Leave a message
> এলিয়েন থিওরি পর্ব ১ দ্য মিস্ট্রি অফ দা পিরামিডস
-->

এলিয়েন থিওরি পর্ব ১ দ্য মিস্ট্রি অফ দা পিরামিডস



এই এপিসোডে আমি এলিয়েন থিওরি নিয়ে আলোচনা করব। যেহেতু অনেক অনেকগুলো ব্যাপার নিয়ে আমাকে কথা বলতে হবে, সেহেতু পুরো এপিসোডটাকে কয়েকটাভাগে ভাগ করে নিয়ে আলোচনা করলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে।
.
তো, এলিয়েন থিওরির সবচাইতে ফোকাসড বিষয়টা হলো, পিরামিড! আর এই পিরামিডগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়।
কেনই বা মিশরীয়রা এই পিরামিডগুলো বানিয়েছিল?
কিভাবেই বা তারা এই বিশালাকার স্তম্ভগুলো বানাতে সক্ষম হয়েছিল?
আর, কি উদ্দেশ্যে এই পিরামিডগুলো বানানো হয়েছিল?
.
এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে প্রসঙ্গতই বলে রাখি যে, শুধুমাত্র মিশরীয় সভ্যতাতেই যে পিরামিড নির্মিত হয়েছিল তা না। মেক্সিকোর মায়ান সভ্যতা, পেরুর এজটেক সভ্যতাসহ চীনের কয়েকটা রাজ্যেও নির্মিত হয়েছিল ছোটবড় অনেকগুলো পিরামিড। কার্বন ডেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে জানা গেছে, মেক্সিকোর টেওটিহুয়াকানে অবস্থিত মায়ান সভ্যতার পিরামিডগুলো মিশরের গিজায় অবস্থিত ফারাও খুফুর পিরামিড নির্মানেরও কয়েক হাজার বছর আগেকার।
.
তো, এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। মিশরের গিজায় অবস্থিত ফারাও খুফুর পিরামিডকে সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে ধরা হয়, এটা মোটামুটি সবাই জানি। বলা হয়ে থাকে, প্রায় ২৩লক্ষ চুনাপাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত হয়েছিল এই পিরামিড। প্রত্যেকটা ব্লকের ওজন ছিল আবার ২-১৫ টন। অনেক এলিয়েন থিওরিস্ট আর আর্কিওলজিস্টের মতে, এত বড় একটা পিরামিড নির্মান সম্ভব হত না, যদি না বাইরের পৃথিবীর কেউ তাদের সাহায্য না করত!
.
তবে, প্রাচীন মিশরীয়দের অনেকগুলো পাপাইরাস আর নির্দশন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ফারাও খুফুর পিরামিডটা নির্মান করতে প্রায় ২০ হাজার ক্রীতদাসকে ব্যবহার করা হয়েছিল! যা নির্মান করতে লেগেছিল প্রায় ২৩ বছর! প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে তারা এত বড় বড় পাথর খন্ডগুলোকে এত সূক্ষ্মভাবে সাজিয়েছিল? আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পিরামিডের দুইটা পাথরখন্ডের মাঝে একটা চুলও প্রবেশ করানো সম্ভব না! এতটাই নিখুঁতভাবে পাশাপাশি সাজানো হয়েছিল!
.
অনেক আর্কিওলজিস্টের মতেই, পাথরখন্ডগুলোকে উপরে তুলতে র‍্যাম্প বা হেলানো তল ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এর মধ্যদিয়েই সেগুলোকে গড়িয়ে গড়িয়ে উপরের দিকে তোলা হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে যদি র‍্যাম্প তৈরি করা হয়েও থাকে তাহলে সেটার সামান্য কিছু অবশেষ তো অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যেত, কিন্তু সেরকম কিছুই এখনও পর্যন্ত খু্ঁজে পায়নি আর্কিওলজিস্টরা।
.
এবার আসা যাক ম্যাথেমেটিকাল ইকুয়েশনের দিকে। তো, ফারাও খুফুর পিরামিড নির্মান করতে যে স্টোন ব্লকগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলো কাছের নদী থেকে তুলে নৌকায় করে নিয়ে আসা হত। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেন যে, প্রতিটা ব্লক নৌকা থেকে পিরামিড অব্দি নিয়ে আসা পর্যন্ত মাত্র আড়াই মিনিট(!) সময় লেগেছিল। যেটা বাস্তবে রীতিমত অসম্ভব একটা ব্যাপার। বর্তমানের এডভান্সড টেকনোলজি ইউজ করেও এত দ্রুত পাথরখন্ডগুলোকে সরানো সম্ভব নয় বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
.
তাহলে কি মিশরীয়রা আসলেই এমন কোনো এডভান্সড টেকনোলজি জানত যেটা আমরা জানি না? বা আউটার ওয়ার্ল্ডের কেউ কি তাদের এই এডভান্সড টেকনোলজি শিখিয়ে দিয়েছিল যেটার মাধ্যমে তারা এত দ্রুত পিরামিড নির্মান করতে পেরেছিল?
.
ফারাও খুফুর পিরামিড বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় যে, মিশরীয়রা গণিত আর জ্যোতিষবিদ্যায় কতটা পারদর্শী ছিল। তবে, তাদের এই অত্যাশ্চর্য জ্ঞানই আবার অনেকগুলো রহস্যের দ্বার খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে যে ব্যাপারগুলো বের করেন তা আসলেই চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মত তথ্য।
.
১. দ্য গ্রেট পিরামিড অফ গিজা অর্থাৎ ফারাও খুফুর পিরামিডটার পরিসীমাকে যদি এর উচ্চতার দ্বিগুন পরিমাপ দিয়ে ভাগ করেন তাহলে আপনি যে নাম্বারটা পাবেন সেটা হলো ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৮৯৭৯৩ অর্থাৎ পাই এর এক্সেক্টলি ১৫ ডিজিট পর্যন্ত নাম্বার। যদিও পাই এর আবিষ্কার হয়েছে এর অনেক পরেই।
.
২. বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পান যে, প্রায় ৪৫০০ বছর আগের এই পিরামিড নির্মানে ব্যবহৃত হয়েছিল পীথাগোরাসের অতিভুজ নির্ণয়ের বিখ্যাত সূত্রটি। অথচ পীথাগোরাসের জন্মই হয়েছিল ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অর্থাৎ দ্য গ্রেট পিরামিড নির্মানেরও প্রায় দুইহাজার বছর পর!
.
৩. আরো আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, দ্য গ্রেট পিরামিডের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের ভগ্নাংশ নিরক্ষরেখায় মিলিত হওয়া অক্ষরেখা এবং দ্রাঘিমারেখার ভগ্নাংশের সাথে হুবহু মিলে যায়।
.
৪. মজার বিষয় হল, আপনি যদি ফারাও খুফুর পিরামিডটাকে একটা ত্রিভুজ হিসেবে এবং পৃথিবীর সমান হিসেবে কল্পনা করেন, তাহলে দেখবেন সেটার তিনটা শীর্ষবিন্দুই পৃথিবীর পরিধিকে ছেদ করে। অনেকটা আমরা ক্লাস নাইন-টেনে যে পরিবৃত্ত পড়েছিলাম, সেটার মতোই ব্যাপারস্যাপার। More interesting fact is, The Great Pyramid is also perfectly aligned with North Pole! অর্থাৎ, একে আপনি উত্তর গোলার্ধের প্রমাণ মডেল হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
.
৫. রিসেন্টলি স্যাটেলাইট টেকনোলজি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আরো একটা অদ্ভুত মিল লক্ষ্য করেছেন। সেটা হল, আপনি যদি পিরামিডের শীর্ষবিন্দুটাকে কোঅর্ডিনেট হিসেবে ধরে নেন তাহলে পাবেন ২৯.৯৭৯২৪৫৮° উত্তর। আর আলোর গতিবেগও এক্সেক্টলি সেইম ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার পার সেকেন্ড! UNBELIEVABLE stuff, isn't it?
.
৬. এনসাইন্ট অ্যাস্ট্রোনট থিওরিস্টদের মতে, গিজায় অবস্থিত পিরামিড তিনটার এলাইনমেন্ট অরিয়ন বেল্টের তিনটা নক্ষত্রের এলাইনমেন্টের সাথে হুবহু মিলে যায়। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে আরো দেখতে পান, এই ব্যাপারটা যে শুধুমাত্র মিশরের গিজার পিরামিডগুলোর মধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে তা না। মেক্সিকোর টেওটিহুয়াকানে অবস্থিত তিনটা পিরামিডও আশ্চর্যজনকভাবে অরিয়ন বেল্টের ওই তিনটা নক্ষত্ররাজির এলাইনমেন্টের সাথে মিলে যায়!
প্রশ্ন হচ্ছে, পুরোপুরি দুইটা ভিন্ন সভ্যতায় নির্মিত পিরামিডে কিভাবে একই প্যার্টান অনুসরণ করা যেতে পারে! আবার, উইথআউট টেলিস্কোপ, হাবলস্কোপ; তারা কিভাবে অরিয়ন বেল্টের এই নক্ষত্রগুলোর সন্ধান পেয়েছিল?
.
অনেকের মতেই অবশ্য মিশরীয় আর মায়ানরা জ্যোতিষবিদ্যায় ছিল মারাত্মক পারদর্শী। সেদিক থেকে ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যেতেই পারে।
কিন্তু, কেনই বা দুইটা ভিন্ন সভ্যতায় একই প্যার্টান অনুসরণ করা হয়েছে?
উত্তরে অনেক এনসাইন্ট অ্যাস্ট্রোনট থিওরিস্ট বলেন যে, হয়তো সেই স্থানের কোনো এক্সট্রাটেরেস্টিয়ালই তাদের এসব নির্মানের নির্দেশ দিয়েছিল!
.
মিশরীয়দের অনেকগুলো নির্দশনে অবশ্য এমন কিছু ফিগার পাওয়া গেছে যেগুলো মোটেও মানুষের আকৃতি বলে মনে হয় না। অনেক থিওরিস্টদের মতে, এসব ফিগার মূলত এলিয়নদেরই ফিগার(!)
.
এছাড়াও মিশরীয়দের অনেকগুলো খোদাই করা চিত্রে বর্তমানে ব্যবহৃত লাইট বাল্ব, জেনারেটর, হেলিকপ্টার ইত্যাদির নমুনা পাওয়া যায়। প্রশ্ন হল, কিভাবে তারা ফিউচার সম্পর্কে এতটা ধারণা লাভ করেছিল? নাকি এই উন্নত টেকনোলজিগুলো তারা ব্যবহার করত? নাকি আউটার স্পেসের কেউ এসব টেকনোলজি সেইসময়ে তাদের কাছে নিয়ে এসেছিল?
অনেক থিওরিস্টরাই আবার মত দেন, তারা যে গডে বিশ্বাস করত সেগুলো আসলে কাল্পনিক কোনো ফিগার না। বরং, সেগুলোই এক্সট্রাটেরেস্টিয়াল বা এলিয়েন এবং প্রাচীন মিশরীয়রা ছিল মূলত তাদের ভৃত্য!
.
ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার বলে পর্বটা শেষ করি:
১৯৪০ সালের দিকে পিটার গ্রুভস নামে একজন ব্রিটিশ এয়ারফোর্স পাইলট একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন যে, ফারাও খুফুর পিরামিডডা মিশরের অন্যান্য পিরামিডগুলোর মত ফোর-সাইডেড না। বরং, এর ৮টা সাইড রয়েছে(!) এই বিষয়টা লক্ষ করা যায় শুধুমাত্র ২১শে মার্চ আর ২২শে সেপ্টেম্বর যখন সূর্য বিষুবরেখার উপর লম্বালম্বিভাবে কিরণ দেয়। আরো মজার বিষয় হলো, এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র ওই দুইদিনই যখন সূর্য উদয় হয় আর ডোবে তখনই লক্ষ করা যায়!
.
তাহলে কি এলিয়েনরাই এই বিশাল মনুমেন্টগুলো বানিয়েছিল পৃথিবীর মানুষদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য? নাকি প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা বর্তমান সভ্যতার মানুষদের চাইতেও উন্নত ছিল?
পরবর্তী পর্বগুলোতে আমরা এসবের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব।

তথ্যসূত্র:
ওয়েবসাইটস: Wikipedia, Mind Unleashed, History
ইউটিউব চ্যানেল: History TV, Buzzfeed Multiplayer

লেখা:- ফাহাদ বিন জাহেদ
অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
 

Delivered by FeedBurner

a