Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ৪
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ৪


"কিরে তুই এমন অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে বসে আছিস কেনো কিনঞ্জল?"
রুমের দরজা খুলেই কিনঞ্জলকে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে বিছানায় হাটুতে মাথা নুয়িয়ে বসে থাকতে দেখেই উপরের কথাটা ভ্রু কুঁচকে বলল সাক্ষর।অন্যান্য সময় হলে হয়ত কিনঞ্জন এতক্ষনে লজ্জায় লাল হয়ে নিজের শরীর ঢাকার চেষ্টায় হুড়োহুড়ি শুরু করে দিতো।কিন্তু এই মূহুর্তে কিনঞ্জলের নিজেকে পুরো বোধহীন মনে হচ্ছে।কিনঞ্জল সাক্ষরের কথায় তেমন বিশেষ কর্ণপাত না করে ওভাবেই মাথা নুয়িয়ে বসে রইল।সাক্ষর নিজের ভ্রু জোড়া কুঁচকেই রুমে ঢুকে দেখে ফ্লোরে কিনঞ্জলের ফোনটা ভাঙাচোরা অবস্থায় পরে আছে আর তার পাশেই কিনঞ্জলের বেনারসি শাড়িটা পরে আছে।বেশ সিরিয়াস কিছুই যে ঘটেছে এইবার সাক্ষর কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।ফ্লোর থেকে শাড়িটা তুলেই কিনঞ্জলের শরীরে জড়িয়ে দিয়ে পাশে বসে দুবার খুকখুক করে কাশলো সাক্ষর।কিন্তু এবারও কিনঞ্জল মুখ তুলে তাকালো না।তাই এবার সাক্ষরই মুখ খুললো,
"কিরে পাটকাঠি,এমন কাপড়চোপড় খুলে বসে আছিস কেনো?আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম কোন কংকালকে বুঝি ব্লাইজ পেটিকোট পরিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গেছে।পরে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম তুই বসে আছিস।খুব গরম লাগলে গোসল করে আয়,কাপড়চোপড় খুলে বসে আছিস কেনো?যেই না শুটকির মতো ফিগার ওই ফিগার আবার আমাকে দেখানোর জন্য এভাবে বসে আছে?যা চেঞ্চ করে আয়।আর রুমে খবরদার এসি অন করতে পারবি না বলে দিলাম।এসিতে আমার ভীষণ অ্যালার্জি।দেখা যাবে কালকে আমাকে আশি বছরের বুড়োদের মত খুকখুক করে কাশতে কাশতে বাসায় ফিরতে হবে।"
কিনঞ্জল এবারো কোন উত্তর না দিয়ে আগের মতন একই ভাবে মাথা নুয়িয়ে বসে রইল।এবার সাক্ষরের বেশ চিন্তা হতে লাগল।কিনঞ্জলের কাধে হাত দিয়ে এই কিনঞ্জল বলতেই কিনঞ্জল প্রায় ঝড়ের গতিতে সাক্ষরকে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।সাক্ষরকে ধরেই কান্না করতে করতে বলল,
"চলে যান সাক্ষর ভাই,প্লিজ চলে যান।কেনো এসেছিলেন আপনি আমার জীবনে?আমার জীবনটাকে পুরো শেষ করে দিলেন আপনি।কেনো বিয়ে করলেন আমায়?আপনিতো আমাকে কোন কালেই পছন্দ করতেন না আর না আমি আপনাকে পছন্দ করতাম।তবে কেনো এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন?আপনি নিজেও জানেন না সাক্ষর ভাই,আপনি আমার জীবনটা শুরু হওয়ার আগেই একদম মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন।"
কথাগুলো বলেই কিনঞ্জল হিঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল।এতক্ষন ধরে কান্নাগুলো আটকে রাখতে চাইলেও এখন সেই বৃথা চেষ্টাটাই করছে না কিনঞ্জল।সাক্ষরকে জড়িয়ে ধরে কান্নার মাধ্যমেই যেনো নিজের সমস্ত দুঃখ কষ্ট বের করে দিতে চাইছে।এতক্ষন কেবল কিনঞ্জলই সাক্ষরকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।এইবার সাক্ষরও কিনঞ্জলকে একহাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে কিনঞ্জলের মাথায় হাত রেখে বলল,
"কিনঞ্জল,শান্ত হ!কান্না থামা।কেনো কাঁদছিস তুই আর এসব কি আবোলতাবোল বলছিস।আমি তোর জীবন শেষ করে দিয়েছি মানে?বেশ!আমি তোর সব কথাই শুনবো।কিন্তু এখন আগে তুই কান্না থামা।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি নিচে গিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।অনেকটা রাত হয়ে গেছে।"
"আমি খাবোনা সাক্ষর ভাই।তুমি প্লিজ রুম থেকে বের হও আমি একটু একা থাকবো।"
"তুই খাবি সাথে তোর বরও খাবে।ও বাসা থেকে আসর পর থেকেতো একাই ছিলি।এখন আমার সাথে থাকবি।যা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।খবরদার গোসল করবি না ঠান্ডা লেগে যাবে।"
এই বলেই সাক্ষর কিনঞ্জলকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে হাত ধরেই ওয়াশরুমের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেলো।তারপর লাগেজ থেকে তোয়ালে আর কিনঞ্জলের এক সেট ড্রেস বের করে কিনঞ্জলের হাতে দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।কি মনে করে যেনো সাক্ষর আবার ফিরে এসে বলল,
"কিনঞ্জল,তোর চেহারায় বোকাসোকা ভাব,লাজুক চাহনি,হাসি,বিরক্তি সবকিছুই দেখতে ভালো লাগে।কান্নাটা কেনো জানি মানায় না।আজকের পর থেকে প্লিজ তুই আর কান্না করিস না।তোর কান্না আমার সহ্য হয় না কিনঞ্জল।"
এই বলেই সাক্ষর হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর কিনঞ্জল অবাক দৃষ্টিতে সাক্ষরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল আর কানে কেবল দুটো লাইন বাজতে লাগলো,
'তোর কান্না আমার সহ্য হয় না রেণু।'
'তোর কান্না আমার সহ্য হয় না কিনঞ্জল।'
কিনঞ্জল কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি জীবনে এমন দিনও ওকে ফেস করতে হবে।কি হবে ওর ভবিতব্য?নুহাশ তো নিজেই ওর কাছে ফিরে যাওয়ার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে।আর এ জীবনে কিনঞ্জল আর যাই পারুক না কেনো সাক্ষর ভাইয়ের সাথে কখনোই সুখী হতে পারবে না আর না ভালোবাসতে পারবে।সাক্ষর ভাইয়ের মতো একজন বদমেজাজি,নিষ্ঠুর মানুষের সাখে কখনোই সংসার করা যায় না।তবে তিনি এই কথা বললো কেনো সে আমার কান্না সহ্য করতে পারে না।তিনি তো আমাকে কাঁদাতেই ভালোবাসে।এই যেমন আমার আজকের কান্নার কারনটাও একমাত্র আপনি সাক্ষর ভাই।একমাত্র আপনি!
আমার জীবনটাকে আপনি পুরো দুই রাস্তার মোড়ে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।এখন আমি কোন পথে এগোবে সাক্ষর ভাই?এই বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল কিনঞ্জল।তবে কি বাকি জীবনটাও আমাকে এভাবে কেঁদেই যেতে হবে।বাথটবে শুয়ে কথাটা ভাবতে ভাবতেই কিনঞ্জল মাথাটা পুরো পানিতে ডুবিয়ে দিলো।
"চাচি আম্মু,কিনঞ্জল কি এই বিয়েতে রাজি ছিলো না?এই বিয়েতে ওকে কি কোন ভাবে ফোর্স করেছিলে তোমরা?"
কথাটা শুনতেই চমকে সামনে তাকালো কিনঞ্জলের মা।তোতলানো গলায় বললো,
"কই না তো!তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস কেনো সাক্ষর?কিনঞ্জল তো ওই ঘটনাটার পর বলেছিলো আমাদের ইচ্ছেই ওর ইচ্ছে।তাই তো আমরাও আর দেরি না করে তোদের বিয়েটা দিলাম।কেনো কিনঞ্জল কি তোকে কিছু বলেছে?ওর কথা ধরিস না বাপ!ও তো আস্ত একটা পাগলি।"
"না,তেমন কিছু না।এমনি মনে হলো বলেই জিজ্ঞেস করলাম।কিনঞ্জলের খাবারটা বেড়ে দাও।ওর নাকি ভালো লাগছে না।ঘরে বসেই খাবে।"
"তোর খাবারটাও দিয়ে দিলাম দুজনে মিলেই খেয়ে নিস।কিনঞ্জল আবার একা খেতে পারে না।সাথে কাউকে না কাউকে খেতেই হয়।"
"বেশ দাও তবে।"
এই বলেই দুজনের খাবার হাতে সাক্ষর কিনঞ্জলের রুমের দিকে পা বাড়ালো।মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে।কিনঞ্জল তখন ওভাবে কাঁদলোই বা কেনো আর ওইসব কি আবলতাবল বলছিলো ও।জানতে হবে আমাকে!

(চলবে)

লিখা~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি

 

Delivered by FeedBurner

a