> বৈশাখ নামা
-->

বৈশাখ নামা


-ভাবী আপনি এসব আনলেন দোকান থেকে?
-আর কি করবো? আমার ছেলেটা যে খুব ভালো! এমন সুপুত্র পেটে ধরেছি যে দোকান থেকে সদাই গুলোও আমাকে আনতে হয়।
'আমার বান্টিটা খুব লক্ষ্মী। এসব কাজ গুলো সে নিজেই করে দেয়। মেয়ে হয়েও আমাকে কখনো ছেলের অভাব বুঝতে দেয়না' বলেই আম্মাকে ফুসলিয়ে দিলো আন্টি। এরপর থেকে আর ঘুমাতে পারছিনা। ঘুম থেকে উঠে জানলাম আজ পহেলা বৈশাখ। তারপর মনে হলো বছরের প্রথম দিন আম্মার সাথে এমন করা ঠিক হয়নি।
কোন রকম আম্মার মন ভুলিয়ে বললাম চলো আজকের দিনটা একটু অন্যভাবে উৎযাপন করি।
কিভাবে?
আমরা রান্নার প্রতিযোগীতা করতে পারি!
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আম্মার সাথে রান্নার প্রতিযোগীতা হচ্ছে। কিচেনে বড় করে লিখে দিলাম 'মা ছেলের রান্না যুদ্ধ'।
প্রতিযোগীতাটা নিয়ে ফেসবুক লাইভে গেলে ভাইরাল হয়ে যাবো। যাবো নাকি?
ঘাড় বাকা করে আম্মা বললো চটকনা চিনোস?
চটকনা চিনি বলে আর কোন কথা বাড়ালাম না। সকালের পর থেকে এটা সেটা রান্না করে যাচ্ছি। সমস্যা হচ্ছে আমার রান্না করা কোন কিছু আম্মা টেস্ট করে দেখছেনা। বলে তুই প্রতিযোগী, তুই নিজেই বিচারক। দুজনের রান্না খেয়ে বলবি কোনটা ভালো হইছে।
নিজের রান্না নাকি সব সময় নিজের কাছে ভালোই লাগে। তাই বিচার করতে পারছিনা কে সেরা!
সকালে ডিম ভাজি করে দেখলাম ডিম মিষ্টি হয়েছে। লবন না দিয়ে চিনি দিয়ে ডিম ভাজি করলে কেমন হয়, সেই চেষ্টা ছিলো। ওতোটা খারাপ না। ডিম ভাজিকে পরোটার মতো মনে হয়। তবে লবনের জায়গায় লবন দিতে হয়, চিনির জায়গায় চিনি। আম্মা ঠিক বলছিনা?
আম্মা পাত্ত্বা না দিয়ে দেখলাম ফোনে বলে যাচ্ছে, 'দুপুরে বৌকে নিয়ে চলে আয়। একাএকা বাসায় থাকিস না।'
বুঝলাম মামা মামী বাসায় আসবে। নতুন বছরের আনন্দ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে হয়। রান্না করা খাবার নিয়ে বান্টিদের বাসায় গেলাম। বান্টির মা আন্টি আমাকে দেখে খুশী হলো কিনা বুঝতে পারিনি। তবে যখন রান্না করা মাংস হাতে দিয়ে বললাম আম্মা পাঠিয়েছে আন্টি তখন একটা চড়া হাসি দিয়ে বললো, 'কি দরকার ছিলো এসব কষ্ট করার'!
'চা খেয়ে যাও সজিব'।
আম্মার সাথে প্রতিযোগিতা না করে চা খাওয়া অনেক ভালো।
আন্টি চা নিয়ে আসলো, সাথে বান্টিও আসলো।
'আন্টি আমার মাঝে মাঝে কষ্ট লাগে জানেন?'
'কেনো বাবা'?
'না মানে, মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে ভালো হতো। মেয়েদের পিছনে কতো ছেলে ঘুরে। আর একটু সুন্দরী মেয়ে হলে তো কথাই নেই। লাইন লেগে যায়। ছেলে হলাম, একটা মেয়েও পাত্ত্বা দেয়না। পরের জন্মে মেয়ে হবো, ছেলে ঘুরাবো'!
বান্টি ফিক করে হেসে দিতে গিয়ে মুখ দিয়ে চা পরে গেলো।
বান্টিকে বললাম, বিয়ের পর চা মুখে নিয়ে জামাইর সামনে কখনো হেসো না। তালাক দিয়ে দিতে পারে! খুব বিশ্রী লাগে দেখতে!
এটা শুনার পর আন্টি হো হো করে হেসে দিলো।
আন্টি যদি সব সময় আম্মার কাছে আমাকে নিয়ে ফুসলিয়ে না দিতো তবে আমি তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সরল মানুষের তালিকায় তৃতীয় রাখতাম। সব সময় মুখে হাসি চেপে থাকে। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। তবে প্রত্যেকটা পাশের বাসার আন্টি ছেলে মেয়ে নিয়ে গর্ব করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এজন্য সরল হলেও সে আমার চোখে ভিলেন।
'ভাইয়া এভাবে বলতে পারলেন? আমি কি এতোটাই বিশ্রী?'
বান্টিকে দেখার পর মনে হলো সে কষ্ট পেয়েছে। মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা। রুপ নিয়ে তাদের সামনে মশকরা যায়না।
'আরেহ কি বলো? ফাইযলামি করেছি বুঝোনা? দেখলানা আন্টি হাসলো? তুমিতো সুন্দরী। আমি জানিতো কত ছেলে তোমার পিছনে ঘুরে!'
' ছিঃ ভাইয়া যে কি বলেন! মুখে কিছু আটকায়না! আমার পিছনে কেউ ঘুরেনা।'
'কেন? তোমার সামনে যে একটা সুদর্শন ছেলে বসে আছে দেখছোনা?' কথাটা মনে মনে বললাম। বান্টিকে বুঝতে দিলাম না যে আমার মুখে কথা আটকায়!
মনের কথা মনে রেখে বাসায় চলে আসলাম।
মামা মামী চলে এসেছে। বৈশাখের শাড়ীতে মামীকে বৈশাখী বৈশাখী লাগছে।
'বৈশাখী মামী কেমন আছেন?'
মামা বেকে বললো, মামীর আগে যে মামা বইসা আছে দেখোছ না? আমারে জিগাছ না কেন কেমন আছি?
আপনি কি শাড়ী পড়ছেন যে জিজ্ঞাসা করবো? যান আম্মার কাছ থেকে একটা শাড়ী পড়ে আসেন, তারপর বৈশাখী মামা কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করবো।
বেয়াদবি করা তর নেশা। বেয়াদব কোথাকার।
মামী মুচকি হেসে বললো, সজিব আজ নাকি তুমি রান্না করেছো?
ডাবল হাসি দিয়ে বললাম জ্বী মামী করেছি।
'ফ্রেশ হয়ে আসো জ্বলদি। পাঞ্জাবী পড়ো। বৈশাখী আমেজে সবাই একসাথে খাবো!'
অনেকদিন পর মামা, মামী সহো একসাথে খেতে বসলাম। যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করে তোমার কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য জিনিষ কি? আমি নির্দ্বিধায় উত্তর দিবো, আম্মার হাতের রান্না। বিশেষ করে মাংস রান্না। বেগুন ভাজা আর ইলিশের দিকে না তাকিয়ে মামা মাংস দিয়েই শুরু করলো। শুনেছি মামা আম্মার বিয়ের সময় খুব কান্না করেছিলো, তার বোনের হাতে রান্না খেতে পারবেনা সেজন্য। তাই যখনি সুযোগ হয় মামা নাক ডুবিয়ে খায়।
এর মধ্যে বান্টি দৌড়ে বাসায় ঢুকলো! থতমত খেয়ে আম্মাকে বললো, আন্টি আপনি কি ভুলে মাংসের মধ্যে অন্য কোন মশলা দিয়ে ফেলেছিলেন?
আম্মা অবাক হয়ে বললো কেনো মা?
-আপনার দেওয়া মাংস খেয়ে আম্মু ঘনঘন ওয়াশরুমে যাচ্ছে!
-আমিতো কোন মাংস দেইনি মা!
-না আন্টি সজিব ভাইয়া দিয়ে আসলো তো!
আম্মা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো।
ভয়ে আমি সত্য বলে দিলাম।
'হয়েছে কি আম্মা, তুমিতো আমার রান্না টেস্ট করতে চাওনা। তাই আমার রান্না টেস্ট করার জন্য আন্টির কাছে নিয়ে গেলাম। আন্টিরও তো তোমার রান্না করা মাংস খুব পছন্দের। তো সাথে একটু হজমনাশক পাউডার মিশিয়ে দিয়েছি যেন তার পেট থেকে সব পকপকানি গুলো বের হয়ে যায়! ভালো হয়েছেনা আম্মা? মামা আসবে শুনে তোমার গুলোতেও মিশিয়ে দিয়েছি!'
এ কথা শুনে মামা এক লাফে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মনে হচ্ছে বমি করা শুরু করেছে।
আম্মা দৌড়ে গিয়ে জুতা হাতে নিলো। মামী আম্মাকে আটকে রাখতে পারছেনা। বান্টি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বিধায় পালাতেও পারছিনা। মুসিবতের উপর মুসিবত হচ্ছে মামার বমির আওয়াজ শুনে নিজেরই কেমন বমির বেগ হচ্ছে।
বাধ্য হয়ে বললাম 'মামা আম্মার মাংসে কিছু মিশাইনাই। মিথ্যা বলেছি। ওটাতো আমিও খাইতাম। প্লিজ আর বমি কইরেন না!'
বলেও বিপদ হলো। মামা দৌড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরলো। হুংকার দিয়ে বললো- হারামজাদা আজকে তর খবর আছে!
মামা ধরে রাখলো, আম্মা ইচ্ছামত জুতাপেটা করলো। মাঝখান দিয়ে মামী বাঁচাতে এসে নিজেও কয়েকটা খেলো!
মাইর খেয়েও শান্তি নাই। আম্মা বান্টির মা'র জন্য স্যালাইন আর ঔষধ আনতে পাঠালো। মনটা ভালো নেই একদম। আন্টি অসুস্থ হওয়ায় বান্টির মন খারাপ, তাই!

লিখাঃ_ sajib sikder
 

Delivered by FeedBurner

a