্যালকোনিতে দারাতেই দেখলো নিচে কিছু মানুষ গোল হয়ে দারিয়ে আছে।রাস্তার পাশ দিয়ে লাল তরল বেয়ে যাচ্ছে। রক্ত নয় তো? তীব্রর কিছু হয়ে গেলো না তো? মুহুর্তেই বুকটা ধক করে উঠলো।চারিদিকে শূন্যতা অনুভব করলো।দৌড়ে নিচে নামলো।যে দোকানটায় তীব্র বসে চা খাচ্ছিলো সেখানে যেতেই, সেখানে থাকা লোকগুলি এক এক করে সরে দারালো।নন্দিতা কাছে যেতেই দেখলো তীব্র মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে।মাথার পাশ দিয়ে রক্তের স্রোত বইছে।নন্দিতার সারা শরীর হিম হয়ে আসলো।
তীব্র মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে।মাথার পাশ দিয়ে রক্তের স্রোত বইছে।নন্দিতার সারা শরীর হিম হয়ে আসলো।এক এক করে মুহুর্তেই সবাই চলে গেলো।নন্দিতা ধুম মেরে বসে আছে।
তীব্র হাতে ভর করে উঠলো।উঠে গায়ের লেগে থাকা ধুলো ঝেরে ফেলছে,চুল ঠিক করছে।নন্দিতা চরম হতবাক হয়ে হা করে চেয়ে চেয়ে সেসব দেখছে।নন্দিতা রোড থেকে উঠে তীব্রর ওপর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো,রেগে গজগজ করে পেছন ফিরে যেতেই তীব্র দৌড়ে গিয়ে নন্দিতার হাত ধরে নন্দিতাকে নিজের বাহুদ্বয় দারা শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে নিলো।নন্দিতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে আর তীব্রর বুকে কিল,ঘুষি মেরেই চলেছে।তীব্র তবুও হেসে হেসে তাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকলো।একটু পর তীব্র ছেড়ে দিলেও দেখলো নন্দিতা তাকে খামচে ধরে আছে।তীব্র চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না।
চেয়ারে বসে নন্দিতা এখনো নাক ছিঁচকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।কান্নার গতি এখন কিছুটা কম।তবে নাকের ছিঁচকানিটা বেশি।তীব্র তার রুমালটা এগিয়ে দিলে নন্দিতা খপ করে সেটা হাতে নিয়ে নাকে ধরে 'ইয়ে' করলো।রুমালটা আবার তীব্রর দিকে এগিয়ে দিলো।তীব্র নাক,মুখ কুচকে রুমালটা নখের আগাল দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
এক হাতে ফুসকা, আরেক হাত গালে রেখে অসহায় দৃষ্টিতে নন্দিতার সম্মুখের চেয়ারে বসে আছে তীব্র।আধাঘন্টা ধরে ফুসকার প্লেটটা হাতে ধরে থাকতে থাকতে হাত অবস হয়ে গেছে।এদিকে নন্দিতার থামার নাম গন্ধ নেই। সে কেঁদেই চলেছে।তীব্র কয়েকবার চোখের জল মুছে দিতে হাত বাড়াতেই নন্দিতা হাত সরিয়ে দিয়েছে।তাই তীব্র অসহায় দৃষ্টির মতো অসহায় স্বরে বললো
- আর কত কান্না করবা? এবার তো থামো?
- তুই চুপ থাক।জলহস্তি,ঘোড়া,ইঁদুর, বিড়াল (চোখের জল মুছতে মুছতে)
- তুই তোকারি করতেছো কেন
- তা কি করবো? আদর করবো?চুমু খাবো?
- এখানে চুমু খাবে? কেউ দেখে ফেললে লজ্জা...
-চুপ, একদম চুপপপ।
- আচ্ছা চুপ।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকার পর নন্দিতা রাগি স্বরে বললো
- এসব করে আমায় কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তাই না
- তুমি কষ্ট পেয়েছো?
- হু
- কি করবো বলো,তুমি তে আনার কথাই শুনতে চাচ্ছিলে না।তুমি যে জেদি তাই এমনটা করতে হলো।তাছাড়া তো নিচে আসতেই না
- সে জন্য এরকম একটা ঘটনা তৈরী করবা?
- আচ্ছা সরি,আর এমন হবে না।
- আর যদি কোনোদিন এমন করেছো তো আমিই তোমায় মেরে ফেলবো, বলে দিলাম।মনে থাকে যেন
- হুম থাকবে থাকবে।
- রক্তগুলি পাইছো কিভাবে?
- হাহাহাহাহা
- হাসছো কেন?
- এগুলা রক্ত না তো
- আ্যা? রক্ত না তো কি?
- চা।রং চা।রক্তের বদলে চা কিন্তু মন্দ কিছু না।দোকানির কাছে এক কেতলি রং চা কিনে নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম।যেনো তুমি রক্ত মনে করো।
- চা রাস্তায় ঢেলে সেখানে শুয়ে পড়লে?
- হু,
- বাহ্, আমি এই প্রথম কাউকে এরকম পাগলামি করতে দেখলাম
- তোমার জন্যই তো সব পাগলামি,
- হুম আমার জন্যই তো।অন্য কারোর জন্য করার ইচ্ছে আছে নাকি?
- থাকলে কি হবে?
- কি হবে সেটা ভাবতেও পারবে না।মেরে না ঘরে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখবো।
- এ্যা?
- হুম।তোমার সব পাগলামি শুধু আমাতেই যেন সীমাবদ্ধ থাকবে সারা জীবন।বুঝেছো?
- হুম বুঝলাম।এখন হা কি হা করবা? আমার হাত তো ব্যাথা হয়ে গেলো
- রাগ করছি,রাগ ভাঙ্গেনি, তাতেই খাবো? হুহ
- তো কি করলে রাগ ভাঙ্গবে?
- সামনে দারাও।
তীব্র বাধ্য ছেলের মতো নন্দিতার সামনে দারালো।
- এখন মনে করো মাউথপিস হলো তোমার হাত।হাত মুখের সামনে দাও
- কি বলছো, এসব করবো এখন?
- যা বলছি করো
- আচ্ছা।তারপর ( হাত মুখের সামনে এনে)
- একটা কবিতা বলো
- এখন কবিতা?
- হুম,এখনি,বলো
- এহেম,মাইক টেস্ট,ওয়ান,টু,থ্রি,মাইক টেস্ট
- ঢং বাদ দাও,কবিতা বলো (একটু চিল্লিয়ে)
- বলছি তো,মনে করতে দাও?
- হুম এক মিনিট সময় দিলাম
-এখন, এখানে কিভাবে একটা কবিতা বলবো।উফফ,কি যে করো তুমি।মনে পড়েছে
অতন্দ্রিলা,
ঘুমোওনি জানি
তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে
বলি, শোনো,
সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায়,সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি
কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন,
আলাদা নিশ্বাসে,এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই
কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা
অতন্দ্রিলা,
হঠাৎ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না,
দেখি তুমি নেই।
- খুব সুন্দর।
- এখন খাও।হা করো।
তীব্র নন্দিতার মুখে ফুসকা তুলে দিলো।ঝালে নন্দিতা চোখ ছোট করে তীব্রর দিকে তাকায়।ঝাল ঝাল করে চেচাতে লাগে।ফুসকায় প্রচুর ঝাল দিয়েছে।দিয়েছে বললে ভুল হবে।তীব্রই বলেছে ঝাল দিতে।এই সুযোগে তীব্র নন্দিতার ঠোঁটে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো।নন্দিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তীব্রর দিকে।তীব্র স্বাভাবিক ভাবেই আরেকটা ফুসকা হাতে নিয়ে নন্দিতার মুখের কাছে ধরলো।নন্দিতার এমন চাহনিতে তীব্র হেসে ফেললো।হাসি দেখে নন্দিতার রাগ হলেও ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসলো।
তারা দু'জনই শব্দ করে হাসছে।বাহ্! ভালোবাসা কত সুন্দর। তীব্রর হাতে হাত রেখে নন্দিতা হেসেই চলেছে।তীব্র মুগ্ধ হয়ে নন্দিতার চোখে তাকিয়ে রইলো। কতো মায়াবী চোখ।নন্দিতা যেন আরো তরুণী হয়ে উঠছে।নাকি ভালোবাসার মানুষের বয়স চোখে পড়ে না? কিছু একটা হবে হয়তো।
আকাশে মেঘের দল ছোটাছুটি করছে।কাকের ডিম হয়ে আসছে আকাশের রং।আশেপাশে বইছে শীতল বাতাস।তীব্র আর নন্দিতা বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে।গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে।বাতাসের ঝাপটায় কিছু ফুল ঝরে পরছে রোডে।তীব্র হাতে ফুসকার প্লেটটা থেকে একটা একটা করে নন্দিতাকে খাইয়ে দিচ্চে।নন্দিতা চুপটি করে খাচ্ছে। বাতাসে নন্দিতার চুলগুলি সরে গেলে তীব্র এলোমেলো চুলগুলি কানের কাছে গুজে দিচ্ছে।তাদের সামনেই একটা নেড়ি কুকুর বসে বসে লেজ নারাচ্ছে।তাদের এই ভালোবাসা উপভোগ করছে হয়তো।
দু-এক ফোঁটা করে বৃষ্টির কণা পড়তে শুরু করলো।তীব্র আন্দোলিত হয়ে জোরালে স্বরে বললো
- বৃষ্টিতে ভিজবে?
- তুমি বৃষ্টিতে ভেজার কথা বলছো,? ( অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললো)
- হুম,কেন বলতে পারিনা?
- তুমিতো আমায় ভিজতেই দাও না।সেই তুমিই আজ বলছো বৃষ্টিতে ভিজতে
- হুম,চলো আজ বৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে। এই বৃষ্টিটা আজ আমাদের
ঝুম বৃষ্টি থেকে এবার মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।সারা রাস্তা ফাঁকা।তারা দারিয়ে আছে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে ফুসকার দোকানের সামনে। তীব্র নন্দিতার হাত ধরে রাস্তার মাঝে নিয়ে গেলো।বৃষ্টির জল তাদের সারা শরীর স্পর্শ করছে।নন্দিতা দুই হাত তুলে আকাশের পানে চেয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে।তীব্র চেয়ে চেয়ে দেখছে তার ভালোবাসাকে।
বৃষ্টির পরিমান আরো বাড়লো।নন্দিতার শাড়ি বৃষ্টির জলে ভিজে সারা শরীরে লেপ্টে আছে।তীব্র এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো।পেছন দিক থেকে নন্দিতার পেটে হাতের স্পর্শ লাগায়।আরেক হাত পিঠ বেয়ে গলায় স্পর্শ করলো।নন্দিতা কেঁপে কেঁপে উঠছে। পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তীব্র নন্দিতার ঘারের চুলগুলি সরিয়ে জোরালো একটা কিস করে।নন্দিতা প্রতিবার নড়েচড়ে উঠছে।ওকে পাশ ঘুরিয়ে মুখোমুখি করে নিলো তীব্র।নন্দিতাকে বিকের সাথে লেপ্টে নিলো।নন্দিতার গরম শ্বাস পড়ছে তীব্রর মুখের ওপর।চোখে বৃষ্টি পড়ায় টিপটপ চোখ বন্ধ করছে নন্দিতা।তীব্রর হাত নন্দিতার গালে রাখলো।নিজের ঠোঁট আস্তে আস্তে নন্দিতার ঠোঁটের কাছাকাছি আনলো।নন্দিতা লজ্জায় চোখ বন্ধ করলো।গোলাপি ঠোঁট গুলো পিট পিট করে কাপছে।তীব্র নন্দিতার আঁচল দিয়ে তাদের ঢেকে নিয়ে নন্দিতার ঠোঁটে গভীর একটা চুমু খায়।নন্দিতাও নিজেকে আর আড়াল করতে পারলো না।সেও তীব্রর ঠোঁটে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিচ্ছে।
চলবে...
Writer:- জয়ন্ত কুমার জয়