> পথের পাঁচালী
-->

পথের পাঁচালী


পাঠ প্রতিক্রিয়া
পথের পাঁচালী
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম।

দুর্গা আর তার পুতুলের মত আদুরে ছোট্ট ভাই অপু। অভাবের সংসারে তাদের বেড়ে ওঠা, শৈশবের দুরন্তপনা, কল্পনার জগতে মন খুলে উড়া।
বৃদ্ধ 'পিতি'র (পিসি) প্রতি দুর্গার টান, আর অন্যের সংসারে আশ্রিত হয়েও ছোট্ট ভাইঝির প্রতি ইন্দির ঠাকুরুন এর ভালবাসা শুরুতেই মনে ছাপ ফেলে যায়। শত অযত্ন আর না পাওয়ার মাঝেই বাড়তে থাকে দুটি শিশু। কিন্তু ভাই বোন একে অপরের প্রান। দুর্গার সারাটা দিন গ্রামের মাঝে ঘুরে বেড়ায়, কার গাছে আম পেকেছে, কোন জঙ্গলে ফুল ফুটেছে তা তার নখদর্পন। সে আমটা, জামটা, কুলটা, বইচেটা কুড়িয়ে আনে ভাইয়ের জন্য। অপু দূরে বেড়াতে গিয়ে ভাল ভাল খাবার খাওয়ার সময় বোনের জন্য মন কেমন করে, ভাবে তার দিদি তো জানেও না এমন ভাল খাবার খাওয়া যায়। ভাল খেলনা দেখে ভাবে তার দিদিটা এইসব খেলনা নিয়ে কখনো খেলেনি, সে বড় হয়ে তার দিদিকে ভাল ভাল খেলনা কিনে দিবে। আবার গ্রামে মেলা বসলে বোন টাকা জমায় ভাইয়ের আব্দার পূরণ করবে বলে। তারা ঝগড়াও লাগে হরহামেশা, কিন্তু একজন আরেকজনকে কষ্ট দেয়ায় নিজেরাই কষ্ট পায়।
ভাই বোন এর চাওয়া খুব সামান্য। একটু আলতা হলে দুর্গার আর কিছু চাই না। কুড়িয়ে পাওয়া এটা সেটা দিয়ে ভর্তি তার পুতুলের বক্সটাই তার প্রাণ। আর অপু? লাজুক ছেলে অপু, বই এর প্রতি আকর্ষন প্রবল। পাড়া গায়ে বই পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু সে এর ওর কাছ থেকে বই চেয়ে নিয়ে পড়ে। সাপ্তাহিক কাগজটার জন্য সে পথ চেয়ে থাকে। সে গল্প পড়ে আর সপ্ন দেখে একদিন বইয়ের চরিত্রদের মত সেও বের হবে অজানাকে জানতে, দুরহ সব অভিযানে। দূরে মিলিয়ে যাওয়া একলা পথিকের গান খুব টানে তাকে। বাবা হরিহর শত কষ্টের মাঝেও তাই কাগজের জন্য পয়সা বাচায়। আর মা সরজার দু:খ ছেলে মেয়েদের ভাল কিছু খেতে দিতে পারে না।
এসবের মাঝেই এগিয়ে চলে জীবন, এগিয়ে চলে উপন্যাস। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে চিরায়ত গ্রাম বাংলার প্রকৃতি-পরিবেশ, সম্মানিত কিন্তু সল্পবিত্তের জীবনের সংঘাত। দেখানো হয়েছে জীবনের তাগিদে জীবনের পরিবর্তনশীলতা, বয়ে চলা জীবনে স্থির সমাজের চিত্র। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এখানে ফুটে উঠেছে অবাক এ পৃথিবীতে এক শিশুর অজানাকে জানতে চাওয়ার আকাঙ্খা । এক নবীন মনের ভাব, কল্পনা, চিন্তা-চেতনা যে দক্ষতায় উপন্যাসটিতে ফুটে উঠেছে তার কোন তুলনা আমার কাছে নেই। আর সেই সাথে দেখানো হয়েছে আপন মানুষদের জন্য মানুষের মনের প্রবল টান-ভালবাসা, স্নেহ-মমতা। আবার একই সাথে আমরা আপন ব্যাতিত অন্যকারো কথা আসলে কতটা নির্দয় আর কেঠোর হয়ে ওঠতে পারি তার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে ।
উপন্যাসের কোথাও কোথাও বর্ননা একটু দীর্ঘ মনে হতে পারে। আর পুরো উপন্যাসে প্রতিটি চরিত্রের মনের আবেগ সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হলেও একটি জায়গায় এসে যেন আবেগের তালটি কেটে গেছে মনে হয়েছে, যেন একটু তারাহুরো করা হয়েছে। সেই জায়গাটিতে আরেকটু গভীর উপলব্ধির আকাঙ্খা যেন রয়ে যায়, মন পরিতৃপ্ত হয় না। 'spoiler' এড়ানোর জন্য এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
শেষ কথা, এই উপন্যাস একবার না, বার বার পড়ার মতই একটি উপন্যাস। ছোট বড় সকলের জন্য "highly recommended"।

Writer:- Tanvir Hasan
 

Delivered by FeedBurner

a