সম্রাট শাহজাহানের প্রথম পুত্র দারাশুকো একবার এক সাধারণ হিন্দু নর্তকী মেয়ে রানা দিলের প্রেমে পড়ে। বিয়েও করতে চায়। কিন্তু শাহজাহান এ বিয়েতে মত দেয়নি। রাজ মর্যাদা এর প্রধান কারণ। অপরদিকে দারাশুকোর প্রধান স্ত্রী ছিল নূরমহল তাকেও অপমান করা হবে এ বিয়ে হলে। কিন্তু দারাশুকো ছিল নাছোড়বান্দা। সে বিয়ে করবেই। এক পর্যায়ে সে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ছেলের এমন দুরবস্থা দেখে শাহজাহান বাধ্য হন বিয়ে দিতে।
এই রানা দিলের উল্লেখ্য করার মতো কোনো পরিবারে জন্ম হয়নি।সেই হিসাবে কোনো দিক দিয়েই সে রাজ পরিবারের সাথে মিলে না। কিন্তু রানা দিল ছিল স্ফটিকস্বচ্ছ। সেও প্রচুর ভালবাসাত দারাশুকোকে। স্বামীর জীবনের কঠিন মূহুর্তে তাকে ত্যাগ করেনি। নিজের ভালবাসার নির্দেশনা দিয়ে সে হয়ে আছে ইতিহাসে এক অন্যান্য চরিত্র।
ক্ষমতার লড়াইয়ে এক পর্যায়ে হেরে যায় দারাশুকো। ছোটো ভাই আওরঙ্গজেব তার শিরশ্ছেদ করে এবং ক্ষমতার সাথে সাথে দারাশুকোর স্ত্রীদের শাসন করার ক্ষমতাও পেয়ে যায়। রানা দিলকে নিয়ে আসার জন্য দূত পাঠান আওরঙ্গজেব। রানা দিল দূতকে প্রশ্ন করলেন কেন তাকে নিয়ে যেতে বলেছেন আওরাঙ্গজেব। দূত তাকে জবাব দিল নতুন সম্রাট তাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে চায় এবং আইন ও দেখায় যে মৃত বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে ছোট ভাইয়ের নিজের স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার হক আছে। কিন্তু রানা দিল দূতকে সাফ জানিয়ে দেয় আওরঙ্গজেবের স্ত্রী হবার তার কোনো ইচ্ছে নেই।
দূতের কাছে সব শুনে আওরঙ্গজেব খুব অবাক হয়। অবাক হবার ই কথা। সম্রাটের স্ত্রী হবার মতো এমন লোভনীয় প্রস্তাব কেউ প্রত্যাখ্যান করে! সম্রাট মূলত রানা দিলের চুলকেই পছন্দ করতো। তিনি দূতকে বললেন রানা দিলকে গিয়ে এই কথা জানিয়ে তাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসতে। দূত রানাকে গিয়ে সব জানালেন। কিন্তু রানা দিলের সোজা কথা তিনি আওরঙ্গজেদের অন্দরমহলে যাবে না। এদিকে সম্রাটের আদেশ অন্যদিকে রানাকে রাজী করানো যাচ্ছিলো না। দূত পরলেন মহা বিপদে। তাদের মুখের অবস্থা দেখে রানার মায়া হলো। তিনি বললেন ঠিক আছে আপনারা অপেক্ষা করুন। আপনার সম্রাটের জন্য আমি উপহার নিয়ে আসছি। রানা দিল ভিতরে গিয়ে তার সমস্ত চুল কেটে নিয়ে এসে দূতের হাতে দিয়ে বললেন আপনার সম্রাটের প্রিয় জিনিস তাকে আমি উপহার দিলাম। তাকে বলবেন তিনি যেন আমাকে আর বিরক্ত না করে।
রানার এই অবাক করা কান্ড দেখ দূত ঘাবড়ে গেলো। সেই সাথে চুল নিয়ে গিয়ে সম্রাটের হাতে দেওয়া টা সম্রাটের জন্য অপমানজনককর। দূত সম্রাট আওরঙ্গজেবকে ঘটনা সব খুলে বললে সম্রাট এবার তার কথা পাল্টে বললেন সে রানার রূপের প্রেমে পড়েছে। আবার দূত গিয়ে রানার কাছে হাজির হলো। তারা রানাকে জানালো সম্রাট তার রূপের প্রেমে পড়েছে। তাকে রানীর মর্যাদা দিয়ে দরবারে রাখতে চায়। কিন্তু রানা নিজের স্বামীর হত্যাকারীর সাথে সংসার করতে চায় না। তাই সে বললো ঠিক আছে আপনারা অপেক্ষা করুন আমি ভিতর থেকে আসছি। এবার রানা দিল একটা চুরি দিয়ে নিজের সমস্ত চেহারা ক্ষতবিক্ষত কর ফেললেন। মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো রক্তের ধারা। সেই রক্ত একটা কাপড়ে ভিজিয়ে নিয়ে দূতকে গিয়ে বললেন এটা সম্রাট কে দিয়ে বলবেন এখন রানা তার রূপকে ধ্বংস করে ফেলেছে । সে এখন তার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।
এবার সমস্ত ঘটনা শুনে আওরঙ্গজেব খুব হতভম্ব হয়ে গেলেন। স্বামীর প্রতি স্ত্রী এই ভালবাসা দেখে তার সমস্ত কামনা বাসনা দূরে হয়ে তার বদলে এলো ভক্তি ও শ্রদ্ধা। সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি রানা দিলকে কখনো আর বিরক্ত করবেন না। তাকে তার মতো বাঁচতে দিবেন।
রানা দিল কখনো তার অতীত কে ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি সে কোথা থেকে উঠে রাজপ্রাসাদে এসেছে। এইজন্য তিনি সবসময় স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতেন।তার কাছে ভালবাসাটাই মুখ্য ছিল অন্যকিছু নয়। রানাদিল জীবনের শেষ সময়টা পার করেছেন খুব সাধারণ ভাবে।সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রাচুর্যে সে গা ভাসায়নি। বিধবা হয়ে জীবনযাপন করেছেন। একজন প্রকৃতি স্ত্রীর যথার্থ উদাহরণ ছিল রানা দিল।
Writer:- রিফাত আহমেদ