Leave a message
> উষ্ণতা পর্ব ১
-->

উষ্ণতা পর্ব ১



কথায় আছে, " ওঠ ছেমড়ি তোর বিয়া " এই প্রবাদটা লিয়ার এখনকার পরিস্থিতি সাথে একদম মিলে যাচ্ছে। নিজের রুমেই সে কাঠ হয়ে বসে আছে অন্য কারো অপেক্ষায়। অন্য কারো বলতে তার নতুন স্বামীর অপেক্ষায়। চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে লিয়ার। আজ যেন চোখের পানি কোন বাঁধই মানছে না। কি থেকে কি হয়ে গেল। যাকে সারাজীবন ভাই বলে ডেকে এসেছে আজকে সেই মানুষটাকেই স্বামী বলে মেনে নিতে হয়েছে লিয়াকে। এত এত বার বুঝাচ্ছে ও মনটাকে কিন্তু মন যেন কোন বুঝই নিচ্ছে না। রাত সাড়ে বারোটার দিকে আরিফ যখন রুমে ঢুকলো লিয়ার হাতপা যেন বরফ হয়ে যেতে লাগল। এরপর কি হবে সেটা ভেবেই ও যেন মরার আগেই মরে যাওয়ার মত অবস্থা হতে লাগল। বিছানা চাদর খামচে ধরল শক্ত করে। আরিফ রুমে ঢুকেই দেখে লিয়া যেন পাথরের মূর্তির মত বসে আছে খাটের উপরে। মুখ নিচে নামিয়ে রাখলে কি হবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেঁদেকেটে মেয়েটা অস্থির হয়ে গেছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। আরিফের কেন জানি না খুব মায়া হতে লাগল লিয়ার জন্য। ওর কারণে একটা মেয়ে বিয়ের প্রথম দিনই দুঃখ পেল। বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আরিফ লিয়ার দিকে গুঁটিগুঁটি পায়ে এগিয়ে গেল। হালকা কাশি দিয়ে বলল,
___ " কি ব্যাপার এখনও চেঞ্জ করো নি বুঝি? এত ভারি ভারি গয়না শাড়ি পরে এতক্ষন যাবত বসে আছো? যাও যেয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নেও ভাল লাগবে।"
লিয়া তখনও কিছু না বলে গ্যাঁট হয়ে বসে রইল। ওকে যেন কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারছে না। আরিফ এবার আরো একপা এগিয়ে এসে একদম লিয়ার সামনে এসে বসলো তারপর লিয়ার থুঁতনি ধরে উঁচু করে ধীরে ধীরে চোখের পানি মুছে দিল। হালকা গলায় বলল,
___ " আচ্ছা তুমিও জানো আমিও জানি যা হয়েছে তা একটা এক্সিডেন্টে তাহলে কেনই বা এত এত মন খারাপ করতেছ। ভাল স্বামী না হতে পারি। কিন্তু এটা কথা দিতে পারি বন্ধু হিসাবে আমার জুড়ি মেলা কিন্তু ভার। যাও যেয়ে চেঞ্জ করে নেও।"
এবার আরিফের কথায় কাজ হল। লিয়া ধীর পায়ে উঠে ফ্রেশ হতে গেল। শাড়ি চেঞ্জ করে হালকা হলুদ আর জাম কালার ব্লেন্ড করা শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো লিয়া। ওর দিকে তাকিয়ে আরিফের যেন পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার অনুভূতি হতে লাগল। এই মেয়েটাকে আগে কখনও এত ভাল করে দেখা হয় নি। কিন্তু মেয়েটাকে এত এত সুন্দর দেখতে সেটা তো আগে কখনও জানত না ও। লিয়া বেরিয়েই দেখলো আরিফ বিছানার ফুল সব সরিয়ে সুন্দর করে বিছানা পরিপাটি করে রেখেছে। বিছানার দিকে তাকিয়েই ওর পেটের ভিতরে প্রজাপতি ডানা ঝাপটালে যেমন তেমন অনুভূতি হতে লাগল। একুশ বছরের সামলে রাখা সম্পদ আজ না হরণ হয়ে যায়। লিয়াকে অমন করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিফ ঠোঁটের দুষ্টমি ভরা একটা হাসি টেনে বলল,
___ " বাংলা নাটক সিনেমার মতন তো বলতে পারতেছি না যে আমি সোফায় ঘুমাই তুমি বিছানায় ঘুমাও। তবে এটা এশিওরিটি দিতে পারি মাঝে বালিশ দিয়ে ঘুমাতে পারো।"
___ " আপনি ঘুমান বিছানায় আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি "।
লিয়া গম্ভীর কন্ঠে উওর দিতেই আরিফ বলল,
___ " এই তো সবে কথা ফুটেছে। লিয়া যদি আলাদা ঘুমাই তখন হঠাৎ করে কেউ চলে আসলে ঝামেলায় পড়ে যেতে পারি। এটা কথা দিতে পারি আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারো.... অন্তত তোমার পারমিশন ছাড়া এক পাও আগাবো না আমি।"
কেন জানি না লিয়ার তখন মনে হল, আর যাই হোক মানুষ ততটা খারাপ না। লিয়া চুপচাপ বিছানার এক সাইডে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। আরিফ ড্রেস চেঞ্জ করে লাইট নিভিয়ে ওপাশে কাত হয়ে মাঝে বালিশের বিশাল বর্ডার তুলে ঘুমিয়ে গেল। লাইট অফ হতেই লিয়া যেন পৌঁছে গেল আজকে সকালের দৃশ্যগুলোতে।
আজকে সকালে পর্যন্তও ঠিক ছিল আরিফের বিয়ে হবে লিয়ার বোন প্রিয়ার সাথে। কিন্তু গোল বাঁধল তখনই যখন লিয়ার মা আফরোজা টের পেলো প্রিয়া ঘর থেকে পালিয়েছে৷ চারিদিকে লোক পাঠিয়েও যখন প্রিয়াকে খুঁজে পাওয়া গেল না তখন লিয়ার বাবা আশফান উদ্দীন ছোট মেয়ে হাত চেপে ধরে নিজের মানসম্মান ভিক্ষা চাইলেন। লিয়াকে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যেতে বললেন। সকাল পর্যন্ত যাকে দুলাভাই হিসেবে জেনে এসেছে এখন তাকে স্বামী হিসাবে মানা যেন লিয়ার কাছে অসম্ভব ঠেকতে লাগল। কিন্তু বাবার মানসম্মানের কথা ভেবে চুপচাপ বিয়ের পিঁড়িতে বসে গেল। এসব ভাবতে ভাবতে লিয়ার চোখ কখন যে লেগে এসেছে এটা ও টেরই পায় নি। সকাল বেলা আরিফ চোখ খুলেই টের পেল ওর বুকের কাছে একটা উষ্ণ আবেশ। ছোট ছোট গরম নিঃশ্বাসের ফোয়ারা বইছে বুকের উপরে। পাশে তাকিয়েই দেখতে পেলো, লিয়া গুটিসুটি মেরে ওর বুকের কাছে ঘেঁসে ঘুমিয়ে আছে। হয়ত রাতে ঠান্ডা লেগেছিল তাই ঘুমের ঘোরে উষ্ণতার খোঁজে আরিফের কাছে এগিয়ে ঘুমিয়েছে। ঘুম ভেঙ্গে উঠে লিয়া এই অবস্থা দেখলে অপ্রস্তুত হবে তাই আরিফ তাড়াতাড়ি সরে বসে পড়ল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় সাতটার কাছাকাছি কাটা। বিছানার দিকে তাকিয়ে যেন আরিফে চোখই ফেরাতে পারেছে না। এত দিন শুনে এসেছে মেয়েরা ঘুমালে খুব মায়াবতী লাগে। আজ নিজের চোখে দেখছে এক অসম্ভব মায়াদেবী স্বয়ং ঘুমিয়ে আছে। আরিফের নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করল যে করেই হোক এই মায়াবতীকে তার চাই ই চাই.....


চলবে...


Writer:- 
মারিয়া আফরিন নুপুর
 

Delivered by FeedBurner

a