প্রথম বাঙালি অস্কারজয়ী (সম্মানসূচক) ব্যক্তিত্ব, যার "বঙ্কুবাবুর বন্ধু" গল্পের ছায়া অনুসরণ করেই কালজয়ী সাইফাই চলচ্চিত্র "E.T" নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, যিনি আমাদের ভাষার সাহিত্য ও সিনেমাকে উপহার দিয়েছেন আমাদের একান্ত নিজস্ব গোয়েন্দা প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা, অথবা যার সৃষ্টি করে যাওয়া রাফ এন্ড টাফ কিন্তু পুরনো ছাপের হিউমারসম্পন্ন ভিলেন মগনলাল মেঘরাজ এখনো স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনে থ্রিলিং কিছু সিকোয়েন্স, যার নির্মিত চলচ্চিত্র "পথের পাঁচালি" ও "গুপি গাইন বাঘা বাইন" বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে অন্যতম, আমাদের সাইফাই জনরাতে যিনি প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রের মাধ্যমে তৈরী করে গিয়েছেন হাস্যরস ফুটিয়ে তোলার অন্যরকম উদাহরণ, যার দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক চিত্রকর ও সুরকার, বাবা সুকুমার রায় ছিলেন বাংলার সেরা শিশুসাহিত্যিকদের একজন এবং যার ছেলে সন্দ্বীপ রায় নিজেও একজন চলচ্চিত্রকার; আজ সেই সত্যজিৎ রায় সাহেবের জন্মদিন।
সব্যসাচী এই মানুষটি একাধারে লেখক-সাহিত্যিক, চিত্রকর, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, সুরকার, গীতিকার ইত্যাদি অসংখ্য পরিচয়ের অধিকারী। শুধু বাংলা চলচ্চিত্র বা ভারতীয় চলচ্চিত্রেই নয় বরং তাকে ধরা হয় বিশ্ব ইতিহাসের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মাঝে একজন। জীবদ্দশায় সত্যজিৎ রায় কে বেঁচে থাকতে দেখিনি এই আফসোস আমার সম্ভবত চিরজীবন রয়ে যাবে।
আজ শুধু সত্যজিৎ এর ই নয়, তাঁর সৃষ্ট কালজয়ী সব চরিত্রের পিতার ও আজ জন্মদিন। তাই সকল চরিত্র ও পাঠক-দর্শকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য জন্মদিনে হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন রায়বাবু, আপনি না থাকলে আমাদের ছেলেবেলা নিঃসন্দেহে অসম্পূর্ণ রয়ে যেত।
Writer:- Fahad Hridoy
এই হীরক রাজার দেশে জন্মেছিলে তুমি। রায় পরিবারের জন্ম নেওয়া সেই আগন্তুক শিশুকে দেখে কে ভেবেছিল, তুমি হবে এক মহাপুরুষ! নায়ক রূপে অাপন গুনে অপরাজিত তুমি এই বাংলায়। সাহিত্য চলচিত্রে কত শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছ! কিন্তু একদিন বাংলার অাকাশে দেখা দিল অশনি সংকেত। নক্ষত্রের পতন হল এই বাংলায়। নায়কের বেশে তুমি চির অম্লান।
ওপারে কি ভাল অাছ তুমি? একটু চেয়ে দেখ ঐ অপুর দিকে।
কোন অপু?
অারে মানিক বাবু! মনে নেই? পথের পাঁচালীর অপু।
তুমি যে অামাকে মানিক বাবু ডাকছ সে নাম ক জন জানে বলো! সত্যবাবু বললেও তো লোকে বুঝত অামি সত্যজিত রায়!
কোন অপু?
অারে মানিক বাবু! মনে নেই? পথের পাঁচালীর অপু।
তুমি যে অামাকে মানিক বাবু ডাকছ সে নাম ক জন জানে বলো! সত্যবাবু বললেও তো লোকে বুঝত অামি সত্যজিত রায়!
অপুর অনুপ্রবেশ
অামাকে মনে নেই তোমার সত্য দা? যেদিন চারুলতা অামাকে রেখে পালাল, সেদিন অামিও হলাম দেশান্তরী। মহানগর এক্সপ্রেসে চড়ে পাড়ি দিলাম ঐ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেশে।
কোন চারুলতা?
অারে সত্য দা অপর্ণাকে অামি অাদর করে চারুলতা বলে ডাকতাম।
তাই বলো!
তো কি খবর তোমার অপু?
অামার যে অার কিছু ভালো লাগে না সত্যদা। হীরক রাজার দেশে ঘরে বাইরে এত গণশত্রু অার ভাল্লাগেনা অামার। অামার দুডন্ড শান্তি চাই, একটু পাখা মেলে উড়তে চাই ঐ নীল অাকাশে। পরশপাথরের ছোঁয়ায় যদি জীবনটা বদলে যেত! গপি গাইনের মত গান গাইবো, বাঘা বাইনের মত সাহসী হবো, একটু জলসাঘরে বসে দেবীর লীলা দেখব। কিন্তু কি এক সংসারের মায়াজালে বেঁধেছ অামায়!
কোন চারুলতা?
অারে সত্য দা অপর্ণাকে অামি অাদর করে চারুলতা বলে ডাকতাম।
তাই বলো!
তো কি খবর তোমার অপু?
অামার যে অার কিছু ভালো লাগে না সত্যদা। হীরক রাজার দেশে ঘরে বাইরে এত গণশত্রু অার ভাল্লাগেনা অামার। অামার দুডন্ড শান্তি চাই, একটু পাখা মেলে উড়তে চাই ঐ নীল অাকাশে। পরশপাথরের ছোঁয়ায় যদি জীবনটা বদলে যেত! গপি গাইনের মত গান গাইবো, বাঘা বাইনের মত সাহসী হবো, একটু জলসাঘরে বসে দেবীর লীলা দেখব। কিন্তু কি এক সংসারের মায়াজালে বেঁধেছ অামায়!
ফেলুদা’র অনুপ্রবেশ,
তোপসে এদিকে অায় অপুকে পাওয়া গেছে। কোথাই ছিলে অপু? নিজের একমাত্র সন্তানকে রেখে কোথায় পালিয়েছিলে তুমি? তোমার শশুর মশায় অামাকে নিয়োগ করেছিলেন। অবশ্য একাজে অামি পয়সা নেয়নি।
অারে প্রদোষ মিত্র যে! ২১ রজনী সেন রোড কোলকাতা।
সত্যজিত দা! তোমরা তো সব জমিয়ে অাড্ডা বসিয়েছ! অামি এদিকে ঘরে বাইরে অভিযান করে সারা।
ঐ অপু অাসল একটা নালিশ নিয়ে। দেশটা নাকি চিড়িয়াখানা হয়ে গেছে! অরণ্যের দিনরাত্রি সিক্কিম সোনার কেল্লা ঘুরে কি জানি কি অভিযান সেরে অাসল। কি সব চোখ দ্বাধানো মাথা ঘোরানো গল্প করছিল সেইসব অার কি! প্রতিদ্বন্দ্বীতায় না নেমে নাকি দেশটা কাপুরুষে ভরে গেছে? অামার এই সুন্দর চলচ্চিত্র জগৎকে নাকি এরা ধ্বংস করে ফেলেছে!
হ্যা! সে অার বলতে। সেইসব তদন্ত করতেই তো অামি দিশেহারা।
তারপর বলো কি খবর ফেলু? শঙ্কুর সাথে যোগাযোগ হয়?
সত্যজিত দা! তোমরা তো সব জমিয়ে অাড্ডা বসিয়েছ! অামি এদিকে ঘরে বাইরে অভিযান করে সারা।
ঐ অপু অাসল একটা নালিশ নিয়ে। দেশটা নাকি চিড়িয়াখানা হয়ে গেছে! অরণ্যের দিনরাত্রি সিক্কিম সোনার কেল্লা ঘুরে কি জানি কি অভিযান সেরে অাসল। কি সব চোখ দ্বাধানো মাথা ঘোরানো গল্প করছিল সেইসব অার কি! প্রতিদ্বন্দ্বীতায় না নেমে নাকি দেশটা কাপুরুষে ভরে গেছে? অামার এই সুন্দর চলচ্চিত্র জগৎকে নাকি এরা ধ্বংস করে ফেলেছে!
হ্যা! সে অার বলতে। সেইসব তদন্ত করতেই তো অামি দিশেহারা।
তারপর বলো কি খবর ফেলু? শঙ্কুর সাথে যোগাযোগ হয়?
না দাদা! ও ওর জগৎ নিয়ে ব্যস্ত, অামি অাছি এই গোয়েন্দাগিরী নিয়ে।
তবে শুনেছি প্রোফেসর শঙ্কু বাবুকে এখন সবাই সেলাম ঠেকায়। শঙ্কুবাবু যা একখান কাণ্ডকারখানা করে বসলেন সেবার। সাবাস প্রোফেসর শঙ্কু! তিনি এক মহা অাবিষ্কার করে বসলেন। হায়ারোগ্লিফিক্স পড়ে এক মহা তত্ত্ব বের করলেন। কিন্তু শত্রুদের থাবায় সেই তত্ত্ব হারিয়ে মহাসংকটে পড়লেন শঙ্কুবাবু। তখন অামায় ডেকেছিলেন অার কি! পুনশ্চ প্রোফেসর শঙ্কু এখন দিব্যি অাছেন তার অাবিষ্কার তত্ত্ব নিয়ে।
বুঝলে ফেলু, বাঙালী যতদিন জ্ঞানের কদর করতে না পারবে ততদিন এজাতির মুক্তি নেই। শঙ্কুর মত একজন মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে কি না হতে পারতো! বাঙালী খাটি কালো সোনা ফেলে ক্ষার মেশানো রঙিন সোনার পেছনে ছুটল।
এই যে প্রোফেসর শঙ্কু ইজ কামিং। তোমরা সব জমিয়ে অাড্ডা দিচ্ছ অামি বাপু ঘরে থাকি কেমনে?
তো শঙ্কু মহাশয় অাপনিও এসে শুরু করে দিলেন। এইযে পিচ্চি ছেলেটা এখানে অাছি সে খেয়াল অাছে কারো?
এইযে সবাই থামো, অাগে অপুর কথা শুনি।
না! না! থাক ঢের হয়েছে। একটু ফেলুদার গোয়েন্দাগিরী শুনব অামি। ফেলুদা বলো না গো?
এ তো অামার থেকে ঢের জটায়ু ভাল বলতে পারবে। কি মহাশয় পারবেন তো?
তো শঙ্কু মহাশয় অাপনিও এসে শুরু করে দিলেন। এইযে পিচ্চি ছেলেটা এখানে অাছি সে খেয়াল অাছে কারো?
এইযে সবাই থামো, অাগে অপুর কথা শুনি।
না! না! থাক ঢের হয়েছে। একটু ফেলুদার গোয়েন্দাগিরী শুনব অামি। ফেলুদা বলো না গো?
এ তো অামার থেকে ঢের জটায়ু ভাল বলতে পারবে। কি মহাশয় পারবেন তো?
জটায়ু থাকিতে নো চিন্তা অপু বাবু। এই যে মুনসীর ডায়েরি বের করলাম এখানে সব লেখা অাছে। বাদশাহী আংটি উদ্ধার করে তখন শেয়াল-দেবতা রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত
জয় বাবা ফেলুনাথ। ওদিকে অাবার কৈলাস চৌধুরীর পাথর গেছে হারিয়ে। বাক্স-রহস্য ভেদ করে বের করলেন সেই জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা। তারপর কৈলাসে গিয়ে এক কেলেঙ্কারি বাঁধালেন ফেলুনাথ। এক রয়েল বেঙ্গলকে বধ করে ফিরে এলেন ঘুরঘুটিয়ায়। সেখান থেকে গোলাপী মুক্তা রহস্য উন্মোচন করে সোজা লন্ডনে চলে গেলেন ফেলুদা। কিন্তু সবথেকে মজার কান্ড ঘটল কাঠমাণ্ডুতে। সেখানে এক গোরস্থানে হত্যাপুরীর কাহিনী সাবধান করতে হল।
তবে কি জানো অপু, গোলকধাম রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে থিয়েটারের অপ্সরার কাছেও গেছেন ফেলুবাবু। এই রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত ফেলু কিন্তু শকুন্তলার কণ্ঠহার পড়তে ভুল করেনি।
জয় বাবা ফেলুনাথ। ওদিকে অাবার কৈলাস চৌধুরীর পাথর গেছে হারিয়ে। বাক্স-রহস্য ভেদ করে বের করলেন সেই জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা। তারপর কৈলাসে গিয়ে এক কেলেঙ্কারি বাঁধালেন ফেলুনাথ। এক রয়েল বেঙ্গলকে বধ করে ফিরে এলেন ঘুরঘুটিয়ায়। সেখান থেকে গোলাপী মুক্তা রহস্য উন্মোচন করে সোজা লন্ডনে চলে গেলেন ফেলুদা। কিন্তু সবথেকে মজার কান্ড ঘটল কাঠমাণ্ডুতে। সেখানে এক গোরস্থানে হত্যাপুরীর কাহিনী সাবধান করতে হল।
তবে কি জানো অপু, গোলকধাম রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে থিয়েটারের অপ্সরার কাছেও গেছেন ফেলুবাবু। এই রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত ফেলু কিন্তু শকুন্তলার কণ্ঠহার পড়তে ভুল করেনি।
কি সব মহান সৃষ্টি তোমার। কিন্তু তুমি দেখেছ কি হচ্ছে এখন এই পৃথিবীতে? কি সব নির্মাণ করছে এখনকার নির্মাতারা একটু চেয়ে দেখ। এই বাংলা মনে রাখিনি তোমায়। জন্ম-মৃত্যু দিনে গলায় মালা পরিয়ে খালাস। পড়েছে তোমাকে? তোমার নির্মাণ দেখেছ ক জন?
এই নাও এটা।
কি এটা?
বই।
কি বই?
একেই বলে শুটিং, বিষয় চলচ্চিত্র। অামি লিখেছি কেমন করে চলচ্চিত্র হয়। অামি বলেছি অামার সবকিছু।
এই নাও এটা।
কি এটা?
বই।
কি বই?
একেই বলে শুটিং, বিষয় চলচ্চিত্র। অামি লিখেছি কেমন করে চলচ্চিত্র হয়। অামি বলেছি অামার সবকিছু।
তুমি, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে - এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে
সেলাম
মহারাজা তোমাকে সেলাম
মহারাজা তোমাকে সেলাম
Writer:-
Sagar Mallick