> মেহেদী হাসান শুভ্রের সেরা ২১টি জনপ্রিয় লিখনী
-->

মেহেদী হাসান শুভ্রের সেরা ২১টি জনপ্রিয় লিখনী


১. এই মহাশূন্যে এমন একটা মানুষ থাকুক বিধ্বস্ত হয়ে, ভেঙে পড়ে, হতাশার চরমে ডুবে গিয়ে যাকে একটাবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলে মনের ভিতর প্রশান্তি অনুভব হবে। মনে প্রাণে আসবে সজীবতা; চোখে মুখে ফোঁটে উঠবে বেঁচে থাকার আজন্ম সাধ। 

একটা মানুষ থাকুক যার কাছে সবটা বলা যাবে অবলীলায়। কত কথা জানানো বাকি। বলতে গেলে বুকের কাছটায় দলা পাকিয়ে আসে আমার নিঃসঙ্গতার গল্পগুলো। বলা হয়ে উঠে না আর! একটা মানুষ থাকুক যে শীতল চোখ দেখেই বুঝে নিবে বুকের ভেতরটার নিঃঙ্গতা।

একটা মানুষ থাকুক বিধ্বস্ত পৃথিবীর এক টুকরো জমিনে দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাকে পাওয়ার তীব্র আকুতি জানাক। একজোড়া হাত আমার জন্য প্রার্থনারত থাকুক। আমাকে পাওয়ার আনন্দে অশ্রুসিক্ত হোক একজোড়া পবিত্র চোখ।

শুধু ভালোবাসা নয় কেউ একজন থাকুক যে পুরো আমিটার মায়ায় পড়বে। যে শেষ পর্যন্তু আমার সাথে থেকে যাবে। ছন্নছাড়া, এলোমেলো এই আমিটাকে গভীর যত্নে আগলে রাখবে বুকের মাঝে। শুধু স্বপ্ন নয় আজন্ম পথচলার সঙ্গী হয়ে কেউ একজন আসুক।♡︎

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




২. চারপাশে তাকালে দেখবেন আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো এখন আর আগের মতো নেই। আগে যেমন কাজিনরা সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দেওয়া হতো, গল্প করা হতো, নানারকম মজার মজার খেলা হতো, আনন্দ হতো এখন আর এগুলো হয় না।

আগে যেকোন উৎসবে সবাই মিলে একসাথে নানুর বাড়ি যাওয়া হতো। সবাই মিলে নানুর বাড়িতে তখন অনেক মজা হতো। 'নানুর বাড়ি রসের হাড়ি' যেন সত্যিই আনন্দ আর খুশিতে একদম টইটম্বুর ছিলো। সবাই অপেক্ষায় থাকত কবে নানুর বাড়ি বেড়াতে যাবে। এখন এসব কিছু কেমন যেন হয়ে গেছে। ঠিকমতো যোগাযোগই হয় না, কথা হয় না। আর দেখা হলেও আগের মতো গল্প জ্বমে না, মজা হয় না। সবাই সেই মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকে।

ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের যা দিয়েছি আর চেয়ে অনেক বেশি কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে সম্পর্কের প্রতি টান, কমিয়ে দিয়েছে সম্পর্কের গভীরতা, জীবনে এনে দিয়েছি ব্যস্ততা নামক এক কঠিন সময়, ডিপ্রেশনের মতো ভয়ংকর অসুখ। এখন আমরা সবসময় ব্যস্ত আমাদের ভার্চুয়াল জগত আর ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু বান্ধবদেরকে নিয়ে। 

কিন্তু আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক, বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক, ভাই বোনের সম্পর্ক এগুলো যেন দিনকে দিন প্রাণ হারাচ্ছে। দূরুত্ব বাড়ছে, গভীরতা- মায়া, টান কমে যাচ্ছে। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি আমরা, আমাদের সম্পর্কগুলো! তাই মাঝে মাঝে রবীন্দ্রনাথের মতো আক্ষেপ নিয়ে বলতে ইচ্ছে করে- 'আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি!' 

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৩. জীবনে 'আবেগ' ব্যাপারটা আসলে একটা বাঁধা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে জীবনে অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়। বেসামাল আবেগ জীবনটাকে বিদ্ধস্ত করে দেয়। খেয়াল করলেন দেখবেন জীবনে যারা আপনাকে সবচেয়ে বেশি ঠকিয়েছে সেটা নিয়ে তাদের মাঝে বিন্দু পরিমাণ  অপরাধবোধ নেই। আবার যারা ছাড়া আপনাকে ছেড়ে গেছে তাদের আপনাকে হারিয়ে ফেলার সামান্যতম আফসোস নেই। এমনটা হয়ত প্রায়ই হয় অন্যরা আপনাকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকলেও আপনি তাদের জন্য খুব কষ্ট পান। হয়ত আপনি অনেক বেশি ইমোশনাল তাই।

ইমোশন ব্যাপারটা ভালো।মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা থাকবে, টান থাকবে, মায়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনকার এইসময়ে এই স্বাভাকিক নিয়মে আমাদের জীবনে চলে না। দিনশেষে এমন মানুষগুলোকে জীবনের পদে পদে ঠকতে হয়। চারপাশের সবাই খুব সূক্ষ্ম ভাবে তাদেরকে ঠকিয়ে দেয়। 

চোখে অাঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আবেগটা কমাও, অল্পতেই মায়ায় জাড়িয়ে যেও না, খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে অবহেলিত হইয়ো না। সবার জন্য বাঁচতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলো না। জীবনে ভালো থাকতে হলে একটু শক্ত হও, কিছুটা স্বার্থপর হও। 

তবে শূন্য আবেগে কখনো পূর্ণ হওয়া যায় না। জীবনের কিছু কাজ আবেগ দ্বারাই করতে হয়। আবেগ থাকবেই, তবে আবেগ যেন তোমাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। তুমি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো, তুমি আবেগের নিয়ন্ত্রক হও। দেখবে সেদিন তুমি সম্পূর্ণ রুপে তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে 
যেতে শিখে যাবে।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৪. আমি আমার এই ছোট্ট জীবনে আমাকে বুঝার চেয়ে আমাকে ভুল বুঝার মানুষগুলোকে বেশি পেয়েছি।

কেউ আমাকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে গেছে, আর কাউকে আমি বুঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে চলে এসেছি।

আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার পরিস্থিতিটা কেউ কখনো বুঝতে চায় নি। সবাই শুধু দূর থেকে আমাকে ভুল বুঝে 
ছেড়ে চলে গেছে। 

আমি যখন কারও সাথে রাগ করেছি সে আমার রাগটাই দেখেছে। রাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা
বুঝতে পারেনি। 

প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে আমি যখন হেসেছি, সবাই তখন আমার হাসিটাই দেখেছে। হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলোকে কেউ কখনো বুঝেনি।

খুব মন খারাপের দিনে যার কাছে সময় নিয়ে আমি সবকিছু বলতে চেয়েছি, সে বুঝেছে আমি তাকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেছি। ব্যাস, ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে সে তার মতো চলে গেছে। 

সবার দেওয়া আঘাত সইতে সইতে আমি যখন না পেরে অসহায়ের মতো নিভৃতে চোখের জল ফেলেছি। সেটা নিয়েও তারা উপহাস করতে তারা ছাড়েনি।

আসলেই আমি একজন অভিনেতা। ভালো থাকার মিথ্যে অভিনেতা। শুধু আমি নই প্রত্যেকেই তার জীবনের এক একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা- অভানেত্রী। ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয়ে আমরা প্রত্যেকেই সেরা।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৫. মানুষের পক্ষে কাউকে পুরো পুরি ভুলে যাওয়া সম্ভব না। হয়ত কয়েক মাস, কয়েক বছর, নয়তো কয়েক যুগ তারপর হুট করে আবার মনে পড়বে। মনে তাকে পড়বেই। হয়ত ৬০ বছর পরও হুমায়ুন ফরিদীর মতো আক্ষেপ নিয়ে বলবে- 'আমি এখনও একটা মানুষকে অসম্ভব ভালোবাসি।'

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৬. জীবনকে বৃথা ভেবে লাভ নাই। জীবনে অনেক কিছুই পাওয়ার কথা থাকে কিন্তু পাওয়া হয় না। আবার কিছু জিনিসের পাওয়ার কোন কথাই থাকে না, তবুও সেই মূল্যবান জিনিসগুলো আমাদের হয়ে যায়। মাঝে মাঝে চারপাশে এমন সব ঘটনা ঘটে মনে হয় জীবনের আসলে কোন
মানেই নাই। জীবন একটা প্যারা; শুধুই বিষাদময়। আশাপাশের এইসব মানুষগুলোরে ভাল্লাগবেনা। মানুষের সাথে কথা বলার, গল্প করার মন উঠে যাইবো। নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হতে মন চাইবো না। সবার থেকে দূরে গিয়ে একলা বাঁচতে মন চাইবো।

এইভাবে চলে যাবে অনেক দিন। তারপর একদিন দেখবেন মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া আপনার শখের গাছে গোলাপ ফুটেছে। বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস, শীতের নরম রোদ, ভরা পূর্ণিমায় আকাশের চাঁদ দেখে খুশিতে মন ভরে যাবে। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে একদিন অসময়ে ঝুম বৃষ্টি নামবে। সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আপনি ভাববেন জীবনটা আসলে বৃথা নয়,  জীবনটা সুন্দর, মেলা সুন্দর!

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৭. যাকে দেখতে আপনার বিশ্রী লাগে, ঘৃণা হয়। তাকে দেখেই  কেউ কেউ হয়ত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। মায়ায় পড়ে যায়। 

যার সাথে কথা বলতে আপনার বিরক্ত লাগে, তার সাথে একটুখানি কথা বলার জন্য কেউ কেউ হয়ত সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে।

যার সহজ- সরলতা দেখে আপনার তাকে ব্যাকডেটেড কিংবা খ্যাত মনে হয়। অন্য কারও কাছে তাকে ভালোলাগার একমাত্র কারণই হয়ত তার এই 'সহজ-সরলতা'। 

কালো রঙের মানুষটাকে দেখে আপনি যখন মুখ ফিরিয়ে নেন, ভালো লাগেনা। অন্য কারও কাছে হয়ত এই কালো মানুষটাই প্রিয়। সাদা তো আর সবার পছন্দের হয় না। কালো মানুষটাই হয়ত কারও প্রথম পছন্দ। 

আপনার কাছে যেমন গুড লুক, ড্রেসঅাপ, গ্লেমার প্রথম প্রায়োরিটি পায়, অন্য কারও কাছে হয়ত মনের সৌন্দর্যটাই প্রথম প্রায়োরিটি।

আসলে একটা কথা জানেন কি- একটা মানুষ কখনো সবার কাছে ভালো হতে পারে না, আবার একই সাথে এটাও সত্যি একটা মানুষ কখনো সবার কাছে খারাপ হয় না। সবার অপছন্দের হয় না। প্রত্যেকটা মানুষই কারও না কারও কাছে তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যে যেমন তাকে ঠিক তেমনভাবেই ভালো লাগার কেউ না কেউ ঠিকই আছে।

তাই কেউ যদি আপনাকে খারাপ বলে কিংবা অপছন্দ করে তাতে কষ্ট পাবেন না। কারণ আপনি একটা মানুষ, আপনি কখনো সবার পছন্দের হতে পারবেন না। এটা খুব স্বাভাবিক। শুধুমাত্র আপনি কেন পৃথিবীতে কেউই সবার কাছে পছন্দের হতে পারে না। কেউ না। তাই যারা আপনাকে ভালো ভাবে, যারা আপনাকে পছন্দ করে তাদেরকে নিয়েই ভাবুন। আর যার আপনাকে অছন্দ করে কিংবা খারাপ ভাবে তাদেরকে তাদের মতো করে ভাবতে দিন। নিশ্চয়ই কোন একিদন তারা নিজেরাই নিজেদের উত্তরটা পেয়ে যাবে। অপেক্ষা করুন!

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৮. আমাদের সবার বুকের ভিতর মস্ত বড় একটা আকাশ থাকে। সে আকাশে উড়ে বেড়ায় শত রঙের প্রজাপতি। ছোট্ট একটা নদী থাকে। যে নদীতে পালতোলা নৌকা চলে। স্নিগ্ধ শীতল বাতাস দেয়।

নির্দিষ্ট একটা মানুষ থাকে। তার জন্য সবসময় বুকের ভিতর ফাঁকা একটা জায়গা থাকে। তাকে ঘিরে হাজারো বাচ্চামো, পাগলামো, মান- অভিমানের গল্প থাকে। খুব সাজানো গোছানো ছোট্ট একটা সংসার থাকে। সেই ছোট্ট সংসারে অভাব থাকে কিন্তু কোন অপূর্ণতা থাকে না। বৃষ্টি এলে একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা, কোলে মাথা রেখে চাদের স্নিগ্ধ আলোয় ভেসে যাওয়া, শেষ বিকালে হুট খোলা রিকশায় পুরো শহর ঘুরে বেড়ানো, টঙ  দোকানে এককাপ চায়ের আড্ডা, ফুচকার খুনসুটি, এমন আরও কতশত বাহানা আর সুন্দর মুহূর্ত নিয়ে আমাদের স্বপ্নের সেই ছোট্ট সংসার। কত সুখ, কত আনন্দ নিয়ে আমাদের দিনরাত্রি।

সবার বুকের ভিতর এমন একটা মানুষ থাকে, এমন কিছু স্বপ্ন থাকে। জীবন সুন্দর সেই সব অনিন্দ্য কল্পনায়। মিনতি এই আমাদের বাস্তবতাটাও সুন্দর হোক। আসুক এমনই চিরচেনা মুহূর্ত, ছোট ছোট সুখ। বেঁচে থাকা হোক স্বপ্নের চেয়েও অনাবিল আনন্দের।♡︎

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




৯. কে তোমার জীবনে কতদিন থাকবে সেটা সবসময় তোমার গুরুত্বের উপর নির্ভর করে না। একপাক্ষিক গুরুত্ব দিয়ে কোন কিছু খুব বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। দেখো কাউকে হয়ত তুমি অনেক বেশিই গুরুত্ব দিয়েছো। তারপরও তুমি তাকে ধরে রাখতে পারোনি। আসলে যারা ছেড়ে যাবার তারা ছেড়ে যাবেই। তাদেরকে তুমি কখনোই ধরে রাখতে পারবে না। আবার যারা থেকে যাবার তারা হাজারো ঝগড়া, রাগ,  অভিমান শেষে কোন না কোন কারণ খুঁজে ঠিকই তোমার সাথে রয়ে যাবে। তাই কে পাশে থাকলো আর কে থাকলো না সেসব নিয়ে ভেবো না। নিজেকে গুরুত্ব দাও। কিছু মুখ ও মুখোশকে চিনতে শিখো। তোমার জীবন যে জিনিসগুলো তোমাকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয় আস্তে আস্তে সেগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দাও। ব্যাস নিজের মতো শান্তিতে থাকো, আনন্দ নিয়ে বাঁচো।♡︎

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১০. আমাদের চারপাশের সব মেয়েরা কিন্তু শুধু ভালোবাসার অভাবে ভোগে না। কারও কারও গল্পটা ব্যতিক্রমও হয়। দিনের শেষে তাদের স্বপ্নটা থাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে পারার।

তাদের খুব ইচ্ছে হয় নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের দায়িত্বটা নিতে। তাদের ইচ্ছে হয় নিজের টাকা দিয়ে বাবাকে একটা নতুন পাঞ্জাবী কিংবা মাকে একটা নতুন শাড়ি কিনে দেবার।
তাদের ইচ্ছে হয় একটা ছেলের মতো বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলতে বাবা নিজের প্রতি খেয়াল রেখো। আরেএ কিছু হবে না, আমি তো আছি বাবা।

এরকম মেয়েগুলোর কাছে ভালোবাসা শুধুই জীবনের একটা অংশ মাত্র। তাই নিজের ভালোবাসার কথা চিন্তা করে অশ্রু ফেলার মতো সময় তাদের থাকে না। তারা সবসময় পরিবারের মানুষগুলোর কথা চিন্তা করতে করতে নিজের ভালোথাকা কিংবা নিজের ভালোবাসার কথাই ভুলে যায়।

তাদের কাছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে বসে দামী কোন রেস্টুরেন্টে  খাওয়ার চেয়ে খুব ছোটখাটো একটা হোটেলে বাবার পাশে বসে খাওয়ার আনন্দটা অনেক বেশি। তারা স্বপ্ন দেখে খাবার শেষে বাবা যখন বিল দিতে যায় তখন বাবাকে বলতে- 'বাবা আজকের বিলটা আমি দেই?'

এরকম মেয়েগুলোর কাছে বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া দামী শাড়ি পরে তার সাথে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে নিজে কষ্ট করে টিউশনি করে নিজের মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিজ হাতে মাকে সেই শাড়িটা পড়িয়ে দেওয়ার আনন্দটা অনেক  বেশি। 

আর ঠিক সেই মেয়েটাকে নিয়ে যখন সমাজের মানুষগুলো  কানাঘুষা করতে থাকে এতো বয়স হয়ে গেছে তারপরও কেনো মেয়েটা বিয়ে করছে না বলে তাকে নিয়ে যখন বাজে কটুক্তি করা হয়, কিংবা একটা মেয়ে হয়ে তার কেন এতো কিছু ভাবতে হবে বলে তাকে নিয়ে যখন বাজে মন্তব্য করা হয় তখন মেয়েটা অসহায়ের মতো রাতের আঁধারে অশ্রু ভেজায়। কষ্টের এক প্রবল তীব্রতা তাকে ভীষণ ভাবে অাঘাত করে।

তখন তার খুব করে বলতে ইচ্ছে করে আমি আমার পরিবারের মানুষগুলোর দায়িত্বটা নিতে চাই। আমি আমার ছোট ভাইটার জন্য কিছুু করতে চাই। আমি আমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমি আমার স্বপ্নগুলোর বাস্তবে পূর্ণতা দিতে চাই। আমিও এই সমাজে মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার নিয়ে একটুখানি বাঁচতে চাই!

হয়ত এমন আরও অনেক কিছুই তাদের বলার থাকে। কিন্তু বলতে পারার সেই স্বপ্নের জায়গাটাই সব মেয়েরা পৌঁছাতে পারে না। তার আগেই কারও কারও জীবন নামক ঘড়িটা থেমে যায়। খুব বাজে ভাবে হেরে যায় সেই মেয়েগুলো আর সেই সাথে মৃ*ত্যু হয় মনের ভিতর গেঁথে রাখা তাদের প্রত্যেকটা স্বপ্নের!

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১১. কারও মন ভেঙে দিয়েন না, কাউকে স্বপ্ন দেখিয়ে ঠকাবেন না। কথা না রাখতে পারলে কাউকে কথা দিবেন না। জীবনে এমন কিছুই করবেন না যেন দিনশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। 

মানুষ খারাপ বলুক, ভুল বুঝক, ছেড়ে যাক যে যাই করুক নিজের কাছে নিজে সৎ থাকবেন। নিজের কাছে নিজে সৎ থাকতে পারাটা ভীষণ আনন্দের এবং গর্বের। হ্যাঁ অনেকেই আপনাকে ঠকিয়েছি কিন্তু আপনি প্রতারক নন। যে যাই বলুক দিনশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কখনো অপরাধী মনে হবে না। মানসিক শান্তি নিয়ে ঘুমাতে যেতে পারবেন।

কিছু কথা সবসময় মনে রাখবেন কারও জন্য ভালো কিছু করতে না পারেন, খারাপ কিছু করবেন না। কারও সুখের কারণ না হোন, আজন্ম মন খারাপের কারণ হবেন না। কারও প্রশংসা করতে না পারেন, কারও দুর্নাম করবেন না। কাউকে ভুল না বুঝে, সমালোচনা না করে পারলে পাশে থেকে তাকে শিখিয়ে দেন। তা না পারলে চুপ থাকুন। জীবনের এই বিষয়গগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন দেখবেন যে যাই বলুক আপনার কাছে আপনি কখনো অপরাধী হবেন না, মানসিক অশান্তিতে ভুগবেন না। 
অন্যদের চেয়ে আনন্দে থাকতে পারবেন, ভালো থাকতে পারবেন।  

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১২. একটা সময়ে গিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি মানুষের কাছ থেকে যত দূরে থাকবেন আপনি আসলে তত ভালো থাকবেন। মানুষের কাছাকাছি গেলে প্রথম দিকে মানুষ খুব আগ্রহ দেখায়, গুরুত্ব দেয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আগ্রহ কমে, গুরুত্ব কমে। অবহেলা বেড়ে যায়। 

মানুষ আসলে এমনই যেটাকে সে হারিয়ে ফেলে, বা যেটা তার হাতের নাগালের বাহিরে সবসময় সে সেটাকেই মূল্যবান মনে করে। আর যেটা খুব সহজে পেয়ে যায় তার মূল্যায়ন করে না। তাই মানুষের কাছ থেকে রেসপেক্টেবল দূরুত্বে থাকা ভালো । এতো গুরুত্ব থাকে, সম্মান থাকে। বহুদিন পর হঠাৎ দেখা হলে আদর যত্ন পাওয়া যায়। খাতির করে। 

সবার কাছে নিজেকে খুব বেশি সহজলভ্য করে তুলবেন না। আবার অতিরিক্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্নও হতে যাবেন না। সবার সাথে মিশবেন, কিন্তু সবাইকে আপন ভাবতে যাবেন না। 
আর যত সম্ভব একটু কম বলবেন, কম বুঝবেন দেখবেন জীবনে অনেক সমস্যাকেই পাশ কাটিয়ে আসতে পারবেন। ঝামেলায় কম পড়বেন, ভালো থাকতে পারবেন।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র



১৩. একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এটা আসলে চরম মিথ্যে কথা। একদিন কোন কিছুই ঠিক হয় না। হয়ত ক্ষত মুছে যায় কিন্তু দাগটা ঠিকই রয়ে যায়।

কিচ্ছু ঠিক হয় না। শুধু আমরা অভিনয় করাটা শিখে যাই। যে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আসলে কোন কিছুই ঠিক হয়না। তবুও আমরা মানিয়ে নেই। অভিযোগ করা বন্ধ করে দেই। প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলি। নিজেকে নিজের মাঝে বন্দী করে ফেলি। এমন ভাবে থাকি যেন কিছুই হয়নি। সবকিছুই ঠিকঠাক!

মানুষ তার জীবনের বড় একটা অংশ শুধু অভিনয় করে কাটায়। যার অভিনয় যত সুন্দর জগৎ সংসারে সে তত বেশি সুখী মানুষ। অনেক কিছু ঠিক নেই তবুও আপনাকে অভিনয় করে যেতে হবে সবকিছু ঠিক আছে। আপনার ভিতরটা ভেঙে চুরে যাচ্ছে তবুও আপনাকে ঠিকই হাসতে হবে। আপনি বলতে পারবেন না আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।

আমরা শুধু ঠুনকো কিছু আশা নিয়ে একটা জীবন বেঁচে থাকি। যে একটা সময় আসবে যখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এক জীবনের যতসব অপ্রাপ্তি- দীর্ঘশ্বাস সব পূর্ণতা পাবে। আমরা অভিনয়হীন হাসতে পারব; বাঁচতে পারব। কিন্তু সবার জীবনে এই স্বর্ণালী সময়টা আসে না। প্রার্থনা করি সেই দিনটা সবার জীবনে আসুক।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১৪. আমি খুব স্বার্থপর মানুষ! কেউ আমাকে গুরুত্ব না দিলে আমিও তাকে গুরুত্ব দেই না। কেউ আমাকে মনে না রাখলে আমিও তাকে মনে রাখি না। কেউ আমার মেসেজের রিপ্লাই তাড়াতাড়ি করলে আমিও চেষ্টা করি তাকে দ্রুত রিপ্লাই করতে। কেউ মেসেজ সিন না করে রেখে দিলে আমিও তাকে উপেক্ষাই রেখে দেই। এবার আমি যতই ফ্রি থাকি না কেন! আমি ছাড়া যদি আপনার জীবন স্বাভাবিক ভাবে চলে যায়। তাহলে আপনি ছাড়াও আমার জীবন স্বাভাবিক ভাবে চলে যাবে। আমার কাছে প্রায়োরিটি ম্যাটার করে।
আপনি আমাকে যতটুকু প্রায়োরিটি দিবেন আমিও আপনাকে ঠিক ততটুকুই প্রায়োরিটি দিবো।

লেখা- মেহেদী হাসান শুভ্র




১৫. যে মানুষটা তোমাকে ছেড়ে গেছে সে মানুষটার কাছে তুমি ভীষণ ভাবে ঋণী । কারণ সেই মানুষটা ছেড়ে না গেলে তুমি হয়ত আজ নিজেকে এতটা পরিবর্তন করতে না। দেখো পরিবর্তনটা আমাদের সবার জীবনেই আসে। কারও না কারও কাছ থেকে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার পর কিংবা কষ্ট পাওয়ার পরই আমরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নেই। স্বাভাবিক ভাবে কখনো আমাদের জীবনে পরিবর্তন আসে না!

কারও কাছ থেকে ভীষণ আঘাত পাওয়ার আগে, কাউকে বিশ্বাস করে খুব বাজে ভাবে ঠকে যাওয়ার আগে আমরা আমাদের চারপাশের সবাইকেই বিশ্বাস করি। আমরা ভাবি আমাদের চারপাশের সবাই আমাদেরকে ভালোবাসে। সবাই আমাদের ভালো চায়। কিন্তু কারও কাছে ঠকে যাওয়ার পর, বিশ্বাস করে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার পর আমরা বুঝতে পারি আসলে চারপাশের সবাই আমাদের ভালো চায় না, সবাই আমাদেরকে ভালোবাসে না, সবাই বিশ্বাসের মর্যাদা দেয় না। তখন আমরা আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে চিনতে শিখি, বুঝতে শিখি।

জীবনে কারও কাছ থেকে ভীষণ ভাবে আঘাত না পেলে, কাউকে বিশ্বাস করে খুব বাজে ভাবে না ঠকলে আজ হয়ত আমরা এতো বড় হয়ে উঠতে পারতাম নাহ। হয়ত কাছের মানুষগুলোকেও খুব ভালো ভাবে চিনতে পারতাম না কখনো। তাই যে মানুষটাকে তোমাকে ছেড়ে গেছে, তোমাকে খুব বাজে ভাবে আঘাত দিয়েছে, তোমাকে ঠকিয়েছে সেই মানুষটার কাছে তুমি ভীষণ ভাবে ঋণী। সেই মানুষটাকে তুমি ধন্যবাদ দাও। তাকে অতীত নয়, তাকে অভিজ্ঞতা বানিয়ে নাও।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১৬. আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ নিজেকে  ভালোবাসতে পারা! আমরা কেউই নিজেকে পরিপূর্ণ ভালোবাসতে পারি না। কেউ আমাদেরকে ছেড়ে ছুড়ে চলে গেলে আমরা নিজেদেরকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেই,  অবহেলা করি। অথচ খোঁজ নিলে হয়ত দেখা যাবে নিজের সবটা দিয়েই আমরা তাদেরকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। তবুও আমরা নিজেদেরকেই গুরুত্বহীন ভেবে বসে থাকি।

কেউ অসুন্দর বললে আয়নায় তাকিয়ে নিজের খুঁত বের করতে ব্যস্ত হয়ে যাই। অথচ আমরা এটা জানিনা সুন্দরের প্রতীক চেহারার চেয়ে মনে বেশি প্রতিফলিত হয়। যারা কাউকে অসুন্দর বলে ছোট করে প্রকৃত অর্থে তারাই অসুন্দর, কুৎসিত। 

কেউ নিজেদের ব্যাপারে দুটা মন্দ কথা বললে আমাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে গুড়িয়ে যায়। যাচাই করে দেখিনা আসলে আমরা সেই মানুষটা কি না যেটা অন্যরা বলে, অন্যরা দেখে। ঐ যে একপলক দেখে অল্পটুকু জেনে অন্যরা আমাদেরকে জাজ করে ফেলে আসলেই কি আমরা সেই মানুষটা! তা আমরা খুঁজে দেখিনা। বরং সেটা ভেবে মন খারাপ করে বসে থাকি, থেমে যাই।

আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো আমাদেরকে যতটা ঠকায়, যতটা ক্ষতি করে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি আমরা নিজেরা নিজেদেরকে ঠকাই; নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করি।

আমরা আজন্মকাল অন্যের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি ভালোবাসার কাঙাল হয়ে। এ দুয়ারে ও দুয়ারে ভালোবাসা খুঁজে ফিরি অথচ নিজের জন্য নিজেকে যতটা ভালোবাসা দরকার ছিলো তা আমরা কেউই ভাসতে পারিনা। তাই দিনশেষে অন্য কারও ভালোবাসা পাওয়া, না পাওয়ার থেকে নিজেকে নিজে ভালোবসাসতে না পারার আফসোসটাই বেশি পুড়ায়!

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র




১৭. জীবনে কখনো কারও প্রতি কোন অভিযোগ, কষ্ট পুষে রাখা উচিৎ না। জীবন নামক গল্পটা হুট করে কখন থেমে যায় তা আমরা কেউ জানি না। তাই সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে হাসি মুখে জীবনটা কাটানো উচিৎ। হ্যাঁ অনেকেই আপনাকে ঠকিয়েছে, আপনাকে কষ্ট দিয়েছে, অবহেলা করেছে, অাঘাত দিয়েছে। তবুও তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমার চেয়ে নিঃস্বার্থ প্রতিশোধ আর কিছুই নেই।

লেখা- মেহেদী হাসান শুভ্র




১৮. প্রতিটি মানুষেরই কিছু ব্যক্তিগত দুঃখবোধ আছে। যার সাথে পৃথিবীর আর অন্য কারও যোগাযোগ নেই; জানা- শুনা নেই।  যা তার একেবারেই একান্ত ব্যক্তিগত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সেই দুঃখবোধ সে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। তারপর একটা সময় আসে যখন সেই দুঃখটাকেও সুখের মতো মনে হয়। কেমন যেন নিজের সাথে মিশে যায়। আপন আপন লাগে। কষ্ট পেলেও ছাড়া যায় না, ভুলা যায় না, নিজের সাথেই আজীবন রয়ে যায়।

লেখা- মেহেদী হাসান শুভ্র





১৯. কে পাশে থাকবে- না থাকবে সেটা সময়ই বলে দিবে। প্রতিশ্রুতি তো অনেকেই দেয় পরিস্থিতি আসল মানুষ চিনিয়ে দেয়। তাই কেউ পাশে আছি বললেই খুশিতে গদগদ হয়ে যাবেন না। খারাপ পরিস্থিহিতে দেখবেন সেই মানুষটা পাশে নাও থাকতে পারে।

পাশে আছি বলা আর পাশে থাকা দুটির মাঝে কিন্ত অনেক প্রার্থক্য আছে। কিছু মানুষ শুধু বলার জন্য বলে আমি তোমার পাশে আছি কিংবা পাশে থাকব। কিন্তু খারাপ সময় আসলে তারা কেউই পাশে থাকে না।

তাই সবসময় কাউকে পাশে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। কেউ যদি পাশে থাকে তাহলে তো ভালো, আর না থাকলে আরও ভালো। নিজের জন্য নিজেই যথেষ্ট। এইভাবে ভাবতে পারলে জীবনটা সহজ হয়ে যায়।

জীবনে সমস্যা আসবে, কাছের মানুষ দূরে যাবে, আপন পর হবে। জীবনে এমন অনেক কিছুই হয়। কাউকে পাশে পাইনি, বা কেউ পাশে নেই এগুলা ভেবে আক্ষেপ করে বসে থাকলে কিছুই হয় না। বরং কাউকে ছাড়াই এগিয়ে যেতে শিখতে হয়। ব্যাস আর কিচ্ছু না!! 

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র





২০. দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি আমরা তাই না? জীবনের আনন্দগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যস্ততা, বাস্তবতা, অভাব, শূন্যতা সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে নিতে আজ আমরা বড্ড ক্লান্ত। জীবনের এতটুকুতেই যেন আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। মনে হয় কার কাছে যাই, কি করি, কোথায় একটু শান্তি মিলবে!

হন্যে হয়ে ঘুরছি, ফিরছি, খাচ্ছি, চলছি কিন্তু আসলেই আমরা ভালো নেই। যেন নিজের কাছেই নিজে অচেনা কেউ। চারপাশের এতো মানুষজন কিন্তু সবাই কেমন জানি। কারও মাঝে কোন মায়া নেই, টান নেই, সবাই যেন ঠকাতে ব্যস্ত।  রোজ রোজ এসব দেখতে দেখতে কেমন যেন সবার থেকে বিশ্বাসটা উঠে যাচ্ছে। হয়ত একটা সময় আসবে যখন আমরা খুব সহজে কাউকে আর বিশ্বাসই করতে পারব না! 

কখনো কখনো দম বন্ধ হয়ে আসে। জীবনটা আর চলে না। তবুও আমরা চালিয়ে নেই। কারণ আমরা জানি আমাদেরকে এভাবেই বাঁচতে হবে। কিন্তু মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে আমরা এভাবে বাঁচতে চাই না। আমরা একটু মানসিক শান্তি নিয়ে সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু কে শুনবে? হয়ত শুনার মানুষগুলোও হন্যে হয়ে আমাদের মতোই কাউকে খুঁজছে। 

আমরা বেঁচে অাছি। কিন্তু ভালো আছি কিনা এই প্রশ্নটা করা অবান্তর! কোথাও কেউ ভালো নেই! এই ভালো না থাকার গল্পটা আমাদের একার না; সবার। বাহিরে থেকে আমরা মানুষটাকে যেটা দেখছি সেটা একটা আবরণ মাত্র। অভিনয়! বেঁচে থাকার অভিনয়, সুখে থাকার অভিনয়। কি সুনিপুণ অভিনয় করে যাচ্ছে মানুষ। বুঝার উপায় নেই। অভিনয় করেই জীবন চলছে। চলুক.....

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র





২১. যেটা আমাদের হওয়ার নয় সেটাকাই আমরা সবচেয়ে বেশি চাই। যারা আমাদেরকে মূল্য দেয় না তাদের কাছেই আমরা নত হয়ে থেকে যেতে চাই।

কেউ গুরুত্ব দিলে তাকে দূরুত্বে ঠেলে দেওয়া আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। আবার দিনশেষে অন্য কারও কাছে গুরুত্বহীন হয়ে অসহায় হয়েই আমরা বাঁচি। সকল আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তার কাছে গুরুত্ব পেতে চাই।

মানুষ বরাবরই এমন! আকাশ ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষা বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখার আনন্দকে সবসময়ই ছোট করে দেয়। বেঁচে থাকার আনন্দের চেয়ে জগতের সুখ দুঃখ এগুলোই আমাদের কাছে বড়।

পুরো পৃৃথিবী আমাকে ভালোবাসে তবুও ঐ যে নির্দিষ্ট একজন আমাকে উপেক্ষা করলো। আমাদের সব অপেক্ষা শুধু তার জন্য। উপেক্ষিত স্থানে মায়ার প্রলেপ দিয়ে আমরা ডেকে দিতে চাই আমাদের সহস্র দুঃখবোধ, আমাদের সব না পাওয়া! গুরুত্ব না পেলেও সেখানেই সহসা মায়াজাল বুনে যাই আমরা। এমন কেন আমরা!!

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র



NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
NEXT ARTICLE Next Post
PREVIOUS ARTICLE Previous Post
 

Delivered by FeedBurner