Leave a message
> বিশ্বাস পর্ব ৩
-->

বিশ্বাস পর্ব ৩


এই খারাপ মহিলাকে দেখে নিবো। আগে বের করি তোকে জেল থেকে। (আবির)
_কিছু করতে হবে না। ও আমার বউ! তার মাথা খারাপ আছে। (আমি)
_আরে যা যা তোরা কি করবি ভালো করেই জানি। একজনের বউ চলে যায়। আরেকজন জেলেই মরবে (অরু)
_আচ্ছা! ঠিক আছে, আমরা কি দেখাবো তোমায় অরু। (আবির)
_এই ডিভোর্স কাগজে সাক্ষর করে দে! (অরু)
_আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো না। (আমি)

আবির আমার কানে কানে বলে,দোস্ত দিয়ে দে ডিভোর্স। এই মহিলাকে রেখে লাভ কি?
আমিও আবিরের কথা শুনে ডিভোর্স কাগজে সাক্ষর করে দিলাম। ডিভোর্স কাগজে সাক্ষর করে সেখানের তারিখটা দিলাম ১০তারিখ। আজ হলো ৩তারিখ। যখন এই কাগজ দিয়ে কিছু করতে যাবে তা ১০তারিখের পর পারবে। এর আগে কোন কাজেই আসবে না। এদিকে আমিও বের হয়ে যাবো জেল থেকে।
অরু কাগজ নিয়ে মেয়েটাকে আবিরের কোলে দিয়েই চলে গেলো। আবির এখনো আমার সামনেই দাঁড়ানো।
_আমি কি করে বের হবো?(আমি)
_সেটার জন্য ভাবতে হবে না। কালকই আদালত থেকে বের করে নেওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিবো। (আবির)
_কি করে?
_ আসলে কাল তোকে পাগল প্রমাণ করে বের করে দিবো।
_মানে কি? কি করে?
_ আসলে এই শহরের সবচেয়ে বড় মানসিক ডাক্তার সে আমার বন্ধু। আর ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ দেখে নাই। পেনড্রাইবে আঙুলের ছাপ নাই। সময়ের প্রতি কোন কিছু মনে নাই। আদালতে প্রমান হলো একটা। পাগলের সময় ঠিক নাই। এইসব প্রমান দিয়ে বের করে দিবো । (আবির)
_মানে ডাঃআরিয়ান আপনার বন্ধু? এই শহরের সবচেয়ে বড় ডাক্তার?
_হুম! আমাদের মামলা যে লড়ে সে উকিল,ডাক্তার, পুলিশ আমি সবাই একই কলেজে পড়াশোনা করি। আমাদের বাবার অনেক বড় ব্যবসা ছিলো। আর সবার বাবা একসাথেই শহরে ব্যবসা করতো। তারা বন্ধু ছিলো সে সুবাদে আমরাও বন্ধু ছিলাম। যখন বাবা ব্যবসা লস খেয়ে যায় তারপর সবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর আমরা কলেজ থেকে বের হয়ে একেকজন জন একেক ভার্সিটিতে পড়তে শুরু করি। সবার যোগাযোগ হয়। ডাঃ আরিয়ান যদি মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে দেয় তাহলে। বিচারক এমনেই ছেড়ে দিবে। শহরের সব মামলার রিপোর্ট ও তৈরি করে।তুই শুধু পাগলামি করবি আদালতে আর আবল তাবল বলবি। (আবির)
_দোস্ত! কি বলবো বুঝতে পারতেছি না। আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস! (আমি)
_আচ্ছা, এখন থেকে আপনি তুমি বাদ দিয়ে তুই করেই বলিস। (আবির)
_হুম।
আবির মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো জেল থেকে।
পরেরদিন আমাকে নেওয়া হলো আদালতে। বিচারক বিচারের কাজ শুরু করলো।
_আজকে রায় শুনিয়ে দেন। এই রানাই খুন করে দিছে। (বিপক্ষের উকিল)
_জনাব, তার আগে আমি কিছু দেখাতে চাই। (আমার উকিল)
_তাহলে কি খুনের ভিডিও দেখাবেন এবার? (বিপক্ষে)
_যে পেনড্রাইব পাওয়া গেছে ওটায় আঙুলের ছাপ নাই। এই দেখেন রিপোর্ট আর রানার সময়ের নিয়ে কোন কিছুই মনে থাকে না। সে কি করে খুন করবে? (আমার উকিল)
_মানে? (বিচারক)
_এই নেন সকল রিপোর্ট। আসলে রানা একজন মানসিক রোগী তাই সেই দিন বউকে মারছে। আসলে এইসব খুনের সাথেই জড়িত না। (আমার উকিল)
_সব ভুয়া। মিথ্যা রিপোর্ট। জনাব রায় শুনান (বিপক্ষের উকিল)
বিচারক ভালো করে সব কাগজ দেখছে।
_এই রিপোর্ট মিথ্যা হতে পারে না। ডাঃ আরিয়ানের মতো ডাক্তারের রিপোর্ট ভূল নয়। আসলেই রানা মানোসিক রোগী। কেউ রানাকে ফাসাতেই এইসব করছে। (বিচারক)
_কে করবে যতদিন কাউকে না পাওয়া যায় রানাই খুনী(বিপক্ষের উকিল)
_কে করলো না করলো এইসব নিয়ে মাথাব্যথা নাই আমাদের। রানা নির্দোষ তাই তাকে এইসব থানা পুলিশ বাদ দিয়ে মুক্ত করে দেওয়া হউক। (আমার উকিল)
আমি ভালো করে আদালতের সবাইকে দেখলাম। অরু আর আবির সাহেব নাই আদালতে।
_রানা এই খুনের সাথে জড়িত না। এমন কোন প্রমান নাই সে খুন করছে৷ সন্দেহ করে পুলিশ তাকে এরেস্ট করছে। এই খুন একটা রহস্য। তাই রানাকে মুক্তি দেওয়া হলো। সে যেনো ভালো ডাক্তার দেখায় সেটা তার পরিবারের দায়িত্ব। মন্টুর খুনের তদন্ত করবে পুলিশ। যদি তা না বের করতে পারে। তাহলে এটা ১সপ্তাহ পর এই খুনের মামলা বন্ধ হয়ে যাবে। (বিচারক)
আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। আমার উকিল অনেক খুশী। সবাই চললো সবার মতো।
_আবির কোথায় আসে নাই যে আদালতে? (আমি)
_গতকাল এইসব রিপোর্ট আমাকে দিয়ে চলে গেছে মেয়েকে নিয়ে তারপর মোবাইলও বন্ধ আর দেখাও নাই। (উকিল)
_ও আচ্ছা। আপনার বিল আমি আপনার একাউন্টে দিয়ে দেবো। (আমি)
_আমার কোন বিল দিতে হবে না। আবিরের বন্ধু মানেই আমার বন্ধু । তাই বন্ধুর থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই নাই।তাই কিছুদিনের জন্য বউ নিয়ে দেশের বাহির থেকে ঘুরে আসেন। (উকিল)
তার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।আদালত থেকে বের হচ্ছি আর ভাবতেছি। একজন উকিল সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য প্রমান করে দিয়ে মানুষকে বাচাতে পারে। যখন সত্য বললাম কিছু হয় না। মিথ্যা বলে বের করে দিলো।
সোজায় বাসায় আসলাম। বাসার ভিতর নাই কেউ। আবির সাহেবের বাসায়ও গেলাম গিয়ে দেখি দরজা তালা মারা। মেয়েটা কোথায় জানি? আবির সাহেব কোথায় আবার।
মেয়েটাকে কি করলো তারা কে জানে। অনেকবার আবির সাহেবকে কল দিয়েও ফেলাম না। কি করবো বুঝতেছি না। অরুর বাপের বাড়িতে গিয়ে খুঁজ নিলাম সেখানেও নাই অরু।ওই বেয়াদব যেখানে খুশী যাক মেয়েটাতো আমার। তাকে ছাড়া থাকবো কি করে।
২দিন আবির সাহেব ও মেয়ে, অরু সবাইকে খুঁজেও পেলাম না।
মন্টুর সম্পর্কে খুঁজ নিতে শুরু করলাম।
সে এলাকায় থাকে আশে পাশে মানুষকে জানতে চাইলাম।
তার কাছের একজন বলে, মন্টু রিপা নামে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। ওই রিপার বাসার খুজ নিলাম। সেখানে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়তে মাঝ বয়সী একজন মহিলা দরজা খুলে।
_আমি কি রিপার সাথে কথা বলতে পারি? (আমি)
_কান্না করে মহিলা বলে,আমার মেয়েতো কবেই দুনিয়া থেকে চলে গেছে। তার খুঁজ নিয়ে করবনে?
_সে মারা গেলো কি করে?
_আত্মহত্যা করে। (মহিলা)
_ কেনো মারা গেছে?
_আমার মেয়ের সাথে মন্টু শারীরিক সম্পর্ক করে ভালবাসার নাম করে। আর সেই ভিডিও করে তার ইন্টারনেট দিয়ে দিছে। লোক লজ্জার ভয়ে মরেই গেছে। আর আমি থানা পুলিশ করলে অরু নামের একজন মহিলা টাকা দিয়ে সব ধামাচাপা দিয়ে দেয়। কি করবো সাহেব গরিব মানুষ আমি। আমার কেউ নাই এদুনিয়ায়। তাদের বিচার আল্লাহ করবে। (মহিলা)
আমার আর বুঝার বাকি রইলো না। আমি যত ভিডিও দেখছি তার ভিতর তাহলে রিপা নামের মেয়েটারও ভিডিও আছে।
_আচ্ছা! এখন আপনি কি করে চলেন?(আমি)
_মানুষের বাসায় কাজ করি। কোন রকম চলি।
পকেট থেকে বের করে ১০হাজার টাকা দিলাম মহিলাকে।
_এই নেন কিছু টাকা, ছেলে দিছে মনে করে রেখে দেন।
_আপনি কে?
_আপনার জীবন এমন করছে যারা, তারা আমার জীবনটাও নরক বানিয়ে দিছে।
_তা আপনার নাম কি?
_রানা।
_আল্লাহ আপনাকে সুখে রাখুক এটাই কামনা করি।
মহিলার চোখের পানি দেখে নিজের চোখের পানিও ধরে রাখতে পারলাম না।
সেখান থেকে আসার সময় সোজা চলে গেলাম ব্যাংকে। একাউন্টে রাখা ১০লাখের মতো সব টাকা তুলে নিয়ে আসলাম।
আসার সময় টাকা নেওয়ার সব কাগজ নিয়ে আসলাম। প্রমান স্বরুপ।
আরো ২দিন থেকে তাদের না পেয়ে সত্যের খুঁজে চললাম গ্রামে। গ্রামে মা আমাকে দেখেই মহা খুশী। অরু, মেয়ে কই এইসব জিজ্ঞেস করে বেশি। আমি পুরো ঘর খুজতে শুরু করলাম। ছোট বোনের অনেক শখ ছিলো ডাইরি লেখা। সেই ডাইরীটা খুঁজে বের কতে শুরু করলাম। পুরাতন বই আর খাতার সাথে ডাইরটা পেয়ে গেলাম। আমি ডাইরী খুলে একদিনের লেখার ভিতর মারা যাওয়া একদিন আগের লেখা বের করলাম। তাাতে লেখা,
"দাদা, জানি না তুমি আমার লেখা ডাইরী পাও কিনা। আমার এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে কোন ইচ্ছে ছিলো না। তুমি আমাকে রেখে যাওয়া কয়েকদিন পরই। একদিন দুপুরে আমি গোসল করতে ছিলাম। বাসায় ভাবি আর আমি। তাই ভালবলাম, ভাবি মানুষ লজ্জার কি আছে। গোসলখানার দরজাটা লক না করেই কোন রকম লাগিয়ে গোসল করে ছি। সেই দিন রাতেই দেখলাম ভাবি মোবাইলে আমাকে দুপুরে অর্ধ নগ্ন শরীরের ভিডিও দেখালো আমারই।দুষ্টুমি করে ভাবছি, পরের দিন আমি ছাদে গেলে কিছুক্ষণ পরই দেখি বাসায় এসে একটা ছেলের সাথে ভাবি খারাপ কাজ করতেছে। আমি আসলে ভাবিকে ছেড়ে আমাকে ধরে। আর ভাবির সামনেই ধর্ষন করে। ভাবি দাঁড়িয়ে সেই ভিডিও করে। তোমাকে বললে ইন্টারনেটে সব দিয়ে দেবে বলছে। লজ্জায় বলতে পারি নাই। তুমি আসার পর আমি গ্রামে আসলে দেখি আমার ভিডিও দিয়ে দেয়। আর এ জন্যই লজ্জায় ছেড়ে চলে গেলাম দুনিয়া। আর ভাবি নাকি কোটিপতি হবে এমন ভিডিও বানিয়ে। এইসব কিছু কতদিন করে জানি না। তবে তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আমি খারাপ না, তুমি তোমার বউকে বিশ্বাস করে ঠকলে "
লেখাটা পড়ে টপটপ করে পানি ঝরছে আমার চোখ দিয়ে।
আমি কি করবো। এদিকে আবিরও, মেয়ে ও অরু সব উদাও। আজকে হলো ৯তারিখ। মানে ডিভোর্সের কাগজের প্রমান দেখি অন্যজনকে বিয়ে করে ফেলবে অরু। আবির ও মেয়েটা কোথায় সেটা বের করতে হবে। এইসব ভিডিও ও খুনের পিছনে কে আসল খুনী তা বের করতেই হবে। অরু কি করে এইসবের পিছনে থাকে। আর কার হাত আছে। এইসব ভাবনা আমার মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে।
কালই চলে যাবো শহরে। আমার মেয়েকে বের করবোই। আর আবিরকেও, সে আবার যদি অরুর সাথে মিলে এইসব করে। কিছুই বিশ্বাস করতে পারতেছি না।
পরেরদিন সকালেই মায়ের হাতে ৫লাখ টাকা দিয়ে চললাম শহরের দিকে। সারাক্ষণ আবিরের মোবাইলে চেষ্টা করেও তাকে পাই না। শহরে গিয়ে আগে আমার টাকা নেওয়ার কথা বলে অরুর নামে একটা মামলা করবো। যেখানেই থাকুক পুলিশ বের করবেই।
শহরের যাওয়ার সময়ই একটা কল আসলো রিসিভ করতেই,
-আপনি রানা সাহেব?
_জ্বি বলেন।
_আপনার মেয়ে আমাদের কাছে থানায় আছে নিয়ে যান। ঠিকানা,,,,,,,, চলে আসবেন।
কল কেটে দিলো। আমিও ঠিকানা নোট করে রেখে দিলাম। মেয়েটাকে রাস্তায় ফেলে চলে গেলো নাতো? মেয়ের কথা বললো। আবির কোথায় বললো না যে।
শহরে যেতে যেতে একটা ম্যাসেজও আসলো তাতে লেখা, "মেয়েটাকে এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। আমাদের পিছনে লাগলে সব গুলোকে মেরে ফেলবো। মন্টুর খুনের আসামী বানানোর পর বের হতে পারলি বলে ভেবে নিয়েন না। আমাদের থেকে বেচে যাবেন।"
আমি কোথায় কি করি সব খবর আছে তাদের কাছে।
আমি শহরে ফিরেই সেই থানায় গিয়ে দেখি। মেয়েটা তাদের কাছেই......
চলবে....



লেখা-সোলাইমান রানা

 

Delivered by FeedBurner

a