Leave a message
> বিশ্বাস পর্ব ৪
-->

বিশ্বাস পর্ব ৪


থানায় গিয়ে দেখি মেয়েটা তাদের কাছে। আমাকে দেখেই মেয়েটা কান্না শুরু করলো। আমি তাকে কোলে নিয়ে আদর করতেছি। মেয়েটা মনে হয় অনেক ভয়ের ভিতর ছিলো।
_আমার মেয়েকে কে দিয়ে গেলো? আর আবির কোথায়?(আমি)
_জানি না আমরা কিছুই। ঘন্টা দু-এক আগে থানার সামনে, মেয়েটার গলায় একটা ভিজিটিং কার্ড সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। আর ভিজিটিং কার্ডের এক পৃষ্ঠে আপনার অফিসও নাম্বার দেওয়া। অপর পৃষ্ঠে কলম দিয়ে লেখা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে। (পুলিশ)
_ আপনারা কাউকে দেখেন নি? কে আসলো কি করলো?(আমি)
_না। তবে গেইটের দারোয়ান বললো মোটরসাইকেল দিয়ে আসছে দুজন। একজন মহিলা ও হবে।আপনার কাউকে সন্দেহ হলে মামলা করতে পারেন। এত সুন্দর বাবুটাকে কেউ কষ্ট দেয়। আমার কোন সন্তান নাই। আমি বুঝি কত কষ্ট! (পুলিশ)
_আমার মেয়েকে ও টাকা নিয়ে চলে গেছে ১০লাখ। অপহরণ করছে মেয়েকে। (আমি)
মনে মনে ভাবছি, এটাই সুযোগ অরুকে হাতের নাগালে পাবার। আর আবির কোথায় সব বের করতে পারবো। আজ ১০তারিখ ডিভোর্সের কাগজ দিয়ে কিছু করতে পারবে।
-অপহরণ করছে কে? আর কেনো সব বলেন। (পুলিশ)
_আসলে আমার স্ত্রী অরু! সে আমার থেকে জোর করে ডিভোর্স কাগজে সকালে সাক্ষর নিয়েছে। আর তার সাথে একজন পুরুষও ছিলো সে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সাক্ষর নেওয়ায় ও ঘরে থাকা ১০লাখ টাকাও নিয়ে যায়। আমি যদি পুলিশকে কল দেই তাই মেয়েকে নিয়ে গেছে আর দুপুরে দিয়ে গেলো এই থানায়। (আমি)
_মানে কি? একজন মা এমন করতে পারে?(পুলিশ)
_যা বলছি সব সত্য। ওই মহিলা পরকীয়ার জড়িত। (আমি)
_আচ্ছা, আপনি একটা ছবি আর নাম স্থানী ঠিকানা দেন তার। বাকিটা আমি দেখে নিবো। আপনি চিন্তা করতে হবে না। তার শাস্তির ব্যবস্থা আমি করতেছি। (পুলিশ)
আমি অরুর পুরো ঠিকানা সব দিয়ে। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসলাম থানা থেকে।
মনে বলতেছি মিথ্যা দিয়ে সব হয়। যেমনটা উকিল করে দেয়। অরুকে শাস্তি দিতে আর খুনীকে বের করতেই মিথ্যা বললাম। জানি অরু এইসব এমনে করে নি। তাকে আমি অনেক বিশ্বাস করি।
বাসার আসার সময় কিছু দুধের প্যাকেট নিয়ে আসলাম। মেয়েটাকে খাওয়া হবে যে। হোটেল থেকে বিরিয়ানী নিয়ে আসলাম। বাপ বেটে খেয়ে একটু রেষ্ট নিবো।
বাসায় ফিরেই খাবার খেয়ে নিলাম। মেয়েটাকে কিছু খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিলাম।
মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। আমি দেখলাম অরুর কিছুই রেখে যায় নি বাসায়। পুরো বাসা উল্টে পাল্টে করে গেছে। আমি ভাবছি কি করা যায়। বিয়ে করবো না আর যাই হউক। এই মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে। যদি অরু আমার পুরো বিশ্বাস ভেঙে দেয়। তার সাথে একবার দেখা হলেই হয়।
আমি রুমটা পরিপাটি করতে ব্যাস্ত হলাম তখনই মোবাইল বেজে উঠলো। মনে হয় অরুকে পাওয়া গেছে।
আমি মোবাইল হাতে নিয়েই অবাক হয়ে গেলাম। আসলে আবিরের মোবাইল দিয়ে কল দেওয়া হলো। আগ্রহ নিয়ে রিসিভ করলাম।
_আপনি কি রানা সাহেব?(অপরিচিত গলা)
_আপনি কে?আবির কোথায়? (আমি)
_আমি ডাঃ রিফাত। আপনি যতটা তাড়াতাড়ি পারেন সিটি হাসপাতালে আসেন!এখানে এলেই সব জানবেন।
কলটা কেটে দিলো।
মেয়েটা ঘুমাচ্ছে কি করবো? না, মেয়েকে নিয়েই যাই একা রেখে গেলে কি হয় আবার! নয় ছয় ভেবেই মেয়েকে কোলে নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে। প্রায় আধা ঘন্টা পরেই চলে আসলাম। যে কল দিয়েছে তার নাম বলে ছিলো ডাঃ রিফাত।
আমি সেই ডাক্তারের খুজ নিলে। একজন নার্স আমাকে তার কেবিনে দিয়ে আসলো ।
_আপনি রানা সাহেব?
-জ্বি!
_আপনার বন্ধু আবিরই বললো তার মোবাইলে রাখা রানার নাম্বারে কল দিতে। (ডাঃ)
_আবির কোথায়?
_আমার সাথে আসেন।
আমাকে নিয়ে একটা রুমে গেলো ডাঃ। আমি সেখানেই গিয়েই অবাক আবির হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। আমাকে দেখেই উঠে জড়িয়ে ধরলো।
_বন্ধু, মেয়েটাকে নিয়ে গেলো আর আটকাতে পারি নাই। তুই কি করে আনলি? (আবির)
_ওই সব পরে বলতেছি। আগে বল হাসপাতালে কেনো তুই? (আমি)
আমাকে আবির দেখালো পেটের এক পাশে ব্যান্ডেজ করা। আমি ভাবছি কি হলো তার।
_আমি সেই দিন ডাক্তারের থেকে মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়ে উকিলের বাসায় যাই। রিপোর্ট গুলো সব বুঝিয়ে দিয়ে। মেয়েকে কোলে নিয়ে বের হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতেছি। একটা গাড়ি দিয়ে দুজন লোক আসলো। একজন মহিলা আর একজন পুরুষ। যতটা মনে হলে অরুই হবে। আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলো। আর মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেছে। যখন জ্ঞান ফিরলো বুঝলাম কেউ একজন আমাকে এখানে তুলে রেখে গেছে। মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে। আজ৫-৬দিন পর একটু সুস্থ হলাম। সিমটা ডাক্তারের মোবাইলে লাগিয়ে কল দিয়ে বলতে বললাম। ওই ৫-৬দিন কেমন গেছে নিজেও জানি না। (আবির)
-তার মানে চাইছে ওরা। তোকে শেষ করে দিবে যাতে মামলা না জিততে পারি। আর মেয়েকে এজন্য নিয়ে গেছে কেউ নাই বলে। যখন শুনলো আমি জেল থেকে বের হয়ে গেছি তখনই ফেরত দিলো। (আমি)
_এমনই কিছু হবে। বার বার বলেছিলাম মেয়েদের বিশ্বাস করতে নেই। আমরা সব ফল ভোগ করলাম। তার আমাদের জ্বালিয়ে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছে। (আবির)
_একটা দিক পরিষ্কার। খুনের পিছনে অরু ছাড়াও অন্য কারো হাত আছে। আচ্ছা, তোকে আঘাত করার সময় সেই ছেলের মুখ দেখলি?(আমি)
_না,দুজনই মুখ ঢেকে রাখছে।
-আচ্ছা, এইসব কথা বাদ দেই। এখন যেহেতু সুস্থ বাসায় চলি দুজন। (আমি)
ডাঃ আবিরকে বাসায় নিয়ে যেতে বললো। সব বিল দিয়ে দুজন বাসায় ফিরে আসলাম। ভেবেই যাচ্ছি কার সাথে মিলে অরু এইসব করছে? কেনো করছে?
আর কেনোই বা এমন হয়ে গেলো সে? সব রহস্যর একটাই পথ খোলা অরুকে পাওয়া।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে গেলাম। আবিরও আমার বাসায় ঘুমিয়ে গেলো। তারতো আর কেউ নাই।
তার বউ চলে গেলো অন্যজনের সাথে। তখন বউ নাকি ৩মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বউকে পাগলের মতো খুজেও পায় নি। যত কিছু হয়েছে মাফ করে দিয়ে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বউকে রাখতে চেয়ে পারে নি। যখন শুনলো এবরশন করে ফেলছে। আর ফিরে আসার জন্য বলেনি। পরকীয়ার ফলে একটা জীবনই শেষ। তাইতো আজ আমার দিকে তাকিয়ে, নিজের কষ্ট গুলো ভূলার চেষ্টা করছে। যাতে তার মতো না হই।
সকালে ঘুম ভাঙলো মোবাইলের কলে। কলটা রিসিভ করতে,,
_রানা সাহেব অরুকে পাওয়া গেছে! (পুলিশ)
_কি? কোথায়?(আমি)
_ভোর ৪টার ফ্লাইটে ব্যাংকক যাওয়ার সময় এয়ারপোর্ট থেকে আটক করছে কাস্টমস পুলিশ। আমি গতকালই তার ছবি দিয়ে, পুলিশের ওয়েবসাইটে দিয়ে দিছি। আর পুলিশের সবার সাহায্য চাইলাম যেনো তাড়াতাড়ি খুজে দেয়। পেয়ে গেলাম। আপনি ফ্রেশ হয়ে ঘন্টা ২-৩পর আসেন। এই থানায় আনার ব্যাবস্থা করছি। (পুলিশ)
_আচ্ছা, ঠিক আছে।
বিছানা ছেড়ে উঠে বসে আছি। ভাবছি পাসপোর্ট বানাতে হলে মিনিমাম ১মাস লাগবেই। ভিসার আবেদন সব কিছু কবে করলো। আগে থেকেই আমার থেকে লুকিয়ে সব প্লানিং করে রাখছে।
একটা সিগারেট জ্বালিয়ে টানতে থাকলাম। আর ভাবছি কাকে এত ভালবাসলাম। কার জন্য জীবনটাই শেষ করে দিলাম। এমন কিছু নারীর জন্য কত পুরুষের জীবন শেষ হয়ে যায়।
আবির ততক্ষণে উঠে ফ্রেশ হয়ে গেলো। সে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও বাহির থেকে বুঝার উপায় নাই সে অসুস্থ এমন।
মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে দুধ গরম করে খাইয়ে দিলাম।
বেলকনিতে বসলাম দুই বন্ধু। সব বললাম পুলিশ যা বলছে আবিরকে।
_আসলে দোস্ত! আমরা নারী পেয়েছি ঠিকই। তবে ভালো নারী পাইনি। (আবির)
_ভালবেসে বিয়ে করছি তারপরও এমন। আর কি করবো। কপালই খারাপ (আমি)
_এবার তাকে বুঝানো উচিত আমরা কি করতে পারি।
_মানে?
_সব খুনের শাস্তি দেওয়ার সময় হলো এখন।
_ওই সব দেখা যাবে পরে।
দুজনই বসে বসে আড্ডা দিতে দিতে সকাল ১০টা বেজে গেছে। আস্তে আস্তে রেডি হয়ে বের হলাম থানায় যাবো বলে।
মেয়েটাকেও নিয়ে গেলাম থানায় যেতে। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা থানায়।
আমরা পুলিশ অফিসারের কেবিনে বসে আছি।
_তাকে আনা হইছে?(আমি)
_হুম,, জেলে আটকে রাখছি। কালই আদালতে নেওয়া হবে। (পুলিশ)
_তার থেকে ল্যাপটপ পাওয়া গেছে?(আবির)
_পাসপোর্ট আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছাড়া কিছুই ছিলো না সাথে! (পুলিশ)
_আমরা কথা বলি একটু তার সাথে। (আমি)
হাবিলদার রানা সাহেবকে নিয়ে যান অরুর কাছে।
আবিরও আসলো আমার সাথে।
হাবিলদার আমাদের নিয়ে গেলো অরুর সামনে।
আমাদের দেখে হাসতেছে অরু,,,,
- আসেন আপনারা। আমিও অপেক্ষা করে আছি। (অরু)
_ মন্টুকে খুন কেনো করলে আর আমাকে কেন ফাসালে। (আমি)
_আরে বাহ্ আমাদের কাজে বাধা দিবে। আমরা কিছু করলেই দোষ?(অরু)
_কি করে ফাঁসালে? (আবির)
_আমি জানতাম রানা এমন কিছু করবে। তাই তার মোবাইলের সময় এগিয়ে দিয়েছি। আর মন্টুর কাছ থেকে সে যখন দেখা করে ফিরবে। জায়গায় জায়গায় সিসিটিভির ফুটেজ রানা কে দেখা যাবে। রানা দেখা করার পরই খুন করে দিলাম। যাতে ওই সময়ের ভিতর আসা যাওয়া মিল রেখে খুন করলাম যাতে রানার কাটানোর সময় মতো খুন হয়। রানা যখন তার সময়ের কথা বলবে কেউ বিশ্বাস করবে না। কারন প্রমান আছে।
আর মন্টুর ওটা ল্যাপটপ না। ওটা আমার। আর পর্ণ সাইটের যে ব্যবসা ওটা আমার টিম আছে সবাই মিলে চালাই। ভূল করে মন্টুকে দেখে ফেলায় তাকেই মেরে রানাকে জেলে দিছি। আর আবির যেনো বের করেত না পারে রানাকে তাই তাকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করছি। আমার ব্যবসায় এখন অনেক মানুষ আছে। (অরু)
_কেনো এইসব করলে? আমাদের ভালবাসার সংসার শেষ করলে তুমি অরু। (আমি)
_কেনো এইসব করতে হলো? (আবির)
_আমার টাকা চাই। দেশ বিদেশ ঘুরতে চাই। আর এই ফকিররে বিয়ে করে জীবনটাই শেষ। আমার পার্টনার আছে। মন্টুর সাথে না দেখলে সব কিছু ঠিক থাকতো। আমি চুপিচুপি চলে যেতাম বিদেশ। সব কিছুর মুল তোরা দুটা। (অরু)
_আমরা তুকে ছাড়বো না। সব হত্যার বিচার হবে। (আবির)
-আদালতে এটাই বিচার হবে ১০লাখ টাকার যে মিথ্যা অভিযোগ করলি তার। আর মা মেয়েকে অপহরণ করতে পারে না। তাই আমিও বলবো রানা যে মানসিক রোগী তার থেকে বাচতে টাকা নিয়ে ও মেয়ে নিয়ে গেছি। আর সেই ল্যাপটপ থাকলে আমাকে খুনের আসামী বানাতি। কোন প্রমান নাই। 😁  (অরু)
_এই মেয়ের বিচার হবেই। সময়ের অপেক্ষা। (আবির)
_আরে যা যা ১০লাখ টাকা দিয়ে দিবো। আমি এখন কোটিপতি। ১০লাখে কি হবে আর। ছেড়ে দিবে আদালত (অরু)
আমরা পুলিশকে সব বললাম,পুলিশও একই কথা বলে। প্রমান ছাড়া কিছু হবে না। আর খুনের মামলা গুলো পুনরায় খুলতে। যারা খুন হলো বা আত্মহত্যা করলো তাদের পরিবারকে দিয়ে মামলা করতে হবে আবার। তাছাড়া এখন আর কোন উপায় নাই অরুও তার পার্টনারকে দরতে।
পুলিশের থেকে বিদায় নিয়ে বের হতে যাচ্ছি তখনই দেখি একজন কোর্ট পড়া লোক আসতেছে ।
_এই হয়তো অরুর অবৈধ পথের পার্টনার (আবির)
_আমিতো তাকে চিনি। সে অরুর ছোট বোন জামাই.........


চলবে....


Writer:- সোলাইমান রানা

 

Delivered by FeedBurner

a