> মুরগীর তরকারি | Bangla Golpo | Boipoka365
-->

মুরগীর তরকারি | Bangla Golpo | Boipoka365

হোটেলে বসে একটা সিঙ্গারা এক টুকরো পেয়াজ দিয়ে খাচ্ছি।সাথে এক কাপ চা। এটা আমার প্রতিদিন দুপুরের খাবার। আমার সাথে বসা লোকটা মুরগীর তরকারি দিয়ে খুব আয়েশ করে ভাত খাচ্ছে। শেষবার আমি কবে মুরগীর তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। লোকটার প্লেটে থাকা মুরগীর বড় লেগপিসটা দেখে মনে মনে ভাবছিলাম, এইমাসে টিউশানির টাকাটা পেলে একদিন মুরগীর তরকারি দিয়ে ভাত খাবো। 
নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারের সন্তান আমি। ছোটবেলা থেকেই প্রতিদিন অভাবের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছি।বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।এখন আমাকে টিউশানি করিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি আমার পরিবারেও খরচ চালাতে হয়। এই ঢাকা শহরে ৩বেলা ভাতের খচর অনেক। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে একটা রুটি, একটা সিঙ্গারা আর এককাপ চা দিয়ে পার করতে হয়। রাতে শুধু একবেলা ভাত খাই।

হোটেল থেকে বের হয়ে স্টুডেন্টের বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় ছোটবোন ফোন দিয়ে মনমরা হয়ে বললো,
-"ভাইয়া,আমি আর প্রাইভেট পড়তে যাবো না। প্রতিদিন একজামা পরে প্রাইভেটে যায় বলে আমার বান্ধবীরা আমাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। আজ প্রাইভেট থেকে বাসায় আসার পর দেখি জামাটার এক অংশ ছিড়ে গেছে"

ছোট বোনের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমার সাথে সাথে আমার ছোটবোনটাও অভাবের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। আমি তখন ছোটবোনকে বললাম,
--তুই মন খারাপ করিস না। আমি আজ সন্ধ্যার দিকে তোকে দুইহাজার টাকা পাঠাবো তুই তোর মন মতো দুইসেট জামা কিনে নিস।

ছোট বোন খুশিমনে ফোনটা রেখে দিলো। আমি পকেট থেকে মানিব্যগটা খুলে দেখি মানিব্যগে ১২০টাকার মত আছে। আজ মাসের ১৩ তারিখ চলছে অথচ আমি গতমাসের টিউশানির টাকা পাই নি। আমি দুইদিন স্টুডেন্টের মায়ের কাছে টাকা চেয়েছিলাম কিন্তু উনি আমার কথাটা পাত্তায় দেয় নি। 

আজ স্টুডেন্টকে যখন পড়াতে গেলাম তখন আমার স্টুডেন্ট  আমায় হঠাৎ মিষ্টি খেতে দিলো। আমি মিষ্টিটা হাতে নিয়ে ছাত্রের দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,
--কি উপলক্ষে হঠাৎ মিষ্টি খাওয়ালে ?
আমার ছাত্র তখন বললো,
-” ভাইয়া, আব্বু নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে ৮০লাখ টাকা দিয়ে। সেই উপলক্ষেই মিষ্টি খাওয়ানো।”

ছাত্রের মুখ থেকে কথাটা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলাম আজ হয়তো আন্টির মনটা ভালো।টিউশানির টাকা চাইলে হয়তো পেয়ে যেতে পারি। ছাত্রকে পড়ানোর পর আন্টির কাছে যখন টাকাটা চাইলাম তখন  আন্টি কিছুটা বিরক্তির চোখে আমার দিকে তাকালো তারপর আমায় বললো,
-” এইমাসে আমি তোমায় টাকা দিতে পারবো না। সামনের মাসে দিয়ে দিবো দুইমাসের বেতন একসাথে।” 
আমি কিছুটা অসহায় দৃষ্টিতে আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম,
--আন্টি আমার টাকাটা খুব দরকার ছিলো।আজ যদি দিয়ে দিতে পারতেন তাহলে আমার খুব উপকার হতো
আন্টি তখন কিছুটা রেগে গিয়েই বললো,
-” তোমাদের এই এক সমস্যা মাস শেষ হতে না হতেই শুধু টাকা টাকা করো। টাকাতো আর গাছে ধরে না যে চাইলেই টাকা দিয়ে দিতে পারবো। আমাদেরও তো অভাবটা তোমার বুঝতে হবে।  নেক্সট টাইম এমন টাকা টাকা করলে তোমাকে আমার ছেলেকে পড়াতে হবে না।”

আমি আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।নিজেরা ৮০লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারে অথচ আমার ৪হাজার টাকা বেতন দিলেই তাদের অভাব শুরু হয়ে যায়।

মেসে এসে এক বন্ধুর কাছে ২হাজার টাকা ধার চাইলে সে আমায় বলে, তার কাছে কোন টাকা নেই। থাকলে অবশ্যই আমায় দিতো। অথচ কিছুক্ষণ পর আমি আড়াল থেকে শুনি ও ওর গার্লফ্রেন্ডকে বলছে আজ সে খাওয়াবে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে।

সন্ধ্যার পর এক পরিচিত চায়ের দোকানে চা খেতে গেলাম।  আমার পেকেটে থাকা ফোনটা সমানে বেজে যাচ্ছে কিন্তু আমি রিসিভ করছি না। তখন দোকানদার লোকটা বললো,
-"ফোন রিসিভ করছেন না কেন?"
আমি মনমরা হয়ে বললাম,
-- রিসিভ করে কি বলবো সেই কথা খুঁজে পাচ্ছি না বলে ফোনটা রিসিভ করছি না 
দোকানদার লোকটা একটু অবাক হয়ে বললো,
-" কেন, কি হয়ছে?"
আমি তখন বললাম,
-- ফোন করছে আমার ছোট বোন। ওর নতুন জামা কিনার জন্য আজ আমার ওকে ২হাজার টাকা পাঠানোর কথা ছিলো।  কিন্তু আমি সারাদিন চেষ্টা করেও দুই হাজার টাকা ম্যানেজ করতে পারি নি। তাই লজ্জায় ফোনটা রিসিভ করার সাহস পাচ্ছি না

আমার কথা শুনে দোকানদার লোকটা  আমাকে ২৫০০টাকা হাতে দিলো। আমি যখন নিতে বারবার  অস্বীকার করছিলাম তখন দোকানদার লোকটা আমায় বললো,
-"আমি তো ভাই তোমায় এমনি এমনি টাকা দিচ্ছি না। আমার একটা ছেলে আছে ক্লাস এইটে পড়ে তোমার তাকে পড়াতে হবে।  মাস শেষে তোমাকে আমি ২৫০০টাকা দিবো যেহতু আমার এর বেশি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এই টাকাটা আমি তোমাকে এক মাসের অগ্রীম দিলাম" 

টাকাটা হাতে পেয়ে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিলো এটা ভেবে একজন বিত্তবান লোকের ছেলেকে পড়ানোর পরেও মাস শেষে সময় মতো টাকা পাই না অথচ সমান্য চায়ের দোকানদার যে কিনা টিউশানির অগ্রিম টাকা আমার হাতে তুলে দিলো।

ছোট বোনকে ২হাজার টাকা পাঠানোর পর হোটেলে আসলাম রাতে খাওয়ার জন্য। হোটেলের ছেলেটাকে বললাম, মুরগির তরকারি দিতে। আমার পকেটে আজ ৫০০টাকার একটা নোট আছে। পরক্ষণেই মনে হলো ৫০০টাকাটা না হয় পকেটে থাকুক।  পরে অন্য কাজে খরচ করবো। আজ আপাতত সবজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে ফেলি। সামনের মাসে টিউশানির টাকা পেলে না হয় মুরগীর তরকারি দিয়ে ভাত খাবো





Writer:- আবুল বাশার পিয়াস
 

Delivered by FeedBurner

a