দেওবন্দে বিদ্যা অর্জন করা মৌলানা ভাসানী এককালে খেলাফত আন্দোলন করেছেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে যখন পাকিস্তানের জন্ম হয় তখন তিনি ঐতিহাসিক ‘সিলেট রেফারেন্ডাম’- এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সিলেট রেফারেন্ডামের সাফল্য থেকেই সিলেট তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে সংযুক্ত হয়। যাদের হাত ধরে আওয়ামীলীগের জন্ম তাদেরই একজন এই মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তবে পরবর্তীতে এই আওয়ামীলীগ থেকে তিনি নিজেই বের হয়ে এসে গঠন করলেন 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' (ন্যাপ)। এককালে তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, শেষ বয়সে লড়াই করেছেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানিরা তাকে ডাকতো 'কাফের মাওলানা'। হায়, স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করলে 'কাফের' হয়ে যেতে হয়! ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। এই গণঅভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন হয়। এতো বড় মাপের নেতা হয়েও তার ব্যক্তিগত জীবন ছিলো নিতান্তই সাদা-মাটা। জীবনে এত বেশী জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন যে তাকে 'মজলুম' উপাধী দিতে ভুল করেনি দেশের মানুষ।
১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ঘৃণাভরে বলেছিলেন 'ওয়ালাইকুমুস সালাম'- সেই কথা আজ অমর হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীন হবার পর বয়সের ভারে যখন শরীর প্রায় অক্ষম তখনও তিনি ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন গণতন্ত্রের জন্যে, কথা বলার স্বাধীনতার জন্যে, নিজের দেশের জন্যে। তার রাজনৈতিক দর্শনের সাথে স্বার্থের মিল থাকেনা বলে অনেকেই আজ তার অবদানকে ভুলতে বসেছেন, তাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে কার্পন্য করছেন। তবে ইতিহাস এদের ভুলবেনা। বিবিসি পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সেরা বাঙালীতে তিনি হয়েছেন অষ্টম।
আজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। সিরাজগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই মহান নেতা ৯৬ বছর বয়সে মারা যান টাঙ্গাইলে, ১৯৭৬ সালের আজকের দিনে। তার নাম অক্ষয় থাকুক- এই হোক আজকের প্রার্থনা...
Writer:- Rumel M S Pir