Leave a message
> ভাইরাল লাইফ দ্বিতীয় পর্ব
-->

ভাইরাল লাইফ দ্বিতীয় পর্ব


আমার আর আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের একটা আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই খবর যখন আমি আমার আপন ছোট বোনের কাছ থেকে প্রথম শুনলাম, আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি দ্রুত ভিডিওটা দেখার চেষ্টা করলাম, ভিডিও দেখে আমার চোখ এবার ছানাবড়া। সেখানে দেখলাম বাসের পিছনের সিটে বসে একটা ছেলে আর মেয়ে খুব জড়াজড়ি করছে, ছেলেটা এদিক ওদিক তাকিয়ে মেয়েটার স্পর্শকাতর স্থানে হাত গলিয়ে দিচ্ছে। সম্ভবত বাসের সামনের বাম রো এর সিট থেকে কেউ একজন এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে। এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, এটা নাকি আজকে সকালের ভিডিও। কিন্তু, আমার প্রাক্তন নোভার সাথে সত্যি বলতে আমার এমন কোন কাজের উদাহরণ নাই। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো, ভিডিওতে দেখতে ছেলেটা আমার মত হলেও আমি তো জানি এটা আমি না। কারণ আজ সকালে আমি বাসায় ঘুমের মধ্যেই ছিলাম, আর নোভার সাথে আমার দেড় বছর আগে ব্রেকাপ হয়ে গেছে। এরপর আমাদের মধ্যে আর দেখা সাক্ষাত হয় নি, এমনকি ফোনেও মাঝে একআধবারের বেশি মনে হয় না কথা হয়েছে। তারমানে এটা নোভা আমার মতন দেখতেই কোন ছেলের সাথে এইসব কাজ করে বসে আছে।
কিন্তু আমাকে প্রচন্ড অবাক করে দিয়ে নোভা কল দিয়ে যখন বললো, বাসের ভিতরের ভিডিওর ওই মেয়েটা কে? আর আমি কিভাবে এসব করেছি, কোন মেয়ের সাথে এসব করেছি যার চেহারা অনেকটা নোভার মত। আমি নাকি কম্পিউটারের গ্রাফিক্সের কাজ জানি, তাই গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নাকি এসব করেছি।
যেখানে আমি নোভাকে দোষারোপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সেখানে ওর মুখ থেকে এটা শুনে এবার মাথার তালগোল পাকিয়ে গেলো। তারমানে বাসের মেয়েটাও নোভা না, সে নিজেও অবাক। আমি নোভাকে আপাতত বুঝাতে সক্ষম হলাম যে এই কাজ আমার না, আমি নিজেও তার মত অবাক হয়েছি। নোভার সাথে আমার রাতে ফোনে কথা হচ্ছিলো, এই ব্যাপার নিয়ে বিশদ আলাপ করার জন্যে পরের দিন বিকেলে আমরা দেখা করে কথা বলতে চাইলাম।
পরের দিন সকালে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। সুমনা পরিচয়ে নোভার এক মেয়ে রুমমেট আমাকে নোভার ব্যাচেলর বাসায় যেতে বললো। কারণ হলো, নোভা নাকি রাত থেকে অসুস্থ, বেশ জ্বর আর বমি করছে, আমি যেনো ওর বাসায় গিয়ে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এদিকে আমি অবাক, আমাকেই কেন সুমনা এই কথা বলবে, কতদিন পর নোভার সাথে রাতে যাস্ট ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয়েছে। আর নোভা এখন কই থাকে, সেই বাসাও আমি চিনি না, আমার সাথে সম্পর্ক থাকা কালীন যেখানে ছিলো সেটার ঠিকানাও পুরোপুরি মনে নেই। এই প্রশ্ন করতেই সুমনা বললো, আরে আজব আপনি রায়হান ভাই না, আপনি আপুর বিএফ, রোজই তো আপুকে বাসায় নামিয়ে দেন, আর আজ আপু সিক আপনি ভান করছেন।
নাহ্‌! এই সুমনা মেয়েটা বলে কি, কোথায় যেনো সব গুলিয়ে যাচ্ছে। সুমনা চট্‌ করে ফোন রেখে দিলো, কারণ ওদিকে আবার নোভা নাকি বমি করছে।
আমি দুপুরে বিকেলে থেমে থেমে নোভাকে কল দিলাম, ওর নাম্বার বন্ধ। সদ্য সকালে পাওয়া সুমনার নাম্বারে কল দিলাম, সেটাতে দুই-তিনবার কল গেলো। কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না, একটা সময় সেই নাম্বারও বন্ধ। কি আর করার, বুঝলাম, নোভার সাথে আজ আর দেখা হবে না। আর এদিকে আমার ছোট দুই বোন যারা টাঙ্গাইল থেকে পড়াশোনা করে ওরা সহ আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা আমাকে ভুল বুঝে বসে আছে। আমার এই ভাইরাল ভিডিও নাকি আমাদের গ্রামের বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়েছে। অগত্যা নিজেকে নিজে সামাল দিচ্ছি, যা করার নিজেকেই করতে হবে।
রাতে খাবার পর শরীর খারাপ করছিলো জন্যে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। এমন সময় দরজায় কলিং বেলের সাথে বেশ ঘন ঘন দরজায় ঠক্‌ ঠক্‌ আওয়াজ হচ্ছিলো। পুরো বাসায় আপাতত আমি একা, যদিও এই বাসায় আর একজন সদস্য আছে। এই বাসাটা দুই রুমের সাথে একটা ড্রইং রুম, এক রুমে আমি আরেক রুমে তন্ময় থাকে। ছেলেটা অফিস ছুটি নিয়ে ওর রুমে তালা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে, তাই আমাকেই দরজা খোলায় দায় সামলাতে হবে।
দরজা খোলার সাথে সাথে যা দেখলাম, দরজার সামনে চার-পাঁচজন দশাসই লোক দাঁড়ানো, আমাকে শুধু একজন জিজ্ঞেস করলো, আমার নাম রায়হান কিনা। আমি স্বীকার করার সাথে সাথে আমাকে জাপটে ধরে বললো, রুমানা শারমিনরে কই গুম করেছিস বল। অথচ আমার মস্তিষ্কের উপর সর্বোচ্চ চাপ দিয়েও আমি রুমানা শারমিন নামে কাউকে চিনি কিনা মনে করতে পারছিলাম না। ব্যাস তারা দুইজন আমাকে ধরে বাকীরা আমার বাসা তছনছ করে সার্চ করছিলো। ওদের হাতে অস্ত্র ছিলো থাকলেও সিভিল পোশাকে ছিলো সবাই। সম্ভবত তারা ডিবি পুলিশ।
এরপর একজন গিয়ে নিচ থেকে তালাওয়ালা ডেকে আনলো।, তন্ময়ের রুমের তালা খুলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে যাবে। এমন সময় যা হলো।
এই ছিলো প্রথম পর্বের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। আরও বিশদ ভাবে জানার জন্যে প্রথম পর্ব না পড়ে থাকলে আমি গল্পের নিচে লিংক যুক্ত করে দিচ্ছি, পড়ে নিতে পারেন।
তন্ময়ের রুমের ভিতরে সিলিং ফ্যানের সাথে একটা মেয়ের লাশ ঝুলছে। এমন বিভৎস দৃশ্য দেখার জন্যে আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটার পিছনের দিক দরজার দিকে ঘোরানো, ঘাড় বাঁকা হয়ে বাম দিকে কাত হয়ে আছে। হাত পা গুলো টান টান হয়ে নিচের দিকে অবনত। পিছন থেকে দেখে মেয়েটাকে চেনা সম্ভব না, এক মুহূর্তে আমার মনে হলো, এটাই হয়তো রুমানা শারমিন। যার খোঁজে পুলিশ এই বাসায় হানা দিয়েছে, কিন্তু পুলিশ রায়হান নাম বলে আমাকে ধরে রাখলো কেনো। ঘটনার প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে যেতেই অফিসারমতন লোকটা তড়িঘড়ি করে লাশের পা জাপটে ধরে কিছুটা উঁচু করে ধরলো। আমাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাখা দুইজনের একজন আচমকা আমাকে ছেড়ে দিয়ে, কোন দিকে যেনো ছুটে গেলো। আমি এখনো পরিস্থিতির আগামাথা বুঝতে অক্ষম, খুব করে মেয়েটার চেহারা দেখতে মন চাচ্ছে। ভিতরে ভিতরে চাপা উত্তেজনা, চিৎকার করে কান্না করতেও মন চাইছে। কিন্তু এখন কান্নাটাও বোধকরি গলায় এসে আটকে আছে। খানিক বাদে অফিসার নিজে চিৎকার করে বললো- ওই কিচেন থেকে কেউ বটি চাকু কিছু নিয়ে আসেন। পরমুহূর্তেই আমাদের রান্নাঘরের বটি গগণে তুলে ওই পুলিশ ছুটে আসতে আসতে বলছে- স্যার এই যে আনছি।
আমি বুঝলাম, কেনো সে আমাকে ছেড়ে ওদিকে গিয়েছিলো। কিছু বলার আগে বুঝে নেয়া এই ছোকরা পুলিশকে হয়তো অফিসারের খুব পছন্দ। সবাই ধরাধরি করে লাশ নামানোর আয়োজন করলো। একজন একটা চেয়ার টেনে উপরে উঠে দড়ি কেটে ফেললো। নিচ থেকে দুজন লাশটাকে জাপটে ধরে নামাতে নিলো। আমাকে ধরে রাখা একজন পুলিশ খুব উৎসাহ নিয়ে মেয়েটার মুখ দেখার চেষ্টা করছে। আমি নিজেও ওদের ভীড়ে মেয়েটার চেহারা দেখতে পারি নি। এদিকে ওই দা আনা পুলিশ তন্ময়ের বিছানার চাদর হ্যাঁচকা টান দিয়ে নামিয়ে ফ্লোরে বিছিয়ে দিলো। এই লোক তো খুব একটিভ, কি করতে হবে সব বুঝে যায়। চাদর টান দেয়ার আগে চাদরের উপর শক্ত কিছু একটা ছিলো, আচমকা টান দেয়াতে খাটের ওইপাশ দিয়ে কি যেনো ফ্লোরে পড়ার শব্দ হলো। সেদিকে হালকা করে তাকিয়ে অনুমান করলাম, মোবাইল হবে হয়তো। লাশ ফ্লোরে ধরাধরি করে সদ্য বিছানো চাদরের উপর নামানো হলো। এরমধ্যে নামনোর সময় অফিসার কয়েকবার চিৎকার করে উঠেছে, আরে ধরেন মিয়া ওই দিকে ধরেন, আরে কি হইলো, ধুর মিয়া আপনেরে পুলিশের চাকরি করতে কইছে কে। শফিকরে দেখেন, এই ছেলের মত হতে চেষ্টা করেন। আমি বুঝে নিলাম, এই শফিকের আগ বাড়িয়ে কাজ করার ব্যাপারটা অফিসারে আসলেই বেশ পছন্দ। আমি লাশ নামাতে নামাতে এক ঝলক মেয়েটার চেহারা দেখলাম। লাশ নামানো হলো, আমার দিকে মাথা দিয়ে শুইয়ে দেয়া হলো। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আমি উপর থেকে মেয়েটার উল্টো মুখ দেখছি, আসলে পরিচিত হলে এভাবেও চিনে যাবার কথা। কিন্তু নাহ্ একে আমি চিনি না, রুমানা শারমিন নামের কাউকে আমার চেনার কথাও না। অযথা পুলিশ আমাকে হয়রানী করছে, তন্ময় যে এটার সাথে জড়িতে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, আপাতত এই ঝামেলা সামাল দিতে আমাকেও যে বেগ পেতে হবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। লাশ নামিয়ে হালকা নাড়ি পরীক্ষা করে, অফিসার উঠে দাঁড়ালো। তারপর আমাকে ভয়ানক এক শীতল চাহনীতে বিদ্ধ করে বললো- এই মিয়া, এইডা কারে মাইরা ঘরে তালা দিছিস?
এই প্রশ্নের জন্যে আমি অন্তত প্রস্তুত ছিলাম না, কারে মাইরা মানে, এই মেয়ে কে আমি নিজেই জানি না কিন্তু পুলিশও কি জানে না! আর পুলিশ তো তুই তুকারি শুরু করে দিয়েছে, মানে ঘটনা অতিব খারাপ। আমি কিছু একটা বলতে যাবো, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। শরিফ ছোকরাটা এবার গর্জন করে উঠলো- ওই স্যার কি বলে, তোর কানে যায় না? এই মেয়ে ক্যারা?
আমি ক্ষীণ কণ্ঠে কোনমতে বললাম- স্যার এইডা তো আমার রুম না, আমি তো এই মেয়েকে চিনিই না। এইরুমে তন্ময় নামের একজন থাকে।
শরিফ কিছু বলতে যাচ্ছিলো, অফিসার মধ্যে থেকে কথা কেড়ে নিয়ে চড়া গলায় বললো- ফাইজলামি করোস জানোয়ার, তুই খুন করছিস। এই রুমের লোক কই, আর এই মেয়ে কে তাই বল? বাসায় আইনা মাগীবাজি করতি নাকি তোরা!
আমি হতবাক এক অসহায় মানুষ। চাবিওয়ালা লোকটা খুব উৎসাহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সে মনে হয় খুব মজা পাচ্ছে। সারাজীবন আসর জমিয়ে বুক ফুলিয়ে রসিয়ে কষিয়ে বলার মত একটা গল্প তার ঝুলিতে জমা হচ্ছে, এই লোকের যেনো তাতেই আনন্দ। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
চট করে শফিক ছুটে এসে আমার মুখের দুইপাশের গাল মোটা শক্ত হাতে চেপে ধরে বললো- ওই হারামজাদা এই মেয়ের পরিচয় বল? নইলে এইখানেই গুলি কইর‍্যা লাশ ফালাইয়া দুই লাশ একবারে নিয়া যামু, কইলাম।
আমার ভীত মন আরও ভীত হয়ে গেলো। এবার আমি গালে ব্যথা পাচ্ছি, কিছু বলতে গিয়ে দেখি এত জোরে মুখ চেপে ধরেছে শফিক, আমার শব্দগুলো অদ্ভুত আও আও মতন করে বের হচ্ছে।
অফিসার একটু নমনীয় কণ্ঠে বললো- থাক, থাক এখন না। এই মেয়ের ব্যাপারে এই শালা নাও জানতে পারে। মিরপুর থানায় একটা কল লাগান, আর ফোর্স পাঠাতে বলেন।
শফিক আমার গাল ছেড়ে দেবার আগে মনে হলো সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আরেকদফা চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলো। আমার মুখে নিশ্চিত ওর নখের দাগ বসে গেছে। ইস, আমি আর কিছু না করি মুখের খুব যত্ন করি অথচ আমার গালে সে দাগ বসিয়ে দিচ্ছে। সপ্তাহে দুইবার আড়ং থেকে কেনা স্কার্ব মেখে বসে থাকি, তারপর উপটান লাগিয়ে আধাঘন্টা। এরপর গার্নিয়ারের ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলি। অতঃপর মুখে মেনজ ক্রিম সাথে অল্প সানস্ক্রিন পাউডার মেরে বের হই, আর এই মুখে কিনা এমন অত্যাচার। সুযোগ পেলে এই শফিকের গালে কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে নেবার ইচ্ছে আছে আমার।
শফিক একবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললো- স্যার, এই লাশ কার? এইরুমে যে থাকে ওরে ডাকার ব্যবস্থা করি। সুইসাইড নাকি, কে জানে?
অফিসার একটু ভেবে জবাব দিলো- আমার মনে হয় না সুইসাইড। শরীরের জামা সরালে হয়তো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাবে। আর রশিতে ঝুলার সময় একটা জিনিস খেয়াল করেছেন? ও ভালো কথা, এই রশি পাইলো কই মেয়ে? আবার ফাঁসি নিছে ঠিক আছে, বুকে দেখি ওড়না ঠিকই আছে। এই বলে অফিসার একবার ফ্যানের দিকে তাকালো, আর একবার নিচে শুইয়ে রাখা মেয়েটার লাশের দিকে।
শফিক খুব আগ্রহ নিয়ে গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কি জিনিস স্যার?
অফিসার খুব বিচক্ষণতা নিয়ে বলছে- মেয়েটার চুলগুলো খুব যত্ন করে রশির বাইরের দিকে ছিলো। একজন সাধারণত ফাঁসি নিতে গিয়ে গলার দড়ি দিয়ে চুল এত সুন্দর করে ফাঁসের বাইরে দিবে না। ব্যাপারটা এমন যে, ইস মরার সময় যদি আমার সুন্দর চুলে টান লাগে। হয়তো অজ্ঞান করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে, সাথে চুলগুলো বাইরে বের করে দিয়েছে। আর এই কাজ একজনের করার কথা না, মেয়ের শরীরে ওজন আছে উঁচা লম্বা আর স্বাস্থ্যও বেশ ভালো। আগে জানো এই মেয়ে কে? আর মিরপুর থানার ওসি সাবকে কল দেও।
আমি সব শুনে দ্বিধায় পড়লাম আরেক দফা, মানে কি! এই মেয়ে কি আসলেও পুলিশের খোঁজা রুমানা শারমিন না। আমার খুব জিজ্ঞেস করতে মন চাচ্ছে, কিন্তু সাহসে কুল্লাচ্ছে না। তবুও অফিসার যেহেতু প্রাথমিক সন্দেহের তালিকা থেকে আমাকে একটু হলেও নিস্তার দিয়েছে, সাতপাঁচ ভেবে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে বসলাম- স্যার, এই মেয়ে কি রুমানা শারমিন না?
অফিসার চট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো- রুমানা শারমিন। আরে না ব্যাটা, রুমানা শারমিনকে তো তুই গুম করেছিস। তোরে পিটাইতে হবে অফিসে নিয়ে সকাল বিকাল। এই রুমের যে থাকতো ওর নাম কি, নাম্বার দে তো?
আমি অফিসারের আবার হুমকি মাখা তুই তুকারি শুনে বার দুয়েক ঢোঁক গিললাম, খুব পানি পিপাসা পাচ্ছে। তন্ময়ের টেবিলে একটা পানির বোতল আছে, আমি ওদিকে তাকিয়ে বললাম- স্যার একটু পানি খেয়ে নেই, খুব গলা শুকিয়ে গেছে।
অফিসার বললো- খা!
আমি আমাকে ধরে রাখা পুলিশের দিকে তাকাতেই আমাকে হাতের বন্ধন আলগা করে দিলো, আমি গিয়ে দ্রুত ঢক ঢক করে এক লিটার বোতলে থাকা অর্ধেক লিটার পানির পুরোটা খেয়ে নিলাম।
অফিসার একটু মুচকি হেসে বললো- আরে ব্যাটা, একটু রাখবি তো কিছু, পানি তো আমারও খাওয়া দরকার ছিলো।
আমি টেবিলে বোতল রেখে, অফিসারের দিকে তাকিয়ে বোকা একটা হাসি দিয়ে বললাম- স্যার আমার রুমে পানি আছে, আমি নিয়ে আসি!
-যান নিয়ে আসেন, বেশি করে আইনেন।
হুট করে অফিসার আমাকে আপনি সম্বোধন করাতে আমার আবার ভালো লাগছে। আমি তন্ময়ের রুম থেকে বেরুতে যাবো, শফিক নড়েচড়ে উঠলো। বুঝলাম, এই ব্যাটাও আমার সাথে রুমে যাবে। খোদারে, এই হারমীটারে তুমি কি দিয়া বানাইছো! কঠিন এক জিনিস!
আমি আমার রুমের দিকে যাচ্ছি, আমার খুব দূর্বল লাগছিলো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে কোন সময় আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। এতক্ষণ ধরে করতে থাকা দুঃচিন্তাগুলো এখন প্বার্শপ্রতিক্রিয়া করা শুরু করেছে। আমি মনে হচ্ছে মাতালের মত এলেমেলো পায়ে হেঁটে রুমের দিকে যাচ্ছি। শফিক আমার পাশে পাশে আড়চোখে তাকিয়ে আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে। টলতে টলতে আমার রুমের খোলা দরজার কাছে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া, আমার রুম তো পুরো তছনছ করে ফেলা হয়েছে, রুমের সবকিছু উলোট-পালোট। এতদিন পুলিশের সার্চিং সম্পর্কে শুনেছি, টিভিতে দেখেছি, গল্পে পড়েছি। আজ নিজের চোখে দেখলাম, এরা খুব মহা আনন্দ নিয়ে বোধহয় এসব করেছে। পানির বোতল যে কই আছে কে জানে! রুমে ঢুকার মুখেই জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে, এদিকে শরীর আরও দূর্বল লাগছে। আমার মনে হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি, আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। সত্যিই কি তাই, আমি কি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি। আমি মাথা ঘুরে জীবনে প্রথমবারের মত পড়তে যাচ্ছি, কেউ একজন পড়ন্ত আমাকে জাপটে ধরে বললো- ভাই, এই ভাই!
শফিক হবে হয়তো, আমার চোখ মেলে তাকানোর শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।
............
চোখ মেলে পিটপিট করে তাকাতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাকাতেই গেলেই দেখি চোখের ভিতরে জ্বলে। আমার মনে হচ্ছে, একজনম পর ঘুম থেকে উঠলাম, আমি কোথায় কি অবস্থায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। চারদিকে চাপা একটা কোলাহল আছে, কোন এক বদ্ধ বিশাল হলঘরে সবাই কথাবার্তায় মগ্ন থাকলে যেমন হয় তেমন কোলাহল।
কোনমতে একটু করে তাকিয়ে দেখলাম মাথার বেশ উপরে ছাদ, জায়গাটা আমার চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু আমি আসলে কোথায়, ডানে বাঁয়ে ঘাড় ঘুরানোর মত শক্তি আমার খর্ব হয়েছে। আমি সটান হয়ে শুয়ে আছি এটা বুঝতে পারছি, হুট করে একজনের একটা কথা বেশ তীর্যকভাবে কানে বাজলো- এই আসামীর জ্ঞান ফিরছে, এই যে নার্স আপা এই দিকে আসেন তো।
আমি এবার বড়বড় করে চোখ মেলার চেষ্টা করলাম, আস্তে আস্তে সেদিনের ঘটনা সব মনে পড়তে থাকলো। আসামীটা কে, আমি নাকি! আমি কি তবে সেদিন সত্যি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম, কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম, নাকি কতদিন! আমি কি হাসপাতালে, আচ্ছা কোন হাসপাতালে, নিশ্চয় ঢাকা মেডিকেলে হবে!
একজন নার্স কই থেকে এসে, চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা আমার মুখের উপর এসে নিজের বদন মেলে ধরলো।
-ভাই, আপনার কি জ্ঞান ফিরছে?
আমি হুঁশ হারিয়ে বেহুশ ছিলাম হয়তো কিছুক্ষণ বা কিছু দিন। কিন্তু তবুও মস্তিষ্ক এত আবোল তাবোল হয় নাই যে, একজন অজ্ঞান থেকে জ্ঞান ফেরা মানুষকে জিজ্ঞেস করবো, ভাই আপনার কি জ্ঞান ফিরছে!
আমার খুব রসিকতা করতে মন চাচ্ছে, আমি কোনমতে আস্তে করে জবাব দিলাম- না আপা, আমার জ্ঞান ফিরে নাই। আমি খুবই অজ্ঞান অবস্থায় আছি।
নার্স মুহূর্তেই আমার রসিকতাটা ধরে ফেলেছে। সে বুঝতে পেরেছে তার প্রশ্নটা উপযুক্ত ছিলো না। সে চট করে আমার বাম চোখের উপরের হাড়ে নখ দিয়ে চাপ দিয়ে ধরলো। আরে কি আজব, আমি আসামী বলে কি সবাই আমাকে ব্যাথা দিবে নাকি, মেয়েটা মনে হয় আমার চোখের ওখানে আবার নখের দাগ বসিয়ে দিবে, ইস কে না জানে আমি আর কিছু করি না করি মুখের কত যত্ন করি। অথচ, আমি জানি এভাবে চোখের উপরের হাড়ে চাপ দিয়ে অজ্ঞান হতে যাওয়া কাউকে হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই নার্স আমাকে ইচ্ছা করে এসব করছে, সে তো জানে আমি এখন হুঁশে আছি। কিন্তু ওই যে দুষ্ট মিষ্টি রসিকতা করতে গেছি, তার এটা পছন্দ হয় নাই। কি আর করার, দে ব্যথা, আমার মনে হচ্ছে ডান হাত দিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে আমার চোখের উপর থেকে নার্সের হাত সরিয়ে দেই। কিন্তু হাত নাড়াতে গিয়ে দেখি ওমা, এ দেখি স্লো মোশনে কাজ করছে, সুপার স্লো মোশন। যে গতি নিয়ে হাত উঠাতে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে তার থেকে কয়েকগুণ আস্তে কাজ করছে। থাক, এই শক্তি নিয়ে আঘাত করলে, আমার হাত খুলে পড়ে যেতে পারে। তার চেয়ে ভালো একটু কষ্ট করে চিৎকার করে উঠি। কোনমতে সর্বশক্তি দিয়ে বললাম-
এই আপা, ব্যাথা পাচ্ছি তো।
নার্স এবার একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে কাকে যেনো বললো- এই যে পুলিশ ভাই, আপনাদের আসামীর জ্ঞান ফিরছে। দেখেন মিয়া, কত কষ্ট দিছেন আমাদের এই কয়দিন।
আমি ডান দিকে কাত হয়ে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু নাহ্‌ কোনদিকেই ঘাড় কাত করে তাকাতে পারছি না। আমি জাগ্রত হয়ে মরার মতই পড়ে রইলাম। আমার আপাতত খুব করে জানতে মন চাচ্ছে, আমি কতদিন বেহুঁশ ছিলাম, এতক্ষণে অন্তত এটা নিশ্চিত হয়ে গেছি আমি ঢাকা মেডিকেলের কোন এক ওয়ার্ডে পড়ে আছি।
……………
হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর, আমাকে দিন দুয়েক পরে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। শরীরের অবস্থা তেমন একটা ভালো না, ওখানেও আমাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে, আপাতত কোন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি নাকি রুমানা শারমিনকে অপহরণ করে লুকিয়ে রেখেছি, আমি সুস্থ্ হলে আমাকে নাকি ডিম থেরাপি দিয়ে কথা বের করা হবে। আচ্ছা, এই ডিম থেরাপি কি জিনিস, পশ্চাৎদেশ দিয়ে নাকি গরম সেদ্ধ ডিম প্রবেশ করানো হয়, কে জানে ঘটনা সত্যি কিনা। ঘটনা সত্যি হলে, এটা কিন্তু মজার একটা ব্যাপার। মানে এত কিছু থাকতে একটা ব্যাটা মানুষকে ল্যাঙ্গটা-ছ্যাংটা করে পাছা দেখার কি আছে। তাও এই দেশের লোকের গায়ের রঙ যে কালারেরই হোক না কেনো, নিন্মাংগে কালোর একটা প্রলেপ থাকবেই। আচ্ছা, আমি এখনো জানি না তন্ময়ের রুমে যে মেয়েটার লাশ পাওয়া গেছে সেটা কে ছিলো। আর তন্ময় কোথায় আছে, কি অবস্থা, মেয়েটাকে কে মেরেছে, তন্ময়ের তালাবদ্ধ রুমে মেয়েটা কিভাবে আসলো কে জানে। এদিকে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরের দিন একবার ছোট চাচা এসে দেখা করে গেছে, এরপর ডিবি পুলিশ আমার সাথে আর কাউকে দেখা করার সুযোগ দেয় নাই। বরং এরা আমাকে এমনভাবে লুকিয়ে রেখেছে, মনে হচ্ছে আমি রুমানা শারমিনকে না এরাই আমাকে গুম করেছে। আচ্ছা, এই রুমানা শারমিনটা কে, ধুর কেউ এসে এখন জিজ্ঞেস করলেও তো কথা বলে এদের ভুল ভাঙানো যেতো। আমি তো মাঝে পাক্কা তিনদিন নাকি অজ্ঞান ছিলাম, শালা এমন হলো কিভাবে, এই দুই যুগ চার বছর বয়সে এসে এভাবে অজ্ঞান হয়ে তিনদিন পড়ে থাকা সত্যি বেমানান।
এই মিয়া এখন শরীর কেমন?
আমি একটা সিঙেল বিছানায় শুয়ে ছিলাম। সেই অফিসারকে এসে এই কথা বলাতে, উঠে বসলাম কোনমতে। এরমধ্যে এর ওর কাছে শুনেছি, উনার নাম হামিদ। খুব কঠিন লোক নাকি উনি, যাকে বলে কড়া মাল।
আমার উঠা দেখে উনি এগিয়ে এসে আমাকে ধরে বসতে সাহায্য করলেন। বসার পরে আস্তে করে বললাম- জ্বী স্যার আছি ভালো। আপনি কেমন আছেন?
অফিসার উনি কেমন আছেন প্রশ্নটা শুনে একটু ভড়কে গেছে। আসামীরা কোনদিন উনাকে এমন প্রশ্ন করেনি মনে হয়। উনি মৃদু হেসে বললেন- আমাদের আর ভালো থাকা।
হামিদ সাহেবের হাসি সুন্দর, কঠিন মানুষের হাসি সুন্দর হয়। ঠিক সুন্দর হয় না, এদের হাসি দূর্লভ। আর দূর্লভ ভালো জিনিসের কদর এই জগতে সবসময় ছিলো।
-তো বলেন তো, কাহিনী কি? আপনি যে মিয়া রুমানা শারমিনকে চিনেন না বলতেছেন? মিয়া তার সাথে আপনার বাসের মধ্যে ভিডিও আছে, আরে সেই ভিডিও তো আগে দেখি নাই, ঐদিন দেখলাম।
আমি কপাল কুঁচকে বললাম- মানে স্যার, রুমানা শারমিনের সাথে ভিডিও মানে। স্যার শুনেন ঐ বাসের ভিডিওতে তো আমি ছিলাম না। আমার মত দেখতে একটা ছেলে ছিলো। স্যার...।। এইটুকু বলে আমি গালে হাত দিলাম, দাঁড়ি কতটুকু হয়েছে চেক দেবার নিমিত্তে, কারণ আপাতত এই কথাটাই প্রমাণ করতে পারে ঐ ভিডিওতে আমি ছিলাম না।
গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে চললাম- স্যার, দেখেন আমার গালে কত বড় দাঁড়ি হয়েছে। আপনি যে ভিডিও দেখেছেন সেখানে কি গালে দাঁড়ি ছিলো, ছিলো না স্যার। কিন্তু স্যার শুনেন ঐ ভিডিওতে কিন্তু বলেছিলো এটা আজকে সকালের ঘটনা, মানে যেদিন আপলোড করে কেউ। তার পরেরদিন রাতে আপনি আমাকে ধরতে বাসায় গেলেন, তখন স্যার আমার গালে পাঁচ-ছয়দিনের দাঁড়ি। আপনি মনে করে দেখেন স্যার, এখন দেখেন আরও বড় হয়ে গেছে। এখন এটা মিনিমাম দশ দিনের দাঁড়ি হবে।
অফিসার আমার কথা মন দিয়ে শুনলো কিনা বুঝলাম না। সে তো কোন ফাঁকে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে বাসের ভিডিওটা দেখবে, আরে আমার ইজ্জত রে! কিন্তু, বাসের ভিডিওতে রুমানা শারমিন ছিলো এর মানে কি। আচ্ছা, আচ্ছা, ইয়ে মানে আচ্ছা! এটা তো নয় যে নোভার নাম রুমানা শারমিন। মানে নোভার পুরো নাম কি এমন ছিলো- রুমানা শারমিন নোভা। তাই কি! নাকি না! নাকি হ্যাঁ! তাই তো! মানে কি নোভাকে অপহরণ করা হয়েছে, আর সন্দেহের তালিকায় আমি। আল্লাহ্‌ এক জট খুলে তো হাজার জট লাগে। আচ্ছা আমি কি হামিদ সাহবকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিবো। কিন্তু উনি ততক্ষণে ভিডিও চালু করে দিয়েছেন। আমি চুপ করে মাথা নিচু করে রইলাম। একটুক্ষণ দেখে ভিডিও বন্ধ করে উনি আমার দিকে তাকালেন, তারপর মোবাইলে কি যেনো দেখতে দেখতে বললেন- কথা সত্য আপনার। এই যে ওইদিন আপনার গালে দাঁড়ি দেখা যাচ্ছে খোঁচা খোঁচা। বলে আমার একটা ছবি উনি দেখালেন। আমি চোখ বন্ধ করা অবস্থায়, খুব কাছ থেকে তোলা একটা ছবি, কেমন বেকুব বেকুব লাগছে আমাকে। সম্ভবত আমাকে আটকের সময় অজ্ঞান হবার পর তোলা হয়েছিলো।
অফিসার আবার বলে চললেন- আরে ভাই কি সব যুক্তি দেন, শিক্ষিত মানুষের এই এক সমস্যা, সবাইকে বেকুব ভাবে। আরে মিয়া আপনি শিক্ষিত আমি কি ঘাস খাইয়া এইখানে আইছি নাকি! এইডা আগের ভিডিও হইতে পারে, আর এই মেয়ের সাথে আপনার প্রেম ছিলো। আবার কাহিনী করেন!
আমি ঘটনার কোথা থেকে যে কি বুঝাই, কিছুই শুরু করতে পারছি না। আবার কোনমতে বলে গেলাম- স্যার, একটা কথা জানার ছিলো।
-কথা তো মিয়া আমাদের জানাবেন। রুমানা শারমিনকে কই রাখছেন বলেন তো, বিয়ে করে ফেলছেন নাকি? নাকি আপনার বন্ধু তন্ময়ের মত বউকে খুন করে লাশ বানাই দিছেন।
আমার ভিতরে ধুক্‌ করে উঠলো। মানে কি, আসলেই তো তন্ময়ের কাহিনী তো জানাই হলো না। আমি বাকী সব ভুলে গিয়ে বললাম- স্যার, তন্ময়ের ব্যাপারটা একটু বলবেন, স্যার প্লিজ স্যার আমি যা জানি আগেই বলছি স্যার।
-ওই ব্যাপারে কি কমু, আপনি ঐ মামলারও আসামী আছেন, কিন্তু আগে যেহেতু অপহরণ মামলা হয়েছে, আবার আমাদের গ্রেফতারের সময় অজ্ঞান হয়েছিলেন, তাই মিরপুর থানার পুলিশ আপনাকে নিতে চায় নাই। পরে আমরাই দেখভাল করলাম, এখন ডলা দিয়া কথা বের করে রুমানা শারমিনকে উদ্ধার করবো আগে। তারপর, আপনাকে মিরপুর থানার মাধ্যমে কোর্টে চালান করে দিবো। নিশাত মনে হয় ভিক্টিমের নাম, নিশাত হত্যা মামলার দুই নাম্বার আসামী আপনি।
আমি যদি উপরওয়ালার কৃপায় একটু অজ্ঞান হতে পারতাম আবার বেশ হতো। এই লোক বলে কি, আমার স্থান আসলে এখানে না, আমাকে তুলে পাবনার হেমায়েতপুরের পাগলা গারদে রেখে এলে মন্দ হতো না। আমি নাকি অপহরণ মামলার আসামী, আমি নাকি হত্যা মামলার আসামী, আমার ভিডিও ভাইরাল। আহা রে জীবন! আমার আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে মন চাচ্ছে না হামিদ সাহেবকে, ভিতরটা যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছে, কি যে এক মিথ্যে চক্রবূহ্যে পড়ে গেলাম কে জানে।
অফিসার মনে হলো আমার ভিতরের অবস্থা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে, একটু নমনীয় গলায় বললেন- ভাই শুনেন, আমি জানি আপনি ঐসব খুন টুনের কিছু জানেন না। কিন্তু আপাতত ওইটা নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি ভাই আগে স্বীকার করেন যে আপনি রুমানা শারমিনকে চিনেন কিনা? আপনার তো তার সাথে রিলেশন ছিলো রে ভাই।
আমি আবার অফিসারের উপর কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম। আগে নোভা বলতো রায়হান জানো আমার মুড সুইং হচ্ছে, এটা শুনলে আমি ক্ষেপে গিয়ে বলতাম, এইগুলা ভাঁওতাবাজী। ফাজিল মেয়েরা ফাইজলামি করবে, আর অজুহাত হিসেবে নতুন এক স্ট্যাইল বের করছে মুড সুইং। আরে বাবা আমি বহুত দেখেছি আকাম কুকাম করে এসে বলে ইয়ে মানে আমার মুড সুইং হয়েছে, আই এম সরি। সত্যি এইসব তত্ত্ব আমাকে বইলো না তো নোভা। নোভা খুব মন খারাপ করে বলতো- একদিন তুমি ঠিকি সব বুঝবা রায়হান, অন্য মেয়ের জন্যে সেদিন তোমার সব ভালো ভালো বুঝ আসবে, মাঝে শুধু আমার ভালোবাসাটা বিসর্জন গেলো। আমি মুখ বাঁকা করে বলতাম- ধুর তোমার বালের ফিলোসফি!
এখন বুঝতে পারছি, আমার নিজেরই মুড সুইং হচ্ছে। এই যে খানিক আগে অফিসার বললো, আমি নাকি খুন টুনের ব্যাপারে কিছু জানি না বলেই তার বিশ্বাস। এটা শুনেই আমার হামিদ সাহেবকে ভালো লাগতে শুরু করেছে, উনার গালে একটা চুমু দিতেও আমার আপত্তি নেই। মেয়েরা দেখা সাক্ষাত হলে দেখি কি সুন্দর গালে গাল ঠেকিয়া আহ্লাদ করে, চুমু খায়। শালার, আমরা ছেলেরা করলে ব্যাপারটা কেমন বিশ্রী লাগে। আজ যতই লাগুক, হামিদ সাহেবকে কষে একটা চুমু দিতে পারলে যা হতো না। বেচারা নিশ্চয় চমকে যাবে, আমার অপ্রত্যাশিত এমন আচরণে কি হবে লোকটার ভিতর। আমার মাথাটা এমন গুমোট হয়ে আছে, সত্যি শয়তানি করতে মন চাচ্ছে।
হামিদ সাহেবের তাগাদায় আমার চিন্তায় ছেদ পড়লো- আরে ভাই আপনাকে ভালো করে বলছি, এখনও সময় আছে কাহিনী খুলে বলেন মিয়া। ডাক্তার আপনেরে পিটাইতে না করছে, নইলে এতদিনে মাইরা কথা বের করতাম, পিটাইলে তো মইরা যাবেন গা। ঐদিন পানির সাথে মিশানো যে জিনিস খাইছেন…...।
আমি অফিসারের কথা শেষ না হতেই টুপ করে অফিসারের গালে একটা চুমু দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলাম। ঠিক এমন সময় শফিক সেই ছোকরা পুলিশটা কি মনে করে এদিকেই আসছিলো। সে হয়তো রাজ্যের বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। অফিসার কি করবে বুঝতে না পেরে গাল সরিয়ে নিলো। আমি সোজা হয়ে বসে শফিকের দিকে তাকাতেই আরেক দফা চমক খেলাম, এখানে তো শফিক একা নয়। পাশে আরেকজন আছে, নোভা এখানে কিভাবে। মানে, নোভা কি এই চুমুর সিন দেখে ফেললো। এখন নোভার মনের ভিতর কি চলছে, আর তার চেয়েও বড় কথা নোভা এখানে আসলো কিভাবে!
কি যে একটা অবস্থা!
……………
চলবে...

পরের পর্বে সমাপ্ত হবে।

Writer:- রাজভী রায়হান শোভন (Razvi Rayhun Shovon)

 

Delivered by FeedBurner

a