Leave a message
> ভাইরাল লাইফ প্রথম পর্ব
-->

ভাইরাল লাইফ প্রথম পর্ব


ভাইয়া, তোমার আর নোভা আপুর যে একটা বাজে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, এটা কি দেখছো তুমি! আমি শুরুতে কথাটা হজম করতে পারি নাই, ছোট বোন কল দিয়েই এটা কি বললো! আমি আবার শোনার জন্যে তাগাদা দিয়ে বললাম- কি ভাইরাল হইছে, নোভার! বুঝি নাই, আবার বল?
ছোট বোন শান্তা বললো- বাসের পিছনের সিটে বসে তোমরা দু’জন কি সব করছিলা, এইটা এখন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে, কেন তোমার চোখে পড়ে নাই?
আমি একটু কড়া ধমকের সুরে বললাম- ঐ নোভার সাথে আমার ব্রেকাপ হইছে কমপক্ষে এক বছরের উপরে হবে, কি যা তা বলিস। আমরা আবার কবে একসাথে বাসে উঠলাম, আর বাসে কিসের ভিডিও ভাইরাল হবে। আমি কিন্তু শান্তা, তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতাছি না।
-ভাইয়া শুনো, ছোট্ট চাচ্চু কল দিয়ে আমাকে বললো, পরে আমিও দেখলাম। এই ভিডিও নাকি আমাদের গ্রামের অনেকেই দেখে ফেলেছে, আমরা এবার ডিসেম্বরে বাড়ি যাবো কিভাবে বলো তো? তুমিই না বললা, নোভা আপু খারাপ মেয়ে, তার থেকে তুমি সরে এসেছো, তাহলে এখন এসব কি দেখি!
শান্তার কথা আমি নিতে পারছিলাম না, কেমন যেনো মাথা ভন ভন করছে। মস্তিষ্কে চিন্তার পোকাগুলো ছটফট শুরু করে দিয়েছে, সব মিলিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিলো। কেউ না জানুক, আমি জানি নোভার সাথে সম্পর্কের পর্ব চুকে গেছে আজ এক বছরের বেশি সময় হবে, এখন কিসের ভিডিও ভাইরাল হবে তাও বাসে। আমি জড়ানো কণ্ঠে বললাম- শান্তু বুড়ি, আমি কিছু বুঝতাছি না কিন্তু। তুই কি একটু বুঝাইয়া বলবি, কি ভিডিও এটা!
শান্তা বেশ অভিমান কিংবা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললো- ম্যাসেঞ্জারে যাও, আমি তোমাকে লিংক দিচ্ছি।। নিজেই দেখে নাও, আর এইবার আর আমাদের বাড়ি যাওয়া লাগবে না, যে কাজ করছো আপাতত বাড়িতে যাবার আর নাম নিও না ভাই।
আমি কোনমতে বললাম- আচ্ছা, চুপ থাক, তুই লিংক দে। আগেই এত বাড়তি কথা বলিস কেন!
-বাড়তি কথা না কি, নিজেই দেখো।। বলে শান্তা খট্‌ করে ফোন কেটে দিলো।। আমার পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে, কেমন যে ভয়ানক সে অনুভূতি ভাষায় প্রকার করার মত না।। কোনমতে ল্যাপটপ খুলে বসলাম, আমার ল্যাপটপ খুব দ্রুতই চালু হয়, এখন মনে হচ্ছে অনন্তকাল সময় লাগছে।।
পিনকোড দিয়ে ল্যাপটপে ঢুকে, দ্রুত বার কয়েক রিফ্রেশ করেই, ব্রাউজারে ঢুকলাম।। ফেসবুকে লগিন করাই থাকে, পুরো পেইজ লোড হবার পর, চাতক পাখির মত বসে আছি।। দেখলাম শান্তা একটা লিংক দিয়ে উপরে লিখেছে, এই যে দেখো-
আমি সরাসরি লিঙ্কে ক্লিক করলাম।। দেখলাম এটা একটা জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ, যেখানে তনয়া দাস নামে একজন একটা ভিডিও শেয়ার করেছে।। আমি ভিডিওর উপরের ক্যাপশন পড়তে পড়তে ভিডিও ওপেন করলাম।। ক্যাপশন ছিলো এমন-
আজ সকালে মৌমিতা বাসে যাবার সময়, এক ছেলে আর মেয়ে বাসের পিছনের সিট ফাঁকা পেয়ে কি নোংরামী করছে দেখুন। এইসব অসভ্যগুলো কি হোটেলে যেতে পারে না, যেখানে সেখানে কুত্তার মত আচরণ শুরু করে দেয়। এদের কি ঘরে মা বোন নেই, লজ্জা শরম নেই। পরে জানোয়ারগুলোরে বকা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলাম। প্রমাণস্বরূপ আগে লুকিয়ে এই ভিডিও করেছি।
ক্যাপশন পড়েই আমার শরীর কেঁপে উঠে কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ভিডিও শুরুর দিকে কয়েক সেকেন্ড চলে গেছে, বাসের ঝাঁকির সাথে সাথে ভিডিও এখনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। পরে দেখলাম সত্যিই একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একদম বাসের শেষের দিকের সিটে বসে খুব জড়াজড়ি করছে। আমি এক দফা মেয়েটার মুখ দেখলাম, হ্যাঁ নোভাই হবে।। এখনও ছেলেটার মুখ দেখি নি, একটা লাল টি শার্ট পরা ছেলেটা, সাথে জিন্স। মেয়েটা সালোয়ার কামিজ পরে জানালার দিকের সিটে বসা। ভিডিওটা করা হয়েছে, সম্ভবত বাসের বাম পাশের সিটের রো এর এক সিট সামনে থেকে। ভিডিও দেখছি আর আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি, এমন সময় দেখলাম ছেলেটা চোরের মত এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার মেয়েটাকে নাকে মুখে ঠোঁটে চুমু দিচ্ছে, সবচেয়ে বাজে লাগলো ছেলেটা মেয়েটার সালোয়ারের উপর দিয়ে হাত গলিয়ে……... উহু, অসহ্য নোংরামি, আমি নিতে পারছিলাম না। কিন্তু, ছেলেটা যে আমি, মানে আমার মতই দেখতে। সে যখন এদিক ওদিকে তাকাচ্ছিলো, আমি নিজেই ভড়কে গেলাম, কি দেখছি আমি। ক্যাপশনে লেখা আজ সকালে, আরে আজ সকালে তো আমি দিব্যি ঘুমিয়ে কাটাইছি, উঠছি দুপুরে, উঠে গেলাম নিচে মামুনের হোটেলে খেতে।। তারপর, আবার বাসায় এসে মুভি দেখতে বসলাম।। মুভি দেখতে দেখতে ঘুম, আবার উঠে গেলাম নাস্তা করতে, নাস্তা করে বাসায় আসতেই ছোট বোনের ফোন, আর এই কান্ড।
পাক্কা দুই মিনিট এগারো সেকেন্ডের ভিডিও, পুরো ভিডিওতে ছেলে আর মেয়ের এসব কারবার দেখে গেলাম। ছেলেটা ভিডিওর মধ্যে আরও বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক তাকিয়েছে, কেউ দেখছে কিনা চেক করার নিমিত্তে। প্রতিবারই একদম আমার মত মনে হয়েছে। পাশের মেয়েটা যদি নোভা না হতো, আমি হয়তো এই মোবাইলে করা বাসের ঝাঁকিতে কাঁপা কাঁপা ভিডিও দেখে ভেবেই নিতাম, এটা অন্য কোন ছেলে। কিন্তু নোভার সাথে দেখে, আমার তো আমাকেই মনে হচ্ছে। ফোন বেজে চলছে, ছোট বোনের ফোন আবারও।
আমি খুব আড়ষ্ট হয়ে ধরলাম, ও পাশ থেকে খেঁকিয়ে উঠে শান্তা বললো- দেখছো?
আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম- হুম, কিন্তু এই ছেলে যে আমি, তুই কেমনে শিওর হইলি?
-শিওর মানে, এইটা তো তুমিই।। হান্ডেড পারসেন্ট তুমি, তোমার লাল টি শার্ট, তোমার গত জন্মদিনে আমি আর শিলা কিনে দিছিলাম, ঐটাই পরে আছো।
শিলা আমার আরেক বোন।। শান্তা-শিলা জমজ বোন আমার, ওরা টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানীতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে, থাকে আবাসিক হলে।
আমি আবার কেঁপে উঠলাম, বুক টিপ্‌ টিপ্‌ করছে- আবার ভিডিও ওপেন করলাম, সত্যিই তো টি শার্ট তো আমারই মনে হচ্ছে। হুট করে খেয়াল করলাম, আমি নিজেই তো এখন এই টি শার্টটাই পরে আছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আমি যে কোন মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি। ছোট বোনের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে প্রচন্ড লজ্জা লাগছে, আমি কিভাবে বুঝাবো যে, এটা আমি না। কিভাবে বুঝানো সম্ভব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। শান্তা আবার এরমধ্যেই বলে যাচ্ছে-
ভাইয়া শুনো, ছোট চাচ্চু তোমাকে এইবার বাড়িতে যাইতে না করছে। তুমি যা করছো, এখন বুঝতেছো না, খুব বাজে হয়ে গেছে ব্যাপারটা ভাইয়া। আর শুধু এই গ্রুপে না, গার্লস গ্রুপে অনেক গ্রুপে এই ভিডিও। তুমি কেন দেখো নাই এখনো, কে জানে, আমরা খুবই অস্বস্তিতে পড়ে গেছি হলের মধ্যে। শিলা তো লজ্জায় রাগে তোমার সাথে কথাই বলবে না বলে দিছে, আমাদের বান্ধবী অনেকেই তোমাকে চিনে যাস্ট আমরা থ হয়ে গেছি। ভাইয়া, আমি ফোন রাখি আমার আর কথা বলতে ইচ্ছা করতাছে না।
আমি সাথে সাথে বললাম- শান্তু শুন, হ্যালো, হ্যালো।
বোন আমার কলটা কেটেই দিলো। ফোন বিছানায় রেখে ল্যাপটপে নজর দিলাম, ভিডিওর নিচে কমেন্ট পড়ার সাহস হচ্ছে না। ভিডিও চলছে, আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম আবার, যখন ভিডিওতে ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়, পজ করে করে দেখতে থাকলাম।। মাবুদ, আসলেই এই ছেলে আমি। কিন্তু আমি তো…...।
আমার মাথায় একটা ব্যাপার কাজ করছে, আমার জন্মদিন গেছে গত বছর নভেম্বরের ২৯ তারিখ, ওই জন্মদিনে শান্তা-শিলা এই লাল টি শার্ট দিয়েছে। নোভার সাথে আমার ব্রেকাপ হইছে গত বছরের মে মাসের দিকে, এরপর আর আমাদের দেখা সাক্ষাত হয় নি। তাহলে এই টি শার্ট পরে নোভার সাথে মিট করার কোন সম্ভবনাই নেই, উপরন্তু দেড় বছরের রিলেশন থাকাকালীন আমরা একসাথে খুব বেশি বাসেও উঠি নি। খুব করে স্মৃতিতে নাড়া দিয়ে ভাবলাম, নাহ্‌ মৌমিতা বাসটাও নতুন, এটা সাভার টু শনির আখড়া রোডে চলাচল করে, আমি এই বাস দেখেছি কয়েকবার কিন্তু কখনো উঠার প্রয়োজন পড়ে নি। কোন হিসেবেই মিলাতে পারছিলাম না, এমনকি এটা আগের ভিডিও হবার সম্ভবনাও নেই। এছাড়া, আমি আর নোভা কখনও রাস্তা ঘাটে এমন কাজ করিও নি, তাহলে কি হলো ব্যাপারটা! আমি আর ভাবতে পারছি না, বিছানা থেকে ফোন তুলে নিয়ে নোভার নাম্বার খুঁজে যাচ্ছি। অবশেষে, নাম্বার পেয়ে দিলাম কল, উপস্‌ ব্ল্যাক লিস্টে দেয়া আমার নাম্বার, অসহ্য কারবার। আমার তিনটা সিম, তিনটার মধ্যে দুইটাতে ব্যালেন্স আছে, দুইটাই ব্ল্যাক লিস্টে। ফেসবুক থেকে তো কবেই ব্লক খাওয়া, এই প্রাক্তনগুলো এমন কেন, দরকারেও তো মানুষ যোগাযোগ করতে পারে তাই না। কোন শালায় যে ব্ল্যাক লিস্ট থিউরি আবিষ্কার করছে, পাইলে এখন থাপড়াইয়া দাঁত সব ফালাইয়া দিতাম।
দুই হাত দিয়ে মাথা দুইপাশ থেকে চাপ দিয়ে ধরে বসে আছি। এমন সময় একটা ম্যাজিক হয়ে গেলো, স্বয়ং নোভা কল করেছে, আমি হন্তদন্ত হয়ে কল রিসিভ করলাম-
হ্যালো, নোভা!
নোভার কণ্ঠ হয় আমি ভুলে গেছি, না হয় অনেকটা বদলে গেছে- রায়হান, তুমি এই ভিডিও কিভাবে কি করেছো বলো?
-আমি, আমি কি করবো। ফেসবুকে এই ভিডিও দেখেই তোমাকে কল দিলাম, দেখি ব্ল্যাক লিস্ট মানে বিজি তোমার নাম্বার। এই ভিডিওতে তুমি কার সাথে??
নোভা ধমক দিয়ে বললো- এই ফাজিল ছেলে, কার সাথে মানে, ওই ভিডিওতে কি আমি নাকি! তুমি কোন মেয়ের সাথে তাই বলো, যে মেয়ে দেখতে অনেকটা আমার মত?
আমি বড়সর একটা ধাক্কা খেলাম, নোভা কি বলে এসব, মানে নোভা ছিলো না। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম- মানে কি, এই ভিডিওতে তুমি না নোভা, তাহলে কে এই মেয়ে।। ইয়ে মানে ছেলেটাও তো আমি না, আমি আজ সারাদিন বাসায়, বাইরেই যাই নাই।
নোভা আরও চড়া গলায় বলে- হারামী হইছো তুমি তাই না, তুমি না। সাইবার আইনে মামলা দিলে বুঝবা, এইসব তোমার কাজ, তুমি কম্পিউটারে গ্রাফিক্সের কাজ জানো, মাথা লাগাইয়া দিছো আমার, আমার অনেক ছবিই তো তোমার কাছে আছে। আর মেয়েটা যে ড্রেস পরছে আমার এমন কোন ড্রেস নাই রায়হান।
এইবার আমি সত্যিই বেশ ভয়ে পেতে শুরু করলাম। নোভার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেছে, নোভা আমাকে মামলার ভয় দেখাচ্ছে মানে কি, ভিডিওর ঐ মেয়ে নোভা না, তাহলে কে ঐ মেয়ে। আর ছেলেটাই বা কে, এভাবেও কি চেহারায় মিল থাকে। আমি ঢোঁক গিলে নোভাকে বললাম- নোভা দেখো, ঐ ছেলে আমি না। আর কম্পিটারে ছবিতে মাথা লাগানো, আর এমন চলন্ত বাসে কাঁপা হাতে ভিডিওতে মাথা লাগানো, এসব মোশন দেয়া মনে হয় হলিউডের মুভিতেও সম্ভব না। তুমি কি বুঝতেছো যে অন্য মেয়ে হলে কি আমি তোমাকে কল দিতাম, যদিও আমি ব্ল্যাক লিস্টে। ইভেন, আমি নিজেই চরম অবাক সাথে বিব্রত।। এই ভিডিও সবার আগে সোহেল চাচ্চুর চোখে পড়ছে, বুঝো কিছু। শেষে শান্তা আমাকে এইটার লিংক দিলো, আমার বোন দুইটা পর্যন্ত আমাকে নোংরা ভাবতেছে। আর তুমিও কিনা বুঝে না বুঝে, আমাকে দোষ দিচ্ছো।
নোভার গলায় ভয়ের সুর- রায়হান, মানে কি। ওই ছেলে তুমি না, মাই গড।। হুবহু তোমার মত, মেয়েটাও তো আমার মত। রায়হান আমার বাসায় অনেক সমস্যা হচ্ছে, অনেক।। ইভেন আমার বয়ফ্রেন্ড যাস্ট আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে।
এতক্ষণ ছিলাম একটা ভয়ার্ত উত্তেজনায়, এবার নোভার বয়ফ্রেন্ড আছে শুনে, মনের উপর বাড়তি চাপ পড়লো। হায় রে মেয়ে, সে বলতো তুমি চলে গেলে আমার জীবনে আর প্রেম, ভালোবাসা তো দূরের কথা, এ জীবনই থাকবে না।। আর সে কিনা, যাক্‌ এসব পরেও ভাবা যাবে। আমি নোভাকে বরং বললাম- আচ্ছা, আজ তো রাত হয়ে গেছে, পারলে কাল একটু মিট কইরো তো, সম্ভব কি?
নোভা একটু চুপ করে থেকে বললো- রায়হান আমি জানাবো নে, কাল বের হলেও বোরখা পরে বের হবো। তুমি লাগলে মুখে মাস্ক চশমা অন্য টাইপ কিছু পরে বের হইয়ো। আচ্ছা তোমার গালে না খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকে অলওয়েজ, ভিডিওর ছেলের কিন্তু ক্লিন সেভ। তোমার কি দাঁড়ি আছে এখন?
আমি নোভার কথায় চট করে আশার আলো দেখলাম। সত্যিই তো আমার গালে বেশ ভালোই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আছে, যদিও ছোট ছোট তবে সুন্দর সাইজ করে কাটা চাপ দাঁড়ি।। বাহ্‌ দারুণ ব্যাপার তো, শান্তা শিলাকে ম্যাসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়ে বলাই যায়, দেখ ঐ ছেলে আমি না। সকালের ভিডিও হলে কি রাতেই আমার দাঁড়ি এত বড় হবে। আমি এখন একটু বুক ভরে দম নিতে পারছি, এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো চারদিকে বাতাস ঠিকই আছে, কিন্তু বাতাসে অক্সিজেন নেই।
নোভার সাথে কাল বিকেলে দেখা করার সময়, স্থান নির্ধারণ করে আবার তখনি শান্তাকে কল দিলাম। ফোন বন্ধ করে রাখছে সম্ভবত, এবার শিলার নাম্বারে দিলাম, শিলার নাম্বারে ঢুকলো, কিন্তু দুইবার রিং হবার পর কেটে দিলো। খানিক বাদে আবার দিলাম, দেখি বন্ধ… ভালো অভিমান হয়েছে আমার দুই বোনের, অভিমান নাকি আপন ভাইয়ের এমন রূপ কল্পনার বাইরে ছিলো তাই এত কষ্ট পাচ্ছে।
বলাই বাহুল্য, রাতে আর ঘুম হবে না। লজ্জায় আর ফেসবুকেও যেতে মন চাইলো না, সারারাত কোনমতে ছটফট করে কাটাচ্ছি, কি এক অসহ্য নির্ঘুম রাত, কিছু করতেই ভালো লাগছে না।
……………
সকালের দিকে চোখে সামান্য ঘুম ধরেছিলো, কিন্তু সাত সকালে ফোনের ভাইব্রেশনে সেই ঘুম কেটে গেছে। অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে, ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ফোন রিসিভ করবো না জন্যে, বার দুয়েক ইচ্ছা করে কাশি দিয়ে কণ্ঠ কিছুটা ঠিক করে নিলাম। তারপর ফোন কেটে যাবার প্রায় শেষ লগ্নে ফোন ধরে বললাম- হ্যালো, কে বলছেন?
ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠ ভেসে এলো- ভাই আপনি কি রায়হান?
জ্বী রায়হান, আপনি কে?
-আমি নোভা আপুর রুমমেট সুমনা, নোভা আপু একটু সিক, সারা রাত বমি করেছে, এখনও গায়ে জ্বর। আপনি কি একটু আসবেন?
নোভার জ্বর, আচ্ছা আসবো মানে কই আসবো আমি তো ওর বাসা চিনি না, ও কই থাকে এখন?
-ইয়ে মানে আপনি রায়হান ভাইয়া না? আপনি আপুর বয়ফ্রেন্ড না, মানে বুঝলাম না ভাইয়া আপনি তো প্রায় রেগুলার আপুকে বাসার সামনে নামিয়ে দেন। আর বলেন বাসা চিনেন না, আপু কিন্তু সিরিয়াস অনেক সিক, আপনি কি মজা করছেন নাকি আমার সাথে।
আমার এতক্ষণেও চোখে ঘুম ঘুম ভাব ছিলো, কিন্তু এই মেয়ের খাপছাড়া কথা শুনে মুহূর্তেই ঘুম উবে গেছে। আরে বাপ হচ্ছেটা কি, আমি রোজ নোভাকে বাসায় নামিয়ে দেই মানে কি! নোভার সাথে গত দেড় বছরে একবারের জন্যেও দেখা হয় নি, যখন সম্পর্ক ছিলো তখন সে চাঁনখারপুলে এক মেয়েদের ব্যাচেলর বাসায় থাকতো, কিন্তু এখন ওই বাসায় থাকে কিনা আমি কিছুই জানি না। আর, আগের বাসার লোকেশনও আমার ওভাবে মনে নেই।
আমি আধা শোয়া থেকে সোজা উঠে বসলাম, তারপর একটু উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম- হ্যালো আপু, আপনি কি সব বলছেন। আমি নোভার বয়ফ্রেন্ড না, না মানে ছিলাম আগে। আর ওর সাথে আমার মনে হয় এক দেড় বছর পর গতরাতে কথা হয়েছে তাও একটা দরকারে। আমি তো অবাক যে নোভা সিক দেখে আপনি আমাকে কল দিয়েছেন এটা ভেবে।
-দেখেন ভাইয়া, আমি জানি না আপনাদের মধ্যে কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, কালকে আপুকে অনেক চিল্লাপাল্লা করতে দেখলাম ফোনে দ্যান এমন অসুস্থ। ইভেন সকালে বমি করছে, শেষে আমি না পেরে উনার ফোন থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে কল দিলাম। দেখেন ভাইয়া ঝগড়া আছে, আছে, কিন্তু উনি সিরিয়াস লেভেলের সিক, আপনি এখন এসব না বলে সোজা বাসায় এসে আপুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। হ্যালো, রায়হান ভাই, ওয়েট আপু মে বি আবার বমি করছে……………
সুমনা মেয়েটা এটা বলেই ফোন রেখে দিয়েছে। মানুষের অনেক সময় চিন্তা হয়, আর আমি মনে হয় চিন্তার বাজারে গিয়ে পুরো বাজার মাথায় করে নিয়ে এসেছি। আমার এখন নিজেরই অসুস্থ লাগছে, মনে হচ্ছে মাথাটা ভার হয়ে আছে, কেউ যদি মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতো। সত্যি সুমনা মেয়েটা বলে কি, সে নোভার রুমমেট, আমি নাকি নোভার বয়ফ্রেন্ড। আচ্ছা, ব্যাপারটা হচ্ছে কি, কোথায় যেনো সবকিছুতে একটা কিন্তু আছে। হুট করে আমার সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর কথা মনে পড়লো, কেমন যেনো কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল থেকেই ফেসবুকে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ হোমপেইজ স্ক্রল করে দেখি খোদা রে খোদা এই ভিডিও অনেকেই তো শেয়ার করে বসে আছে। মানে গতরাতে এই ভিডিও আরও হালে পানি পেয়েছে, ভাইরাল মানে যাস্ট সুপার ভাইরাল!
পেটে ক্ষুধা অনুভব হচ্ছিলো, কিন্তু নিচে গিয়ে কিছু খাবো সেই সাহসও হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি একটা চোর নিচে গেলে সবাই আমাকে চিনে ফেলবে, আর আমাকে অনেক লজ্জা দিবে। সত্যি অদ্ভুত এক অসহায়বোধ নিয়ে সময় কাটাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর ভেবে চিন্তে নোভার নাম্বারে কল দিলাম, দেখি নাম্বার বন্ধ। আবার সাতপাঁচ ভেবে কিছুক্ষণ আগে কল দেয়া সুমনার নাম্বারে কল দিলাম, কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন রিসিভ করলো না। পরপর তিনবার কল দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলাম, আসলে আমার করণীয় কি বুঝে উঠতে পারছি না। বিকেলে নোভা দেখা করবে কিনা, তাও বুঝে উঠতে পারছি না। বসে বসে নিজেকে নিজেকে নিজে স্বান্তনা দিচ্ছি, আর কেউ না জানুক আমি তো জানি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ছেলেটা আমি না। তাহলে এত ভয় কিসের, লোকে ভুল বুঝবে, তা বুঝুক, লোকের কথা নিয়ে এত মাথাব্যাথা থেকেই বা লাভ কি! কিন্তু, সেটা না হয় বুঝলাম, তাহলে নোভার রুমমেট আবার ফোন দিয়ে তো আরেক প্যাঁচ লাগিয়ে দিলো। ধুর! এসবের কোন মানে হয় না, সব চিন্তা আপাতত বাদ।
এবার ছোট বোন শান্তার নাম্বারে কল দিলাম, ফোন রিসিভ করলো শিলা।
হ্যালো শান্তু ঘুমাচ্ছিস নাকি?
-শান্তা ওয়াশরুমে গেছে ভাইয়া, বলো?
ও শিলু, কি রে কি খবর?
-ভালো, তোমার কি খবর?
আমার আর খবর, শুন একটা কথা তোরে বলি, তুই বুঝবি।
-হুম, বলো?
আচ্ছা ঐ যে ভিডিও দেখলি যে তোরা, ওখানে ক্যাপশনে লিখছে না এইটা আজকের ভিডিও মানে গতকালকের। ওই ভিডিওর ছেলেটা যে আমি না তার প্রমাণ হলো আমার গালে এখন দাঁড়ি আছে, কিন্তু ঐ ভিডিওতে যে ছেলে আছে ওর গালে কোন দাঁড়ি নেই। আর আমার গালে এখন যে দাঁড়ি এটা মনে কর পাঁচ ছয়দিন ধরে না কাটা দাঁড়ি। তাহলে বল, অযথা তোরা সবাই আমাকে ভুল বুঝতেছিস কেন, কে জানে!
-ভাইয়া শুনো, তুমি কি বলতে চাও, ঐ ছেলে তুমি ছিলে না। আচ্ছা মেয়েটা তো নোভা আপু ছিলো, আর নোভা আপু ঠিক তোমার চেহারার আরেকটা ছেলে পেলো কিভাবে? আর এটা ক’দিন আগের ভিডিও তো হতে পারে, হয়তো কাল কেউ নেটে ছাড়ছে।
আরে শিলু, শুন আরও এক অবাক করা কথা, ঐ মেয়েটাও নোভা না, আমি কিছুই বুঝলাম না। কি যেনো একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে, নোভা নিজে উল্টা আমাকে দোষ দিচ্ছিলো যে এই কাজ আমার, আমি কম্পিউটারে এসব করেছি। পরে, ওকে বুঝিয়ে বললাম, পরে বিশ্বাস করেছে। আসলে ও নিজেও অনেক অবাক হইছে, তুই বুঝতেছিস পুরা ব্যাপারটাই রহস্যে ঘেরা।
-হ, বুঝতেছি, আচ্ছা এখন কি করবা, শান্তা আসছে কথা বলো ওর সাথে। আমি রাখি-
শিলার নির্লিপ্ত গলায় বলা শেষ কথাগুলো শুনে বোঝাই যাচ্ছে, সে একবিন্দুও আমার কথা বিশ্বাস করে নি। বরং সে মনে মনে ভাবছে, আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে গাধা ভাবে, সে যা বলবে আমাকে তাই বিশ্বাস করতে হবে। নিজে এই কলঙ্ক থেকে বাঁচার জন্যে এমন এক বাহানা দেখাচ্ছে যেটা দুনিয়ার কেউ বিশ্বাস করবে না, এমন কি সব থেকে বোকা মানুষটাও মৃদু হেসে বলবে, যা আমারে কি বোকা পাইছিস।
শান্তা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বললো- ভাইয়া বলো?
-ঐ শুন, তোরে আমি ম্যাসেঞ্জারে আমার একটা ছবি পাঠাই দেখ।
কিসের ছবি?
-আরে আমার ছবি, আমার গালে এখন দাঁড়ি আছে, কিন্তু কাল বাসের যে ভিডিও দেখেছিস ঐ ছেলের গালে দাঁড়ি নাই। ইনফ্যাক্ট ওই ছেলে তো আমি না, আরও কি জানিস ঐ মেয়েটাও নোভা না।
ঐ ছেলে তুমি না, ভালো কথা, ঐ মেয়ে যে নোভা আপু না এটা জানলা কিভাবে?
-আরে আমার নোভার সাথে আলাপ হয়েছে, কালকে রাতে। নোভা নিজেই অবাক, বলে কি এগুলো নাকি আমার দোষ, আমি বানাইছি।
ভাইয়া শুনো, নোভা আপুর সাথে তোমার যোগাযোগ আছে, এটা নিয়ে আর মিথ্যে বইলো না। যাক্‌, দেখো যা করছো সেটা নিয়ে ভাবো, অযথা আজাইরা মিথ্যে গল্প বানিয়ে এটাকে আর প্যাঁচাইয়ো না। আর তো মাত্র দুই-তিনদিন তারপর এই ইস্যু অন্য কোন ইস্যুর আড়ালে চলে যাবে। চিন্তা নিও না, বাংলাদেশের এক ইস্যু চাপা পড়তে যাস্ট আরেকটা ইস্যুর দরকার হয়।
আমি আর কথা খুঁজে পেলাম না, নিজের আপন দুইবোনকেই বিশ্বাস করাতে পারছি না। আর অন্য কাউকে বিশ্বাস করাবো তো দূরের কথা। ফোন রেখে বড় করে নিঃশ্বাস নিলাম, নাহ এই মিথ্যের জাল থেকে নিজেকে নিজে একা উদ্ধার করতে হবে। বুঝলাম, কেউ এখানে সঙ্গে থাকবে না, তাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি সেরে নিলাম, আগে বিকেলে যাই নোভার সাথে কথা বলি। ওর সাথে কথা হলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে হয়তো।
………………
বিকেল চারটা থেকে নোভাকে কল দিচ্ছি, মেয়েটার নাম্বার বন্ধ। সকালে সদ্য নাম্বার পাওয়া ওর রুমমেট সুমনাকে কল দিচ্ছি, সেও রিসিভ করছে না। কি এক মুসিবতে পড়লাম রে বাবা, কিছুই তো বুঝতেছি না। এদিকে ফেসবুক ঘেঁটে যা বুঝলাম, ভিডিওটার রেশ মোটামুটি কমে এসেছে, শুরুতে যেমন হোমপেইজ স্ক্রল করলে খানিক বাদে বাদে ভিডিওটা চোখের সামনে আসছিলো, এখন আর তেমন নেই। এটা দেখেও কেমন যেনো শান্তি লাগছে, মনে হচ্ছে ইস্‌ দেশে এখন এমন কিছু ঘটুক যাতে আমার অন্তত এই ভিডিওর ঘটনা চাপা পড়ে যায়। যদি এই কাজ সত্যি আমি আর নোভা করতাম, তাহলে এক ধরণের সাফাই গাওয়া যেতো, যেহেতু আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু যে ঘটনার আমি বা আমরা নেই, যারা আগামাথা কিছুই জানি না, সেটা স্বীকার করার কোন সুযোগও তো নেই।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আজ আর নোভার সাথে দেখা হবে না এটা শিওর। কিন্তু মেয়েটা তো অসুস্থ ছিলো, এখন কি অবস্থা সেই খোঁজটা পর্যন্ত জানলাম না। এতক্ষণ নোভার নাম্বার বন্ধ ছিলো, এখন সুমনা মেয়েটার নাম্বারও বন্ধ। আজ সারাদিন বাসায় আমি ছটফট করেই কাটালাম, এই বাসায় আমরা দুইজন থাকি। বাসাটা দুই রুমের, শুধু মাঝে ছোট্ট একটা ড্রইং রুম আছে। আর বাকী দুই রুমে আমি আর তন্ময় থাকি। তন্ময় ছেলেটা প্রায় আমার সমবয়সী, কাজ করে কি যেনো একটা প্রাইভেট ফার্মে। আপাতত অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আছে, যার ফলে পুরো বাসায় আমি একা, আর এই একা থাকাটাই এখন অসহ্য লাগছে আমার কাছে।
রাতে বাইরে থেকে খেয়ে এসে বাসায় ঢুকলাম। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে, সাথে ঘুম ঘুম ভাবে আছে। কাল রাত থেকে চিন্তা করতে করতে এমন অবস্থা যে চিন্তারাও এখন একটু বিশ্রাম চাচ্ছে। আমিও ভাবলাম, তবে তাই হোক, চিন্তাদের একটু বিশ্রাম দেয়া যেতেই পারে। বিছানায় কেবল গা এলিয়ে দিয়েছি, দেখি দরজায় কলিং বেলের শব্দ, সাথে আবার বেশ জোরেসোরে দরজায় খট্‌খট্‌। এটা কেবল মাত্র অভদ্র লোকেরাই করতে পারে, বেল দিয়ে সাথে সাথে দরজায় খট্‌খট করা। আরে ব্যাটা বেল বাজালে কি লোকে দরজা খুলতে উড়ে চলে আসবে নাকি, নূন্যতম সময় তো দিবি নাকি। নাকি এরা নিজেকে মহারাজা ভাবে, রাজা মশাইকে দরজার বাইরে বাহান্ন সেকেন্ড দাঁড়া করিয়ে রাখার শাস্তি হিসেবে আমাকে বাহান্নটা বেত্রাঘাত খেতে হবে! যত্তসব, সমানে দরজার কড়া নাড়িয়েই যাচ্ছে, আমার তো মনে হয় আর একটু দেরি করলে, দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকবে।
আমি প্রচন্ড বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে দরজা খোলার আগেই চিল্লানি দিয়ে বললাম- আরে কে? আসতেছি রে ভাই!
দরজা খুলে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখি চার-পাঁচজন বড়সর লোক দাঁড়িয়ে আছে, সবার হাতেই মাঝারি অস্ত্র। আমি উনাদের দেখেই কপাল কুঁচকে বেশ ভীত গলায় জিজ্ঞেস করলাম- কাকে চাই, আপনারা কারা?
সামনে থেকে একজন কথা বলে উঠলো- আপনার নাম কি রায়হান?
-জ্বী, রায়হান, কেনো?
এই ধরেন তো ব্যাটারে, আর বাসায় ঢুকে দেখেন, কিছু পান কিনা!
আমি একদম কেঁপে উঠলাম, বরফের মত জমাট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। দুইজন লোক বিদ্যুৎ বেগে এসে আমাকে জাপটে ধরে রইলো। আর দুইজন বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো, সবচেয়ে খারাপ লাগছে জুতা পরেই এরা ঢুকে গেলো, ইস ফ্লোরে চাকা চাকা মাটিতে ভরে যাচ্ছে। নির্দেশদাতা লোকটা শুধু দরজার বাইরে দাঁড়ানো। আমি ঘটনার আকষ্মিকতায় কি রেখে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
এবার ঐ নির্দেশদাতা লোকটা খেঁকিয়ে উঠে বললো- ঐ ব্যাটা, রুমানা শারমিনকে কই গুম করছিস?
আমি বার দুয়েক ঢোঁক গিললাম, আর ভাবলাম এই রুমানা শারমিন আবার কে, আরে এরাই বা কারা। তবে মনে হচ্ছে, এরা পুলিশের লোক, ডিবি পুলিশ হতে পারে, হাতের অস্ত্র দেখে পুলিশের অস্ত্রই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু রুমানা শারমিনটা আবার কে, কিছুই তো মাথায় ধরছে না।
আমি আমতা আমতা করে চেপে ধরা দুইজনকে উদ্দেশ্য করে বললাম- ভাই, চাপটা একটু কম দেন, হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা যাইতাছে তো। আমি পালাবো না।
এবার সামনের জনের দিকে তাকিয়ে বললাম- আর ভাই, রুমানা শারমিন কে আমি চিনি না।
-তোর চিনতে হবে না, আগে অফিসে চল। রুমানা শারমিনরে তো চিনবি লগে ওর বাপ মা চৌদ্দগুষ্টিরে চিনবি।
এমন সময় পিছন থেকে একজন চিৎকার করে তন্ময়ের রুমের দিকে ইশারা করে বললো- স্যার এই রুমে তো তালা দেয়া, তালা ভাঙমু নাকি?
নির্দেশদাতা মাথা নেড়ে বললো- হুম, দেখেন তো ভাঙতে পারেন কিনা?
বাসার ভিতরে থাকা অন্যজন আমার রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো- স্যার ঐ রুমে মোবাইল আর ল্যাপটপ আছে, একটা কম্পিউটারও আছে।
ওগুলো জব্দ করতে হবে, এক কাজ করেন, দেখেন তো এই রুমের তালাটা ভাঙার ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা?
আমি এবার ভয় মিশ্রিত জোর গলায় বললাম- আরে স্যার আপনারা কারা, আর এই রুমে তো অন্য একজন থাকে। তালা ভাঙবেন কেনো, বুঝলাম না। আর আমাকে ধরে এমন হেনস্থা করছেন কেন?
নির্দেশদাতা তিরষ্কারের হাসি হেসে বললো- ব্যাটা হেনস্থা করছি, ভাব মারাও। মাইয়া নিয়া কই লুকাই রাখছিস তাই বল!
আমি চুপসে গেলাম, এখন বাক্য ব্যয় করা একদম বৃথা।
কিছুক্ষণ পর নিচতলা থেকে বাসার মালিক এলো কিছু মানুষজন নিয়ে। কিন্তু বাসায় থাকা লোকগুলো নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে, তাদের এই কার্যক্রম থেকে দূরে সরে থাকতে বললো। বাসার মালিক তার দলবল নিয়ে সুড়সুড় করে নিচে নেমে গেলো। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে অসহায়ের মত তামাশা দেখলাম।
নিচ থেকে লোক এনে তন্ময়ের রুমের দরজার তালা খোলা হলো। দরজার পাল্লা খুলে ভিতরে তাকাতেই, ডিবি দুজন সহ তালাওয়ালাটা কেমন যেনো উত্তেজিত হয়ে গেলো। একজন বেশ জোরে চিৎকার করে বললো- স্যার দেখেন!
আমাকে জাপটে ধরে রাখা দুইজন সহ তাদের অফিসার সবাই তন্ময়ের রুমের সামনে গেলাম। তারপর ভিতরে তাকিয়ে যা দেখলাম। এটা কি দেখলাম, কেনো দেখলাম, কিভাবে দেখলাম! সত্যি আমি এবার মাথা ঘুরে পড়ে গেলে খুব একটা ভুল কিছু হবে না।
…………
চলবে
……………

Writer:- রাজভী রায়হান শোভন (Razvi Rayhun Shovon)
 

Delivered by FeedBurner

a