একটা পাথরে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে জোয়ান। পাশ দিয়ে ছলছল করে বয়ে যাচ্ছে মিউজ নদীর পানি। আবছা আলোয় বেশ কিছুক্ষণ সে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে ছিল। সারাদিন শরীরের ধকল যাওয়ায়, ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে। তাই কখন যে চোখে ঘুম নেমে আসে বুঝতে পারেনি। ঘুমের ঘোরেই সে কাঁপতে থাকে। কারও যেন কণ্ঠ শুনতে পায় সে। কে যেন তার উদ্দেশ্যে বলছে, 'হে সাহসী মেয়ে, জেগে ওঠো। জেগে উঠে, ফ্রান্সকে রক্ষা করো।'
আচমকা জেগে উঠে হাঁপাতে থাকে জোয়ান। আশেপাশে তাকায়। কেউ নেই। এটা স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি সত্যি কেউ এসেছিল, বুঝতে পারে না সে। ফ্রান্সকে রক্ষা করতে বলছে কেউ একজন। সে কিশোরী একটা মেয়ে হয়ে পারবে কি?
কারও আসার শব্দ শোনা গেল। জোয়ান সতর্ক হয়ে ওঠলো। হাত বাড়িয়ে একটা ছোট পাথরের অস্তিত্ব অনুভব করলো। মোটামুটি শত্রুকে ঘায়েল করা যাবে পাথরটা দিয়ে। কাছে চলে এসেছে আগন্তুক। জোয়ান পাথরটা দিয়ে তাকে মারতে গেলে তখন দানোস তার নাম ধরে ডেকে ওঠে,
-জোয়ান...'
-দানোস তুমি এখানে?' দানোসের কণ্ঠ শুনে অবাক হয় জোয়ান।
-তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।' বলেই জোয়ানের হাত ধরে পাথরের উপর বসলো দানোস।
-তুমি কী করে জানো আমি এখানে?
-জানি। তোমার মন খারাপ হলেই তো এখানে থাকো তুমি। তাছাড়া আমার মনে সবসময় বিচরণ করো তুমি।'
আবছা আলোয় কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে জোয়ান দানোসের দিকে। বয়সে দানোস কয়েক বছরের বড় হবে জোয়ানের। জোয়ানের প্রতি তার প্রচণ্ড মায়া, যা আর কারও প্রতি লক্ষ করেনি জোয়ান।
-দাও দানোস, খাবারগুলো আমার হাতে দাও।' বলেই দানোসের হাত থেকে খাবারগুলো নিয়ে অন্ধকারে খেতে শুরু করলো জোয়ান। দানোস হঠাৎ বলে ওঠে,
-চলো জোয়ান, আমরা দূরে কোথাও চলে যায়। তুমি আর আমি।'
দানোসের কথা শুনে জোয়ান শ্লথগতিতে চাবাতে থাকে খাবার। অস্ফুটে শব্দ করে,
-তারপর?'
-তারপর আমরা বিয়ে করবো, সংসার করবো। সুখে থাকবো আমরা।'
-তুমি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এতো গভীরে চলে গেছো দানোস?' জোয়ানের কণ্ঠে ক্রোধ নেই, ভর্ৎসনা নেই।
-আমি জানি, আমি তোমাকে যেভাবে চাই, তুমি সেভাবে চাও না। তবে এটুকু জানি, তুমি একটু হলেও পছন্দ করো আমাকে।
-হুমম করি। সেটা শুধু বন্ধু হিসেবে। আমি কখনও সংসারী হওয়ার কথা ভাবি না।
-তাহলে?
-আমি ভাবি, এই অত্যাচারের কথা। কীভাবে ওরা আমাদের উপর জুলুম করছে। কীভাবে আমাদের কাছ থেকে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। যেখানে নিজেদের অধিকারই হাতছাড়া, সেখানে সংসারের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা নয় কি?'
চুপ করে থাকে দানোস। জোয়ান মিউজ নদী থেকে আঁজলা ভরে জল পান করে। তারপর বলে ওঠে,
-ফিরে যাও দানোস।
-আর তুমি?
-আমি এই অন্ধকারেই গা ঢাকা দিতে পারবো। তাছাড়া জঙ্গল তো আছেই। ওরা আমার খোঁজ পাবে না।
-সাবধানে থেকো, আমি তোমাকে হারাতে চাই না।' বলেই চলে যাতে থাকে দানোস। জোয়ান আবারও পাথরে হেলান দিয়ে বসে থাকে। দানোসের পদধ্বনি ক্রমশ দূরে যেতে থাকে।
আচমকা জেগে উঠে হাঁপাতে থাকে জোয়ান। আশেপাশে তাকায়। কেউ নেই। এটা স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি সত্যি কেউ এসেছিল, বুঝতে পারে না সে। ফ্রান্সকে রক্ষা করতে বলছে কেউ একজন। সে কিশোরী একটা মেয়ে হয়ে পারবে কি?
কারও আসার শব্দ শোনা গেল। জোয়ান সতর্ক হয়ে ওঠলো। হাত বাড়িয়ে একটা ছোট পাথরের অস্তিত্ব অনুভব করলো। মোটামুটি শত্রুকে ঘায়েল করা যাবে পাথরটা দিয়ে। কাছে চলে এসেছে আগন্তুক। জোয়ান পাথরটা দিয়ে তাকে মারতে গেলে তখন দানোস তার নাম ধরে ডেকে ওঠে,
-জোয়ান...'
-দানোস তুমি এখানে?' দানোসের কণ্ঠ শুনে অবাক হয় জোয়ান।
-তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।' বলেই জোয়ানের হাত ধরে পাথরের উপর বসলো দানোস।
-তুমি কী করে জানো আমি এখানে?
-জানি। তোমার মন খারাপ হলেই তো এখানে থাকো তুমি। তাছাড়া আমার মনে সবসময় বিচরণ করো তুমি।'
আবছা আলোয় কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে জোয়ান দানোসের দিকে। বয়সে দানোস কয়েক বছরের বড় হবে জোয়ানের। জোয়ানের প্রতি তার প্রচণ্ড মায়া, যা আর কারও প্রতি লক্ষ করেনি জোয়ান।
-দাও দানোস, খাবারগুলো আমার হাতে দাও।' বলেই দানোসের হাত থেকে খাবারগুলো নিয়ে অন্ধকারে খেতে শুরু করলো জোয়ান। দানোস হঠাৎ বলে ওঠে,
-চলো জোয়ান, আমরা দূরে কোথাও চলে যায়। তুমি আর আমি।'
দানোসের কথা শুনে জোয়ান শ্লথগতিতে চাবাতে থাকে খাবার। অস্ফুটে শব্দ করে,
-তারপর?'
-তারপর আমরা বিয়ে করবো, সংসার করবো। সুখে থাকবো আমরা।'
-তুমি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এতো গভীরে চলে গেছো দানোস?' জোয়ানের কণ্ঠে ক্রোধ নেই, ভর্ৎসনা নেই।
-আমি জানি, আমি তোমাকে যেভাবে চাই, তুমি সেভাবে চাও না। তবে এটুকু জানি, তুমি একটু হলেও পছন্দ করো আমাকে।
-হুমম করি। সেটা শুধু বন্ধু হিসেবে। আমি কখনও সংসারী হওয়ার কথা ভাবি না।
-তাহলে?
-আমি ভাবি, এই অত্যাচারের কথা। কীভাবে ওরা আমাদের উপর জুলুম করছে। কীভাবে আমাদের কাছ থেকে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। যেখানে নিজেদের অধিকারই হাতছাড়া, সেখানে সংসারের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা নয় কি?'
চুপ করে থাকে দানোস। জোয়ান মিউজ নদী থেকে আঁজলা ভরে জল পান করে। তারপর বলে ওঠে,
-ফিরে যাও দানোস।
-আর তুমি?
-আমি এই অন্ধকারেই গা ঢাকা দিতে পারবো। তাছাড়া জঙ্গল তো আছেই। ওরা আমার খোঁজ পাবে না।
-সাবধানে থেকো, আমি তোমাকে হারাতে চাই না।' বলেই চলে যাতে থাকে দানোস। জোয়ান আবারও পাথরে হেলান দিয়ে বসে থাকে। দানোসের পদধ্বনি ক্রমশ দূরে যেতে থাকে।
ভোরের আলো ফুটতেই জোয়ান হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো চারণভূমির দিকে। প্রতিদিন ভোর হলে সে ভেড়ার পাল নিয়ে আসতো এখানে। আজ একা এসেছে। প্রতিদিন যে কাজটা করতে তার বিরক্ত লাগতো, কেন জানি আজ সেই কাজটা করতে না পেরে জোয়ানের খারাপ লাগছে। যেখানে ভেড়াগুলো চরে বেড়াতো, সেই জায়গাটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো জোয়ান। কয়েকমুহূর্তের জন্য যেন সে অবশ হয়ে গেল। যখন কয়েকটা ভেড়ার ডাক শুনতে পায়, তখন সম্বিত ফিরে পায় সে। তার সঙ্গীরা রোজকার মতো ভেড়ার পাল নিয়ে চারণভূমিতে আসছে। ওদেরকে দেখে ছুটে গেল জোয়ান। ওরাও অবাক হলো জোয়ানকে দেখে। একজন বলে ওঠলো,
-জোয়ান, তুই এখানে? এখানে যদি ইংরেজদের পা চাটা কুকুররা চলে আসে তোর কী হবে?
-আমার কিছু হবে না। ওরা আসলেই আমি লুকিয়ে পড়বো।
-ওরা আমাদের বাড়িঘরগুলো কীভাবে পুড়িয়ে দিলো। খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাতে হলো আমাদের।' বলতে বলতে ভেড়ার পাল মাঠে ছেড়ে দিলো মেয়েটা। বাকিরাও নিজেদের ভেড়ার পাল ছেড়ে দিলো মাঠে। জোয়ান কিছুটা হতাশকণ্ঠে বললো,
-আমরা আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবো। আমার ভেড়াগুলো কোথায়? ওগুলোর কোনো ক্ষতি করেনি তো ওরা?
-না, ওগুলো ঠিক আছে। ভেড়াগুলো তোর বাবার কাছে দিয়ে এসেছিলাম। তোর বাবা নিয়ে আসছে। ঐ তো তোর বাবা।' জোয়ানের বাবার দিকে ইশারা করলো মেয়েটা। বাবাকে ভেড়ারপাল নিয়ে আসতে দেখে ছুটে গেল জোয়ান। তারপর বাপ-মেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদতে লাগলো। বাবা জ্যাক নিজেকে সামলিয়ে মেয়ের দুগালে হাত রেখে বললো,
-জোয়ান তুই এখানে? ওরা আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় যতটা কষ্ট হয়নি, তোকে একরাত কাছে না পেয়ে তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে।
-আমিও তোমাদের খুব মিস করেছি বাবা।
-কিন্তু তুই এখানে কেন? ওরা যদি তোর খোঁজে এখানে চলে আসে?
-ওরা আসার আগেই আমি সরে যাবো এখান থেকে। বাবা তুমি চলে যাও। আমাদের ঘরটা নতুন করে ঠিক করো। ভেড়াগুলো আমি দেখবো।
-ঠিক আছে আমার মা। শত্রু থেকে সাবধানে থাকিস। আর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসবো।'
-খাবার কোথায় পাবে বাবা?
-বাজার থেকে গম কিনে আনবো। তারপর রুটি বানিয়ে আনবো তোর জন্য।
-ঠিক আছে বাবা।'
মেয়ের কাঁধে আলতো করে হাত চাপড়ে, চোখ মুছে প্রস্থান করতে লাগলেন জ্যাক। জোয়ান নিজের ভেড়ার পালটা নিয়ে চারণভূমির একদিকে চলে এলো চরাতে।
ভেড়াগুলো নিজেদের মতো করে চরে বেড়াচ্ছে মাঠে। জোয়ান পাশেই একটা গাছের গোড়ায় গিয়ে বসলো। তার সঙ্গীদের অবস্থান তার থেকে আরেকটু দূরে। কেউ কেউ খেলছে। আর কেউ ঘাস তুলে তুলে খাওয়াচ্ছে ভেড়াদের। ওদিকে একবার তাকিয়ে জোয়ান দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো নিজের ভেড়ার পালের দিকে। গালে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বসেছে সে। একটা মেয়ে তার উদ্দেশ্যে ডাক দিলো,
-জোয়ান, খেললে আয়...'
-না, তোরা খেল...' গলার আওয়াজটা বাড়িয়ে জবাব দিলো জোয়ান। তারপর আবার গালে হাত দিয়ে বসে কী যেন ভাবতে লাগলো। হঠাৎ একটা দৈববাণী শোনা গেল, কে যেন জোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো,
-হে সাহসী মেয়ে, প্রস্তুত হও। সময় হয়েছে যুদ্ধে যাওয়ার। রক্ষা করো নিজের জন্মভূমিকে। ফিরিয়ে নাও নিজেদের অধিকার।'
দৈববাণী শুনতে শুনতে চমকে ওঠে জোয়ান। চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো জোয়ান অদৃশ্য কণ্ঠের উদ্দেশ্যে,
-কে? কে তুমি?'
আর কোনো শব্দ শোনা গেল না। জোয়ানের তখন রাতের স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। স্বপ্নের সেই কণ্ঠের মতোই এই কণ্ঠটা। ঈশ্বর হয়তো চান সে যুদ্ধ করুক। নিজের মনকে সে মুহূর্তেই মানিয়ে নিলো যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। দেশকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে তার যুদ্ধে যাওয়া উচিত। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল এতক্ষণ জোয়ান। ঘোড়ার আওয়াজ শুনতেই ঘোর কাটলো তার। দানোস এসেছে। দানোসকে উত্তেজিত দেখালো।
-জোয়ান, শত্রুরা এদিকেই আসছে তোর খুঁজে।' হাঁপাতে হাঁপাতে বললো দানোস। জোয়ান দানোসের হাত ধরে বললো,
-দানোস, তোমার ঘোড়াটা আমায় দিয়ে দেবে?
-কেন? কোথায় যাবে তুমি?
-আমাদের ফ্রান্সকে বাঁচাতে।
-মানে?
-যুদ্ধ করবো আমি। আমাকে এখনই যেতে হবে শহরে।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি?' ঘোড়া থেকে নামলো দানোস।
-আমি ঠিক আছি দানোস। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। আমাকে যেতে হবে।' বলতে বলতে ঘোড়ায় উঠে বসলো জোয়ান।
-তোমার সবে তেরো বছর বয়স। তুমি যুদ্ধ করবে?
-আমার বয়সের চেয়ে আমার সাহসটা বেশি।
-আমিও যাবো তোমার সাথে...
-না দানোস, আমার ভেড়ার পালটা দেখো, আর আমার বাবা মাকে দেখে রেখো তুমি। তোমার হাতে দিয়ে গেলাম ওদের।' বলতে বলতে ঘোড়া ছুটালো জোয়ান। দানোস চিৎকার করে বললো,
-আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো জোয়ান। তোমার পথ চেয়ে থাকবো।
-দেশকে রক্ষা করে তোমার কাছে ফিরে আসবো আমি।' ক্ষীণ শুনালো জোয়ানের কণ্ঠ। দূরে যেতে লাগলো সে। দানোস হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। জোয়ান ঘোড়া ছুটাতে লাগলো শহর অভিমুখে। ঘোড়া ছুটাতে ছুটাতে মায়ের কথা ভাবলো, বাবার কথা ভাবলো। মা তাকে আর না পেয়ে হয়তো অনেক কাঁদবে। আর বাবা তার জন্য যখন খাবার নিয়ে এসে তাকে দেখতে পাবে না, তখন কী অবস্থা হবে বাবার? অনেক কষ্ট হবে হয়তো। কিছু কিছু কষ্ট যদি ভালোর জন্য হয়, দেশের জন্য হয়, তাহলে এরকম হাজারও কষ্ট তাদের মেনে নেয়া উচিত। চোখের জল মুছে ঘোড়ার গতি বাড়ালো জোয়ান।
-জোয়ান, তুই এখানে? এখানে যদি ইংরেজদের পা চাটা কুকুররা চলে আসে তোর কী হবে?
-আমার কিছু হবে না। ওরা আসলেই আমি লুকিয়ে পড়বো।
-ওরা আমাদের বাড়িঘরগুলো কীভাবে পুড়িয়ে দিলো। খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাতে হলো আমাদের।' বলতে বলতে ভেড়ার পাল মাঠে ছেড়ে দিলো মেয়েটা। বাকিরাও নিজেদের ভেড়ার পাল ছেড়ে দিলো মাঠে। জোয়ান কিছুটা হতাশকণ্ঠে বললো,
-আমরা আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করবো। আমার ভেড়াগুলো কোথায়? ওগুলোর কোনো ক্ষতি করেনি তো ওরা?
-না, ওগুলো ঠিক আছে। ভেড়াগুলো তোর বাবার কাছে দিয়ে এসেছিলাম। তোর বাবা নিয়ে আসছে। ঐ তো তোর বাবা।' জোয়ানের বাবার দিকে ইশারা করলো মেয়েটা। বাবাকে ভেড়ারপাল নিয়ে আসতে দেখে ছুটে গেল জোয়ান। তারপর বাপ-মেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদতে লাগলো। বাবা জ্যাক নিজেকে সামলিয়ে মেয়ের দুগালে হাত রেখে বললো,
-জোয়ান তুই এখানে? ওরা আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় যতটা কষ্ট হয়নি, তোকে একরাত কাছে না পেয়ে তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে।
-আমিও তোমাদের খুব মিস করেছি বাবা।
-কিন্তু তুই এখানে কেন? ওরা যদি তোর খোঁজে এখানে চলে আসে?
-ওরা আসার আগেই আমি সরে যাবো এখান থেকে। বাবা তুমি চলে যাও। আমাদের ঘরটা নতুন করে ঠিক করো। ভেড়াগুলো আমি দেখবো।
-ঠিক আছে আমার মা। শত্রু থেকে সাবধানে থাকিস। আর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসবো।'
-খাবার কোথায় পাবে বাবা?
-বাজার থেকে গম কিনে আনবো। তারপর রুটি বানিয়ে আনবো তোর জন্য।
-ঠিক আছে বাবা।'
মেয়ের কাঁধে আলতো করে হাত চাপড়ে, চোখ মুছে প্রস্থান করতে লাগলেন জ্যাক। জোয়ান নিজের ভেড়ার পালটা নিয়ে চারণভূমির একদিকে চলে এলো চরাতে।
ভেড়াগুলো নিজেদের মতো করে চরে বেড়াচ্ছে মাঠে। জোয়ান পাশেই একটা গাছের গোড়ায় গিয়ে বসলো। তার সঙ্গীদের অবস্থান তার থেকে আরেকটু দূরে। কেউ কেউ খেলছে। আর কেউ ঘাস তুলে তুলে খাওয়াচ্ছে ভেড়াদের। ওদিকে একবার তাকিয়ে জোয়ান দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো নিজের ভেড়ার পালের দিকে। গালে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বসেছে সে। একটা মেয়ে তার উদ্দেশ্যে ডাক দিলো,
-জোয়ান, খেললে আয়...'
-না, তোরা খেল...' গলার আওয়াজটা বাড়িয়ে জবাব দিলো জোয়ান। তারপর আবার গালে হাত দিয়ে বসে কী যেন ভাবতে লাগলো। হঠাৎ একটা দৈববাণী শোনা গেল, কে যেন জোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো,
-হে সাহসী মেয়ে, প্রস্তুত হও। সময় হয়েছে যুদ্ধে যাওয়ার। রক্ষা করো নিজের জন্মভূমিকে। ফিরিয়ে নাও নিজেদের অধিকার।'
দৈববাণী শুনতে শুনতে চমকে ওঠে জোয়ান। চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো জোয়ান অদৃশ্য কণ্ঠের উদ্দেশ্যে,
-কে? কে তুমি?'
আর কোনো শব্দ শোনা গেল না। জোয়ানের তখন রাতের স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। স্বপ্নের সেই কণ্ঠের মতোই এই কণ্ঠটা। ঈশ্বর হয়তো চান সে যুদ্ধ করুক। নিজের মনকে সে মুহূর্তেই মানিয়ে নিলো যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। দেশকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে তার যুদ্ধে যাওয়া উচিত। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল এতক্ষণ জোয়ান। ঘোড়ার আওয়াজ শুনতেই ঘোর কাটলো তার। দানোস এসেছে। দানোসকে উত্তেজিত দেখালো।
-জোয়ান, শত্রুরা এদিকেই আসছে তোর খুঁজে।' হাঁপাতে হাঁপাতে বললো দানোস। জোয়ান দানোসের হাত ধরে বললো,
-দানোস, তোমার ঘোড়াটা আমায় দিয়ে দেবে?
-কেন? কোথায় যাবে তুমি?
-আমাদের ফ্রান্সকে বাঁচাতে।
-মানে?
-যুদ্ধ করবো আমি। আমাকে এখনই যেতে হবে শহরে।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি?' ঘোড়া থেকে নামলো দানোস।
-আমি ঠিক আছি দানোস। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। আমাকে যেতে হবে।' বলতে বলতে ঘোড়ায় উঠে বসলো জোয়ান।
-তোমার সবে তেরো বছর বয়স। তুমি যুদ্ধ করবে?
-আমার বয়সের চেয়ে আমার সাহসটা বেশি।
-আমিও যাবো তোমার সাথে...
-না দানোস, আমার ভেড়ার পালটা দেখো, আর আমার বাবা মাকে দেখে রেখো তুমি। তোমার হাতে দিয়ে গেলাম ওদের।' বলতে বলতে ঘোড়া ছুটালো জোয়ান। দানোস চিৎকার করে বললো,
-আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো জোয়ান। তোমার পথ চেয়ে থাকবো।
-দেশকে রক্ষা করে তোমার কাছে ফিরে আসবো আমি।' ক্ষীণ শুনালো জোয়ানের কণ্ঠ। দূরে যেতে লাগলো সে। দানোস হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। জোয়ান ঘোড়া ছুটাতে লাগলো শহর অভিমুখে। ঘোড়া ছুটাতে ছুটাতে মায়ের কথা ভাবলো, বাবার কথা ভাবলো। মা তাকে আর না পেয়ে হয়তো অনেক কাঁদবে। আর বাবা তার জন্য যখন খাবার নিয়ে এসে তাকে দেখতে পাবে না, তখন কী অবস্থা হবে বাবার? অনেক কষ্ট হবে হয়তো। কিছু কিছু কষ্ট যদি ভালোর জন্য হয়, দেশের জন্য হয়, তাহলে এরকম হাজারও কষ্ট তাদের মেনে নেয়া উচিত। চোখের জল মুছে ঘোড়ার গতি বাড়ালো জোয়ান।
ঘোড়াটা একটা গাছের সাথে বেঁধে একটা সরাইখানায় প্রবেশ করলো জোয়ান। দুতলা বিশিষ্ট সরাইখানা। নিচতলায় সারি করে বেশ কয়েকটা টেবিল বসানো। ওখানে বসে ক্রেতারা খাবার কিনে খায়। উপরের তলায় বেশ কয়েকটা কক্ষ। কয়েকটা কক্ষ তালাবদ্ধ। আর কয়েকটাতে পর্যটকরা ওঠেছে। চারপাশে একবার পর্যবেক্ষণ করে জোয়ান সরাইখানার মালিককে খুঁজলো। একজনের কাছে সরাইখানার মালিকের খোঁজ পেল সে। কিছুটা বয়স্ক সরাইখানার মালিক। উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো জোয়ান।
-আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে?' নম্রভাবে প্রশ্ন করে সে।
-হ্যাঁ, বলো...'
-আমি কি কিছু খাবার পাবো খাওয়ার জন্য?
-হুমম, মুদ্রা দিলেই খেতে পাবা।
-কিন্তু আমার কাছে তো মুদ্রা নেই।
-কী আছে?
-কিছুই নেই।
-তাহলে খাবার চায়ছো কেন? চলে যাও।
-আমাকে কোনো কাজ দেন। আমি কাজের বিনিময়ে খাবো।
-এই মুহূর্তে কোনো কর্মচারী লাগবে না। তেমন কাজ নেই।
-কর্মচারী তো লাগতে পারে। আমি দেখেছি এখানে কাজ করার মতো লোক কম। আপনাদের এখানে অতিথিরা থাকতে এলে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত লোক আপনাদের নেই।'
জোয়ানের কথা শুনে মালিক হাসলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন,
-এখানে আবার অতিথি। কয়েকবছর ধরে দেখছি এদিকে থাকতে লোক তেমন আসে না। ঐ যে দেখছো, সরাইখানার বেশিরভাগ কক্ষ ওরকম তালাবদ্ধ থাকে সবসময়।' তালাবদ্ধ কক্ষগুলো ইশারায় দেখিয়ে দিলেন মালিক।
-কিন্তু আজ এ শহরে অনেক লোক আসবে ব্যবসায় করতে। তারা থাকার জন্য এই সরাইখানায় আসবে। আপনি অনেককে জায়গাও দিতে পারবেন না।'
জোয়ানের কথা শুনে মালিক আবার হেসে ওঠলেন। এই মেয়েটা তো বড্ড পাগল। সারাবছর তিনি এখানে অবস্থান করে দেখছেন, এদিকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। আর কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলে কিনা এখানে ব্যবসায়ীরা আসবে। তাদেরকে থাকতে দেয়ার মতো তিনি জায়গাও দিতে পারবেন না। পাগল মেয়ে একটা।
-যাও তো মেয়ে তুমি। এখানে পাগলামি করো না।' বিরক্ত হয়ে বললেন সরাইখানার মালিক।
-আমি সত্যি বলছি। আপনি আমাকে কাজের জন্য রাখেন। আপনার কর্মচারীর প্রয়োজন হতে পারে।' অনুনয় করলো জোয়ান।
-এই কে আছো? পাগল মেয়েটাকে বের করো এখান থেকে।' মালিকের বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল। জোয়ান আর অপেক্ষা করলো না। মুখটা মলিন করে বের হয়ে এলো সরাইখানা থেকে। তারপর যে গাছের সাথে ঘোড়াটা বেঁধেছিল, সেই গাছের গোড়ায় বসে পড়লো চিন্তিত হয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর জোয়ান দেখলো, ব্যবসায়ীদের বড় একটা দল প্রবেশ করছে শহরে। তারা এসে সরাইখানার সামনে থামলো। ঘোড়া থেকে নেমে ওরা সরাইখানার ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদেরকে দেখে মালিকের চোখ বড় বড় হয়ে গেল বিস্ময়ে। ব্যবসায়ীরা থাকার জন্য কক্ষ চায়লো। কিন্তু ওদের চাহিদা মতো পর্যাপ্ত কক্ষ তিনি দিতে পারলেন না। তাই বাকিরা অন্য সরাইখানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লো। ওদের সাথে সাথে বের হয়ে এলেন সরাইখানার মালিকও। তিনি জোয়ানের খোঁজ করলেন বাইরে। দেখলেন, জোয়ান একটা গাছের গোড়ায় বসে কী যেন ভাবছে। উনি তার কাছে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলেন,
-কে তুমি? কীভাবে জানলে আজ এখানে ব্যবসায়ীরা আসবে আর ওরা আমার সরাইখানায় ওঠবে?'
-আমি জানি না। আমার মনে এসেছে তাই বলে দিছি কথাটা।' মৃদু হাসলো জোয়ান। মালিক বুঝলেন, এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে না। দুহাতে ধরে তিনি জোয়ানকে দাঁড় করালেন। তারপর প্রশ্ন করলেন,
-কোথা থেকে এসেছো? কেন এসেছো? নাম কী তোমার?'
-আমার নাম জোয়ান। অনেকদূরের একটা গ্রাম থেকে এসেছি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি।'
জোয়ানের শেষের কথাটা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন সরাইখানার মালিক। ছোট্ট একটা কিশোরী মেয়ে, বুকে কীরকম অদম্য সাহস থাকলে এ কথা বলে।
-তোমার কাজ করতে হবে না। তুমি আমার বাসায় আমার মেয়ের মতো থাকবে। তোমার কারণেই আজ আমার সরাইখানা ভরে ওঠেছে। তোমার জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি।
-আমি কি কিছু খাবার পাবো?' ভ্রু কুঁচকালো জোয়ান।
-হ্যাঁ, চলো। যা খুশি খাও। কোনো দাম দিতে হবে না তোমার।' হাসলেন সরাইখানার মালিক। তারপর জোয়ানকে হাতে ধরে সরাইখানার ভেতরে নিয়ে গেলেন।
-আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে?' নম্রভাবে প্রশ্ন করে সে।
-হ্যাঁ, বলো...'
-আমি কি কিছু খাবার পাবো খাওয়ার জন্য?
-হুমম, মুদ্রা দিলেই খেতে পাবা।
-কিন্তু আমার কাছে তো মুদ্রা নেই।
-কী আছে?
-কিছুই নেই।
-তাহলে খাবার চায়ছো কেন? চলে যাও।
-আমাকে কোনো কাজ দেন। আমি কাজের বিনিময়ে খাবো।
-এই মুহূর্তে কোনো কর্মচারী লাগবে না। তেমন কাজ নেই।
-কর্মচারী তো লাগতে পারে। আমি দেখেছি এখানে কাজ করার মতো লোক কম। আপনাদের এখানে অতিথিরা থাকতে এলে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত লোক আপনাদের নেই।'
জোয়ানের কথা শুনে মালিক হাসলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন,
-এখানে আবার অতিথি। কয়েকবছর ধরে দেখছি এদিকে থাকতে লোক তেমন আসে না। ঐ যে দেখছো, সরাইখানার বেশিরভাগ কক্ষ ওরকম তালাবদ্ধ থাকে সবসময়।' তালাবদ্ধ কক্ষগুলো ইশারায় দেখিয়ে দিলেন মালিক।
-কিন্তু আজ এ শহরে অনেক লোক আসবে ব্যবসায় করতে। তারা থাকার জন্য এই সরাইখানায় আসবে। আপনি অনেককে জায়গাও দিতে পারবেন না।'
জোয়ানের কথা শুনে মালিক আবার হেসে ওঠলেন। এই মেয়েটা তো বড্ড পাগল। সারাবছর তিনি এখানে অবস্থান করে দেখছেন, এদিকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। আর কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বলে কিনা এখানে ব্যবসায়ীরা আসবে। তাদেরকে থাকতে দেয়ার মতো তিনি জায়গাও দিতে পারবেন না। পাগল মেয়ে একটা।
-যাও তো মেয়ে তুমি। এখানে পাগলামি করো না।' বিরক্ত হয়ে বললেন সরাইখানার মালিক।
-আমি সত্যি বলছি। আপনি আমাকে কাজের জন্য রাখেন। আপনার কর্মচারীর প্রয়োজন হতে পারে।' অনুনয় করলো জোয়ান।
-এই কে আছো? পাগল মেয়েটাকে বের করো এখান থেকে।' মালিকের বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল। জোয়ান আর অপেক্ষা করলো না। মুখটা মলিন করে বের হয়ে এলো সরাইখানা থেকে। তারপর যে গাছের সাথে ঘোড়াটা বেঁধেছিল, সেই গাছের গোড়ায় বসে পড়লো চিন্তিত হয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর জোয়ান দেখলো, ব্যবসায়ীদের বড় একটা দল প্রবেশ করছে শহরে। তারা এসে সরাইখানার সামনে থামলো। ঘোড়া থেকে নেমে ওরা সরাইখানার ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদেরকে দেখে মালিকের চোখ বড় বড় হয়ে গেল বিস্ময়ে। ব্যবসায়ীরা থাকার জন্য কক্ষ চায়লো। কিন্তু ওদের চাহিদা মতো পর্যাপ্ত কক্ষ তিনি দিতে পারলেন না। তাই বাকিরা অন্য সরাইখানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লো। ওদের সাথে সাথে বের হয়ে এলেন সরাইখানার মালিকও। তিনি জোয়ানের খোঁজ করলেন বাইরে। দেখলেন, জোয়ান একটা গাছের গোড়ায় বসে কী যেন ভাবছে। উনি তার কাছে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলেন,
-কে তুমি? কীভাবে জানলে আজ এখানে ব্যবসায়ীরা আসবে আর ওরা আমার সরাইখানায় ওঠবে?'
-আমি জানি না। আমার মনে এসেছে তাই বলে দিছি কথাটা।' মৃদু হাসলো জোয়ান। মালিক বুঝলেন, এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে না। দুহাতে ধরে তিনি জোয়ানকে দাঁড় করালেন। তারপর প্রশ্ন করলেন,
-কোথা থেকে এসেছো? কেন এসেছো? নাম কী তোমার?'
-আমার নাম জোয়ান। অনেকদূরের একটা গ্রাম থেকে এসেছি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি।'
জোয়ানের শেষের কথাটা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন সরাইখানার মালিক। ছোট্ট একটা কিশোরী মেয়ে, বুকে কীরকম অদম্য সাহস থাকলে এ কথা বলে।
-তোমার কাজ করতে হবে না। তুমি আমার বাসায় আমার মেয়ের মতো থাকবে। তোমার কারণেই আজ আমার সরাইখানা ভরে ওঠেছে। তোমার জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি।
-আমি কি কিছু খাবার পাবো?' ভ্রু কুঁচকালো জোয়ান।
-হ্যাঁ, চলো। যা খুশি খাও। কোনো দাম দিতে হবে না তোমার।' হাসলেন সরাইখানার মালিক। তারপর জোয়ানকে হাতে ধরে সরাইখানার ভেতরে নিয়ে গেলেন।
-আচ্ছা, আপনি রাজা চার্লসের খোঁজ জানেন।' প্রশ্ন করে জোয়ান। সরাইখানা থেকে সোজা সে মালিকের বাসায় এসেছে মালিকের সাথে। মালিকের নাম থমাস। উনার বাসায় কেবল উনি আর উনার স্ত্রী থাকেন। দুই মেয়ে ছিল। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। জোয়ানের প্রশ্ন শুনে থমাস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
-রাজা চার্লসের সাথে দেখা করতে চাও কেন?
-উনার সাথে আমার প্রয়োজন আছে। আমি উনার পক্ষে যুদ্ধ করতে চাই।
-কিন্তু উনি তো তোমাকে যুদ্ধে নেবেন না।
-আপনিও তো আমাকে প্রথমে কাজ দিতে চাননি। এখন একেবারে বাসায় নিয়ে এসেছেন।'
থমাস দেখলেন ওর কথায় জোর আছে। তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন,
-নাহ্, খোঁজ জানি না। তবে এদিকে মাঝেমধ্যে কমান্ডার রবার্ট বড্রিকটকে যেতে দেখা যায় সৈন্য নিয়ে। তিনিই খোঁজ দিতে পারেন রাজার।
-রবার্ট বড্রিকটের খোঁজ কীভাবে পাবো?
-তার ঠিকানা জানি না। যদি আবার দেখি, তোমার সাথে দেখা করিয়ে দেবো।
-ঠিক আছে।'
সেদিন থেকে অপেক্ষা করতে থাকে জোয়ান, কবে রবার্ট বড্রিকটের দেখা মিলবে।
-রাজা চার্লসের সাথে দেখা করতে চাও কেন?
-উনার সাথে আমার প্রয়োজন আছে। আমি উনার পক্ষে যুদ্ধ করতে চাই।
-কিন্তু উনি তো তোমাকে যুদ্ধে নেবেন না।
-আপনিও তো আমাকে প্রথমে কাজ দিতে চাননি। এখন একেবারে বাসায় নিয়ে এসেছেন।'
থমাস দেখলেন ওর কথায় জোর আছে। তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন,
-নাহ্, খোঁজ জানি না। তবে এদিকে মাঝেমধ্যে কমান্ডার রবার্ট বড্রিকটকে যেতে দেখা যায় সৈন্য নিয়ে। তিনিই খোঁজ দিতে পারেন রাজার।
-রবার্ট বড্রিকটের খোঁজ কীভাবে পাবো?
-তার ঠিকানা জানি না। যদি আবার দেখি, তোমার সাথে দেখা করিয়ে দেবো।
-ঠিক আছে।'
সেদিন থেকে অপেক্ষা করতে থাকে জোয়ান, কবে রবার্ট বড্রিকটের দেখা মিলবে।
লেখা: ShoheL Rana শামী