Leave a message
> অনৈতিক সম্পর্ক শেষ পর্ব
-->

অনৈতিক সম্পর্ক শেষ পর্ব


এই প্রতিজ্ঞা করার পর। আমি আরো বেশী করে ওর খেয়াল রাখতে শুরু করি।ওর কখন কি লাগবে না লাগবে সবসময় হাতের কাছে রেডি রাখতাম।
নিজেকে ওর রুচি অনুযায়ি সাজাতাম।ওর পছন্দমত খাবার রান্না করে রাখতাম।বাবার একমাত্র আদুরে মেয়ে এবং দাদার আদরের বোন ছিলাম বলে তারা কখনই আমায় কোন কাজ করতে দিতেননা।ফলশ্রুতিতে রান্নাটা আমার তেমন করা হয়ে ওঠেনি বিয়ের আগে।
তবে বাবার ও দাদার পছন্দমত খাবারগুলো ভালই রান্না করতাম।
এভারেজে আমার রান্নার হাত একেবারে খারাপ ছিলোনা।আমি সেদিন খুব শখ করে আমার স্বামীর জন্য পোলাও রান্না করি।ভাবলাম কলেজ থেকে ফিরে এসে ও খাবে।খুব ভালো না হলেও একেবারে খারাপ হবেনা নিশ্চিত। ও বাসায় ফেরার পর আমি ওকে পোলাও বেড়ে দেই।ও কিছুনা বলে খাবারটা আমার মুখে ছুড়ে মারে।
-কে বলেছে তোমায় সাইপাশ রান্না করতে?আদিখ্যেতা দেথাও তাইনা?? আমি কি তোমায় বলেছি পোলাও রান্না করতে?
আমি কিছু না বলে নির্বাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।ও আমার দিকে না তাকিয়েই রুমে চলে গেল।ওদিকে আমার কপাল ফেটে রক্ত পড়তে থাকে।আমি কোনভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে।রাইস কুকারে সাদা ভাত বসিয়ে চটপট ডিম ভাজি করে ফেলি। ভাত হলে রুমের ভিতর ভাত বেড়ে নিয়ে যাই।ও গোগ্রাস খেতে থাকে।একটিবারও জানতে চাইলনা আমি খেয়েছিকিনা।আমি না খেয়ে সবকিছু গুছিয়ে রুমে আসি।সেদিন আমার গায়ে জ্বর ছিলো খুব।আমি এসেই শুয়ে পড়ি।ও আমার দিকে আজ কেমনজানি অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকালো।
-কি হলো পাঞ্চালী শুয়ে পড়লেযে??
-আজ শরীরটা সাপোর্ট করছেনা।ভিষণ খারাপ লাগছে।গায়ে খুব জ্বর এসেছে।
-তাই নাকি?? যতসব কাছে না আসার ঢং।আমার অবর্তমানে কেউ এসে বুঝি জ্বর বাঁধিয়ে গেছে!এজন্যই আমায় ভালো লাগছেনা। তাইনা??
-কি সব বলছো পার্থ? সত্যিই আমি খুব অসুস্থতা অনুভব করছি।
-তোর অসুস্থতার খ্যাতা পুড়ি।বজ্জাত মেয়ে মানুষ। তোকে বিয়ে করেছিকি আমি তোর অসুস্থতা দেখতে??
আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারিনি।খুব কেঁদেছিলাম। তবু ও আমার কোন কথা শোনেনি। রীতিমত ধর্ষন করা হয় আমাকে।এতটাই টর্চার হয়েছিলোযে দুইদিন হাসপাতালে থাকার দরকার পড়েছিলো।
তবু আমার স্বামীকে আমি কিছু বলিনি।একদিন আমার বাবা ও আমার দাদা আসে আমাদের বাসায়। ওদের সামনে তুচ্ছ কারনে আমার স্বামী আমার গায়ে হাত তোলে।কারনটা ছিলো ভাত হতে দেরী হওয়া।
সবদেখে আমার দাদা তার আদরের বোনটাকে নিয়ে যেতে চাইলেন।কিন্তু আমার বাবা আমায় আরো সহনশীলা হয়ে এ সংসারে থাকতে বলেন।
-দ্যাখ মা মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ পালাক্রম করে আসে যায়।আজ তোর দুঃখের দিন।কিন্তু কাল তোর সুদিন আসবেই।
পরে আমার স্বামীকে ডেকে আমার দাদা ও বাবা কিসব বোঝান।এখন আমার স্বামী আমার সাথে যথেষ্ট ভালো ব্যবাহার করেন।আমি পুনরায় মাস্টার্সে ভর্তি হই।
আমাদের জীবন অনেকটা স্বাভাবিকতার মধ্যে অতিবাহিত হতে থাকে।আমি অতীত ভুলে ওকে নিয়ে সুখেই দিন কাটাতে থাকি।এর মধ্যে আমি কনসিভ করি।তাতে ও খুব খুশি হয়।আমি নিজে কতটা খুশি তা বলে বোঝাতে পারবোনা।এই সন্তানই পারবে আমাদের স্বামী স্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর মজবুত করতে।
যেহেতু এটা প্রথম মাস ছিলো তাই আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমার দেখাশোনা করার কেউ ছিলোনা। কে দেখবে আমায়?? আমার নিজের মা নেই।দাদাও অবিবাহিত।
তাই ভাবলাম আমার শাশুড়ি মাকে আসতে বলি।কিন্তু হঠাতই তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
তার সৎ কর্ম সম্পাদনের জন্য আমরা বাড়ি যাই।আমার স্বামী ওখান থেকেই কলেজ করা শুরু করলেন।
-পাঞ্চালী তুমি এখন অসুস্থ।তোমায় একা বাসায় রেখে যেতে আমি ভরসা পাইনা।তাই তুমি বাড়িতে থাকো।আমি এখান থেকেই কলেজ করব।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যেটা ভালো মনে করো তাই হবে।
এমনি করেই আমার দিন কাটতে থাকে।ভালোবাসার পৃথিবীর প্রথম ফসল পেটে নিয়ে আমি আমার স্বপ্নের দিন গুনতে থাকি।
ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছি আমি।আমার এখন সাত মাস চলছে। যতটা বাড়তি খাবার আমার দরকার ততটা আমায় দেয়া হতনা।সারাক্ষণ আমার পেটে ক্ষুধা থাকতো।আমার বড়জা আমায় খেতে দিতনা ঠিকমতো। আমার ননদকে ফোন দিয়ে সবটা জানাই।কিন্তু ও নিজেও সন্তান সম্ভবা ছিলো তাই আসতে পারেনি।ওদিক আমার ভাসুর তিনমাসের জন্য কি একটা কাজে দেশের বাইরে যায়।
আমার অক্ষমতা ও আমার ভাসুরের অনুপস্থিতি আমার জা ও স্বামীর সম্পর্কে আবারো গভীরতা আনে।এখন তারা এক ঘরে ঘুমায়।আর আমি পাশের ঘরে ঘুমাই।ওদের প্রেমে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্যইতো আমার জায়ের মেয়েটাকেও মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।এভাবে আর কতদিন?? আমি আমার দাদাকে ফোন করি।আমার দাদা আমায় শুক্রবার নিতে আসবেন বলে কথা দেন।
শুক্রবার যেন আর আসতেই চায়না।আমার স্বামী বাড়ি এলে আমার জা দৌড়ে এসে তার জামা খুলে দেয়।তোয়ালে, সাবান, শ্যাম্পু সব এগিয়ে দেয়।তারপরে দুজন খেতে বসে। এমনভাবে দুজন থাকে যেন ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে।
সারাটাদিন আমি কি খেলাম না খেলাম পার্থ আমায় একবারও জিজ্ঞেস করেনা।আজ আমার শরীরটা প্রচন্ড খারাপ লাগছে। ভাবলাম পার্থকে বলি।
-এই শুনছো। আমার খুব খারাপ লাগছে।
আমার বড়জা কোথা থেকে এসে মুখ বাকাতে থাকে।
-খারাপ লাগছে না কচু লাগছে।আমার কাছ থেকে পার্থকে সরানোর যত ধান্দা।
হঠাতই আমার স্বামী আমার চুলের মুঠি ধরে দুই চলে দুই থাপ্পড় মারে।
আজ দুজন মিলেই মারছে আমায়।এইতো গলাটিপে ধরেছে আমায় আমার স্বামী।আর আমার জা আমার পায়ের দিকটা ধরে রেখেছে।আজ ওরা আমায় মেরেই ফেলবে।
-দাদা তুমি কোথায়?? তোমার শুক্রবার আর বুঝি এলোনা।আজ বৃহস্পতিবার। আজই তোমার বোনের শেষ যাত্রা।কাল এসে তুমি আমার শবদেহটাই দেখতে পাবে।বাবা কোথায় তুমি??
আজ যে তোমার সোনার প্রতিমা বিসর্জন হতে চলেছে।এই জগত ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি বাবা।এই জনমে কি আমাদের আর দেখা হবে??
জাগতিক নিয়মে পৃথিবীর বুক থেকে আমি বিদায় নিচ্ছিনা বাবা।ওরা আমায় জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে।একেবারেই পৃথিবীটা ছাড়া করছে।তুমি কেঁদনা বাবা। আমি স্বর্গে তোমার আর দাদার প্রতীক্ষারত থাকবো।
দাদা তোমার বোনটা জীবনে কখনই সুখ পেলনা।আর তোমাদের সুখি করতেও পারলনা।
পাঞ্চালীর আত্মার বিলাপঃ
এর পর ওরা দুজন মিলে আমায় মেরে ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রাখে।
সকাল হলেই প্রচার করে দেয়যে আমি নাকি আত্মহত্যা করেছি।আমার বাবা ও দাদা আমাদের বাড়ি আসেন।তাদের করুণ বিলাপে পৃথিবীর আলোবাতাস ভারী হয়ে ওঠে।থানা থেকে পুলিশ আসে। আমার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মেডিকেলে পাঠানো হয়।
আমার বাবা ও আমার দাদা মামলা করেন।এলাকাবাসীর কাছে পুলিশ বয়ান নিতে আসে।
এলাকাবাসীরা সবাই আমার স্বামী ও আমার জায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষীও দেয়।একটা সময় কেচ কোর্টে ওঠে।সেখানে জেরার এক পর্যায়ে আমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দাখিল করা হয়।
সেই ময়না তদন্তে লেখা ছিলো আমি নাকি সুইসাইড করেছি।এর মদকদাতা হিসেবে আমার স্বামীকে দশবছরের সশ্রম কারাদন্ড ও আমার জাকে বেকসুর খালাশ দেয়া হয়।
পরে আমার স্বামী উচ্চ আদালতে আপিল করেন।এদিকে এলাকাবাসী এই রায়ে খুশি হননা।বটিয়াঘাটা থানার সকল মহিলা মিলে থানার সামনে ঝাটা মিছিল ও গাড়ি অবরোধ করে রাখে।বিভিন্ন সংস্থা এই রায়ের বিপক্ষীয় আওয়াজ তোলে।থানার ওসি মহিলাদের সুবিচার পাইয়ে দেয়ার আশস্ত করে।
আমার লাশ আরেক দফা ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়।এলাকায় আমার হত্যার বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল,সমাবেশ হয়।আমার জীবনী নিয়ে অনেক নাটকও মঞ্চস্থ হয়।
লাভের লাভ কি হয় জানেন??
আবারো টাকা দিয়ে ভূয়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট করা হয়।উচ্চ আদালত থেকে আমার স্বামী বেকসুর খালাশ পায়।আমার পরে সে দুইটা বিয়ে করে। দুইটা বউ মারা যায়।
তিননম্বর বউটার একটা বাচ্চা হয়।এই ঘটনার পর আমার স্বামী ও জায়ের প্রেম ভেঙে যায়।
না এ আমার আত্মার বিলাপ নয়।এ লাখো নির্যাতিতা নারীর বিলাপ। এ পরকীয়া প্রেমের বলিদানের আর্তনাদ।আমি ফিরে এসেছি পাঞ্চালীর আত্মা হয়ে। লাখো নির্যাতিতা নারীর ব্যথায় আমার বসবাস।
অথচ আমার জীবনটাও সুন্দর হতে পারত।আমার দাদা যদি আমায় জোর করে নিয়ে যেত তবে আমি কি নিজের পায়ে দাড়াতে পারতামনা??
আমার বাবা আমায় সতী বেহুলা ও সতী সাবিত্রীর উদাহরণ দিতেন।
বেহুলা সাবিত্রী এরা এদের স্বামীকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ছিনিয়ে এনেছে কিন্তু এটিতো মৃত্যুর চেয়ে খারাপ কিছু ছিলো।যার বলিদান এই আমি পাঞ্চালী।
আসলে ভাঙাচোরা সম্পর্কে না থেকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ভালো।
তা হলে কাউকে এমনিভাবে এই আমার মত মরতে হবেনা কারো।

সমাপ্ত...

Writer:- Shibani Mondal

 

Delivered by FeedBurner

a