> শেষ ঠিকানা পর্ব ১১
-->

শেষ ঠিকানা পর্ব ১১


দেখলাম সেজুতি বেলকনিতে দাড়িয়ে কাঁদছে।আমি সেজুতিকে জড়িয়ে ধরে বললাম।
সেজুতি আমি জানিনা আমি সত্যি কখনো আগের কথাগুলো মনে করতে পারবো কিনা।তবে আমি হাসান হয় আর সৌরভি হয় আমি যে তোমাকে ভালোবাসি সেটাই সব থেকে বড় সত্য।
-সেজুতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।আমাদের কত সৃতি কত কথা সব ভুলে গেছো তুমি ভাবলেই আমার বুকের ভেতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে।
-সেজুতি আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এর থেকে কী তোমার কাছে ঐ সব বড় হয়ে গেলো?।
-না হাসান।তোমার কিছু মনে পড়ার দরকারর নেই আমি যে তোমাকে আবার আমার জীবনে ফিরে পেয়েছি সেটাই খোদার অশেষ কৃপা।আমি আর হারাতে চাই না তোমাকে।
-আম্মু।তোমারা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছো।হি হি।(অণু)।
অণুকে দেখা মাত্র আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
ওর মুখটা আমার দুহাতের মুঠোর ভেতরে নিয়ে আমি অবাক হয়ে ওকে দেখতে লাগলাম।অণু যে আমার মেয়ে একতদিন এতটা কাছে পেয়েও সেটা বুঝতে পারিনি।বিধাতার কী খেলা।
-কী দেখছে এমন করে?(সেজুতি)।
-আমার মেয়েকে।(আমি)।
-তুমি বাসর রাতে বলেছিলে আমাদের মেয়ে হলে তার নাম অণু আর ছেলে হলে তার নাম অর্পণ রাখবে।দেখো তোমার কথা আমি রেখেছি। আমাদের মেয়ে নাম আমি অণু রেখেছি।
আমি অণুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।হ্যাঁ আমার কিছুই মনে নেই তবে আমি যে এক মেয়ের বাবা এটা সব থেকে বড় সত্য।আমরা তিনজন বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ নিচে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেলাম।আমি দৌড়ে নিচে গেলাম দেখার জন্য।
গিয়ে দেখি বাবা মা কে মারছেন।আমি নিচে গেলাম।
-কি করছেন টা কী।ওনাকে এভাবে মারছেন কেনো?(আমি)।
-তাতে তোমার কি তুমি তোমার ঘরে যাও সৌরভ।(বাবা)।
-উনি আমাকে জন্ম না দিলেও উনি আমার মা।আর আপনি এভাবে আমার সামনে আমার মা কে মারতে পারেন না।আমার কথাটা শুনে মা আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর আমি কথাটা বলার সাথে সাথে আমার সৎ মা দৌড়ে আমার পিচে এসে লুকালো।সেজুতি মা কে আমাদের রুমে নিয়ে গেলো।
-আপনি যদি আর কখনো মাকে এভাবে মারধোর করেন তাহলে একদম ভালো হবে না বলে দিলাম।কথাটা বলে আমি চলে এলাম।আর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রুমে এসে দেখলাম মা কাঁদছেন।বাবা ওনাকে এতটাই মেরেছেন যে কালসিরা পড়ে গেছে।মা বাচ্চাদের মত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন।সেজুতি মায়ের গায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আমি চলে এলান সেখান থেকে নিচে।এসে দেখলাম বাবা কারো সাথে ফোনে চিৎকার করে গালাগালি দিয়ে কথা বলছে।
একটু কাছে গিয়ে বুঝলাম বাবা ডক্টর আঙ্কেলের সাথে কথা বলছেন।বলছেন,
-আমি এই সম্পত্তির জন্য কি কি করতে পারি তোর সেটা নিশ্চয় অজানা না।তুই এবার বুঝবি কত ধানে কত চাল।(বাবা)
আমি বাবার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তিনি নিশ্চয় এবার ডক্টর আঙ্কেলের কোনো ক্ষতি করবেন।
আমি সাথে সাথে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ডক্টর আঙ্কেল কে অনবরত কল দিতে লাগলাম কিন্ত ৮/১০বার কল দেবার পরো আঙ্কেল কল রিসিভ করলো না।
আমি না পেরে হসপিটালে চলে গেলাম।হসপিটালেও আঙ্কেলকে পেলাম না।বাসায় ফিরি আসছি ঠিক তখনি দেখি রাস্তাই অনেক ভিড়।একজন কে ডেকে বললাম , কী হয়েছে ভাই এখানে এত ভীড় কেনো?
-আর বলবেন না ভাই একটু আগে একটা ট্রাক এসে পিসে দিয়ে গেলো এই গাড়িটাকে।ভেতরে লোকটা একেবারে দেখার হাল নেই।(পথিক)।
আমি ভীড় ঠেলে এক্সিডেন্ট স্পটে গেলাম গিয়ে যেটা দেখলাম দেখে মাথা ঘুরে উঠলো আমার।দেখি ডক্টর আঙ্কেল।আমি দৌড়ে গেলাম আঙ্কেলের কাছে গিয়ে তার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম আঙ্কেল এখনো বেঁচে আসেন। ছটফট করছেন তিনি গাড়ির ভেতরে।আর সেটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে পাবলিক।আমি আঙ্কেল কে টেনে বের করার চেষ্টা করলাম কিন্ত পারলাম না।তখনো পাবলিক দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা দেখছে।মেজাজ বিগড়ে গেলো আমার।
-আরে আপনারা কী মানুষ নাকি জানোয়ার বলুন তো।দেখছেন মানুষটা এখনো বেঁচে আছে।একটু হেল্প করতে পারছেন আমাকে আপনারা।একটু হসপিটালে নিয়ে যাবো ওনাকে।ও আপনারা তো শুধু দাড়িয়ে মজা নিতে জানেন।আর কেউ মারা যাচ্ছে দেখেও সেটা দাড়িয়ে ভিডিও করতে পারেন কিন্ত তাকে একটু হরপিটালে নিয়ে যেতে পারেন না। ছিঃ আল্লাহ না করুক আপনাদের ফ্যামিলির কারো যেনো এই অবস্থা না হয়।
আমি কথাগুলো বলার সাথে সাথে কয়একজন লোক এগিয়ে আসলো আমাকে সাহায্য করতে।আমরা সবাই মিলে আঙ্কেলকে গাড়িতে তুললাম।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার আগের তিনি মারা গেলেন।ওনাকে ওনার ফ্যামিলির কাছে দিয়ে আমি বাড়ি চলে এলাম।
মনে হচ্ছে এটাও বাবার কাজ।বাড়ি ফিরে দেখি বাবা মা কে আবারো মারছেন।আমি বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মাকে নিয়ে চলে এলাম আমার রুমে।
দেখলাম সেজুতি অণুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
-কি হয়েছে সেজুতি।(আমি)।
-বাবা দাদু আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিছে আর অনেক পঁচা পঁচা কথা বলেছে।(অণু)।
-এত বড় সাহস।কি হয়েছিলো সেজুতি।(আমি)।
-না কিছু না(সেজুতি)।
-আমি বলতে বলেছি তোমাকে।বলো।
-বাবা তোমার মাকে মারছে দেখে আমি বাধা দিতে গিয়েছিলাম,আর তার পরে এসব হয়েছে।
-এত বড় সাহস যে বাবা তোমাকে, আজ বাবার একদিন কী আমার একদিন।
কথাটা বলে আমি বাবার কাছে যাবার জন্য পা বাড়ালাম ঠিক তখনি আমার সৎ মা আমার হাত টেনে ধরলো।
-দাড়াও সৌরভ।এই ভুলটা করোনা তুমি।ও তোমাকেও ছাড়বে না তাহলে।ও মানুষ না ও একটা জানোয়ার।
কথাটা বলে মা চলে গেলো সেখান থেকে।
আমি আর সেজুতি অবাক হয়ে গেলাম মায়ের এসব কথা শুনে।
শুয়ে আছি রাত ঠিক ২ টা বাজে চোখে ঘুম নেই একটুও।শুধু ভাবছি কীভাবে আকরাম চৌধুরীর মুখোস খুলে ফেলা যায়।হঠাৎ দরজায় কেউ কড়া নাড়লো ঠক ঠক করে।
-কে? কে?আমি বার বার ডাকা শর্তেও কেউ সাড়া দিলো না।না পেরে শেষে গিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খুলতেই আমি একেবারে অবাক, দেখি মা দাড়িয়ে আছেন।
-মা আপনি?এত রাতে এখানে?বাবা আবার মারছে আপনাকে,চলুন আজ বাবার একদিন কী।(আমি)।
-দাড়াও সৌরভ। এসব কিছু না। জলদি ভেতরে এসো কথা আছে তোমার সাথে। কথাটা বলে মা আমার হাতটা টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
-কী হয়েছে বলুন। কী এমন কথা যে এত রাতে এভাবে লুকিয়ে আমার রুমে আসতে হলো আপনার।
-চুপ আস্তে কথা বল বাবা না হলে তোর বাবা টের পেলে শেষ করে ফেলবে আমাকে।ও তোর বাবাই বা কেনো বলছি ও তো তোর আসল বাবা না।
আমরা কথা বলছি সাথে সাথে সেজুতি উঠে এসে বললো।
-মা আপনি এখানে?বাবা আবার মেরেছে আপনাকে।ছিঃ মানুষ না আসলে বাবা।
-না মা তোমার শশুর আমাকে মারেনি।আসলে তোমাদের সাথে কিছু কথা ছিলো আমার।
-কী কথা বলুন।(আমি)।
-সৌরভ তুমি আর সেজুতি পালিয়ে যাও এখান থেকে।তা না হলে ও তোমাদেরকেও মেরে ফেলবে।যেমন ভাবে ও হাকিম ভাই সৌরভের মা আর ডক্টর কে মেরেছে।
-মানে?(আমি)।
-হ্যাঁ বাবা তোমার হাকিম চাচা সুইসাইড করেননি তাকে খুন করেছিলো তোমার বাবা।আর ডক্টর কেও তোমার বাবা লোক লাগিয়ে ট্রাক চাঁপা দিয়ে মেরেছে।
-সবটাই আমি জানি মা।আমি যে ওনার ছেলে সৌরভ না সেটাও আমি জানি(আমি)।
-তুমি সবটা জেনেও এখনো এখানে পড়ে আছো।পালিয়ে যাও এখুনি।
-না মা এখনো তো আসল কথাটা জানার বাকি আছে।
-কি কথা?
-এত কিছু কিসের জন্য?এত খুন এত লুকোচুরি এত রহস্য এত মিথ্যে কথা কেনো, কেনো,এত কিছু কিসের জন্য?
-সব এই সম্পত্তির জন্য।(মা)।
-কী?(আমি)।
-হ্যাঁ।তুমি হয়তো জানোনা সৌরভের মায়ের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ছিলো।
-ছিলো মানে এখন কার নামে সেগুলো?
-তোমার বাবা মানে সৌরভের বাবা সৌরভের মাকে এই সম্পত্তির জন্যে বিয়ে করেছিলো।কিন্ত পরে তোমার মায়ের উপর অসহ্য অত্যাচার করার পরেও সৌরভের মা সে সম্পত্তি সৌরভের বাবার নামে করেনি কারন সৌরভের মা জানতো সৌরভের বাবা সব জুয়া খেলে নষ্ট করে ফেলবে।একদিন সৌরভের বাবা জানতে পারে যে যেদিন সৌরভের মা মারা যাবে তার সে সব সম্পত্তি পাবে তার স্বামী মানে আকরাম।তাই আকরাম সৌরভের মাকে খুন করে ফেলে।কিন্ত খুন করার পরে দেখলো সৌরভের মা মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি তার ছেলে সৌরভের মানে করে দিয়ে গেছে।সেটা দেখে তো আকরামের মাথা খারাপ হয়ে যাই।তাই আকরাম মানে সৌরভের বাবা সৌরভকেও মেরো ফেলার পরিকল্পনা করে।লোক পাঠাই সৌরভকে মারার জন্য।কিন্ত।
-কিন্ত কী?(সেজুতি)।
-পরে আকরাম জানতে পারে সৌরভ মারা গেলে সে সম্পত্তি সব অনাথ অশ্রমে চলে যাবে।সৌরভ না থাকা কালিন ঐ সম্পত্তি ভোগ করবে অনাথ আশ্রমের ঐ শিশুরা।আর সৌরভ বেঁচে থাকাকালিন যদি ঐ সম্পত্তি সে অন্যকাউকে লিখে দেই তাহলে সেই সম্পত্তি তখন তার হবে।
কথাটা জানার পর সৌরভের বাবা তার ঠিক করা লোকেদের সৌরভকে মারতে বারন করবে কিন্ত তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।ঐ লোকগুলো সৌরভ কে মেরে দিয়েছিলো।পরে সৌরকে আকরাম হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো কিন্ত তাকে আর বাঁচাতে পারেনি।সৌরভের আর তোমার বডি ফিগার সব এক তাই তোমাকে আকরাম রাস্তা থেকে তুলে এনে সার্জারি করাই যাতে পরে ও তোমাকে সৌরভ সাজিয়ে লিগালি সব সম্পত্তি লিখে নিতে পারে।ও যদি জানতে পারে তুমি সবটা জেনে গেছো তাহলে ও তোমাদের কাউকে ছাড়বে না।তাই বকলু বাঁচতে চাইলে পালিয়ে যাও এখান থেকে।
-না মা আমি পালাবো না।ঐ লোকটার পাপের ঘড়া পূর্ন হয়ে গেছে। শাস্তি তো ওনাকে পেতেই হবে। আপনি শুধু একটু আমার সাথে থাকুন আর দেখুন আমি কী কী করি।



Writer:- আতিকা জাহান
 

Delivered by FeedBurner

a