সাল ১৪২৯, ২৮ এপ্রিল।
বিশাল মাঠে জোয়ান তার সৈন্যদের কয়েকটি দলে ভাগ করলো দুর্বল আর সাহসী সেনা মিলিয়ে। প্রত্যেক দলের একজন করে সেনা কমান্ডার নির্বাচন করে দিলো সে। তারপর শিখিয়ে দিলো কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে। প্রথমেই ইংরেজদের শক্তিশালী খুঁটিগুলো ভেঙে দিতে হবে, যাতে ওরা যুদ্ধে টিকতে না পারে। বিশেষ করে ওদের তীরন্দাজ, যারা উপর থেকে তীর ছুড়ে সৈন্যদের বেহাল দশা করে তুলে। ওদের তিরন্দাজদের প্রথমে টার্গেট করতে হবে। জোয়ান নিজের সৈন্য থেকে বেশ কজন তিরন্দাজ বাছাই করলো ওদের তীরন্দাজদের মোকাবেলা করার জন্য। তারপর তীরন্দাজদের কমান্ডার নির্বাচন করে দিলো গিলস দ্য রেইসকে। রেইস নিজেও একজন শক্তিশালী তিরন্দাজ। জোয়ান প্রত্যেক দলের কমান্ডারদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে লাগলো। কে সৈন্যদের নিয়ে কোন অবস্থানে থাকবে। কোন দল প্রথমে অরলিন্স নগরীতে প্রবেশ করবে। জোয়ান নিজে কিছু সৈন্য নিয়ে সব সৈন্যদের তদারকি করবে, আর প্রয়োজন হলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সব পরিকল্পনা শেষ হলে ওরা ভাগ হয়ে এগিয়ে চললো অরলিন্স নগরীর দিকে।
বিশাল মাঠে জোয়ান তার সৈন্যদের কয়েকটি দলে ভাগ করলো দুর্বল আর সাহসী সেনা মিলিয়ে। প্রত্যেক দলের একজন করে সেনা কমান্ডার নির্বাচন করে দিলো সে। তারপর শিখিয়ে দিলো কীভাবে যুদ্ধ করতে হবে। প্রথমেই ইংরেজদের শক্তিশালী খুঁটিগুলো ভেঙে দিতে হবে, যাতে ওরা যুদ্ধে টিকতে না পারে। বিশেষ করে ওদের তীরন্দাজ, যারা উপর থেকে তীর ছুড়ে সৈন্যদের বেহাল দশা করে তুলে। ওদের তিরন্দাজদের প্রথমে টার্গেট করতে হবে। জোয়ান নিজের সৈন্য থেকে বেশ কজন তিরন্দাজ বাছাই করলো ওদের তীরন্দাজদের মোকাবেলা করার জন্য। তারপর তীরন্দাজদের কমান্ডার নির্বাচন করে দিলো গিলস দ্য রেইসকে। রেইস নিজেও একজন শক্তিশালী তিরন্দাজ। জোয়ান প্রত্যেক দলের কমান্ডারদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে লাগলো। কে সৈন্যদের নিয়ে কোন অবস্থানে থাকবে। কোন দল প্রথমে অরলিন্স নগরীতে প্রবেশ করবে। জোয়ান নিজে কিছু সৈন্য নিয়ে সব সৈন্যদের তদারকি করবে, আর প্রয়োজন হলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সব পরিকল্পনা শেষ হলে ওরা ভাগ হয়ে এগিয়ে চললো অরলিন্স নগরীর দিকে।
ইতোমধ্যে অরলিন্স নগরীতে বসবাসরত ফ্রান্স অধিবাসীরা জেনে গেছে জোয়ানের ব্যাপারে। তারা খুশিতে আত্মহারা। এবার হয়তো মিলতে পারে মুক্তি। জোয়ান হবে তাদের রক্ষাকর্তা। যেই মুহূর্তে ওরা জোয়ানের প্রতীক্ষা করছিল, সেই মুহূর্তে ইংরেজ সৈন্যরা ঘোড়া নিয়ে এসে ওদের ওপর অত্যাচার শুরু করলো। ওদের আগমনে ফ্রেঞ্চবাসী নিজনিজ কুটিরে আত্মগোপন করতে লাগলো। যারা পালাতে পারেনি তাদেরকে ধরে গলায় তরবারি চালাতে লাগলো ইংরেজ সেনারা। ঘোড়ায় বসে শয়তানি হাসি হেসে তামাশা দেখতে লাগলো তাদের কমান্ডার জন তালবুত। হাসতে হাসতে চিৎকার করে ওঠলো তালবুত,
-মুক্তির যে স্বপ্ন তোমরা দেখছো, তা কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে। কেউ পারবে না তোমাদের মুক্তি দিতে।' বলতে বলতে অট্টহাসি দিয়ে ওঠলো তালবুত। তারপর সৈন্যদের নির্দেশ দিলো,
-সৈন্যরা, তোমরা যেখানে ফ্রেঞ্চবাসীকে পাবে, হত্যা করবে। অরলিন্স নগরীতে আর যেন কোনো ফ্রেঞ্চবাসীকে না দেখা যায়।' বলতে বলতে নগরীর গেইটের দিকে ঘোড়া ছুটালো তালবুত। গেইটের পাশেও ইংরেজদের অনেক সৈন্য অবস্থান করছিল যুদ্ধবেশে। ওখানেই উঁচু বাঁশ দিয়ে ঘাঁটি বানানো হয়েছে ইংরেজ তীরন্দাজদের জন্য। উপর থেকে তিরন্দাজরা লক্ষ করে নগরীর দিকে কারা আসছে আর যাচ্ছে। কোনো আক্রমণকারী দেখলেই ওরা তির ছুড়ে।
কমান্ডার তালবুত গেইটের পাশে এসে থামলো। নিজের সৈন্যদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো তারপর। উপর থেকে তখন একজন তিরন্দাজ চিৎকার করে বললো,
-ফ্রেঞ্চদের একটা দল যুদ্ধ বেশে আসছে। সৈন্যরা প্রস্তুত হও।'
চিৎকার শুনে নিচের সৈন্যরা তরবারি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেল। আর উপরের তিরন্দাজরা ফ্রেঞ্চ সৈন্যদের দিকে তির তাক করে রইলো। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একের পর এক তির এসে আঘাত করলো ইংরেজ তিরন্দাজদের উপর। ঘাঁটি থেকে ছিটকে পড়তে লাগলো ওরা নিচে। নিচ থেকে কমান্ডার তালবুত চিৎকার করে ওঠলো,
-কারা তির ছুড়ছে এভাবে আমাদের সৈন্যদের উপর? ফ্রেঞ্চ সৈন্যরা তো এখনও কাছেই আসেনি।'
তখন পাশের একটা পাহাড় থেকে বের হয়ে এলো ফ্রেঞ্চদের তিরন্দাজ দলটা। ওরা ওখানের জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিল অনেকক্ষণ ধরে। নিজেদের দ্বিতীয় দলটা কাছাকাছি আসতেই ওরা ওখান থেকে তির ছুড়তে থাকে ইংরেজ তিরন্দাজদের দিকে।
ইংরেজ সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে হঠাৎ। ইতোমধ্যে ওদের নিজেদের তিরন্দাজ শক্তিটা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে ফ্রেঞ্চরা। ফ্রেঞ্চদের দ্বিতীয় দলটাও এসে যোগ হলো প্রথম দলের সাথে। তারপর একসাথে তরবারি যুদ্ধে মেতে ওঠলো ইংরেজদের বিপক্ষে। কমান্ডার তালবুত ঘোড়া থেকে নেমে তরবারি বের করলো। তারপর এতোদিনের শক্তি ধরে রাখতে প্রাণপণে যুদ্ধ করতে লাগলো। নিজের সৈন্যদের উদ্দেশ্যে সে চিৎকার করে ওঠলো,
-সৈন্যরা, যে অরলিন্স নগরীতে এতদিন আমরা রাজত্ব করে এসেছি, তা কিছুতেই আমাদের অধীনের বাইরে যেতে দেবো না।'
নিজেদের কমান্ডারের আদেশ পেয়ে ইংরেজ সৈন্যদের শক্তি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে লাগলো ফ্রেঞ্চদের বিপক্ষে। সেই মুহূর্তে আরও একটা দল আসতে লাগলো ফ্রেঞ্চদের। দলটার সামনে সাদা ঘোড়াতে চড়ে সাদা যুদ্ধপোশাক পরে যে যোদ্ধাটা এগিয়ে আসছে তার দিকে সবার চোখ আটকে গেল।
-কে এই সাহসী যোদ্ধা?' নিজে নিজে ফিসফিস করলো কমান্ডার তালবুত। এমন সাহসী যোদ্ধা নিজের দলে আছে কি না সন্দেহ। পঞ্চক্রুশ তরবারি হাতে ঘোড়ার পিঠে দাঁড়িয়ে আছে অল্পবয়সী যোদ্ধাটা। আর ঘোড়াটা বিদ্যুৎ বেগে ছুটে আসছে। কতোটা প্রশিক্ষিত সেনা হলে এভাবে ছুটন্ত ঘোড়ার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? কমান্ডার তালবুত কিছুতেই চোখ সরাতে পারলো না ওদিক থেকে। হঠাৎ ঐ যোদ্ধাটা ছুটন্ত ঘোড়া থেকে শূন্যে লাফ দিলো। শূন্যে ভাসতে ভাসতে ধনুক থেকে তির ছুড়লো তালবুতের দিকে। তালবুত কিছুটা সরে গেল। তীরটা তার নাকের ডগা দিয়ে ছুটে গিয়ে লাগলো তার এক সৈন্যের বুকে। আর্তনাদ করে ওঠলো সৈন্যটা। তখনই নিজের হুশে ফিরে এলো কমান্ডার তালবুত। হুশ ফিরে পেয়েই তরবারি চালাতে লাগলো সে। আর ওদিকে ঐ যোদ্ধাটা আক্রমণাত্মক হামলা চালাতে লাগলো তার সৈন্যদের উপর। সামনে এসে দাঁড়ালো যোদ্ধাটা। তরবারি চালাতে চালাতে তালবুত প্রশ্ন করলো,
-কে তুমি?'
-জোয়ান অব আর্ক। তোদের কাছ থেকে ফ্রান্সের স্বাধীনতা ফিরিয়ে নিতে এসেছি।' বলেই ক্ষিপ্রবেগে তরবারি চালালো জোয়ান তালবুতের ডান বাহুতে। সাথে সাথে কেটে গেল তালবুতের বাহু। হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল তার। তাকে রক্ষা করতে তার কয়েকজন সৈন্য এগিয়ে এলো। তালবুত পিছু হটে নিজের ঘোড়ায় উঠে বসলো। তারপর ঘোড়া ছুটিয়ে পালিয়ে গেল।
জোয়ান তার তরবারি থামালো না। এতদিনের আক্রোশ যেন মুহূর্তেই মিটিয়ে নেবে সে ইংরেজদের মেরে। সামনে যে ইংরেজকে পাচ্ছে তাকেই শেষ করে দিচ্ছে। যে রক্ষণশীলভাবে সে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, সেভাবে সে যুদ্ধ করলো না। নিজের মতো করে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ চালাতে লাগলো সে। অবশেষে ইংরেজরা টিকতে না পেরে পালিয়ে গেল তাদের কমান্ডারের মতো।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তখন। জোয়ান তার সৈন্যদের একত্র করলো। সৈন্যরা নিজেদের তরবারি কোষবদ্ধ করতে করতে হাঁপাতে লাগলো। তবে মুখে বিজয়ের হাসি লেগে আছে তাদের। জোয়ান তাদের উদ্দেশ্যে বললো,
-এটা কেবল শুরু। আমরা এখনও অরলিন্স নগরী বিজয় করতে পারিনি। পুরো অরলিন্স নগরী জয় করতে আমাদের আরও যুদ্ধ করতে হবে। আজ আমরা আমাদের কিছু সৈন্য হারিয়েছি, সামনে হয়তো আরও অনেককে হারাবো। দেহে এতটুকু প্রাণ থাকতে আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাবো আমাদের অধিকার ফিরিয়ে নিতে।'
জোয়ান থামতেই সৈন্যরা একসাথে গর্জে ওঠলো,
-জয় হোক, জোয়ান অব আর্কের জয় হোক।' গলার আওয়াজেই বুঝা গেল সৈন্যরা বেশ খুশি। এই প্রথম জোয়ানের হাত ধরে ওরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতে যাচ্ছে।
জোয়ান আবারও বলে ওঠলো,
-আমরা আজ এখানেই রাত কাটাবো। আমাদের তিরন্দাজরা ওদের ঘাঁটি দখল করবে। আর বাকিরা এখানেই তাবু গাড়বো।' বলেই জোয়ান তার সৈন্যদের তাবু গাড়ার নির্দেশ দিলো।
-মুক্তির যে স্বপ্ন তোমরা দেখছো, তা কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে। কেউ পারবে না তোমাদের মুক্তি দিতে।' বলতে বলতে অট্টহাসি দিয়ে ওঠলো তালবুত। তারপর সৈন্যদের নির্দেশ দিলো,
-সৈন্যরা, তোমরা যেখানে ফ্রেঞ্চবাসীকে পাবে, হত্যা করবে। অরলিন্স নগরীতে আর যেন কোনো ফ্রেঞ্চবাসীকে না দেখা যায়।' বলতে বলতে নগরীর গেইটের দিকে ঘোড়া ছুটালো তালবুত। গেইটের পাশেও ইংরেজদের অনেক সৈন্য অবস্থান করছিল যুদ্ধবেশে। ওখানেই উঁচু বাঁশ দিয়ে ঘাঁটি বানানো হয়েছে ইংরেজ তীরন্দাজদের জন্য। উপর থেকে তিরন্দাজরা লক্ষ করে নগরীর দিকে কারা আসছে আর যাচ্ছে। কোনো আক্রমণকারী দেখলেই ওরা তির ছুড়ে।
কমান্ডার তালবুত গেইটের পাশে এসে থামলো। নিজের সৈন্যদের পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো তারপর। উপর থেকে তখন একজন তিরন্দাজ চিৎকার করে বললো,
-ফ্রেঞ্চদের একটা দল যুদ্ধ বেশে আসছে। সৈন্যরা প্রস্তুত হও।'
চিৎকার শুনে নিচের সৈন্যরা তরবারি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেল। আর উপরের তিরন্দাজরা ফ্রেঞ্চ সৈন্যদের দিকে তির তাক করে রইলো। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একের পর এক তির এসে আঘাত করলো ইংরেজ তিরন্দাজদের উপর। ঘাঁটি থেকে ছিটকে পড়তে লাগলো ওরা নিচে। নিচ থেকে কমান্ডার তালবুত চিৎকার করে ওঠলো,
-কারা তির ছুড়ছে এভাবে আমাদের সৈন্যদের উপর? ফ্রেঞ্চ সৈন্যরা তো এখনও কাছেই আসেনি।'
তখন পাশের একটা পাহাড় থেকে বের হয়ে এলো ফ্রেঞ্চদের তিরন্দাজ দলটা। ওরা ওখানের জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিল অনেকক্ষণ ধরে। নিজেদের দ্বিতীয় দলটা কাছাকাছি আসতেই ওরা ওখান থেকে তির ছুড়তে থাকে ইংরেজ তিরন্দাজদের দিকে।
ইংরেজ সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে হঠাৎ। ইতোমধ্যে ওদের নিজেদের তিরন্দাজ শক্তিটা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে ফ্রেঞ্চরা। ফ্রেঞ্চদের দ্বিতীয় দলটাও এসে যোগ হলো প্রথম দলের সাথে। তারপর একসাথে তরবারি যুদ্ধে মেতে ওঠলো ইংরেজদের বিপক্ষে। কমান্ডার তালবুত ঘোড়া থেকে নেমে তরবারি বের করলো। তারপর এতোদিনের শক্তি ধরে রাখতে প্রাণপণে যুদ্ধ করতে লাগলো। নিজের সৈন্যদের উদ্দেশ্যে সে চিৎকার করে ওঠলো,
-সৈন্যরা, যে অরলিন্স নগরীতে এতদিন আমরা রাজত্ব করে এসেছি, তা কিছুতেই আমাদের অধীনের বাইরে যেতে দেবো না।'
নিজেদের কমান্ডারের আদেশ পেয়ে ইংরেজ সৈন্যদের শক্তি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে লাগলো ফ্রেঞ্চদের বিপক্ষে। সেই মুহূর্তে আরও একটা দল আসতে লাগলো ফ্রেঞ্চদের। দলটার সামনে সাদা ঘোড়াতে চড়ে সাদা যুদ্ধপোশাক পরে যে যোদ্ধাটা এগিয়ে আসছে তার দিকে সবার চোখ আটকে গেল।
-কে এই সাহসী যোদ্ধা?' নিজে নিজে ফিসফিস করলো কমান্ডার তালবুত। এমন সাহসী যোদ্ধা নিজের দলে আছে কি না সন্দেহ। পঞ্চক্রুশ তরবারি হাতে ঘোড়ার পিঠে দাঁড়িয়ে আছে অল্পবয়সী যোদ্ধাটা। আর ঘোড়াটা বিদ্যুৎ বেগে ছুটে আসছে। কতোটা প্রশিক্ষিত সেনা হলে এভাবে ছুটন্ত ঘোড়ার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? কমান্ডার তালবুত কিছুতেই চোখ সরাতে পারলো না ওদিক থেকে। হঠাৎ ঐ যোদ্ধাটা ছুটন্ত ঘোড়া থেকে শূন্যে লাফ দিলো। শূন্যে ভাসতে ভাসতে ধনুক থেকে তির ছুড়লো তালবুতের দিকে। তালবুত কিছুটা সরে গেল। তীরটা তার নাকের ডগা দিয়ে ছুটে গিয়ে লাগলো তার এক সৈন্যের বুকে। আর্তনাদ করে ওঠলো সৈন্যটা। তখনই নিজের হুশে ফিরে এলো কমান্ডার তালবুত। হুশ ফিরে পেয়েই তরবারি চালাতে লাগলো সে। আর ওদিকে ঐ যোদ্ধাটা আক্রমণাত্মক হামলা চালাতে লাগলো তার সৈন্যদের উপর। সামনে এসে দাঁড়ালো যোদ্ধাটা। তরবারি চালাতে চালাতে তালবুত প্রশ্ন করলো,
-কে তুমি?'
-জোয়ান অব আর্ক। তোদের কাছ থেকে ফ্রান্সের স্বাধীনতা ফিরিয়ে নিতে এসেছি।' বলেই ক্ষিপ্রবেগে তরবারি চালালো জোয়ান তালবুতের ডান বাহুতে। সাথে সাথে কেটে গেল তালবুতের বাহু। হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল তার। তাকে রক্ষা করতে তার কয়েকজন সৈন্য এগিয়ে এলো। তালবুত পিছু হটে নিজের ঘোড়ায় উঠে বসলো। তারপর ঘোড়া ছুটিয়ে পালিয়ে গেল।
জোয়ান তার তরবারি থামালো না। এতদিনের আক্রোশ যেন মুহূর্তেই মিটিয়ে নেবে সে ইংরেজদের মেরে। সামনে যে ইংরেজকে পাচ্ছে তাকেই শেষ করে দিচ্ছে। যে রক্ষণশীলভাবে সে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, সেভাবে সে যুদ্ধ করলো না। নিজের মতো করে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ চালাতে লাগলো সে। অবশেষে ইংরেজরা টিকতে না পেরে পালিয়ে গেল তাদের কমান্ডারের মতো।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তখন। জোয়ান তার সৈন্যদের একত্র করলো। সৈন্যরা নিজেদের তরবারি কোষবদ্ধ করতে করতে হাঁপাতে লাগলো। তবে মুখে বিজয়ের হাসি লেগে আছে তাদের। জোয়ান তাদের উদ্দেশ্যে বললো,
-এটা কেবল শুরু। আমরা এখনও অরলিন্স নগরী বিজয় করতে পারিনি। পুরো অরলিন্স নগরী জয় করতে আমাদের আরও যুদ্ধ করতে হবে। আজ আমরা আমাদের কিছু সৈন্য হারিয়েছি, সামনে হয়তো আরও অনেককে হারাবো। দেহে এতটুকু প্রাণ থাকতে আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাবো আমাদের অধিকার ফিরিয়ে নিতে।'
জোয়ান থামতেই সৈন্যরা একসাথে গর্জে ওঠলো,
-জয় হোক, জোয়ান অব আর্কের জয় হোক।' গলার আওয়াজেই বুঝা গেল সৈন্যরা বেশ খুশি। এই প্রথম জোয়ানের হাত ধরে ওরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতে যাচ্ছে।
জোয়ান আবারও বলে ওঠলো,
-আমরা আজ এখানেই রাত কাটাবো। আমাদের তিরন্দাজরা ওদের ঘাঁটি দখল করবে। আর বাকিরা এখানেই তাবু গাড়বো।' বলেই জোয়ান তার সৈন্যদের তাবু গাড়ার নির্দেশ দিলো।
পরেরদিন অরলিন্সবাসীর অনেকেই ছুটে এলো সাহসী জোয়ানকে এক নজর দেখতে। আড়াল থেকেই যে যার মতো দেখতে লাগলো জোয়ানকে, আর আশীর্বাদ করছিল যেন যুদ্ধে সফল হতে পারে। জোয়ান তখন তার সৈন্যদের একটা দলকে নগরীর দক্ষিণে পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল কমান্ডার দুনুইসের নেতৃত্বে, আরেকটা দলকে উত্তরে কমান্ডার ব্রুসের নেতৃত্বে। আর নিজে সে একটা দল নিয়ে নগরীর ভেতরে প্রবেশ করবে। তিরন্দাজরাও ভাগ হয়ে যাবে প্রত্যেকটা দলের সাথে। বাকি সেনারা থাকবে নগরীর প্রবেশমুখে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সৈন্যরা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। জোয়ান সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়লো নগরীর অভ্যন্তরে। ঘোড়া নিয়ে ছুটলো ওরা সামনে। যেতে যেতে ইংরেজদের আরেকটা ঘাঁটি সামনে পড়লো। জোয়ান নিজ সৈন্যদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওদের উপর। জোয়ানকে ক্ষিপ্র হয়ে তরবারি চালাতে দেখে তার সৈন্যদের সাহসও বেড়ে গেল হঠাৎ। জীবনের পরোয়া না করে ওরা তরবারি চালাতে লাগলো। একটা ইংরেজও যেন জীবন নিয়ে পালাতে না পারে সেভাবে যুদ্ধ করতে লাগলো ওরা। একটু করে যখন বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে ওরা, এবার পুরোটাই নেবে। তরবারির আঘাতে এক এক করে শুয়ে দিতে লাগলো ওরা ইংরেজদের।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সৈন্যরা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। জোয়ান সৈন্য নিয়ে ঢুকে পড়লো নগরীর অভ্যন্তরে। ঘোড়া নিয়ে ছুটলো ওরা সামনে। যেতে যেতে ইংরেজদের আরেকটা ঘাঁটি সামনে পড়লো। জোয়ান নিজ সৈন্যদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওদের উপর। জোয়ানকে ক্ষিপ্র হয়ে তরবারি চালাতে দেখে তার সৈন্যদের সাহসও বেড়ে গেল হঠাৎ। জীবনের পরোয়া না করে ওরা তরবারি চালাতে লাগলো। একটা ইংরেজও যেন জীবন নিয়ে পালাতে না পারে সেভাবে যুদ্ধ করতে লাগলো ওরা। একটু করে যখন বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে ওরা, এবার পুরোটাই নেবে। তরবারির আঘাতে এক এক করে শুয়ে দিতে লাগলো ওরা ইংরেজদের।
এভাবে যুদ্ধ করতে করতে নবম দিনে ওরা পুরো অরলিন্স নগরী বিজয় করে ফেললো। ওদের নিজেদের সৈন্যরাও কিছুটা প্রাণ দিয়েছে ইংরেজদের হাতে। তবে ইংরেজদের বেশিরভাগ সৈন্য নির্মমভাবে মরেছে তাদের হাতে। জোয়ান যখন তরবারি ধরে, ইংরেজদের তখন আর মানুষ হিসেবে দেখে না সে। সামনের ইংরেজ সেনারা যেন তার চোখে পিঁপড়া মনে হয়। পিঁপড়ার মতো মারতে থাকে সে ইংরেজদের। শেষে হেরে গেছে বুঝতে পেরে কমান্ডার তালবুত সামান্য কিছু সৈন্য নিয়ে অরলিন্স নগরী ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর পুরো নগরীতে বিজয়ের উল্লাস চলতে থাকে। নগরীর বুকে উড়তে থাকে ফ্রান্সের পতাকা। এ যেন পতাকা নয়, বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। অরলিন্সের অধিবাসীরাও আজ মুক্ত। এই নগরীতে চলবে না আর ইংরেজদের আধিপত্য, চলবে না ইংরেজদের অত্যাচার। নগরী বিজয়ের খবর পাঠানো হয় রাজা চার্লসের কাছে। আর জোয়ান নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে আরেকটা বিজয়ের। লে তুরেল দুর্গ ইংরেজদের শক্তিশালী একটা ঘাঁটি। কমান্ডার তালবুতও হয়তো ঐ ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এবার জোয়ান পরিকল্পনা করতে লাগলো দুর্গটি জয় করার। সৈন্যদের নতুন করে প্রস্তুত করতে লাগলো সে যুদ্ধের জন্য।
চলবে...
লেখা: ShoheL Rana