> বিশ্বাস পর্ব ৬ - Bangla Story - Boipoka365
-->

বিশ্বাস পর্ব ৬ - Bangla Story - Boipoka365


-ভাইয়া আবার খুনী হলো? সে কি এমনই রাগী আর স্বভাবেরই থাকবে? (মাইশা)
_চিন্তা করার দরকার নাই। খুন হয় নাই। আঘাত করে ছিলো বেচে গেছে মেয়েটা। মেয়েটা সুস্থ হলেই আবির ছাড়া পাবে। মরে গেলে হয়তো সমস্যা হবে। সপ্তাহখানিক লাগবে বের হত।
আমি তাকিয়ে দেখি টপটপ করে পানি পড়ছে মাইশার চোখ দিয়ে। আর বিড়বিড় করে বলছে, "এত বছর ওর ভাইয়ের কাছে আসলাম। অথচ জড়িয়ে ধরতে পারলো না। দূর থেকেই দেখতে হবে। "
আমি মাইশাকে শান্তনা দিচ্ছি। সকালেই যাবো জেলে এখন দেখা করার সুযোগ নাই। মাইশার হাসিমুখ রাতেই দেখলাম কেমন চিন্তার ছাপ নিয়ে সময় কাটায়। রাতে খাবার খেয়ে আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। আমার এখন থানা পুলিশ নিয়ে চিন্তা হয় না। এইসব এই কয়েক দিনে ডাল ভাতের মতো মনে হয়ে গেছে।
মাইশা জান্নাতকে নিয়ে আরেকটা রুমে শুয়ে থাকলো। আমি আমার রুমেই বসে বসে ল্যাপটপ টিপছি।
আমি কল দিলাম উকিল সাহেবকে।
_রানা সাহেব! কি খবর?(উকিল)
_আরে বন্ধু, আমাদের জীবন কেমন তা ভালো করেই জানেন! (আমি)
_টেনশন করার দরকার নাই। আবিরকে বের করে দিবো বিলে। (উকিল)
_কতদিন লাগবে?
_অরু সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। সে ভালো হলেই আবির বের হয়ে যাবে।
_কি করলো আদালতে আবির?(আমি)
_ অরুর নামে আমরা শুধু ১০লাখ টাকার কেইস জিতে গেছি। বাকি খুনের প্রমান করতে পারিনি। যখন রায় দিয়ে অরুকে মুক্তি করে দেয়। তখনই আবির মানুষের ভিড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে অরুকে। অরুর হাতের কাছাকাছি বুকের উপরে ছুরির আঘাত লাগে। বেশি ক্ষতি হয় নি। আর আঘাত করার আগেই পুলিশ আবিরকে ধরে ফেলে। এখন যদিও কেউ অরুকে মেরে ফেলে আবির জেলে কাটাতে হবে বাকি জীবন। দোয়া করেন অরু তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে আবিরকে মুক্ত করুক। (উকিল)
_আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি সকালে যাবে তার সাথে দেখা করতে। (আমি)
কথা বলে মোবাইল রেখে দিলাম।
আস্তে আস্তে গেলাম মাইশার রুমে দেখি এখনো মন খারাপ করে বসে আছে।
আমি পুরো বাসার আলো জ্বালিয়ে দিলাম। মাইশা একটু ভয় পেলো। পুরো ফ্লাটের ভিতর আমরা দুজন। উপরের তলাও খালি মানুষ শুধু নিচের তলায়। আমি মাইশাকে ডাক দিলাম। সেও ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো। তাকে বললাম চলেন ছাদে গিয়ে বসি। মাইশাও আমার সাথে চললো ছাদে। জান্নাত ঘুমাচ্ছে।
আমি ছাদে যাওয়ার সময় সিগারেটের প্যাকেটও নিলাম। ছাদে গিয়েই দুজন বসলাম চাঁদের আলোতে। মাইশা হয়তো এখনো আমার প্রতি বিশ্বাস নাই যে আমি কেমন হতে পারি ভালো না খারাপ।
আমি সিগারেট জ্বালাতেই সে নিষেধ করলো। তার একদমই গন্ধ সহ্য হয় না সিগারেটের বললো। আমিও সিগারেট ফেলে দিলাম।
_একটা কবিতা শুনাবো এই চাঁদের আলোয়?(আমি)
_আপনি কবিতাও জানেন? (মাইশা)
-হুম।
_থাক কোন একসময় শুনবো। আচ্ছা, আপনার বউ নাই?(মাইশা)
_যাকে মেরে জেলে আছে আবির সে আমার বউ ছিলো। পরকীয়া করলো আবির সেটা সহ্য করলো না। আমিও কিছু করিনি অনেক কাহিনী ওই সব বাদ দেই। আপনার বিয়ে হয় নি?(আমি)
_না, এবার অনার্স পাশ করছি। এখন ভাববো বিয়ের কথা। কাউকে তো বিশ্বাস করা যায় না এই যুগে। (মাইশা)
_আপনার মতো কাউকে যে কেউ অনেক ভালবাসবে। বিশ্বাস করে ঠকলেও ভালো আছে (আমি)
_ দেখা যাক পরে। আগে আমরা বাড়ি ফিরি তারপর হবে। (মাইশা।
চাঁদের আলোয় যেনো একটা পরীর সাথে বসে বসে কথা বলতেছি। পরীটার ডানা নাই হয়তো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকি তার দিকে। আর ভাবি, ইস!এ যদি আমার হতো। আমি যদি তাকে পেতাম। তার সাথে প্রতিটা রাত এভাবে চাঁদের আলোয় কাটাতাম। জীবনটা বদলে যেতো।
আমরা দুজন অনেকক্ষন বসে বসে গল্প করে। রাতে ফিরে আসলাম বাসায়। যার যার মতো করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে আমি ঘুমে থাকতেই রান্না ঘরের শব্দে ঘুম ভাঙলো। আমি উঠে গিয়ে দেখি মাইশা সকালের নাস্তা বানাচ্ছে।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। চাকুরীতে আর যাই না। ইচ্ছে নাই আর চাকুরীর। সব বিক্রি করে চলে যাবো গ্রামে সেখানেই কিছু করবো।
নাস্তা করে সকাল সকাল হাটতে বের হলাম। মেয়েকে কোলে নিয়ে হাটছে মাইশা।
বাসা থেকে বের হতেই গলির ভিতর হেটে যাওয়া সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। একজন পরিচিত বলেই ফেললো, রানা সাহেব নতুন বিয়েও করে ফেলছে বাহ্।
মাইশার দিকে তাকালাম দেখি লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে হাটছে।
সকাল ১০টা পর্যন্ত পার্কে বসে থেকে সবাই গেলাম জেলে। সেখানে মাইশাকে ও মেয়ে বাহিরে রেখে আমি একাই গেলাম। মাইশার কথা বলে তার সমানে নিবো তাই।
_আচ্ছা, কি করলি এটা তুই? (আমি)
_আমি যা ভালো মনে করছি তা করছি। আমার বন্ধুর জীবন নষ্ট করে পরকীয়া তাই। (আবির)
_এখন নিজের জীবনও বিপদে। (আমি)
_সমস্যা নেই, বন্ধুর জন্য এতটুকুই করাই যায়। (আবির)
_আচ্ছা, অরু ভালো হলেই বিলে ছাড়িয়ে নেবো। সপ্তাহখানিক লাগবে হয়তো। আর তোর মেয়ের কি খবর?(আমি)
_আসলেই মেয়ে কই? (আবির)
_বাহিরে একজনের কাছে।
_কার কাছে? (আবির)
_তার ফুফুর কাছে।। মেয়েটা তোর তাই তার ফুফুর কাছেই দিয়ে আমি টেনশন মুক্ত। (আমি)
_ফুফু মানে মাইশা আসছে?(আবির)
_হুম!
_কি করে তাকে কে দিলো ঠিকানা? (আবির)
_আমি।
_কেনো? বললাম বাড়ি যাবো কখনো।
_আরে বাদ দে। সারারাত কান্না করছে ভাইয়ের৷ জন্য। একটু কথা বল। আগে জেল থেকে বের করি তারপর বাড়ির কথা ভাববো। (আমি)
_ডাক দে।
মাইশা আবিরের সাথে দেখা করে কান্না করতেছে দুজন। এক ভাই এক বোন দুনিয়ায়। তাও তারা ৪বছর পর দেখা।
সবাই বের হয়ে বাসায় চলে আসছি। আবিরকে বললাম একসপ্তাহ থাকতে। কষ্ট করে।
আমি মাইশা কথা আড্ডা দিয়ে দিন ভালোই কাটাচ্ছি। ৬টা দিন কি করে কেটে গেলো নিজেও জানি না।
অরু ভালো হয়েই হাসপাতাল থেকেই এয়ারপোর্টে চলে গেছে। রাজুর সাথে চলে গেলো দেশের বাহিরে। আমাকে একটা ম্যাসেজ করে বললো তোমরা কিছুই করতে পারোনি। চলে যাচ্ছি দেশের বাহির।
কিছুই করতে পারিনি প্রমান করতে পারিনি অরু অপরাধী। তবে সময়ে তাও প্রমান হবে।
আবিরকে বিলে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলাম ৬দিন পরই। আদালত তাকে ২লাখ টাকা জরিমানা বা ৩মাসের জেল দিছে।
তাই বিলে বের করলাম।
সবাই বাসায় ফিরেই আনন্দে আত্মহারা। সন্ধ্যা নাগাত সবাই সাথে থাকলেও রাতে দুবন্ধু চলে গেলাম ছাদে সিগারেট খেতে।
_আসলে রানা একটা কথা বলাই হয়নি!
_কি কথা আবির?
_আমিই মন্টুকে খুন করছি। কেউ জানে না। (আবির)
_কি বলস আবল তাবল?
_হুম, দোস্ত! তোকে বাচাতে এটা করতে হলো। আমি ভাবছি যদি পরকীয়া হয় মন্টুকে মেরে দিলে ভাবি ভালো হয়ে যাবে। সেইদিন আমি তোর পিছনে গিয়েছি।তুই বের হওয়ার অনেক পরে আমিও গেছি মন্টুর বাসায়। গিয়ে দেখি তার বুকে ছুরি বসানো সে বেচে আছে আর মোবাইল খুজ করেতছে কাউকে কল দিতে। আমি তার মাথায় একটা লাঠি দিয়ে আঘাত করি তারপর সেই ছুরিটা দিয়ে। আর সেই পেনড্রাইব টেবিলের উপর দেখে ভাবলাম তুই রেখে ছিস কোন প্রমান করতে। আমি সেটার আঙুলের ছাপে মুছে দেই। মন্টুকে মেরে ছুরি নিয়ে আসি। ভাবছি তুই হয়তো তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলি। যদি জানতাম তুই না। তাহলে মন্টুকে হাসপাতাল নিয়ে অরুকে সাজা দিতে পারতাম। সরি দোস্ত আমি পারলাম না কিছু করতে! (আবির)
_তুই আমার জন্য এত কিছু করলি?
_কিছুই করি নাই। বন্ধুর বিশ্বাসটা রাখলে জীবনটাও দিয়ে দেবো। এমন একটা অরু গেলে কিছুই হবে না। এর চেয়ে হাজার গুন ভালো মেয়ে তোকে আমি এনে দিবো। (আবির)
_দরকার নাই বিয়ের!
_আর হ্যা তোর মেয়েটাই আমার মেয়ে। সবাইকে বলছি, আমার বউ যখন চলে গেছে আরেকজন নিয়ে কেউ জানে না। সবাই জানে প্রথম সন্তান হয়ে মারা গেছে ২টার বয়স ২বছর আর এটা জন্ম দিতে গিয়ে বউ মারা গেছে। (আবির)
_আমিতো মাইশাকে বলে দিছি সে পরকীয়া করে চলে গেছে যে। (আমি)
_আসলে পরকীয়া করে যখন আমার বাচ্চাটা এবরশন করে ফেলছে সে। তখনই তাকে গলাটা কেটে ফেলি সেই প্রমিকের ঘরে। তার খুনের সাজা সেই প্রেমিক আজও জেলে। পরকীয়ার শাস্তি পাচ্ছে। (আবির)
_তাহলে তুই এসব আগে বললি না কেন?
_আমি বলতে চাইনি এ জীবনে কত বিশ্বাস করে ঠকেছি। বন্ধুর সুখ দেখতে চেয়েছি শুধু। তাই বলিনি যদি আমাকে নিয়ে টেনশন করস। (আবির)
আমি আর কিছু বলিনি চুপচাপ বসে বসে সিগারেট টানছি দুজন। মনে মনে ভাবছি এমন বন্ধু হলে জীবনে কিছুই লাগে না।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা রেডি করে আমাদের ডাক দিলো মাইশা। এই কয়দিনে মেৈটা একবারে নিজের ঘরের মতো করে গুছিয়ে ফেলছে সব। সবাই বসলাম নাস্তা করতে।
_দুপুর সাড়ে ১২টার ফ্লাইটে আমরা সবাই সিলেট যাচ্ছি। টিকেট বুকিং করে দিছি রাতেই।(মাইশা)
_সবার মানে? (আমি)
_সবার মানে তোরও (আবির)
_আমি কেনো যাবো? (আমি)
_আমি আপনাকে বাড়িতে সবাইকে দেখাতে চাই তাই। আর ভাইয়ার বন্ধু তাই না যাওয়ার কারণ নাই (মাইশা)
_আরে চুপ কর মাইশা। আমি যা বলি তা রানা যাবেই টেনশন করার দরকার নাই। (আবির)
_চাকুরীর কি হবে? (আমি) (চাকুরী করি না সেটা আবির জানে না)
_আরে চাকুরী বাদ দে। দু টাকার চাকুরী আবার। আমরা ব্যবসা করবো দু বন্ধু মিলে। টাকা আমার যা আছে তা সবাই বসে বসে খেতে পারবো সারাজীবন। বাবার একমাত্র ছেলে আমি সবই আমার। (আবির)
_আমারও অর্ধেক টেনশন করিয়েন না। (মাইশা)
_আমি আর কিছু বললাম না।
নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। জান্নাতের কিছু কাপড় নিলো মাইশা। মাইশাকে আবির বলছে যে তার বউ যে চলে গেছে তা যেনো কাউকে না বলে। সবাই জানে যে মরে গেছে। আর আমি জানি কি হইছে।
সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে থেকে রওয়ানা দিলাম সিলেটের দিকে। ৩০মিনিটেই চলে আসছি। এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠিয়ে দিছে আবিরের পরিবার। বাসায় যেতেই আবিরের মেয়ে মেনে সবাই নানান ফুল, উপহার দিয়েই কোলে নিচ্ছে আর আদর করছে।
তাদের বাড়িটা একটা রাজপ্রাসাদের মতোই। ঘরের সামগ্রী গুলো অনেক দামী জিনিস দিয়ে ভরা।
যা বুঝলাম তাদের কোটি কোটি টাকার আয় আছে। আর আবির কিনা একটা ছোট ফ্লাটে থাকে বাড়ি থেকে দূরে।
আমাদের দুপুরের খাবার খেয়ে। সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে।
খাবার খেয়ে আমি মাইশাকে না দেখে মনে মনে খুজ করতেছি। আবিরকে জিজ্ঞেস করলাম সে বললো মাইশা তার পাখিদের খাবার দিচ্ছে। আমার মেয়েকে আবিরের মা ই কোলে নিয়ে রাখে খাওয়াচ্ছে। মেয়েটা একদিক ভালো সবার কাছেই থাকে কান্না করে না।
আবির আমাকে ছাদের সিড়ি দেখিয়ে দিলো। আমি সোজা চলে গেলাম ছাদে। গিয়ে দেখি নানান প্রজাতির পাখি পোষে মাইশা। সব গুলো মাইশার মতোই সুন্দর। মাইশা দাঁড়িয়ে আছে সব পাখি তার মায়ের কাছে এসে খাবার খাচ্ছে। আমাকে দেখেই ডাক দিলো পাখির ঘরের ভিতরে যেতে। আমিও গেলাম দেখছি পাখি গুলোকে।
_আমাকে খুঁজতেছেন নাকি?(মাইশা)
_না!
_তাহলে এই ভর দুপুরে ছাদে!
_আসলে আপনাকেই দেখতেছি না। তাই দেখতে আসছি (আমি)
_জানি তো আপনিও যে আসবেন। তাইতো ছাদে আসার আগে ভাইয়াকে বললাম আমাকে খুজলে কেউ যেনো ছাদে আসতে বলে। (মাইশা)
_কি করে বুঝলেন কেউ খুঁজবে? (আমি)
_যাকে বিশ্বাস করা যায় ভরসা করা যায়। তার মুখ দেখলেই সব বুঝা যায়। (মাইশা)
_মানে?
_আপনি কখন যে আমাকে ভালবেসে ফেলছেন আপনি নিজেও জানেন না। আমি জানি কারণ আমিও যে আপনাকে ভালবেসে ফেলছি। বিশ্বাস আছে আপনার উপর বেশি। যে মানুষ একটা ফ্লাটে একা পেয়েও সুযোগ নেয় না মেয়ের উপর তাকে বিশ্বাস করা যা চোখ বুঝে। (মাইশা)
_যদি নিতাম কি করতেন?
_খুন করতাম। আর কি আমার ভাই যদি পারে আমি পারবো না কেন?😁(মাইশা)
_হুম। আমিও বিশ্বাসেও দরজা পেয়ে গেছি। কোন ভুল মানুষকে ভালবাসিনি মনে হচ্ছে। (আমি)
_আচ্ছা। দেখা যাবে!
আমি ছাদ থেকে নেমে চলে আসলাম। মাইশা আমাকে ভালবাসবে ভাবতেই পারছি না।ছাদ থেকে নামার সময় দেখি আবির দাঁড়িয়ে নিচে। আমাকে দেখেই বলে.....


চলবে.......


Writer:- সোলাইমান রানা
 

Delivered by FeedBurner

a