গাড়িতে ওঠে বসলাম। কিন্তু কিছুতেই সিটবেল্ট লাগাতে পারছি না। নিজের হাতের ওপর আরেকটা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে পাশে তাকাতেই ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। উনি তড়িৎ গতিতে আমার থেকে দূরে সরে গেলেন। আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে বসে আছি। দুজনেই অনেক অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। এমন একটা ঘটনা ঘটবে যেটা কারো কল্পনায় ছিলো না।
উনি সিটবেল্ট বাধার জন্য আমার দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময় আমি পাশে তাকাতেই দুজনেই অধর যুগল এক হয়ে যায়। সারা রাস্তা দুজনের মাঝে আরো কোনো কথা হয়নি। গাড়ি কোচিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই আমি ঝটপট নেমে পড়লাম। আমি নামতেই উনি এক মিনিট সময় ব্যয় না করেই চলে গেলেন। আমিও আর পিছন ফিরে তাকালাম না।
______________
কোচিং শেষে ত্রয়ী বললো, শপিংয়ে যাওয়ার কথা। আমিও আর না করলাম না। উনি একটু পরেই নিতে আসবেন। উনার সামনে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না। লজ্জা আর অস্বস্তিতে আমার অবস্থা বেহাল। তাই ত্রয়ীর সাথে শপিংয়ে যেতে রাজি হয়ে গেলাম।
দুজনেই একটা রিকশায় চড়ে বসলাম। রিকশায় চড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। সাথে যদি বক বক করার মতো কেউ থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আমরা দুজন নিজেদের কথায় এতোটায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে আর কারো কথায় মনে নেই। রিকশা এসে শপিং মলের সামনে দাঁড়ায়। রিকশা থেকে নামতে নিলেই হাত থেকে ফোনটা রাস্তায় পড়ে যায়। ফোন তুলে দেখি অফ হয়ে গেছে। অনেক বার অন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই অন হচ্ছে না।
আপাতত ফোনের চিন্তা বাদ দিয়ে শপিং মলের ভিতরে ঢুকলাম। ত্রয়ী অনেক কিছু কিনছে। কিন্তু আমার কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। আমার এই এক সমস্যা নিজের জিনিস নিজে পছন্দ করে কিনতে পারি না। হঠাৎই চোখ আটকে গেলো একটা উড়নায়। উড়নাটা কালো রঙের। কালোর মাঝে সোনালি সুতায় কাজ করা। সাধারণ কাজ তবুও আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করছে।
উড়নাটা যে দোকানে ছিল তার থেকে আমরা অনেকটাই দূরে ছিলাম। হঠাৎই মনে হলো আমার আগে যদি অন্য কেউ কিনে নেয় উড়নাটা। আমি ত্রয়ীর হাতটা টানা শুরু করলাম।
এই রিয়া! কী হয়েছে? তুই আমার হাত ধরে এভাবে টানাটানি করছিস কেনো? ড্রেসটা দেখতে তো দিবি।
আমি ত্রয়ীর কথায় পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলাম দোকানের দিকে। কেউ একজন উড়নাটার দিকে হাত বাড়িয়েছিল তার আগেই উড়নাটা টেনে আমার কাছে নিয়ে এলাম। উড়নাটার অপর পাশে ইফাদ দাঁড়িয়ে ছিল, আর উনিই উড়নাটার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলেন। উনাকে দেখে আমি অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
কেমন আছেন ভাইয়া?
উনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,
এই তো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? উফ সরি আপনাকে তুমি বলে ফেললাম।
আলহামদুলিল্লাহ। সমস্যা নেই আপনি আমাকে তুমি করেই বলেন। আমি আপনার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট। বাই দা ওয়ে উড়ানাটা কী গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিচ্ছিলেন?
ত্রয়ী আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে, 'উফ সরি আপনাকে তুমি বলে ফেললাম।' এটা হচ্ছে ছেলেদের মেয়ে পটানোর ট্রেন্ড।
ত্রয়ী আর কিছু বলতে চেয়েছিল। তার আগেই আমি ত্রয়ীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাই। আমার চোখ রাঙানো দেখে ত্রয়ী চুপ করে যায়।
গার্লফ্রেন্ডের জন্য না বোনের জন্য।
তাহলে আপনিই এটা নিন।
না এটা তুমিই নাও। তোমাকেই মানাবে এটাতে।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আসি তাহলে।
উনাদে বিদায় জানিয়ে বিল পে করে চলে এলাম। এদিকে ত্রয়ীর আনলিমিটেড বকবকানি। আমি এই লোকটাকে কী করে চিনি। লোকটার সাথে এতো কথা কেনো বলছিলাম। নিজের পছন্দের জিনিস লোকটাকে কেনো দিয়ে দিচ্ছিলাম। ত্রয়ীর বকবকানি সহ্য করতে না পেরে আমি ত্রয়ীকে সবকিছু খুলে বললাম। ত্রয়ীর মুখ তো বন্ধই হলো না উল্টো এনাম ভাইয়াকে গালি দেওয়া স্টার্ট করছে।
______________
কলিংবেল বাজাতেই সন্নিতা দি এসে দরজা খুলে দিল। ড্রয়িংরুমের কোথাও মামুনিকে দেখতে পেলাম না। হয়তো ঘুমাচ্ছে। আংকেলের কড়া নির্দেশ প্রত্যেক দিন বিকালে মামুনিকে ঘুমাতে হবে। নাহলে খবর আছে। বিয়ের এতোগুলো বছর হয়ে গেলো এখনো দুজনের মাঝে ভালোবাসা একটুও কমেনি। দিন দিন আংকেল যেনো মামুনির প্রতি আরো বেশি কেয়ারিং হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা রুদ্র তো আংকেলের ছেলে। শুনেছিলাম ছেলেরা নাকি বাবার মতো হয়। তাহলে আংকেল যেমন মামুনির প্রতি কেয়ারিং তেমন রুদ্র আমার প্রতি কেয়ারিং হতে পারে না। রুদ্র তো আমার প্রতি কেয়ারিংই তবে সেটা ভালোবাসা থেকে না দায়িত্ববোধ থেকে।
রুমে এসে রুদ্রকে বিছানার ওপর বসে থাকতে চমকে ওঠলাম। এই সময় তো উনি বাসায় থাকেন না। উনি মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। আমার আসার শব্দ শুনেই হয়তো মাথা তুলে তাকিয়েছেন। আমি উনার চোখ দুটো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। উনার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। নাকটাও লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি ভীষণ রেগে আছেন। কিন্তু কেনো? আমি তো রাগার মতো কিছু করি নাই।
এতক্ষণে আপনার আসার সময় হলো। তা কী কী শপিং করলেন? আমাকেও একটু দেখান।
উনার কথা শুনে আমি চমকে ওঠলাম। উনি কী করে জানলেন আমি শপিং করতে গিয়েছিলাম? আচমকা উনি আমার হাত থেকে শপিং ব্যাগটা কেড়ে নিলেন। ব্যাগ থেকে উড়নাটা বের করলেন।
বাহ বেশ সুন্দর তো। এটার জন্যই আমারে ইগ্নোর। আমি আবার কারো ইগ্নোর সহ্য করতে পারি না।
হুট করেই উনি উড়নায় আগুন ধরিয়ে দিলেন। আমি উনাকে আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারি নাই। চোখের সামনেই উড়নাটা পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। হাতে আগুন লেগে ফুসকা পড়ে গেছে। বাহ্যিক ব্যথার চেয়েও মনের ব্যথাটা অনেক বেশি। কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লাম।
কেনো করেন এমন আপনি আমার সাথে? হৃদয় নামক কোনো বস্তু কী আপনার নেই? আপনি কী কোনো দিনই অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারবেন না?
উনি আমাকে বসা থেকে টেনে দাঁড় করালেন। আমার বাহু ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
আমিই নাহয় হৃদয়হীন। আপনার তো হৃদয় আছে। আপনি তো অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেন। আপনাকে নিয়েও যে কেউ টেনশন করতে পারে সেটা তো আপনি অনুভবই করতে পারেন না। আপনি তো নিজেরটা নিজে বুঝতে শিখে গেছেন। গতকাল এক্সিডেন্টের কথাটাও আমার কাছ থেকে চেপে গেলেন।
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে কাবার্ডে লাথি মারলেন। দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরলেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি আবার আমার দুই বাহু চেপে ধরেন। এবার বেশ জুড়েই চেপে ধরেন যার কারণে বেশ ব্যথা পাচ্ছি। একদিকে পুড়ে যাওয়া হাতের ব্যথা, আরেক দিকে উনার দেওয়া ব্যথা। চোখ দিয়ে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ইলানের কাছ থেকে যখন জানতে পারলাম তোমাকে কেউ মারার চেষ্টা করেছিল। তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। পাগলের মতো ছুটে এসেছিলাম তোমার কোচিংয়ের সামনে। কিন্তু তুমি নেই। পুরো কোচিং তন্য তন্য করে খোঁজলাম। ফোনের কথা মাথায় আসতেই তোমাকে ফোন দিলাম। কিন্তু তুমি আমার ফোন পেয়েই ফোন বন্ধ করে দিলে। আমার মনে আরো বেশি ভয় ঢুকে গেলো। দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শহরের অলি গলি তোমাকে খোঁজে বেড়ালাম। এট লাস্ট দেখি তুমি শপিংমল থেকে শপিং করে বের হচ্ছো। অন্যের অনুভূতির মূল্য না দিলে কখনোই নিজের অনুভূতির মূল্য পাবে না।
উনি আমার ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। আমি হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম।
উনি এই ভালো তো এই খারাপ। কবে এই অসহ্যকর অনুভূতি থেকে মুক্তি মিলবে?
হাতে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। আমার সামনে রুদ্র বসে আছে। সন্তপণে আমার হাতে বার্ন ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমি লাফিয়ে ওঠায় উনি বিরক্ত বোধ করলেন। মুখ থেকে 'চ' এর মতো শব্দ উচ্চারণ করলেন। ক্রিম লাগিয়ে উনি ওঠে দাঁড়ালেন। কাঠ কাঠ গলায় বলেন,
আমার ওপর রাগ করছো ভালো কথা। তাহলে সেই রাগ নিজের ওপর কেনো দেখাচ্ছো? নেক্সট টাইম এমন করলে এর ফল ভালো হবে না।
আমি উনার কথার প্রত্যুত্তর করলাম না। আমি নিঃশব্দে শুয়ে পড়লাম। উনিও আমার কাছ থেকে উত্তরের আশা করলেন নাহ। ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশরুম থেকে চলে গেলেন। মিনিট দশেক পরে উনি ওয়াশরুম থেকে এসে আমার পাশে ধপ করে শুয়ে পড়লেন। আমি উনার দিকেও ফিরেও তাকালাম না। উনার দিকে পিঠ দিয়েই শুয়ে রইলাম। উনি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললেন,
তুমি অনেক ভাগ্যবান। প্রিয়জন হারানোর ব্যথাটা এখনো অনুভব করোনি। প্রিয়জন হারানোর ব্যথাটা কতোটা ভয়ঙ্কর যে হারায় সেই-ই বুঝে। বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যায়। শুধু দেহটাই অবহেলায় পড়ে থাকে প্রাণটা তো তার সাথেই চলে যায়।
আমি চমকে উনার দিকে তাকালাম। উনি দৃষ্টি উপরের দিকে। উনার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে উনি অরি আপুকে কতোটা ভালোবাসতেন। বক্ষঃস্থলে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। উনার কথাটা আরেক বার আওড়ে নিলাম। হুট করে উনি প্রিয় জন হারানোর কথা কেনো বললেন? আমাকে হারানোর ভয় পান উনি? আমি কী সত্যিই উনার প্রিয়জন? মন বলে ওঠে, না তুই শুধুই উনার দায়িত্ব।
_________________
আজকে অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠেছি। গতকাল ভালো করে পড়া হয়নি। এখন সব পড়াগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
তুমি কী এখন খাবা না?
না।
গতকাল রাতেও কিছু খাওনি। এখনো খাবে না। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল তোমার মতো ত্যাড়া মেয়ে সোজা ভাবে বললে কথা শুনবে না।
উনি আমাকেসহ চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি উনার দিকে ঘুরতেই উনি আমার মুখে ডিম ঢুকিয়ে দিলেন। আমি চোখ মুখ কুচকে ফেললাম। ডিমের কুসুম আমার বরাবরই অপ্রিয়। ডিমের সাদা অংশ আমার ভীষণ ভালো লাগে, ডিমের কুসুম খেলেই অস্বস্তি হয়। কেউ যদি আমার অপ্রিয় জিনিস আমাকে জোড় করে খাইয়ে দেয়। তাহলে সেগুলো তো পেটে যায়ই না বরং পেটের ভিতর থেকে সবকিছু উগ্রে আসে।
আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমি হাত দিয়ে মুখে চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। গড়গড় করে বমি করে দিলাম। উনিও আমার পিছন পিছন আসলেন। উনি এসে আমাকে পিছন থেকে ধরলেন। আমি ক্লান্ত হয়ে নিজের সমস্ত ভার উনার ওপর ছেড়ে দিলাম। হঠাৎই মামুনি রুমে আসে। আমাকে বমি করতে দেখে মামুনি অস্থির হয়ে বলেন,
এই রুদ্র কী হয়েছে রিয়ার? এভাবে বমি কেনো করছে?
কী বলবো তোমাকে? এই মেয়েকে নিয়ে পারছি না। না খেয়ে খেয়ে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুই দিন আগে বললো মাথা কেমন ঘুরছে। আর আজকে একটু ডিম খেতে না খেতেই বমি করে ওয়াশরুম ভাসিয়ে দিল। কোনদিন না জানি রাস্তা-ঘাটে অঙ্গান হয়ে পড়ে থাকে। এই মেয়েকে নিয়ে টেনশন করতে করতে নিশ্চিত আমি একদিন হার্ট এ্যাটাক করবো।
উনি আমাকে ধরতে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। অদ্ভুত ব্যাপার আমি মামুনির চোখে মুখে চিন্তার চাপের পরিবর্তে খুশির ঝিলিক দেখতে পাচ্ছি। যে ব্যক্তি আমি একটু ব্যথা পেলেই টেনশন করে প্রেসার হাই করে ফেলে। আজকে এতকিছু শোনার পরও খুশি হচ্ছে।
বমি করা মাথা ঘুরানো এসব তো প্রেগনন্সির লক্ষণ। এতো তাড়াতাড়ি তোরা যে বাচ্চা নিয়ে নিবি সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। রুদ্র তুই তো আর অবুঝ না রিয়া বাচ্চা একটা মেয়ে। মেডিকেলে ভর্তি হওয়া, পড়াশোনা সবকিছুই এখনো বাকি। রুদ্র তুই এমন কেয়ারলেসের মতো কাজ করলি। যাই হোক আমি ভীষণ খুশি।
মামুনির কথা শুনে আমি চমকে ওঠলাম। মামুনি এসব কী বলছে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এর মাঝেই ঘটে ইলান ভাইয়ের আগমন। উনি এসেই সোফায় আয়েশ ভঙ্গিতে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন।
তোমার এতো খুশির কারণ কী আন্টি?
দারুণ খুশির খবর ইলান। আমাদের বাসায় নতুন অতিথি আসতে চলেছে।
ইলান ভাইয়া ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, মানে?
রিয়া প্রেগনেন্ট। রিয়া মা হতে চলেছে। আমি দাদি হতে চলেছি।
মামুনির কথা শেষ হওয়ার আগেই ইলান ভাইয়া এক লাফে সোফা ছেড়ে বিছানায় চলে এলেন। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি প্রেগনেন্ট আর আমিই জানি না। ইলান ভাইয়া রুদ্র পাশে বসে রুদ্রকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,
তুই তো আমার থেকেও ফাস্ট। আমি বিয়ে করলাম এতোদিন হয়ে গেলো এখনো বাবা হতে পারলাম না। আর তুই আমার পরে বিয়ে করে আমার আগে বাবা হয়ে যাচ্ছিস। সেদিন তো খুব আমাকে বলছিলি, আর আজ...
স্টপ ইলান।
ইলান কেনো থামবে। কোনো থামা থামি নেই। আজকে এতো বড় একটা খুশির খবর বাড়িতে এসেছে। আজকে আমাদের আনন্দের দিন। আমি তোর বাবাকে, তোর খালামনিকে, রিদিদের সবাইকে জানিয়ে আসি। আমার কতো কাজ। আমি দাদি হতে যাচ্ছি। বেবির জন্য শপিং করতে হবে কাথা শেলাই করতে হবে। তার আগে আজকে বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করতে হবে। ইলান আমার সাথে আয়। আজকে তোর ওপর অনেক দায়িত্ব। প্রথম বার চাচ্চু হতে যাচ্ছিস।
উনি অসহায় মুখ করে মামুনির দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার অসহায় মুখটা দেখলেই আমার হাসি পাচ্ছে। মামুনি কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই রুদ্র ডাক শুনে থেমে যায়।
স্টপ আম্মু।
কী হয়ছে?
তুমি এতো ফাস্ট না দৌড়ে একটু স্লো হাঁটো। তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না। রিয়া কোনো প্রেগনেন্ট টেগনেন্ট না। আমি ও ভুলে গিয়েছিলাম রিয়া ডিমের কুসুম খেতে পারে না। আমি জোড় করে খাইয়ে দেওয়ায় বমি করে দিয়েছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে তো মাথা ঘুরবেই। আমি বলছি একটা তুমি বুঝছো আরেকটা। এজন্যই মানুষ বলে মেয়েরা 'ক' বলতেই কলকাতা বুঝে।
মামুনি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে গেলেন। ইলান ভাইয়া বিছানা থেকে ওঠতে ওঠতে বললেন,
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোর মতো নিরামিষকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না রোমান্সও না।
ইলান ভাইয়া একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে চলে গেলেন। ইলান ভাইয়া চলে যেতেই আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। অনেক উনি বিরক্ত হয়ে বলেন,
হাসছো কেনো?
আমার ইচ্ছা আপনার কী?
আমারই তো সবকিছু। তোমার জন্য আমাকে কেমন একটা পরিস্থিতি পড়তে হলো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিই।
____________
আজকে দুই দিন পর কোচিংয়ে আসলাম। আজকে কোচিংয়ে অনেক সকালে আসছি। দুই দিন ধরে কোচিংয়ে আসি না। ত্রয়ীর কাছ থেকে নোট নেওয়ার জন্যই আগে আসা। দুই দিন মামুনির জন্যই কোচিংয়ে আসতে পারিনি। মামুনির ভাষ্যমতে আমি ভীষণ অসুস্থ। তাই এখানে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না।
ত্রয়ী আর আমি দুজন দুজনেই সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের দিকে এগিয়ে আসলাম। কোচিং থেকে বের হতেই ত্রয়ী আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আমি এসে কোচিংয়ের সামনে দাঁড়াই। উনি সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, নেক্সট টাইম একা একা আসার ভুলটা করলে আমার খবর আছে। আমাকে কোচিংয়ের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন।
হুট করেই পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় স্বজুড়ে আঘাত করে। আঘাত এতোটাই তীব্র ছিল যে মুহুর্তেই মাঝেই চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসলো। আমি মাথায় হাত দিয়েই ঢলে পড়ে যায়ে নিচে।
চোখ খুলতেই উনার মুখটা প্রথম দেখতে পাই। উনার চোখ মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই উনি গালে হাত গলিয়ে দিয়ে বলে ওঠলেন,
এখন কেমন লাগছে? আগের থেকে একটু বেটার ফিল করছো?
আমি মাথা নাড়িয়ে সাই জানালাম। আমি ওঠার চেষ্টা করতেই উনি আমাকে ধরে বসিয়ে দিলেন। আমি চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা হসপিটাল। বাম হাত তুলতে নিলেই হাতে সুক্ষ ব্যাথা অনুভব করলাম। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভেসে আসলো 'আহ'
সাবধানে এতো নড়াচড়া করছো কোনো।
আমি এখানে আসলাম কী করে? আমি তো
তুমি এখন অসুস্থ। এসব নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই। বাসার কেউ জানে না তোমার এই অবস্থার কথা।
আপনি বলেননি কেনো? তারা আমাকে নিয়ে টেনশন করবে না? আমি কতক্ষণ ধরে এখানে আছি?
তুমি দুই ঘন্টা ধরে এখানে আছো। বাসাই বলেছি তোমাকে নিয়ে আমি ঘুরতে গেছি। তোমার ভাই শুধু জানে। শাওন ভাই ঔষধ আনতে গেছে। বাসার আর কাউকে বলি নাই। তোমার মা আর আমার মা এই দুই মহিলা জানলে কাঁদতে কাঁদতে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়বে। পড়ে তাদের সামলাবো নাকি তোমাকে সামলাবো।
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। আমার একটু হাত কেটে গেলেই আম্মু আর মামুনি কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যায়। মানুষ বলেই মায়ের পর যদি কেউ মায়ের মতো ভালোবাসতে পারে সেটা মায়ের বোন। অনেকের একটা মাও থাকে না সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান। আমার দুই দুইটা মা।
ভাইয়া হুড়মুড় করে কেবিনে ঢুকলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
রিয়ার ঙ্গান ফিরেছে?
তুমি নিজেই দেখো না।
আমার দিকে তাকিয়েই ভাইয়া একটা জুড়ে নিশ্বাস নিলো। যেনো এতক্ষণ দমটা আটকে ছিল।
বনু তুই ঠিক আছিস? তোর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো? কষ্ট হলে কিন্তু আমাকে বলবি।
আমি একদম ঠিক আছি। তুমি এতো চিন্তা করো না।
তোকে কে আঘাত করলো? কার সাথে তোর এতো শত্রুতা যে তোর ক্ষতি করতে চায়।
রুদ্র ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললো, এখন এসব কথা থাক। এসব নিয়ে পরে কথায় ভালো।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলায় মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। আমি হাসফাস করছি। আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না। ভাইয়া আর উনি কথা বলছেন। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
বাসায় যাব কখন? আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না।
একটু পরই আমরা বাসায় চলে যাব। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো তো।
____________
গাড়ি বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই উনি গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। বিস্ময়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
কী করছেন কী? নামান আমাকে। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি পায়ে না। আমার পা একদম ঠিক আছে। আমি হেঁটে যেতে পারবো।
একদম চুপ। আরেকটা কথা বললে মুখ সেলাই করে দিব।
আমার প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি হচ্ছে। নিজের বড় ভাইয়ের সামনে নিজের স্বামীর কোলে ওঠার থেকে লজ্জাজনক বিষয় আর কিছু হতে পারে। লজ্জায় আমি হাসফাস করছি। ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া ফোন স্ক্রল করতে করতে আমাদের এমন ভাবে ক্রস করে গেলো যেনো আমাদের দেখতেই পাইনি। ভাইয়া আগে চলে গেলো আমরা পিছন পিছন আসছি।
ভাইয়া কলিংবেল বাজাতেই মামুনি এসে দরজা খুলে দেয়। মামুনির পিছনে আম্মুও আসে। হয়তো ভাইয়াই আম্মুকে এখানে রেখে গেছে। আমাকে উনার কোলে দেখে আম্মু আর মামুনি অস্থির হয়ে পড়ে। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা দেখে আম্মু আর মামুনি কান্না-কাটি শুরু করে দিয়েছে। হাজারটা প্রশ্ন করছে। আমি আঘাত পেলাম কী করে? তাদের আগে জানানো হয়নি কেনো? ব্লা ব্লা।
আমি লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমি এখনো উনার কোলেই আছি। ভাইয়ার সামনেও এতোটা লজ্জা লাগেনি আম্মু আর মামুনির সামনে যতটা লাগছে। ভাইয়া আমার অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে আম্মু আর মামুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
তোমরা কী আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবা? দেখছো মেয়েটা অসুস্থ। তার মাঝে তোমাদের দুই মহিলার হাজারটা প্রশ্ন। আগে ওদের ঢুকতে তো দাও। তারপর প্রশ্ন করো।
আম্মু আর মামুনি দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। উনি আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকেন। আমাকে সোফায় বসিয়ে দিলেন। এতক্ষণে উনি মুখ খুললেন,
এজন্যই তোমাদেরকে বলা হয়নি। কিছু না হতেই কান্নাকাটি করে তোমরা দুজন বন্যা বানিয়ে দাও। তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তোমাদের স্বামীরা আমাদের দুজনকে ধরতো।
উনি আর ভাইয়া চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। আম্মু আর মামুনি ব্যস্ত হয়ে পড়লো আমাকে নিয়ে।
_______________
রুদ্র সবাইকে বলেছে শরীর দুর্বল থাকায় আমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি না বলে সবাই আমাকে হাজারটা কথা শুনালো। আব্বু কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে। আমরা বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর পরই আব্বু এসেছিল। আব্বুও এসে সেই আমার খাওয়া নিয়ে পড়লো। অবশ্য আব্বু আমাকে বকা দেয়নি। আব্বু জানে আব্বু আমাকে বকা দিলে আমি কান্নাকাটি শুরু করে দিব। সেই কান্না থামানোর সাধ্য কারো নেই।
বিছানায় হেলান দিয়ে বইয়ের পাতা মুখ ডুবিয়ে আছি। উনি ওয়াশরুমে গেছেন। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। আমার এই বিরক্তির কারণ হচ্ছে আমার দুই মা। কথায় আছে না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তেমনি উনাদের অতিরিক্ত সেবায় আমার প্রাণ উষ্টাগত। কিছুক্ষণ পরে উনি টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলেন। উনি টাওয়ালটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তখনি আম্মু আর মামুনির আগমন
ঘটে। উনাদের পিছনে পিছনে আংকেল আর ভাইয়াও আসে। মামুনি আমার পাশে বসতে বসতে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
রুদ্র তুই আজকে তোর বাবার সাথে ঘুমা। আমি আর তোর খালামনি আজকে রিয়ার সাথে থাকবো।
আংকেল রুদ্রের কাধে হাত রেখে বলে, চল আজকে বাপ বেটা একসাথে ঘুমাবো। তার আগে আড্ডা দিব।
আংকেলের কথা শুনেই উনি লাফিয়ে আংকেলের থেকে দুই হাত দূরে সরে যান।
আম্মু আমি আব্বুর সাথে ঘুমাবো না।
তাহলে শাওনের সাথে ঘুমা।
একদমই না। আমি আব্বু বা শাওন ভাইয়া কারো সাথেই থাকবো না। শাওন ভাই ঘুমের মাঝে শরীরের হাত-পা তুলে দেয়। আর আব্বু....
আংকেলের দিকে তাকিয়ে রুদ্র থেমে যায়। মামুনি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
বাসায় তো রুমের অভাব ছিল না। কিন্তু সব রুমেই তো অপরিষ্কার। থাকা হয় না তো সব সময় খালিই পরে থাকে। শাওন তুই তোর আংকেলের সাথে থাক। রুদ্র একাই থাকুক।
তোমার জামাইয়ের সাথে আমি কিছুতেই থাকবো না। মনে আছে তিন বছর আগে আব্বু আর আম্মুর বিবাহ বার্ষিকীর দিন আমি আর আংকেল একসাথে ছিলাম। জানো না তো ঐদিন আংকেল আমাকে তুমি ভেবে জড়িয়ে ধরে কী কী বলছে। নাউযুবিল্লাহ আমার বলতেও শরম করে।
ভাইয়ার কথা শুনে আংকেল কাঁশতে কাঁশতে রুম থেকে বের হয়ে যান। আমরা সবাই হেসে দেই। রুদ্রও মুচকি মুচকি হাসছে। এই প্রথম আমি উনাকে আসতে দেখলাম। হাসলে উনাকে ভীষণ সুন্দর লাগে। হঠাৎই উনি গম্ভীর হয়ে বলে ওঠলেন,
থাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি আজকে বাসায় থাকবো না আমার নাইট ডিউটি আছে। এখনি হসপিটালে যেতে হবে। আমি আসছি।
এই বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। উনার পিছন পিছন ভাইয়াও চলে গেলো।
______________
এখন দুপুর দুটো বাজে। এতক্ষণে ফোনে গেইম খেলছিলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। গেইম খেলতেও ভালো লাগছে না। আমি রুদ্রের দিকে তাকালাম। কী নিশ্চিন্তে উনি ঘুমাচ্ছেন। আমার নজর বার বার উনার কানের নিচের তিলটার দিকে যাচ্ছে। তিলটা আমাকে খুব টানছে। আচ্ছা এখন তো উনি ঘুমাচ্ছেন। একটু ছুঁয়ে দিলে নিশ্চয়ই খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে না। আমি টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম তিলটায়। সাথে সাথেই উনি নড়ে ওঠলেন। আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
এখন দুপুর দুটো বাজে। এতক্ষণে ফোনে গেইম খেলছিলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। গেইম খেলতেও ভালো লাগছে না। আমি রুদ্রের দিকে তাকালাম। কী নিশ্চিন্তে উনি ঘুমাচ্ছেন। আমার নজর বার বার উনার কানের নিচের তিলটার দিকে যাচ্ছে। তিলটা আমাকে খুব টানছে। আচ্ছা এখন তো উনি ঘুমাচ্ছেন। একটু ছুঁয়ে দিলে নিশ্চয়ই খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে না। আমি টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম তিলটায়। সাথে সাথেই উনি নড়ে ওঠলেন। আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। উনি নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। উনার ঘুমন্ত মুখটা দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। চুপিচুপি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
_________________
আজকে মনটা বেশ ফুরফুরে। আমার মনটা তো তখনি ফুরফুরে থাকে যখন ভাইয়াকে খোঁচাতে পারি। আজকে ভাইয়ার ক্রাশের সামনে ভাইয়ার মান-সম্মান প্লাস্টিক বানিয়ে দিয়েছি। ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে উনার মুখটা দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম। উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে ওঠলেন,
বিহান তোমাকে কেনো ফোন দেয়?
কথাটা বলতে বলতে উনি আমার দিকে দু পা এগিয়ে আসলেন। ভয়ে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম।
কী হলো চুপ করে আছো কেনো? বিহানের নাম্বার তোমার ফোনে সেইভ করা কেনো? আন্সার মি। বিহান তোমাকে কেনো ফোন দিচ্ছে?
আমি তো বিহানের নাম্বারটা নিজের ফোন থেকে ডিলিট করতেই ভুলে গিয়েছিলাম। এটা নিয়েও এখন উনি রাগ দেখাবেন। নিজের হতবুদ্ধির জন্য নিজেকেই গালি দিতে ইচ্ছে করছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
আমি কী করে বলবো? আমি তো ফোন দিচ্ছি না, বিহান আমাকে ফোন দিচ্ছে। বিহান আমাকে কেনো ফোন দিচ্ছে সেটা আপনি বিহানকেই জিঙ্গেস করুন।
তুমি ওর সাথে যোগাযোগ না রাখলে ওর সাহস হতো না তোমাকে ফোন দেওয়ার।
আজব আমি কেনো ওর সাথে যোগাযোগ রাখতে যাব? আমি তো....
আমি কথা বলার মাঝখানেই আমার ফোনটা আবার বেজে ওঠলো। বিহানের নামটা দেখেই মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারছি না এই ছেলেটার সমস্যা কী? কেনো আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে চাইছে? বিহানকে কিছু কড়া কথা শোনানোর জন্য উনার হাত থেকে ফোনটা নিতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারেন। শব্দে আমি কেঁপে ওঠি। মুহুর্তের মাঝেই আমার চোখের সামনে আমার প্রিয় ফোনটা ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গেলো। জলে চোখ আমার টই টম্বুর হয়ে গেলো। উনি আমার বাহু চেপে ধরে বলেন,
তোমার ফোনের কোনো দরকার নেই। ফোন ইউস করার বয়স এখনো তোমার হয়নি। পড়াশোনা করবা, খাবা, ঘুমাবা আর কোচিংয়ে যাবা আসবা। বাসার কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে আমার ফোন থেকে অথবা আম্মুর ফোন দিয়ে কথা বলবা। না থাকবে বাঁশ আর না বাঁজবে বাঁশি। নেক্সট টাইম তোমাকে যদি বিহানের সাথে যোগাযোগ করতে দেখি এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। মাইন্ড ইট।
কথাগুলো বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। হনহনিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। উনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে আমার কোনো স্বাধীনতা থাকবে না? নিজের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতে পারবো না। অসম্ভব আমি এতোটাও বাধ্য মেয়ে নই।
______________
আমি আর ত্রয়ী একটা কফি শপে বসে আছি। উনাকে অনেক বলে কয়ে কোচিংয়ের কাছের কফি শপটাই এসেছি। উনি সাফ সাফ বলে দিয়েছেন একা একা বাসায় ফেরার চেষ্টা যাতে না করি। উনি আমাকে নিয়ে যাবেন।
দোস্ত দেখ ছেলেটা কত্তো কিউট। ফর্সা, লম্বা কোনো নায়কের থেকে কম লাগছে না। এই ছেলের বউ যে হবে সে তো ভাগ্যবতী। ইশ আমি যদি সেই ভাগ্যবতী হতে পারতাম। উফ এই ছেলেটা যদি আমার হাজবেন্ড হতো। কপালে নজর ফোটা লাগিয়ে দিতাম। কেউ যাতে নজর না দিতে পারে। দেখ গালগুলো কেমন ফোলা ফোলা। ইচ্ছে করছে গালটা টেনে দেই।
ত্রয়ীর কথাশুনে আমি কফি শপের প্রবেশদ্বারের দিকে তাকাই। কফি শপে রুদ্র ঢুকছে। আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। গলায় কফি আটকে গিয়ে কাশি ওঠে গেছে। কিন্তু আমার বান্ধবীর সেদিকে নজর নেই। সে তো রুদ্রকে নিয়ে কল্পনার জগৎ এ ভাসছে।
দোস্ত দেখ ছেলেটা আমাদের এদিকেই আসছে। দেখ ছেলেটার হাটার স্টাইল। সিরিয়াসলি আমি এবার হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে আবার রুদ্রর দিকে তাকাই। রুদ্র আমাদের টেবিলের অনেকটাই কাছে চলে আসছে। উনি আমাদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
তোমার কফি খাওয়া শেষ?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
চল এবার।
আমি চেয়ার ছেড়ে ওঠলাম। উনার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছি। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে ত্রয়ী যে বেশ অবাক হয়েছে। সেটা ত্রয়ীর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এতোটাই অবাক হয়েছে যে মুখটা হা হয়ে গেছে। আমি ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে চোখ মারলাম। ত্রয়ী চমকে ওঠে। আমি মুচকি হেসে চলে এলাম।
উনি গাড়িতে ওঠলেন। আমিও উনার পিছন পিছন গাড়িতে ওঠলাম। উনি আমার দিকে একটা চকলেট এগিয়ে দিলেন। আমি চকলেটটা নিতে নিতে বললাম,
ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন নাকি ঘুষ?
যা ভাবো তাই। তোমার সাথে ওমন ব্যবহার করা আমার উচিত হয়নি। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা রাগ ওঠলে আমি নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারি না। তবে তোমার একটা বিষয় আমার ভালো লাগে।
আমার কোনো বিষয় আপনার ভালো লাগতে পারে। আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি যা করি সবই তো আপনার অপছন্দ।
আমার রাগ ওঠলে তুমি অযথা তর্ক করো না।
অন্য সময় তুমি আমার সাথে যেভাবে তর্ক করো, তখন তুমি শান্তভাবে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করো। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হওয়া উচিত আগুন আর জলের মতো। একজন রেগে গেলে আরেকজন শান্ত থাকতে হয়।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করে যাচ্ছেন। উনি যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বললেন উনি কী আমাকে নিজের স্ত্রী বলে মানেন? প্রশ্নটা আর করা হলো না। কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো। উনার উত্তরটা যদি পজিটিভ হয় তাহলে হয়তো আমি খুশি হবো। যদি নেগেটিভ হয় তাহলে হৃদয়ে দহন বাড়বে। শুধু শুধু নিজের কষ্ট বাড়ানোর তো কোনো মানে হয় না।
________________
বাসাই এসে প্রীলিয়া আপুকে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে আমি চমকে গেলাম। হুটহাট এদের আগমন আমার সুবিধার ঠেকছে না। আমার পিছনে এসে রুদ্র দাঁড়ায়। আমি পিছন ফিরে একবার রুদ্রর দিকে তাকাই। রুদ্র চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
কী ব্যাপার প্রীলিয়া? তুমি এখানে কী করছো?
প্রীলিয়া সোফা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়। আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
বারে আমি বুঝি আমার ফুফির বাসায় আসতে পারি না।
না আসতে পারো না। কেনো এসেছো এখানে?
ফুফির বাসায় আসতে বুঝি কোনো কারণ লাগে? ফুফির বাসায় তো যেকোনো সময় আসা যায়। ফুফির বাসায় আসতে কোনো নিমন্ত্রণ লাগে না আর না লাগে কোনো কারণ। বিনা নিমন্ত্রণেই তো মানুষ ফুফির বাসায় যায়।
প্রীলিয়া আপুর কথাগুলো হয়তো উনার পছন্দ হয়নি। প্রীলিয়া আপুর এমন হেয়ালিপনায় রুদ্র আরো রেগে গেলো। চোয়াল শক্ত করে বলে,
কীসের ফুফির বাসা? আমার আম্মু তোমার ফুফি না। তোমাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তোমার কোনো অধিকার নেই আমাদের বাসায় আসার। সন্নিতা দি, ,, সন্নিতা দি।
রুদ্রর ডাক শোনা মাত্রই সন্নিতা দি ছুটে আসে। এসব কিছুর মাঝে আমি নিরব দর্শক।
শুনো এই মেয়ে যাতে নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় না ঢুকতে পারে। এখন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দাও আর দাঁড়য়ানকে বলে এসো ওকে যেনো নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় ঢুকতে না দেয়।
শুনো এই মেয়ে যাতে নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় না ঢুকতে পারে। এখন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দাও আর দাঁড়য়ানকে বলে এসো ওকে যেনো নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় ঢুকতে না দেয়। এই মেয়ে আমাদের কেউ না।
সন্নিতা দি প্রীলিয়ার আপুর হাত ধরে টানছে। কিন্তু প্রীলিয়া আপুর জায়গা থেকে এক চুলও নাড়াতে পারেনি। পারারো কথা না। প্রীলিয়া আপুর শরীরের অর্ধেক শক্তিও হয়তো সন্নিতা দির শরীরে নেই। এটা দেখে রুদ্র ভীষণ বিরক্তিবোধ করলো। জিন্সের পকেটে হাত দিয়ে উনি কিছু একটা খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস খুঁজে না পেয়ে উনি বিরক্তিতে মুখে 'চ' এর মতো শব্দ উচ্চারণ করলেন। উনি এই পকেট ঐ পকেট করে খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
উনার হাতে একটা রুমাল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। উনি রুমাল কেনো বের করলেন? উনি রুমাল দিয়ে প্রীলিয়া আপুর হাতটা ধরলেন। তারপর এক টানে প্রীলিয়া আপুকে ছুঁড়ে মারলেন দরজার বাইরে। প্রীলিয়া আপু পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। সবকিছু দেখে আমার মুখটা হা হয়ে গেলো। উনি মেইন ডোর লাগাতে লাগাতে দাঁড়য়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
এই মেয়েকে গেইটের বাইরে বের করে দিয়ে আসো। নেক্সট টাইম যেনো ও আমাদের বাসায় প্রবেশ না করতে পারে।
উনি মেইন ডোর লাগাতে গেলে প্রীলিয়া আপু হাত দিয়ে আটকে দেই। রুদ্রের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
এই অপমানের শোধ তো আমি নিবোই। তোমার প্রাণ ভোমরাকে আমি কেড়ে নিবো।
এটা করার চেষ্টাও করো না। তুমি যার কথা বলছো তার গায়ে যদি একটু আঁচড়ও লাগে। তাহলে আমি তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।
আমি তো এসব কিছু করতে চাইছিলাম না। কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করলে। আমি তো সবকিছু ঠিক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সব এলোমেলো করে দিলে। আমাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিলো তো আমি তোমার......
প্রীলিয়া আপুর কথার মাঝেই রুদ্র প্রীলিয়া আপুর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়। রুদ্র কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে অন্য প্রশ্ন। প্রীলিয়া আপু রুদ্রর প্রাণ ভোমরার কথা বললেন। উনার প্রাণ ভোমরা কে? আর উনার তো উনার প্রাণ ভোমরার জন্য ভালোবাসা উতলায়া পড়তাছে আমাকে তো জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা। আমি দৌড় দিলাম রুমের দিকে। এতোটা দৌড়ে আসার জন্য হাফিয়ে গেছি। কোমড়ে হাত রেখে জুড়ে জুড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
ওয়াশরুম থেকে আসা পানি পড়ার শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম উনি ওয়াশরুমে আছেন। আমি বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হলেই উনাকে চেপে ধরবো। আজকে কিছুতেই উনাকে আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দিব না। আজকে আমাকে জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা।
এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ নজর পড়লো একটা ডায়েরীর ওপর। এই ডায়েরীর ওপর নজরটা যে আজকে পড়ছে তা কিন্তু নয়। যেদিন থেকে উনার বউ হয়ে এই রুমে এসেছি। সেদিন থেকে এই ডায়েরীটা আমার নজর কাড়ছে। কিন্তু কোনোদিন সাহস হয়নি এই ডায়েরীটা ধরার। আর ইচ্ছেও হয়নি ডায়েরীটা ধরার।
কিন্তু আজকে হঠাৎই ডায়েরীটা দেখে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগছে। ইচ্ছে করছে ডায়েরীটা একটু ছুঁয়ে দিতে। ডায়েরীটা একটু পড়তে। মনে হচ্ছে এই ডায়েরীটা পড়লেই আমি উনার প্রাণ ভোমরা সম্পর্কে জানতে পারব। আজকে আর নিজের মনকে সামলাতে পারলাম না।
বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ালাম বুক সেলফের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালাম। উনি হয়তো শাওয়ার নিচ্ছেন। উনার আরো অনেকটা সময় লাগবে ওয়াশরুম থেকে বের হতে। বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিলাম। ডায়েরীটার প্রথম পেইজ খুললাম। প্রথম পেইজে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।
তুমি নামক অনুভূতি এতো ভয়ঙ্কর কেনো? না দেয় দূরে সরে থাকতে আর না দেয় কাছে আসতে।
হঠাৎই আমার হাত থেকে কেউ ডায়েরীটা কেড়ে নিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,
নেক্সট টাইম যেনো তোমাকে আমি এই ডায়েরী ধরতে না দেখি। আই হোপ তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো। বুঝতে না পারলে কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
উনি কথাগুলো বলে ডায়েরীটা নিয়ে চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। সব সময় একস্ট্রা ভাব না নিলে চলে না। পিছন ঘুরে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই হাত লেগে বুক সেলফ থেকে একটা বই পড়ে যায়। নিচে ঝুকে বইটা তুলতে গেলেই বইয়ের নিচ থেকে একটা ছবি বেরিয়ে আসে। আমি ছবিটা হাতে নেই। ছবিটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। ছবিটা উনার। কিন্তু এখানে ছবিটার অর্ধেকাংশ। বাকি অংশ কেউ পুড়িয়ে ফেলছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনার পাশে আরো কেউ ছিল। ছবিটা দেখেই আন্দাজ করতে পারছি উনি ক্রোধের বশে ছবিটা পুড়িয়ে ফেলছে। উনার একটা হাত ধরে রেখেছে আরেক জন মানুষের দুইটা হাত।
হাত দুটো যে কোনো মেয়ের তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এবার আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে গেলো। উনার পাশের মেয়েটা অরি আপু।
বাহবা অরি আপুর সাথে কাপল পিকও তুলেছে। তাও আবার হাসিমুখে। দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে হাঁসছে, আর আমার সাথে কথা বলতে আসলে যেনো মুখে নিমপাতা পড়ে যায়। আজকে তো আমি উনাকে হাসিয়েই ছাড়ব।
_________________
আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
তোর জন্যই এসেছি আমি
কাকের মতো কা কা কেনো করছো? আমি একটা জরুরি কাজ করছি। তোমার এই ফাটা
বাঁশ মার্কা কন্ঠের জন্য আমার ডিস্টার্ভ হচ্ছে।
গুণগুণিয়ে গান গাইতে রুমে ঢুকছিলাম। উনার কর্কশ গলা শুনে আমি থেমে গেলাম। পরমুহূর্তেই উনার বলা কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠলো। উনি আমাকে অপমান করছেন। আমার কন্ঠকে অপমান করছে। আমি উনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,
আপনি কী বললেন? আরেকবার বলুন তো।
কেনো শুনতে পাওনি? কানে কম শুনো?
আমি কাকের মতো কা কা করি? আমার কন্ঠ ফাটা বাঁশ? আপনি আমাকে এতো বড় অপমান করলেন?
অপমান কোথায় করলাম? যাহা সত্য তাহাই বললাম।
আপনি দিন দিন ঝগড়াটে হয়ে যাচ্ছেন।
তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে থাকলে যে কেউ ঝগড়াটে হয়ে যাবে।
আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম। মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই আমি উনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলাম। আমি উনার শরীরে শুড় শুড়ি দিতে শুরু করলাম। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো আমি উনাকে শুড়শুড়ি দিলাম। কিন্তু উনার কিছুই হলো না। একটু হাসলেনও না। যেভাবে বসে ছিলেন সেভাবেই বসে আছেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলেন,
এবার আমার ট্রান।
মানে?
আমি কারো কাছে ঋণী হয়ে থাকতে চাই না। আমি বাকিতে বিশ্বাসই নই নগদে বিশ্বাসই। আমি কারো কাছে ধার রাখি না।
কথাগুলো বলেই উনি আমাকে শুড়শুড়ি দিতে শুরু করলেন। উনার কিছু না হলেও আমার অবস্থা বেগতিক। হাসতে হাসতে আমি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। উনাকে থামতে বলছি। কিন্তু উনি থামছেনই না।
ইউ নো তোমার হাসির মতো তোমার কন্ঠও অনেক ভয়ঙ্কর।
আপনি আবারও আমার কন্ঠকে অপমান করছেন আপনি জানেন কত ছেলে আমার এই কন্ঠের প্রশংসা করছে? কত ছেলে আমার এই কন্ঠ শুনেই প্রেমে পড়ে গেছে।
হঠাৎই উনি রেগে গিয়ে আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরেন। হঠাৎ উনার রেগে যাওয়ার কারণটা আমি বুঝতে পারছি না। উনার এমন হুট হাট আক্রমনে কোনদিন না জানি আমি হার্ট এ্যাটাক করে ফেলি।
চলবে.....
Writer:- তাসনিম জাহান রিয়া