Leave a message
> কৃষ্ণ গহ্বর (প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ অবলম্বনে)
-->

কৃষ্ণ গহ্বর (প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ অবলম্বনে)


"কোরআন যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, এটা কে বলেছে..??" নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছে।
"নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যে আল্লাহর প্রেরিত অবতার এটা কোথায় পেয়েছো..??" কোরআনে পেয়েছি।
এবার একটু চিন্তা করে দেখ তো ধর্মে এর চেয়ে বড় জোকস আর কি হতে পারে..??
ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছি আমি আর আকিব। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন গুলো আকিবের দিকে ছুঁড়ে দিলাম।
তার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না, অবশ্য প্রতিক্রিয়া দেখানোর মত কিছুই নেই। মাঝে মাঝেই আমি তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে ফেলি।
সে ও সাবলিল ভাবে উত্তর দেয়।
আকিব একটু আহত সুরে মিনমিন করে বললো, "তুই কি বলতে চাস যে কোরআন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বানী নয়..?"
"হ্যাঁ রে বোকা,, এটাই বলতে চাই। কোরআন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বানানো একটা বই, আর কিছুই না"
আকিব একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, তুই কি জানিস নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তাহলে এটা যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের থেকে না আসতো তাহলে সে এটা কীভাবে রচনা করলো..??
"উত্তর টা খুবই সোজা, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কয়েকজন সাহাবি ছিলো, এরা শিক্ষিত ছিলো। এদের সাহায্যে মুহাম্মদ (সাঃ) কোরআন রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছে"
"ও তাই..? যদি কোরআন অাল্লাহর বানী না হতো, তাহলে এটাতে অনেক অসংগতি, ও ভুল থাকতো। তুই কি এমন একটা আয়াত দেখাতে পারবি যেখানে অসংগতি বা ভুল আছে। হোক সেটা বিজ্ঞানের সাথে অসংগতি নয়তো ব্যাকরণগত ভুল"
কথা গুলো খুব দৃঢ়তার সাথেই বললো আকিব।
"আচ্ছা কোরআনে যে আবাবিল পাখির কংকর নিক্ষেপের কথা, মুসা নবী সাগর দুই ভাগ করেছে, এবং হাতের লাঠিকে নিক্ষেপ করলে সাপ হয়ে যেত। ইউনুস নবী মাছের পেটে জীবিত ছিলো ইত্যাদি কাল্পনিক ঘটনার কথা বলা হয়েছে, তাছাড়া জ্বীন, ফেরেস্তা এগুলো কি আদৌ বিশ্বাস যোগ্য..?? তুই কি প্রমাণ করতে পারবি যে এগুলো আসলেই সত্য..?? "
আকিব বললো এগুলো হলো অলৌকিক ঘটনা, এগুলো সত্য কি না মিথ্যা প্রমাণ করতে হলে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে। আর এটা আদৌ সম্ভব নয়, তাই এগুলো মিথ্যা সেটাই বা কি করে বলবি,কেননা এগুলোর কোন ব্যাখ্যা বিজ্ঞান বা মানুষ দিতে পারে না।
"তাহলে কি তুই গুলো অন্ধভাবে বিশ্বাস করবি..?"
"মোটেও না, কেননা কোরআনের বাকী অন্য একটা আয়াতও যদি মিথ্যা প্রমাণিত হতো, তাহলে এগুলো নিয়েও সন্দেহ পোষন করা যেত, কিন্ত কোরআনের অন্য একটা আয়াতও মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। সুতরাং এগুলো যে মিথ্যা সেটা বলার কোন অবকাশ নেই, কেননা এগুলোর ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই।
" আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম, তুই নিশ্চই জানিস সম্প্রতি ১০ এপ্রিল,২০১৯ ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্কোপ কোলাবোরেশান 'ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের' ছবি প্রকাশ করেছে, তার আগে স্টিফেন হকিং ও আইন্সটাইন তাদের তত্ত্বে ব্ল্যাক হোলের ধারনা দেন। এখন তুই নিশ্চয়ই বলবি যে, ব্ল্যাক হোলের কথা ১৪৫০ বছর আগে কোরআনে ছিলো..??"
আকিব মৃদু হেসে বললো, কোরআন কোন বিজ্ঞানের বই নয় যে এখানে বিজ্ঞানের সকল দিক নিয়ে ব্যাখ্যা করা থাকবে। কোরআন নাজিল হয়েছে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য। এটা বিশ্বাসীদের জন্য দিক নির্দেশনা।
একজন রিকশাওয়ালাকে যদি থিওরী অব রিলেটিভিটি বুঝানো, তাহলে সে এটা কখনই বুঝবে না। কিন্তু সে যদি কোরআনের নির্দেশনা মত জীবন যাপন করে, হালাল রোজগার করে, অন্যের হক নষ্ট না করে, তাহলে সেও জান্নাত পাবে। এর জন্য তাকে থিওরী মুখস্ত করতে হবে না। কোরআন সকল সময়ের জন্য এবং সকল মানুষের জন্য নাজিল হয়েছে
এটা শুধু বিজ্ঞান মনস্কদের জন্য নাজিল হয় নি।
আর হ্যাঁ তুই কৃষ্ণ গহ্বরের কথা কোরআনে আছে কি না জানতে চেয়েছিলি না..?? আমি যদি বলি কোরআনে ১৪৫০ বছর আগে এটা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাহলে কি তুই খুব বেশী অবাক হবি..??
"আমি খানিকটা অবাকই হলাম, এই ছেলে বলে কি..?? এটা কি আদৌ সম্ভব..??
আকিব চায়ের কাপের শেষ চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলো, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর হলো মহাকাশের এমন একটি স্থান যেখানে সূর্যের চেয়ে কয়েকশো গুন বড় নক্ষত্রও যদি সেখানে পতিত হয়, তাহলে সেটা আর ফিরে আসতে পারবে না। এমনকি সেখানে যদি আলোও পরে তা আর ফিরে আসে না মধ্যাকর্ষন বলের প্রভাবে।
নক্ষত্র, তারকারাজি একটা নির্দিষ্ট সময় পর নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ব্ল্যাক হোলে পতিত হয়।
এবার দেখা যাক ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে কোরআন কি বলে,
" আমি (আল্লাহ) শপথ করছি, নক্ষত্র সমূহের পতিত হওয়া স্থানের__সূরা ওয়াকিয়া-(৭৫)"
"শপথ করছি, গোপন হয়ে যাওয়া তারকা বা নক্ষত্রের__সূরা তাকবির-(১৫)"
তাছাড়া, সূরা তাকবিরের ১ম ও ২য় নম্বর আয়াতে বলা আছে, " সূর্য যখন আলোহীন হয়ে পরবে, তারকারাজি খসে পরবে"
একটু খেয়াল করে দেখ,নক্ষত্রের পতিত হওয়া স্থান বলতে ব্ল্যাক হোলকে বুঝানো হয়েছে,যেখানে নক্ষত্র বা তারকারাজি পরলে গোপন তথা হারিয়ে যায়।
চিন্তা কর মানুষ মাত্র কিছু দিন আগে ব্ল্যাক হোলের কথা জেনেছে। কোরআন যদি মুহাম্মদ (সাঃ) এর বানানো কিতাব হতো, এটা যদি আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী বানী না হতো তাহলে, এগুলো কোরআনে কোথা থেকে আসলো..??
এরকম হাজারো নিদর্শন আছে,যেগুলো প্রমাণ করে কোরআন মানুষের বানানো কিতাব নয়, মাত্র একটার কথা বললাম।
কেউ একটা নিদর্শন দেখেই ঈমান আনে, কেউ হাজারটা দেখার পরও ঈমান আনে না।
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, "তারা বধির,মূক, অন্ধ। অতএব তারা কখনই সত্যের পথে ফিরবে না। - সূরা বাকারা-(১৮)

এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো আকিব।
আমি নিশ্চুপ হয়ে রইলাম, মাথাটা ভনভন করতে লাগলো, বৃষ্টি থেমে গেছে। মসজিদ থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বনি কানে ভেসে আসতে লাগলো। অন্য দিনের চাইতে আজকে আজানের সুরটা অন্যরকম মনে হলো। কেমন জানি শিহরণ জাগছে। মনের ভিতর কম্পন শুরু হলো। খানিকটা ঘোরের মধ্যে পরে গেলাম।
আকিব ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো, আজান হচ্ছে আমি উঠলাম। এই বলে সে হাঁটা ধরলো। আমিও তার পিছে পিছে হাঁটতে লাগলাম। আমার দিকে তাকাতেই মৃদু হেঁসে বললাম, "চল যোহরের নামাজটা পড়ে আসি"

(প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ অবলম্বনে)

Writer:- শামীম আল হাছান
 

Delivered by FeedBurner

a