Leave a message
> বিদঘুটে হাসি - Ghost Story - Boipoka365
-->

বিদঘুটে হাসি - Ghost Story - Boipoka365


Ghost Story

হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো লিফটের ভেতরে আটকা পরলাম আমি। আমি একাই সম্ভবতো। লিফটের ভেতর আর কেও আছে কি না তা এতোক্ষন লক্ষ করিনি। আমার বই পড়ার অভ্যেস। তানহার একটা রূপকথার বই হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে লিফটের ভেতরে ঢুকেছিলাম। ওহ বলা হয়নি, তানহা আমার ক্লাশ সিক্সে পড়া মেধাবী স্টুডেন্ট। এই বাসারই আট তালায় ওদের ফ্লাট। টিউশনি শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্যই লিফটে উঠেছিলাম আর তখনি...

যাক সে কথা, আমি এতোক্ষনে বেশ কয়েকবার লিফটের দরজা ধাক্কা দিয়ে দারোয়ান মামাকে চিৎকার করে ডেকেছি। কিন্তু কোনো সারা নেই। এই অন্ধকারে লিফটের ভেতর একা আমি। একা মনে হচ্ছে কারন লিফটের ভেতর অন্য কেও থাকলে এতোক্ষনে নিশ্চই সারা দিতো। যেহেতু কেও সারা দেয়নি তাই ভেবে নেওয়া যায় আমি একা। ভয়ে সারা শরীর ঘামছে আমার। একপ্রকার কাঁপতে কাঁপতেই ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম আমি। ইচ্ছা ছিলো স্টুডেন্টের মায়ের নাম্বারে ফোন দিবো। কিন্তু হঠাৎ কেও বলে উঠলো, "ভয় পাচ্ছেন?" আমি সাংঘাতিক রকম চমকে উঠলাম।  ব্যালেন্স রাখতে না পারায় হাত থেকে ফোনটা পরে বন্ধ হয়ে গেলো।

সে হো হো হেসে উঠলো। বিদঘুটে সেই শব্দ। বুকের ভেতর কেঁপে উঠে আমার।

আমি এবার কাপা কাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম- কে আপনি?

প্রশ্ন শুনে তার হাসির শব্দ দ্বিগুণ হলো।

হঠাৎ সে থামলো। 

সেঃ জানেন? হাসলে মারিয়ার গালেও টোল পরতো ঠিক আপনারই মতো। একই রকম কাজল কালো চোখ। ঠোটের নিচে তিল। 

আমি অবাক হই। লোকটা কি বলছে এসব? লোকটা কি করে জানে আমি হাসলে গালে টোল পরে! লিফটে ওঠার পর আমি একবারও হেসেছি বলে মনে পরে না। তাহলে কি লোকটা আগে থেকেই চেনে আমাকে?

আমি আবারো ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম-;: কে-কে আ-আপনি। আ-আপনি কি আমাকে চেনেন?

সেঃ আপনার আর মারিয়ার মধ্যে বড্ড মিল জানেন? অবাক করার মতো। হুবহু এক। যেনো একে অপরের কার্বনকপি।

লোকটা একমুহুর্ত থামে। সে আমার প্রশ্নের উত্তর দেয় না। আমি ক্রমাগত ঘামছি। ভয়ে না গরমে জানি না। উবু হয়ে নিচে পরা ফোনটা উঠালাম। এখনও হাত কাঁপছে আমার। সামান্য ফোনটাও ধরে রাখা কষ্ট সাধ্য মনে হচ্ছে। অতি কষ্টে ফোনটা অন করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই অন হচ্ছে না। এমনসময় লোকটা আবার কথা বলা শুরু করলো।

সেঃ কেনো বৃথা চেষ্টা করছেন? একটা গল্প বলি শুনবেন?

আমিঃ দেখুন তখন থেকে আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছেন আপনি। আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।

লোকটা আবারো হেসে উঠলো। বিদঘুটে হাসি। আমার কথাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে সে বলতে শুরু করলো।

সেঃ মারিয়াকে আমি বিয়ে করতে চাই নি। ও-ওকে আমি ভালোবাসতাম না। বিশ্বাস করুন। আ-আমি তো ফারিহাকে  ভালোবাসতাম। আর ফারিহাকেই বিয়ে করতে চেয়েছি। সব ঠিক ঠাক ছিলো বাবা মায়ের সম্মতি ছিলো।  কিন্তু.......... বিয়ের দিন ফারিহা ওর প্রেমিকের সা-সাথে পালিয়ে গেলো। আমি জানতাম না ফারিহা কাওকে ভালোবাসতো। আ-আমি সত্যিই জানতাম না।

লোকটা আবারো থামলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কথার শব্দ যেদিক থেকে আসছে। আমার ভয় বিন্দু মাত্র কমেনি কিন্তু মাথায় অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরছে। লোকটা যদি মারিয়াকে ভালো নাই বাসে তাহলে ওকে বিয়ে করলো কেনো? লোকটা  আমাকে কেনো মারিয়ার সাথে তুলনা করছে? লোকটা কে, আর আমাকেই বা কথাগুলো বলছে কেনো? 

আমার চিন্তা করার মাঝেই সে আবার বলতে শুরু করলো।

সেঃআমি এটাও জানতাম না ফারিহা পালিয়ে গেছে। বাসরঘরে বউএর ঘোমটা তোলার পর জানতে পারি বউ বদলে গেছে।

লোকটা আবার হো হো করে হেসে উঠলো।

সেঃ জানেন, আমি ওকে কিচ্ছু বলিনি শুধু ওর গালে সর্বশক্তি দিয়ে একটা চর মেরেছিলাম। ও পরে গিয়েছিলো। আমি আর পেছন ফিরে তাকাইনি। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গিয়েছিলাম ছাদে। খুব কেঁদেছি সেদিন.. খুব! কি দোষ ছিলো আমার বলতে পারেন? কেনো ফারিহার বাবা মা ছলনা করে তাদের ছোট মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিলো?................ সারাটা রাত ছাদেই কাটিয়ে দিয়ে সকালে যখন ঘরে ঢুকলাম, দেখি মারিয়া ফ্লোরে বসে খাটের কোনে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। চোখের কোনে পানি জমে আছে। গালের উপর ৫ আংুলের দাগ।  

লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। 

সেঃ কেনো যেনো ওর উপর খুব মায়া অনুভব করছিলাম। ওরও তো কোনো দোষ ছিলো না। সবটা ভুলে নতুন জীবন শুরু করলাম। আবার নতুন করে ভালোবাসলাম। এতোটা ভালোবাসলাম যা বলার বাহিরে..নিজের

হাতে ওর নাম ট্যাটু পর্যন্ত করিয়েছিলাম।

আমি এতোক্ষন চুপ করে লোকটার কথা শুনছিলাম। মনের ভেতর ভয় ভয়  ভাবটা অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু আমার সব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাইনি। মনে হচ্ছে আমার সব প্রশ্নের উত্তর তার গল্পের মধ্যেই আছে। আমি আবারো মন দিয়ে তার গল্প শুনতে লাগলাম।

সেঃ বিয়ের ২ বছর হলো।  আমরা বেশ সুখেই ছিলাম জানেন? কিন্তু অভাব ছিলো শুধু একটা সন্তানের। মারিয়া প্রায়ই বলতো চলো একবার ডাক্তার দেখিয়ে আসি। আমিই রাজী হতাম না। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমি একাই গেলাম নিজের এক পরিচিত ডাক্তারের কাছে। রিপোর্টে আসলো আ-আমি সন্তান জন্মদানে সম্পুর্ন ভাবে অক্ষম। আমারই কিছু শারীরিক কমতির কথা উল্লেখ আছে রিপোর্টে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছিলাম। সারাটা পথ শুধু এটা ভেবেছি যে-বাড়ি গিয়ে মারিয়াকে কি জবাব দেবো। 

লোকটা আবারো থামলো। তার গলা কেমন ভারী শোনাচ্ছে, কথাও আটকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো সে কাঁদছে।  অমি লিফটের কোনায় দারিয়ে তার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করছি। মনের গভীরে লোকটার জন্য মায়া অনুভব হচ্ছে। তাকে সান্তনা দেবো কি দেবোনা এই দোটানায় আমি যখন দ্বিধাগ্রস্ত লোকটা তখন আবার বলতে শুরু করলো।

সেঃ কলিং বেল চাপতে না চাপতেই  মারিয়া দরজা খুলে দিলো। যেনো ও দরজার সামনে দারিয়েই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। দরজা খুলে মারিয়া আমাকে জরিয়ে ধরলো। ওকে অনেক খুশি দেখাচ্ছিলো সেদিন। এতো খুশি ওকে আগে কখনো দেখিনি। আমাকে বলল, "এতো দেরী করলে যে, কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি।"

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কেনো?" অতঃপর মারিয়া আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,"তোমার সাথে খেলার জন্য নতুন অতিথি আসছে যে!"...... কয়েক মুহুর্ত সময় লেগেছিল আমার শুধু এটা বুঝতে যে মারিয়া মা হতে চলেছে! আমি থমকে গিয়েছিলাম। অন্য কোনো সময় হলে আমি হয়তো আনন্দে আত্মহারা হতাম। কিন্তু সেদিন এই একই কথাটা আমার মনে ঘৃনার জন্ম দিয়েছিলো। ধোঁকা মানুষ একবার সহ্য করে নেয় বারবার সহ্য করে না।.................মারিয়ার লাশটা আমার আমার সামনেই পরেছিলো জানেন? রিপোর্ট হাতে নিয়ে আমি আমি মারিয়ার দিকেই চেয়ে ছিলাম।সেই একই রকম ঘুমন্ত মুখ যে মুখ দেখে আমি মায়া অনুভব করেছিলাম। কষ্ট হচ্ছিলো। বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো কষ্টে। কিন্তু ঘৃণা যে বড্ড খারাপ জিনিস!

লোকটা যে এমন কিছু বলবে সেটা আমি আশা করিনি। একজন খুনির সাথে দারিয়ে আছি ভেবেই আমার সারা শরীরে একটা শিতল শিহরণ বয়ে গেলো। 

সেঃ আমি অপলক চেয়ে ছিলাম মারিয়ার দিকে। শেষ দেখা দেখছিলাম ওকে। এমন সময় ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে দেখি ড.নাসরিন ফোন করেছেন। প্রথমে ধরলাম না। বার দুয়েক বাজারপর ধরলাম।

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সে বলে ঊঠলো,- "আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মিস্টার শুভ। আপনার রিপোর্ট টা ভুলবশত বদলে গেছে। একচুয়েলি আজ আমার মেয়ের জন্মদিন ছিলো তাই বাড়ি যাওয়ার তারা ছিলো। তাতেই তারাহুরোয় ভুল করে রিপোর্ট টা বদলে গেছে। আমি খুবই দুঃখিত। তবে আপনার জন্য সুখবর। আপনি সন্তান ধারনে সক্ষম। হ্যালো মিস্টার শুভ, শুনতে পাচ্ছেন?"

আমি হাতে থাকা রিপোর্টে চোখ বুলালাম। কালো ফ্রন্টে সুন্দর করে নাম লেখা শরীফুল হক।.........

আমার মাথা ঝিমঝিম করছে লোকটার কথা শুনে। ড.নাসরিন। আমার মা! লোকটা কি আমার মায়ের কথাই বলছে? আর লোকটার নাম শুভ? তারপর কি হয়েছিলো জানার আগ্রহ আমি দমাতে পারছিলাম না। দ্বিধা ভুলে আমি প্রশ্ন করলাম- তারপর?

লোকটা আবার হোহো করে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে বলল, - তারপর? এর উত্তরটা নাহয় আপনিই খুঁজে নেবেন।.......

আমি লোকটাকে কিছু বলতে যাবো এমন সময় কারেন্ট চলে এলো। অনেক্ষন ধরে অন্ধকারে থাকায় হঠাৎ তীব্র আলোয় আমি চোখ বন্ধ করলাম।  ২য় বার চোখ মেলে তাকেতেই দেখি পুরো লিফটের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেও নেই। আমি অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লোকটাকে খুজছি এমন সময় খট করে শব্দ হয়ে লিফটটা খুলে গেলো। বাহিরে আমার স্টুডেন্ট ওর মা আর দারোয়ান মামা সহ অনেকেই দারিয়ে আছে।

দারোয়ানঃ শোভা মা তুমি ঠিক আছো?

তানহাঃ ম্যাম আর ইউ ওকে?

তানহার আম্মুঃ শোভা, এসো তোমাকে অনেক নার্ভাস দেখাচ্ছে। ঘরে চলো রেস্ট নিয়ে তারপর যেও।

ওরা একেক জন একেক কথা বলছে কিছু কথা আমার কানে ঢুকছে কিছু ঢুকছে না। আমি একমনে চিন্তায় বিভোর। কারো কথার জবাব না দিয়েই বাইরে বেরিয়ে এলাম আমি।লিফটে কি আসলেই কেও ছিলো?যদি না থাকে তবে এই গল্পটা কে বলছিলো আমায়? আর যদি কেও থাকে তাহলে সে গেলো কোথায়? লিফটের ভেতর ঠিক কি হচ্ছিলো আমার সাথে?  ড. নাসরিন কে? কার কথা বলছিলো লোকটা?

মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে। বাড়িতে এলাম। মা বারান্দায় বসে পেপার পড়ছে। আমি মার কাছে এসে বসলাম।

মাঃ কিছু বলবি?

আমিঃ শুভ কে মা? আর মারিয়া?

মা আমার দিকে একমুহুর্ত চেয়ে রইলো। তারপর হাতের নিউজ পেপারটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। "অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামীর আত্মহত্যা" এমন একটা নিউজ  ছেপেছে পত্রিকায়। ছবি ছাপেনি কারোই।

মাঃ আমি ভাবি নি আমার একটা ভুলে ৩ টি জীবন শেষ হয়ে যাবে।

মায়ের চোখে পানি। ধীর পায়ে উঠে মা রুমে চলে গেলো। হয়তো আমার সামনে কাঁদতে পারবে না বলেই.....।

আমি বারান্দায় বসে ভাবছি। শুভ যদি আত্মহত্যাঈ করে তাহলে লিফটে আমার সাথে কথা বলছিলো কে?.........

৬ বছর পর.....

বাসরঘরে বসে আছি। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাকে আমি চিনি না। আজ রাফির সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো আমার। কিন্তু রাফি আসেনি। অপমানে যখন আমার পরিবার দিশেহারা  তখন অতিথিদের মধ্য থেকে কেও একজন আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো। সম্মান বাঁচাতে সাত পাঁচ না ভেবেই রাজী হয়ে গেলো আমার পরিবার। উপায় না দেখে মত দিলাম আমিও। লোকটা কেমন,তার বিষয়ে না জেনে রাজী হওয়া কি ঠিক হলো? মনের মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছে। এমন সময় সে ঘরের ভেতর ঢুকলো। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।তার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। হঠাৎ সে বলে উঠলো -ভয় পাচ্ছেন? পরিচিত কন্ঠ শুনে চমকে উঠে তার দিকে তাকালাম। না, তাকে চিনি না আমি। কিছু একটা বলতে যাবো এমন সময় লক্ষ করলাম তার হাতে একটা নাম ট্যাটু করা,মারিয়া ! আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। অস্ফুটভাবে বললাম -শুভ!

আমার কথা শুনে সে হোহো করে হেসে উঠলো। সেই পুরোনো হাসি। বিদঘুটে হাসি।

আর তারপর?........... থাক আর কাজ নেই গল্পটা এখানেই শেষ। 





Writer

Zoufishan Tahfeem Moon

 

Delivered by FeedBurner

a