আমাকে প্রথম যেদিন রক্তিমদের বাড়ি থেকে দেখতে এসেছিল সেদিন এসেছিল মাত্র দুজন। কত রকমের রান্না বান্না। পোলাও কোরমা একদম হাহফাই ব্যাপার।এসেছিল রক্তিমের বড় ভাই আর বাবা। রক্তিম আসে নি সেদিন। আমি তো ওর বড় ভাইকেই পাত্র ভেবেছিলাম। আর মনে মনে বলেছিলাম --" এর সাথে যেন আমার বিয়ে না হয়।"
একমাত্র কারণ হলো কোকড়ানো চুল।কোকড়ানো চুল মানুষদের বিষ রাগ হয়!বাপরে বাপ!
রক্তিমের বাবা জিজ্ঞেস করল--" নাম কি মা ?"
আমি নাম বলার পর ওর ভাই বাপের হাতে ঘুতা দিয়ে বলল---"আব্বা ঐটা জিজ্ঞেস করেন?"
একমাত্র কারণ হলো কোকড়ানো চুল।কোকড়ানো চুল মানুষদের বিষ রাগ হয়!বাপরে বাপ!
রক্তিমের বাবা জিজ্ঞেস করল--" নাম কি মা ?"
আমি নাম বলার পর ওর ভাই বাপের হাতে ঘুতা দিয়ে বলল---"আব্বা ঐটা জিজ্ঞেস করেন?"
আমি তখনো জানি না ওটা পাত্র না পাত্রের বড় ভাই। আমি লজ্জা শরম বাদ দিয়ে আমার ভাবা পাত্রের দিকে তাকিয়ে আছি।---''এ কেমন ছেলেরে বাবা!বিয়ে করতে এসে বাপকে ঘুতা মারে পাত্রীকে প্রশ্ন করার জন্য!"
পাত্রের আব্বা আবার কি জিজ্ঞেস করবে ভেবে না পেয়ে বল্লেন--"আম্মা তোমাকে তো চেনা চেনা লাগে।কি মিষ্টি দেখতে।"
আমি হাসলাম মুচকি। তাদের দেখার স্বাদ মিটল না। আবার একদিন আসার কথা জানাল।আম্মার মাথায় হাত। আর একদিন এত রান্না করা লাগবে!
আমি হাসলাম মুচকি। তাদের দেখার স্বাদ মিটল না। আবার একদিন আসার কথা জানাল।আম্মার মাথায় হাত। আর একদিন এত রান্না করা লাগবে!
পরের বার যেদিন আসল সেদিন ও ঢাক ঢোল পিটিয়ে রান্না হলো বাসায়।আসল রক্তিমের মা , ছোট বোন, ভাবি আর ভাই।আমায় চুল দেখাতে বলল। কিন্তু দেখে মনে হলো না সন্তুষ্ট হয়েছে।কারণ কাঁধ অবধির বেশি চুল বড় করি না আমি।আমি বাড়ির কাজ কি কি পারি জিজ্ঞেস করল। আমার হাতেরই চা খেল আয়েশ করে।আমার হাতে পান বানিয়ে নিলেন। হবু শাশুড়ি আমার জাদরেল মহিলা।শ্বশুড়ের সাথে নাকি প্রেম করে বিয়ে।এ জমের মনেও আবার প্রেম ছিল ভাবলেই হাসি পায়।সব গুজব ! হাসি না আমি।চুপটি করে বসে থাকি।চোখের পাড়ে লেপ্টে কাজল দিয়ে দিয়েছিল আপা।সেই কাজল চোখে সব দেখি । কি সুন্দর আয়োজন !মেয়ে বিদায় করার আয়োজন।কি ঘটা করে আয়োজন করা হয়েছে।
রক্তিমের মা মাঝ দিয়ে বলল হেটে দেখাতে।আমি হেটে দেখালাম।এরা কি ভেবেছিল হাটতে পারি না আমি ?আমি ও দেখায় দিলাম হাটা কাকে বলে!সবার শেষে দেনাপাওনার কথায় আসল।ঐ বাড়ির লোকেরা মুখে বলে গেলো মেলা কিছুই।আব্বা দিবেন ও বললেন।শখের বিয়েই দেবেন মেয়ের।বিদায় করবেন !শখের বিদায়!
আম্মা ছোটবেলা থেকে মাথায় তেল দিয়ে দেন।কিন্তু আমার ভালোলাগে না।আম্মা আরাম দিতে পারে না।সেইদিন রাত্রিবেলা যখন আমার মাথায় আম্মা তেল দিয়ে দিলেন-কি যে আরাম লাগল।চোখ ভরে উঠছিল বারবার।মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া মানুষটাও মনে হয় আনমনাই ছিল। আরামে আরামে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
ছোটবেলা থেকে কাজ তেমন একটা করিনি।তখন থেকে আম্মাকে খেয়াল করতাম। একা হাতে কেমন সব সামলাত ! দারুন নৈপুণ্যের সাথে!আমার মনে ভয় ধরল! এ তো সহজ কাজ নয়!হাহ্
আব্বা কখনো মেয়ের সাথে ফ্রি নন।আমিও ফ্রি না। তাই হয়ত আব্বার মন হালকা করার উপায় ছিল না।তখন খেয়াল করলাম আব্বা বেশিরভাগ সময় বই নিয়েই পড়ে থাকত। হয়ত মনটা আটকে রাখার চেষ্টা চলত।আমি বুঝতাম। ফ্রি না তো কি হয়েছে। মেয়ে তো তার!না বুঝলে কিসের মেয়ে!
মাঝরাতে খেয়াল করতাম আম্মা উঠে এসে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেত।এ কোন মায়া! আম্মার ঐ দরদ মাখানো হাত বোলানো উপভোগ করতে মাঝ রাত অবধি জাগতাম শুয়ে শুয়ে। বুঝলাম তারা আমার সামনে ভাঙবে না।মচকেছে আগেই!
রক্তিম উজবুকটা একবার ও আসল না।অপদার্থ একটা ।ওর মা বলেছিল--"তোর আবার কি দেখা? ছবি তো দেখলি!" ওমনি মেনি বিড়ালের মতো আসল না।ওর মা আবার এ বাড়ি এসে গলগলিয়ে বলেও গেল সব। কপাল কপাল!
বিয়ের দিন বিদায়ের সময় আব্বার চোখে পানি! আম্মা ঠোঁটে হাসি চোখে পানি।আমি এদের মধ্যে কেমনে চুপ থাকি!পরিবেশ টা প্রচন্ড ভারী।
মনে জেগে উঠল সেই ছোট্ট বেলায় মায়ের পিটুনি,মায়ের আঁচল ধরে বলা--" মা আমিও শাড়ি পড়ব !"
হায় সেই দিন থেকে আইনতই শাড়ি পরবার অধিকারী হলাম কিন্ত সে অসহ্য কষ্ট!
হায় সেই দিন থেকে আইনতই শাড়ি পরবার অধিকারী হলাম কিন্ত সে অসহ্য কষ্ট!
সেই ছোট্ট বেলায় আব্বাকে বলতাম --"আব্বা মোটরসাইকেলে আমি আম্মার মতো করে বসব॥"
সেইদিন থেকে একজনের পিছনে আম্মার মতো করে বসার অধিকারী হলাম তবুও সেকি অসহ্য কষ্ট!হায়!
সেইদিন থেকে একজনের পিছনে আম্মার মতো করে বসার অধিকারী হলাম তবুও সেকি অসহ্য কষ্ট!হায়!
গাড়িতে উঠে এসব ভাবতে ভাবতে সেদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম --"অপদার্থটা চোখে পানি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !"
আমি মনে মনে ভাবলাম --"এ জাদরেল পরিবারে এমন অপদার্থটা আসল কোথা থেকে!আহ্হারে !"
আমি মনে মনে ভাবলাম --"এ জাদরেল পরিবারে এমন অপদার্থটা আসল কোথা থেকে!আহ্হারে !"
Writer:- সানজানা