১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স মাত্র ১৪ বছর। পরে তারামন বিবি অস্ত্র চালনা শিখেন। একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেকবার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে, তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান।
যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীরপ্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেয়।
তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছর এই দিনে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি তার স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন। আর রেখে গেছেন নিজের রক্ত ও শ্রমে লড়াই করে অর্জিত এই দেশ, দেশের স্বাধীনতা। 'কীর্তিমানের মৃত্যু নেই', তিনি জীবিত না থেকেও নারী জাগরণের প্রতীক হয়ে চিরদিন বেঁচে রইবেন। তার মৃত্যুতে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সবাই শোক জানিয়েছে, তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে, সামরিক কায়দায় রাইফেলের ফাঁকা গুলি করে তাঁর বীরত্বকে সশ্রদ্ধ সালাম জানানো হয়েছে, কাফনের কাপড়ের সাথে দেশের পতাকা দিয়ে তাঁর মরদেহকে ঢেকে রাখা হয়েছে- এমনটা ক'জনার ভাগ্যে জুটবে? দেশের জন্যে কাজ করলে হয়তো মৃত্যুর পর আমাদের ভাগ্যেও এমন সম্মান আসবে। তারামন বিবিকে আল্লাহ বেহেস্তবাসী করুণ। তার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা...
Writer:- Rumel M S Pir
Image Credit:- Techshohor