ক্রিকেটকে তিনি উজাড় করে দিয়েছেন। বিনিময়ে ক্রিকেটও তাকে দিয়েছে দু'হাত ভরে। অর্থ, প্রতিপত্তি, মানসম্মান কী নেই তার!
প্রতিমাসে দুই হাত ভরে কামান। ছয় হাতে খরচ করেও তা শেষ করতে পারেন না।
জাঁকজমকপূর্ণ জীবন তার। সেখানে কেবল আলোর ছটা। তবে এত আলোর মধ্যেও একটা সাদাকালো অধ্যায় আছে সাকিব আল-হাসানের জীবনে।
সেই কালো অধ্যায়টাকে তিনি আগলে রাখেন। লালন করেন। পেলেপুষে বড় করেন।
সাকিব আল হাসানের একটা নোকিয়া এগারোশে মডেলের মোবাইল ফোন আছে। সেইটা দিয়ে একসময় তিনি সাপ-ব্যাঙ খেলতেন। কৈশোরে প্রেমিকার সাথে কথা বলতেন। আহা, কতো স্মৃতি! সেসব কী আর ভোলা যায়?
কোটি টাকার মালিক সে। তবুও পরম যত্নে আগলে রেখেছেন ফোনটা। এখনো হাতে নিলে প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে যায়। এখনো মাঝেমধ্যে সাপ-ব্যাঙ খেলেন। এত মেন্টাল প্রেশারের মধ্যে এটাই তার রিলাক্সেজেশন। একমাত্র মোটিভেশন।
গার্লফ্রেন্ড পালতে যেমন মানিব্যাগ ভর্তি টাকা লাগে, তেমনি নোকিয়া এগারোশো মডেলের এই ফোনটা পালতেও সাকিবের একটা চিকন পিনের চার্জার লাগে। কিন্তু প্রবলেম হলো, সাকিব এবারের সফরে ভুলে চার্জারটি সাথে নিয়ে যাননি।
এদিকে দিনের পর দিন চার্জ বিহীন অবস্থায় ফোনটার জান প্রায় নিভু-নিভু। চোখের সামনে নিজের প্রিয় ফোনটার এই অবস্থা তিনি আর সইতে পারছেন না। এত উন্নত দেশ ইংল্যান্ড। অথচ কেউ নেই তার ফোনটাকে বাঁচাবার মতন। হাউ ডিজগাস্টিং!
হ্যাঁ, একজন আছেন। তিনি হলেন আতাহার আলী খান। তারও একটা এগারোশ মডেলের ফোন আছে। চিকন পিনের চার্জার আছে। তিনিও নিয়মিত প্রিয় সাপ-ব্যাঙ গেমস খেলেন।
সাকিব দেখলেন আতাহার আলী খান অনলাইনে আছে। ল্যাপটপ থেকে তাকে একটা মেসেজ দিলেন।
-আতা ভাই...
-আরে সাকিব্বাইইইইই...
-ভাই একটা কথা ছিল। একটা জিনিশ ভীষণ প্রয়োজন।
-আরো অতো ভনিতা করার কী আছে, বলে ফেলো।
-আসলে ভাই, আপনার চিকন পিনের চার্জারটা একটু লাগতো। যদি একটু দিতেন।
এবার আতাহার আলী খান একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন। ফোনটা তার অতি প্রিয়। চার্জার ছাড়া সে অচল। এই বিদেশের মাটিতে কিছু হয়ে গেলে তিনি কোথায় আরেকটা চার্জার পাবেন? সাকিব যদি তার ঢাকার একটা ফ্ল্যাট বা নারায়ণগঞ্জের জমিটা চাইতো, তাতেও প্রবলেম ছিল না। তাই বলে চিকন পিনের চার্জার, ইম্পসিবল!
অনেকটা বাধ্য হয়েই আতাহার আলী খান রিপ্লাই দিলেন, "সরি সাকিব, চার্জারটা তো খুঁজে পাচ্ছি না।"
কথাটা যেন সাকিবের বুকে এসে লাগলো। মালেঙ্গার দেয়া একটা কঠিন ইয়র্কার মনে হলো। তারপরেও সাকিব নিজেকে সামলে নিলেন। ইমরুল ব্রোয়ের মতো শক্ত হাতে সেই ইয়র্কার ডিফেন্স করলেন। তারপর বিনয়ের অবতার সেজে বললেন, "আতাহার ভাই কষ্ট করে আবার একটু খুঁজে দেখেন না, প্লিজ।"
আতাহার আলী এবার একটু বিরক্ত হলেন। নিজেকে সামলাতে পারলেন না। অনেকটা বিরক্তি নিয়েই বললেন, "ওহ্ সাকিব, তুমি ব্যাক টু ব্যাক বিরক্ত করছো কেনো! একবার তো বললাম চার্জারটা খুঁজে পাচ্ছি না। প্লিজ, আমাকে আর ব্যাক টু ব্যাক মেসেজ দিবা না।
Writer:- Rajib Debnath