> ক্যামেলিয়া পর্ব ১৩, ১৪ | বিয়ের দিনের গল্প | Bangla Love Story | Love Story Bangla
-->

ক্যামেলিয়া পর্ব ১৩, ১৪ | বিয়ের দিনের গল্প | Bangla Love Story | Love Story Bangla

(৩৩)

ফোনকল রিসিভ করে নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো জাফরিন।আজ পুরো দিন বাসায় অনেক মানুষ ছিল।চারিদিকে এখনো খাবারের গন্ধ। এঁটো খাবার গুলো যেখানে ফেলা হয়েছে সেখানে কুকুদের একটা দল ঝগড়া বাধিয়েছে। কেউ একজন লাঠি দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল তাদের মারতে। জাফরিন না করেছে। তাদের খেতে দিতে বলেছে সে। প্রতিটি প্রাণীর রিজিক নির্দিষ্ট থাকে। তাদের এখানে রিজিক আছে বলেই এসেছে। 

বুড়ো লোকটা জাফিরিনের কথায় নিজের মুখটা বিক্রিত করলো।মনে মনে বিচ্ছিরি রকমের গালি দিয়ে সে মনে মনে বলল,

" বাপ মরছে কয়দিন তো, তাই এত আল্লাহ আল্লাহ করতাছোস, কুত্তার প্রতিও দরদ দেখাইতাছোস। যৌবনে যখন টান দিব তখন কুত্তার প্রতিও মায়া ফুরাবো।"

জাফরিন বুঝতে পারলো লোকটা তার কথাতে নারাজ। সেখান থেকে চলে এলো সে। কারণ কল কেটে গেছে।ঘরের বারান্দাতে আসতেই তার ফুপুর সাথে দেখা হলো।সে একটা বিচার নিয়ে এসেছে। আজ এত মানুষ খেয়েছে অথচ তার বড় মেয়ের জামাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের শালার বন্ধু এক টুকরো হাড়ের মাংস দিতে বলেছিল। কেন দেওয়া হয়নি তাকে?এই নিয়ে তার মেয়ের জামাই ভীষণ রাগ করেছেন। সে এখনো খায় নি।এত এত মানুষের সামনে তার মেয়ের জামাই ছোটো হলো না?
যদি অপমান করার ইচ্ছাই থাকে তবে কেন দাওয়াত করে আনা হয়েছে। 

ফুপুর কথা শুনে তিন বোন বেশ কাতর চোখে তাকিয়ে রইল।তিন বোনের চোখেই পানি ছলছল করে উঠছে। নিশ্চয়ই তাদের স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে বাবার বলা সেই কথাগুলো।

 বছর দুয়েক পূর্বে তাদের বাবা যখন ছুটিতে এসেছিলেন তখন তার বোন ভাগ্নিদের সমেত সবাইকে দাওয়াত করে আনেন। কোরবানির ঈদে তাদের ভাগে পাওয়া সম্পূর্ণ মাংস চড়িয়ে দেওয়া হয় বড় বড় পাতিলে।ঈদের পর দিন থেকেই চলে অতিথি আপ্যায়ন। তখন সবাই কতই না সম্মান করতো জাফরিনদের। এই ফুপু চাচারাই তাদের মা ছাড়া কথা বলতেন না।
ফুপুরা আসার সময় কত কিছু নিয়ে আসতেন।কারোর বাড়ির গাছের আম বা কারোর বাড়ির নারিকেল।নিজ হাতে বানানো পিঠা কিংবা নানার ধরনের খাবার। 
দাওয়াতের পর যখন সবাই যার যার মতন চলে গিয়েছিল তখন জাফরিনের বেশ মন খারাপ হয়েছিল। বাবার পাশে বসে বলেছিল,

"আব্বা আর দুই দিন ওদের থাকতে বলতেন।সবাই কত ভালো।"

বড় দুই বোন সায় দিয়েছিল কিন্তু আজমল সাহেব তিন মেয়েকে কাছে ডেকে নিয়ে বসিয়েছিলেন তার পাশে। 
হাসতে হাসতে বলেছিলেন,

"তোমাদের তিন বোনের দরদ তত দিন যত দিন আমি জীবিত আছি। আমার মৃত্যুর পর দেখতে পারবা দিন দুনিয়া কতটা কষ্টের। এই আত্মার আত্মীয়রা কতটা ভালো।
আরে মা এরা তো ওমন করবে যে আমার চল্লিশার দাওয়াতে এসে বলবে ওমুকে খায়নি তমুকে হাড্ডি খায় না তাকে হাড্ডি কেন দিলো কিংবা আমি দ্বিতীয় বার দই চাইলাম দিলো না।"

কন্যাত্রয়ী একে অপরের দিকে তাকালো।এখন অবধি তাদের খাওয়া হয়নি।তারা জানেও না কি হচ্ছে অপর দিকে। পুরো দিন বিভিন্ন মানুষ এসেছে তাদের স্বান্তনার বাণী শুনিয়েছেন তারা মাথা নিচু করে শুনেছে। অথচ কেউ তো জিজ্ঞেস করলো না তারা খেয়েছে কি না।বাড়ির গেটের দিকের ঘরটায় দই পাতা হয়েছে। মণ দুই দুধ কিনে এনে নিজ হাতে পাতা দই।দই যাতে দ্রুত হয় এজন্য খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।ফুপুর অনুরোধে বড় আপা গিয়ে তার সেই দুলাভাইয়ের হাতে ধরে অন্যের পক্ষ হয়ে মাফ চাইলেন। জাফরিন বিষয় টা নিতে পারবে না বলেই মেঝ আপা তাকে কিছু জানায়নি।তারা দুই বোন আপাতত কোনো ঝামেলা বা কথা চায় না। এইটুক না করলে তার ফুপুও খাবে না অপর দিকে কথার পর কথা সৃষ্টি হবেই।ইউভান পাশে বসিয়ে জাফরিনের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছিলো। সেই মুহুর্তে তার ফোনে কল এলে জনসমাগম এড়াতে সে কিছুটা দূরে চলে যায়। 
সবাই খাবার টেবিলে বসার পর একজন কে পাঠানো হলো দই আনতে। সে দই নিয়ে ফিরে আসার মিনিট দশেক পরেই ঘরে জ্বলে উঠলো আগুন।
পুরো টিনের ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছে ভিতর থেকে।বিকট শব্দ হলো ঘরে। সাথে সাথে পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ চলে গেল।আগুনের প্রকোপ থেকে মোটামুটি কেউ টিকতে পারলো না।সব থেকে বেশি আহত হলো জাফরিন। সে দাঁড়িয়ে ছিল ঘরের পাশটাতেই। আগুনের তাপে গায়ে থাকা জরজটের ওড়না পুড়ে তার হাতের চামড়ার সাথে লেগে গিয়েছিল। সে না বুঝেই হাত থেকে কাপড় সরানোর চেষ্টা করলে তার বা হাতের কনুইয়ের দিকের চামড়াটা বেশ খানি উঠে এলো।

নিজের আঘাতে ক্লান্ত জাফরিন এক পাশে পড়ে গোঙাতে লাগলো।ততক্ষণে হৈচৈ শুরু হয়েছে।বাড়ির পাশে থাকা বালি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা চলছিল।আশার বাবা সেদিক দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো জাফরিন এক পাশে পড়ে আছে। কিন্তু ব্যাথায় কাহিল সে। কাউকে ডাক দিতে গিয়েও সে দিলো না। নিজ হাতেও তাকে ডাকলো না।এই মেয়ের প্রতি তার অনেক দিনের রাগ জমে আছে। এই রাগকে সে দমন করতে পারছে না। তার অবচেতন মন বার বার তাকে একটা আদেশ দিয়ে চলেছে। সে দুই মন দুই দশায় পড়ে রইল
।আর তার সম্মুখে ব্যথায় কাতর জাফরিন।

নিজের চোখের সামনে আগুন দেখে দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো মাশহুদ। এক সময় নিজ চোখের সামনে মানুষের শিরচ্ছেদ দেখেছে সে।মৃত্যুকে খুব কম ভয়। ওসবের তুলনায় সামান্যতম আগুন দেখে ভিতর ভিতর বেশ অস্থির হয়ে গেল সে। তার মনকে স্থির করতে পারলো না।সে এক বার ভাবছিল তার ভিতরে যাওয়া উচিৎ কিন্তু সে তেমন  আঞ্চলিক বাংলা বুঝে না কাকে কি বলবে যদি তাকে কেউ চিনে ফেলে। আবার মনে হচ্ছে এই সময় তার ভিতরে যাওয়া উচিৎ। 
অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো এক অস্থিরতা তাকে গ্রাস করে নিলো।মুহুর্তেই সম্ভিৎ ফিরে পেল সে। নেট ঘেটে নাম্বার বের করে কল দিলো ফায়ার সার্ভিসে।

পাঁচ মিনিট পার হলেও যখন আগুন খুব একটা আয়ত্তে এলো না তখন আর সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।দ্রুত পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। গেটের কাছাকাছি যেতেই এমিলি পিছন থেকে ডাক দিলো তাকে। সাথে রয়েছে আরো কয়েক জন।
এমিলি বুদ্ধিমতি মেয়ে। সে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো মাশহুদকে।
কিছুটা দূরে এসে তাকে অনুনয়ের সুরে বলল,

"স্যার আমাকে ভুল বুঝবেন না কিন্তু এভাবে আপনার ও বাড়িতে যাওয়া উচিত হবে না।আমরা যে কাজের জন্য এসেছি এটাতেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।উনাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ব্যাপারে আমাদের হস্তক্ষেপ উচিৎ হবে না।"

এমিলির কথায় তার বেশ রাগ হলো।সে রেগে তাকে কিছু কথা শোনাতে চাচ্ছিলো কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো এমিলির কথাটা ঠিক আছে। এখন রাত বেশ ভালো হয়েছে। এই মুহুর্তে সে বা তারা যদি বাড়ির ভিতরে যায় তবে সবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। হাতের মুঠ শক্ত করে সে দাঁড়িয়ে রইল দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে। 
কিছু সময় পরও যখন দমকল বাহিনী এলো না তখন আর সে অপেক্ষা না করে এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে। 

পুরো বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে কে কোথায় আছে সেটা কেউ বুঝতে পারছিল না। শুধু মাত্র বাচ্চাদেরকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জাফরিনের খবর তখনো কেউ নেয়নি।কিছু সময় পর আশার বাবা ফিরে এলো গেটের দিকটায়। ওদিকে থাকা জিনিসপত্রে তখব দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।জাফরিনকে সেখানেই পড়ে থাকতে দেখে সে এবার আর পিছপা হলো না।সে এবার প্রায় জ্ঞানহীন জাফরিনকে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেল জ্বলন্ত আগুনের দিকে। 
অন্তত এই মুখটা কমলে কথা বলার বা প্রতিবাদ করার মুখ থাকবে না।এই এক আগুনে না হয় কিছুটা লাভ হোক।



(৩৪)

মানুষ পোড়ার এতটা বাজে গন্ধ হতে পারে জানা ছিল না গাড়িতে উপস্থিত থাকা কারোর।মেয়েটা এখনো ব্যথায় কাতর। ঝাপটে ধরে আছে এমিলির হাত। মাশহুদ ড্রাইভারকে দ্রুত নিকটস্থ কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল।যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা শহরের দিকে যাবে। 
এ দেশীয় যে লোকটা তাদের সব দায়িত্ব পালন করছে সে জানালো সদর হাসপাতালে নিতে। ওখানে ডাক্তার পাওয়া যাবে। কিন্তু ওটা তো উল্টো পথে। 
মাশহুদ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বলল গাড়ি ঘুরাতে৷ 
জাফরিনদের বাড়ি পার হওয়ার সময় খেয়াল করলো আগুন নিভেছে। দমকল বাহিনী এসেছে তবে হয়তো তারা এখনো জানে না যে জাফরিন নিখোঁজ। বাড়ির চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছিল।তাদেরকে পাশ কাটিয়েই শা শা করে এগিয়ে গেল তাদের গাড়ি।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলো। ডাক্তার জানালেন রোগীর শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। তার পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামের প্রয়োজন কিন্তু তার হাতে বেশ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। 
এ ক্ষতটা তাকে ভোগাবে। কনুইয়ের নিচ থেকে কবজি অবধি জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষত। ভিক্টিমের গায়ে থাকা লিলেনের কামিজের জন্য তার হাতে দ্রুত আগুন লেগে যায়।সে হয়তো আগুন নেভানো বা ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে হাত পরিষ্কার করেছিল।যার কারণে কাপড় চামড়ায় বসে যায় এবং চামড়া সমেত উঠে এসেছে। মাশহুদের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। সে ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

" নিজ থেকে ভালো হবে?"

"উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।"

" আপনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিন।আমরা কিছুক্ষণ পর শহরে ট্রান্সফার করতে চাচ্ছি।"

"আপনাদের ইচ্ছে। তবে আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।"

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পর এমিলি এগিয়ে এলো মাশহুদের দিকে। সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,

"স্যার, মিস শিকদারের জ্ঞান ফিরেছে। সে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।"
"উনি উনার হাতের দাগ দেখেছেন?
হাতের দাগ তো থেকে যাবে।প্লাস্টিকের সার্জারী করালে কি ঠিক হবে?"

"স্যার উনার প্রতি আপনার এত চিন্তার কোনো কারণ নেই।"

"নেই?তুমি জানো?এই মেয়ের কিছু হলে আমি বা আমার কিছুই থাকবে না।শী ইজ আ প্রফেটেবল প্রজেক্ট ফর মি।যে কোনো মূল্যেই তাকে আমার সুস্থ সবল চাই। উনার সকল কাগজ পত্র রেডি করে ফেল।উনার ফ্যামিলিকে খবর পাঠাও উনি এখানে আছে। এবং খুব দ্রুত যেন সে তার বাবার কর্মস্থলে ফিরে যায়।"

" স্যার, মিস শিকদারের এতটা এএকাডেমিক যোগ্যতা নেই যে সে আমাদের অফিসে জব করবে।"

"আমি বলিনি সে আমাদের সাথেই কাজ করবে। তার লেখাপড়ার জন্যই সে যাবে। বাই দি ওয়ে, তোমাকে বেতন দিয়ে নিশ্চয়ই আমি মুখে মুখে তর্ক করার জন্য রাখিনি।তোমার কাজ আমার সকল কথা অনুসারে কাজ করার। নিজের স্থান ভুলে না যাওয়ার কথাটা মনে রেখো।"

মাশহুদের কথায় হারিকেনের শেষ সলতের মতোন দপ করে নিভে গেল এমিলি।এই ব্যক্তিটা আর যাই বুঝুক মন বুঝে না।যদি বুঝতে পারতো তাহলে আজ এভাবে বলতো না।মাথা নিচু করে সে বলল,

"সরি স্যার। আমি খেয়াল রাখবো।আপনি কি যাবেন মিস শিকদারের সাথে কথা বলতে?"

মাশহুদ তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে এল হাসপাতাল থেকে।
গাড়ির কাছে এসে সিগারেট ধরিয়ে বেশ কিছু সময় বসে রইল সে। আপাতত তার কিছুটা স্বস্তি হচ্ছে। 

দমকল বাহিনীকে কল দিয়ে তারা চলেই যাচ্ছিলো কিন্তু তখন তাদের মাঝে থাকা একজনের দৃষ্টিতে পড়ে কেউ একজন একটা মেয়েকে আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে সে ওদিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় যে লোক আগুনের কাছাকাছি টেনে নিচ্ছিলো সে দৌড়ে পালাচ্ছে।এরপর সে জাফরিনের চেহারা দেখতে পায়।বাড়িতে তখন বেশ হট্টগোল। এত কিছুর মাঝেই সেই ভদ্রলোক মেয়েটাকে পাঁজা কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। মাশহুদ সমেত বাকীরা তাদের দেখে দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করে দুজনকে।

ফোন বের করে মাশহুদ কল দিলো তার বন্ধু কুঞ্জকে। এখানে আসার পর গত কয়েক দিনেই বেশ কিছু সত্যের মুখোমুখি হয়েছে সে। 
প্রথমত তার দাদাভাইয়ের এখানে আরো একটি পরিবার রয়েছে। স্ত্রী সন্তান রয়েছে। যারা খুব কষ্টে দিন পার করছে।বছর তিনেক পূর্বে বড় তার বাড়ির বড়  ছেলে বাড়ি বন্ধক রেখে লাখ ত্রিশ এর মতোন টাকা নিয়ে চলে গেছে কোথাও। 
ধার দেনা এবং ফসলি জমি বিক্রি করে অনেকটা ঋণ শোধ করলেও তারা এখনো বেশ বিপদে রয়েছে। এখনো দশ লাখ টাকা ঋণ, শুধু তাই নয় মেয়ের বিয়ের দায় কিংবা বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসা সব মিলিয়ে তার দাদার বড় ছেলে বেশ বিপদের মধ্যে রয়েছে সে বুঝতে পারে। গত কাল রাতেও পাওনাদার এসেছিল। তাদের বেশ কড়া ভাষায় কথা শুনিয়েছেন। মাশহুদ তাদের ঋণ শোধ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু বৃদ্ধ রাজি হয় নি।যে বাবা তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনি, জন্মের পর থেকেই তার বাবা ডাকটা কেড়ে নিয়েছে সে লোকের টাকা কোন মুখে নিবে?

মাশহুদ তাদের সাথে খুব একটা কথা বলতে পারেনি।ভাষাগত সমস্যার কারণে, কিন্তু ভেবেছিল আজ বলবে অথচ তাও হলো না।

কল রিসিভ করে কুঞ্জ বলল, 

" প্রেমিক পুরুষ কি খবর?মমতাজকে নিয়ে ফিরবি কবে?"

"এখানে সমস্যা হচ্ছে।"

সবটা বলার পর কুঞ্জ বলল,

"তবে তো ওদের পরিবারের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছে।"

"হ্যাঁ,এবার কি করা যায়?"

"শোন তুই ওদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করিস না।এতে তোর মোটিভটা সামনে না এলেও হয়তো কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখবে না।তাছাড়া যা বলেছিস, ওর ফ্যামিলিও খুব একটা ভালো না।"

"আমি চাচ্ছি আমরা পূর্বের প্ল্যান মতোই এগিয়ে যাবো।"

"বেশ তবে তাই হোক।ফিরে আয় তবে আগামীকাল।"

"দিন দুয়েক দেরি হবে। একটা কাজ করতে পারবি আমার জন্য?"

"বলে ফেল।"

"একটা ফ্ল্যাট রেডি করতে হবে।চারজনের জন্য।এটা মাথায় রাখবি বাবা বা দাদা যেন না জানে।এমনকি আমার পরিবারের কেউ নয়।"

"বিয়ে করে বৌ নিয়ে ফিরছিস না কী?"

"ধরে নে তাই।"

(৩৫)

কিছু সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে একে অপরের খোঁজ নিচ্ছিলো।আগুন লেগেছিল খড়ের গাদায় থেকে।রান্নার জন্য আনা বেঁচে পাঠ খড়ি দাঁড় করানো ছিল ঘরের ভিতরে কারেন্টের লাইনের পাশে।প্রথমে খড়ের গাদায় আগুন, ধীরেধীরে পাঠ খড়ি এরপর বিদ্যুৎতের লাইনে গেলে মোটামুটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ইউভানের বাবার হুট করে মনে হলো তিনি দেখেছিলেন কাউকে সিগারেট হাতে ঘরে যেতে। তার অসাবধানতার কারণেই আজ এত বড় বিপদ এসেছে। কিন্তু জাফরিন যে তাদের সাথে নেই এটা তখনো কেউ খেয়াল করেনি।জাফরিনের মায়ের নাম্বারে কল এলে টনক নড়লো সবার।ইউভানকে নিয়ে দুই দুলাভাই এগিয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে তখন কান্নার দমক আরো একবার বেড়ে গেল।একে তো বাড়ির মেয়ে হাসপাতালে, তাদের মনে প্রশ্ন উঁকি দিতে লাগলো কে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল,কিংবা কখন নিয়ে গেল?কি হয়েছে মেয়েটার?
যে কল দিয়েছিল সে জানিয়েছে মেয়েটা অজ্ঞান অবস্থায় আছে। 
হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতেই ইউভানদের জানানো হলো যে রোগীকে ইমারজেন্সী থেকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। জাফরিন তখন দু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কেবিনে সবার পূর্বে প্রবেশ করলেন বড় দুলাভাই। সবার মতেই তিনি একজন বুদ্ধিমান মানুষ যে সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাতে জানে কিন্তু তিনি নিজেও মেয়েটার হাত দেখে চমকে উঠেছে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে জাফরিন তাকিয়ে দেখতে পেল তার ভাইয়েরা এসেছে।
তাদের সাথে এমিলি কিছু সময় পর দেখা করলো।তাদের সাথে এমিলির কি কথা হলো জাফরিন জানে না।
কিছু সময় পর ইউভান এগিয়ে এসে জাফরিনকে বলল,

"তুমি কী দেখেছিলে কে তোমাকে টেনে আগুনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো?"

জাফরিন নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলল,

"দেখেছি দাদাভাই।কিন্তু কী লাভ? সে যে আমার আপন রক্ত।আমার নিজের চাচা।" 





চলবে...





Writer:- সাদিয়া খান (সুবাসিনী)



 

Delivered by FeedBurner

a