Leave a message
> বিশ্বাস পর্ব ৭ ও শেষ পর্ব
-->

বিশ্বাস পর্ব ৭ ও শেষ পর্ব


আমি সিড়ির নিচে এসেই দেখি আবির দাঁড়ানো। আমাকে বলে, মাইশাকে পেয়েছিস?
আমিও হ্যাঁ সূচক উওর নিয়ে। আমাকে দেখিয়ে দেওয়া রুমে এসে বিছানায় হেলান দিলাম।
ততক্ষনে আবির জান্নাতকে নিয়ে আসলো আমার কাছে।
মেয়েকে একটু কোলে নিয়ে আদর করতেছি। তখনই আবিরের মা এসে বলে,রানা তুমি মেয়েকে দিয়ে একটু আমাদের বাগান বাড়িটাও ঘুরে আসো।
-"আন্টি আমিতো চিনি না। আর কার সাথে যাবো? "
_মাইশা বললো সে যাচ্ছে। আর তোমাকে বলতে সেই বললো। যাও দেখে আসো।
আমিও মাইশার কথা শুনে যাবো বলে রুম থেকে বের হলাম।
আবির সামনে এসে, "বিশ্বাস নিয়ে খেলিস না কখনো। তা না হলে বন্ধুর ভালবাসাটা দেখাবো। যেটা দেখাই নাই "
আমিও কিছু বললাম না। আমি বুঝতেই পারছি আবির কি বুঝাতে চাইলো।
মাইশাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাটতে থাকলাম রাস্তার পাশ দিয়ে গ্রামের রাস্তা। হাটার মজাই আলাদা।
বাগান বাড়ি অনেক সুন্দর করে বানানো। চারদিকে গাছগাছালি, ছোট ছোট কয়েকটা ঘর আছে। এতেই এসে সবাই আড্ডা দেশ।
আমি আর মাইশা যখন যাচ্ছি মাইশা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটছে। বাড়ির ভিতর দুজন ছাড়া আর কেউ নাই। বিকাল শেষ হওয়ার কাছাকাছি। আমি খেয়াল করলাম আমার একটা ছেলে অনেক্ষণ ফলো করে যাচ্ছে। যদিও বাড়ির বাহিরে থেকে। মাইশা কিছু গাছ আছে ও গুলো পানি দিলো। দুজনে আবার কথা বলতে বলতে বাড়িতে ফিরে আসতেছি।
_মাইশা,তোমায় কেউ নিয়মিত ফলো করে?
_না, কেনো?
_এমনি।
_তবে একটা ছেলেকে দেখি আমি বের হলে অনেক সময় পিছনে পিছনে আসে। কেনো জানি না।
_আবিরকে বলছো কখনো?
_ভাইয়া বাড়িতে নাই কি করে বলি? আর যদি জানতে পারে....
_আচ্ছা। বুঝতে পারছি।
সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বাসায় ফিরে আসলাম। রাতে সবাই খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি আর আবির একসাথে থাকলাম। মেয়েটা আবিরের মায়ের কাছেই থাকে। আমি বলতে গেলে একদম টেনশন মুক্ত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দু বন্ধু হাটতে বের হলাম। শীতের সকাল চারদিকে অন্ধকারের মতো কুয়াশা।
আমরা গল্প করতেছি আর হাঁটতেছি।
_আচ্ছা আবির কেউ যদি তোর বোনকে বিরক্ত করে কি করবি?
_কিছু করবো কেনো? বলতো?
_এমনি বললাম।মনে কর আমি যদি কিছু করি।
_তাহলে আর কি করবো। বোন রাজি থাকলে বিয়ে দিয়ে দেবো। তুই আমার বন্ধু আর তোকে ভালো করে চিনি আমি। তোর প্রতি বিশ্বাস আছে। খারাপ কিছু করবি না যে!
_অন্য কেউ যদি বিরক্ত করে?
_তাহলে দেখবো কে সে। কাউকে এমন দেখছস করতে?
_হুম গতকাল বিকালে দেখলাম একটা ছেলে আমাকে আর মাইশাকে ফলো করে।
_আচ্ছা আজকে বিকালে তুই মাইশাকে নিয়ে বের হইস। আমি দেখবো পিছনে গিয়ে কে বিরক্ত করে।
_আচ্ছা।
দুজন ঘুরে ফিরে বাসায় আসছি ১০টার দিকে। এসে নাস্তা করলাম। মাইশার সাথে যদিও বেশি কথা হয় নি চোখে চোখে অনেক কথা হইছে।
নাস্তা করে আসে আছি তখনই একটা সুন্দর রূপসী মেয়ে আসলো। আমি মাইশাকে ইশারা করে বললাম কে?
মাইশা ওই মেয়ের সাথে বলে, আরে খালাতো বোন এসো। ভাইয়ার কথা শুনে আসলি বুঝি!
আমি বুঝলাম মাইশার খালাতো বোন আর আবিরকে ওই মেয়ে পছন্দ করে। দেখতে খারাপ না।
ওই মেয়ে যখন আসলো তখন আবির নাই। মনে মনে ভাবছি আবিরকে এই মেয়ে বিয়ে করিয়ে দিতে হবে।
মাইশা তার খালাতো বোনকে এনে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। নাম তার কেয়া।
বিকালে আমি, মাইশা, কেয়া বের হলাম বাড়ি থেকে। যাচ্ছি বাগান বাড়িটাতে। আমি আসার আগে বললাম আবিরকে যে যাচ্ছি। সাথে যাবি নাকি সে আসে নি।
তিনজন কথা বলতে বলতে চলে গেলাম বাড়িতে।
তাদের দু বোনকে কথায় ব্যাস্ত রেখে বের হলাম বাহিরে। দেখি দুরে আবির সেই ছেলেটাকে দাঁড় করিয়ে রাখছে। আমি জানি আবিরের মাথা একটু গরম দৌড়ে গেলাম কাছে।
_এই তুমি কি মাইশাকে ফলো করো?(আমি)
_জ্বি ভাইয়া মানে!(ছেলে)
_তুই কি......
আবির ছেড়ে দে। বুঝে না ছোট মানুষ। আবির আমার কথা মতো ছেড়ে দিলো।
সবাই একসাথেই বাসায় ফিরলাম। জান্নাতকে কোলে নিয়ে একটু আদর করছি। দেখি আবিরের মায়ের রুমে আবির যাচ্ছে। আমিও কান পেতে শুনতে চাইলাম কি বলে।
_মা,মাইশা বড় হলো বিয়ে দেওয়া দরকার। (আবির)
_আগে তোকে বিয়ে করাই তারপর। (মা
_আমি বিয়ে করতে চাই না। বিশ্বাস করি না কাউকে।
_আচ্ছা। কেয়াকে কেমন লাগে?(মা)
_কেনো?
_তোকে বিয়ে করাবো কেয়াকে।
_আমি যা বলতে আসছি। মাইশাকে বিয়ে দিতে হবে না?(আবির)
_ভালো ছেলে হলে দিবো।
_আমি বলি কি রানার কাছে দিয়ে দেই। সবাই সাথে থাকবো। রানা অনেক ভালো ছেলে। আমার বন্ধু ও। আমি চিনি আমার বোনের জন্য আমি কি খারাপ ছেলে খুজবো নাকি? (আবির)
_মাইশা কি বলে দেখা যাক তারপর। আগে কেয়াকে বিয়ে কর।
_আমি বিয়ে করতে চাই না।
আবির তার মায়ের রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি বুঝলাম আবির এটাই চায় আমি মাইশাকে বিয়ে করি। এমন বন্ধু পাওয়া যায় এখন! ভাবতে কেমনই লাগে।
সন্ধ্যার পর ছাদে গেলাম সবাই। মাইশা, আমি,কেয়া, আবির সবাই।
আমি আর মাইশা ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আবির আর কেয়াকে যেনো কথা বলতে পারে এমন দূরে দাঁড়িয়ে আছি। তারা হালকা হালকা কথা বলছে।
আমি আর মাইশা এক পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আবির যেহেতু জানে আমাদের ভিতর আমরা একে অপরে পছন্দ করি। তার বন্ধু তাই টেনশন করে না।
_মাইশা, তুমি আমায় বিয়ে করবে?
_ভালবাসি বিয়ে করতেই। কেনো এ কথা হুম?
_মানে আবিরও চায় বিয়ে হউক তোমার আমার। তোমার মায়ের কাছে বলতে শুনছি। আর চলো আগে কেয়ার আর আবিরের বিয়ে দিয়ে দেই। সবাই একসাথেই আনন্দে থাকবো। (আমি)
_হুম, আমার মনে হয় ভাইয়া আপনার কথা ফেলবে না। আপনিই বুঝান।
_আচ্ছা, দেখি। আমাদের তো বিয়ে হবেই।
_ইনশাআল্লাহ। বিশ্বাস রাখেন। আমি কখনো বিশ্বাস ভাঙবো না।
_তুমি পারবা আমি জানি।
কিছুক্ষণ পর আর কথা না বলে সবাই চলে আসি। আবিরের বাবা দেশের বাহিরে এখন। রাতে আমরা সবাই যার যার মতো ঘুমাচ্ছি।
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে দেখি আবির পাশে নাই আমার। আমি ভাবছি কোথায় যাবি হয়তো ঘুম আসে না। ছাদে হাটাহাটি করে।
সকালে ঘুম ভেঙে আমরা হাটতে বের হলাম। আবিরদের যে বাগানবাড়িরটার কাছে দেখি পুলিশ ও মানুষের ভিড়। এগিয়ে গিয়ে দেখি সেই ছেলেটার রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। আমার বুঝতে বাকি নাই কে এমন করছে। আবির ও আমি সোজা বাসায় ফিরে আসলাম।
-এটা কি করলি?(আমি)
_কি করলাম আবার? (আবির)
_ছেলেটাকে...
_যা হবার হইছে বাদ দে।
নাস্তা করে সবাই যখন যার যার কাছে ব্যাস্ত তখন আবিরের মা আমাকে বলে আমি যেনো আবিরকে বলে কেয়াকে বিয়াতে রাজি করাই। আমিও আন্টিকে বুঝিয়ে বললাম যে যে করেই হউক আবিরকে বিয়ে করাবোই।
বিকালেই চলে আসছে আবিরের বাপ বাড়িে। আমাদের দেখে ওনি অনেক খুশী।
আমি আবিরকে অনেক বুঝালাম কেয়াকে বিয়ে করতে। আমার কথায় শেষ পর্যন্ত রাজি হলো কেয়াকে বিয়ে করতে। আমিও আবিরের মা ও বাপের কাছে বললমা যে আবির রাজি। আবিরের মা আমাকে কাছে ডাক দিয়ে নিয়ে বললো,তুমি নাকি মাইশা কে বিয়ে করতে রাজি?
_মানে আন্টি, আপনরা যা বলেন!
-আবিরে বাপ বলে, আবির যদি মনে করে তুমি ভালো তাহলে আমারদের কোন কথা নাই। আবিরকে আমরা চিনি। এমন কাউকে সে বিশ্বাস করে না যতটা তোমায় করছে।
_রানা আমরা চাই দুটা বিয়েই একসাথে হয়ে যাক।
-আমিও তাদের কথায় সায় দিয়ে চলে আসলাম।
মনে মনে অনেক খুশী আবিরে পরিবার এত ভালো। যতটা আবির বন্ধুর জন্য করছে তা বলার মতো না।
দুদিন পর আামদের বিয়ে হয়ে গেলো। আমি আবিরকে শপদ করালাম যাতে যত কিছুইনহউক কাউকে যেনো খুন না করে। সে কোন ভালো মানুষকে মারে না জানি। তারপর।
বিয়ের রাতে মাইশাকে আমি সত্যিটা বললাম যে জান্নাত আমারই মেয়ে। মাইশা বললো যতই হউক আমাদেরই মেয়ে এতে ভাগাভাগি করার দরকার নাই। সবাই যেহেতু আবিরের জানে সেটাই জানুক, এটাই ভালো।
মাইশা এত ভালো মেয়ে বলে বুঝানো যাবে না।
আমি চট্টগ্রাম চলে যেতে চাইলাম। আবিরের পরিার বলে চাকুরী করার দরকার নাই। তাদের ব্যবসা গুলো দেখলেই হবে আবির ও আমি মিলে।
আমি চাইনা ওদের গুলো নিজেরা কিছু করি। তাই আবির আর আমি স্বীদ্ধান্ত নিলাম। আমরাই একটা নতুন কিছু শুরু করি।
।মাইশাকে বলে তার বাবা থেকে ৫০লাখ টাকা নিলাম। আবিরও সমান টাকা নিলো। দুজনে শুরু করলাম রেস্টুরেন্টের ব্যবসা। সিলেটই শুরু করলাম। ভালো মানে একটা রেস্টুরেন্ট।
কয়েক মাসে দেখলাম আমাদের রেস্টুরেন্ট শহরে জনপ্রিয় হয়ে গেছে। লাভ অনেক হয়। যদিও তা মাইশার পরিবারের আয়ের কাছে কিছুই ান। আবির আমি এটাই তৃপ্তি পাই যে নিজেরা কিছু করি।
বছর খানিক পরেই মাইশার কোল জুড়ে আমাদের প্রথম ছেলে সন্তান আসলো। কয়েক মাসের ব্যবধানে কেয়াও মেয়ে সন্তান জন্ম দিলো।
যেদিন হাসপাতালে কেয়ার মেয়ে হলে। আবির অনেক খুশী দেখলাম যা বলে বুঝানো যাবে না।
আবির সেইদিন বলে আমাদের মেয়ে ছেলে গুলো বড় হলে বিয়ে দিয়ে আমরা বন্ধুরাও বেয়াই হবো। আমি হেসে ছিলাম অনেক।
আমাদের পরিবার ব্যবসা নিয়ে দিন ভালোই কাটছে। পুরো পরিবারে শুধু সুখের ছোয়া।
গ্রামে ছোট ভাইটাকে একটা ব্যবসা করতে শুরু করে দিলাম। কিছু জমি কিনে মাছের চাষ করা শুরু করে দিলাম ছোট ভাইকে। সে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করছে। চাকুরী করতে আমিই মানা করলাম। বললাম গ্রামে যেনো কিছু করে দেখাতে পারে।
১৩-১৪বছর কেটে গেলো কোনদিক দিয়ে বুঝতেই পারলাম না। আবিরও আমি একে অপরে এত বিশ্বাস করতাম যে বন্ধুত্বে কখনো ফাটল ধরে নি।
মাইশা, কেয়া ও যে আমাদের জীবনটাই পাল্টে দিবে ভাবিনি। আবিরকে বললাম বিশ্বাস করে কাউকে ঠকলেও লাভ আছে। ঠকতে ঠকতে একদিন আসল মানুষ মিলে যায়। আবির বললো, যদি তোকে বিশ্বাস না করে বিয়েতে রাজী না হতাম জীবন মানেই বুঝতে পারতাম না।
এই কয়টা বছরে আমাদের ব্যবসা সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। বড় বড় শহর গুলো একটা করে হলেও রেস্টুরেন্ট চালু করলাম। মাসিক আ কোটি টাকার উপরে আছে। সব মিলিয়ে আমরা যেনো স্বর্গের সুখে জীবন কাটাচ্ছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে বসলাম। জান্নাত দৌড়ে এসে পত্রিকা নিয়ে আমাকে বলছে, বাবা, দেখো একটা কি কষ্টের খবর পড়ো।
জান্নাত আমাকে ও আবিরকে বাবাই ডাকে।
আমি পত্রিকা হাতে নিলাম।দেখি অরুর মৃত ছবি দিয়ে লেখা , "পরকীয়া করে স্বামী ছেড়ে প্রেমিকের হাত ধরে বিদেশ পাড়ি। ১৪বছরেও প্রেমিক স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি। এই ১৪বছরে বিদেশে নানান লোকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে হলো প্রেমিকের কথায়। টাকা আয় করতো এভাবেই। স্ত্রীর মর্যাদা না পেয়ে এত বছর অপেক্ষা করেও। তাই কষ্টে নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়ে দিলো মহিলা। "
আমি হেসে আবিরকে ডাক দিয়ে পত্রিকা দেখালাম। এবার বিশ্বাস হলো তখন বলে ছিলাম না। যে যেটা দিয়ে মানুষ আকাশে উড়ে সেটাই তাকে মাটিতে নাম। অরুর ফল পেয়ে গেছে যেমনটা সে অন্য মেয়ে গুলোকে ব্যবহার করে মরতে বাধ্য করলো।
আমি ইমেল চেক করে দেখি অরু একটা ইমেল করে দিছে, "তাতে কিছু ভিডিও ও ছবি দেওয়া। আর বলে দিছে রানা এই প্রমান দিয়ে সবার শাস্তি দিও। "
আমি আবিরকে দেখালাম সে বলে এইসব বাদ দে। অতীতে যা হইছে ভুলে যা।
আমরা যেমন আছি ভালি আছি। সবাই সুখেই আছি।
আমি সব গুলো ভিডিও ও ছবি চট্টগ্রামের সেই পুলিশ অফিসারকে পাঠিয়ে দিলাম।বলে দেই যেনো রাজু শাস্তি পায়। তিনি বলেছেন আর চিন্তা করার দরকার নাই। এতেই রাজুর ফাসি নিশ্চিত। বিদেশ থেকে ধরে এনে কিছুদিন পরই রাজুকে মৃত্যুদন্ড দিলো।
আমরা সবাই ভালো আছি। আবির আর কাউকে খুন করেনি। সবাই এত সুখে আছি বলে বুঝাতে পারবো না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।বিশ্বাসী হলে সব কিছু হয়। শুধু দরকার বিশ্বাস।


......সমাপ্ত......


Writer:- সোলাইমান রানা
 

Delivered by FeedBurner

a