> ভালবাসাকে দিলাম ছুটি পর্ব ৩
-->

ভালবাসাকে দিলাম ছুটি পর্ব ৩


সেদিন বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হল সবার । ফাকা নিস্তব্ধ বাড়িটা যেন হুট করে গমগম করে উঠল মানুষে। বাসার হাজারটা কাজের লোক ছুটোছুটি করছে। নতুন বউ বরন করে ঘরে তুলবেন মনোয়ারা বেগম তাই এতো ছুটোছুটি। নতুন বউকে দেখে সবার যেন অানন্দের শেষ নেই। সবাই বেশ উৎসাহের সাথে কাজ করে চলেছে। আরহামকেও তৃতির সাথে দড়জার বাইরে দাড়া করে রেখেছে নাহুরা। বরন যখন হবে তখন বর-বউ একসাথেই হবে তার ভাস্যমতে। আরহামও তো নতুন বর বলে কথা।
মনোয়ারা বেগম সব আয়োজন শেষে বেশ ধুমধামের সাথে বরন করে নিলেন নতুন বউকে। আশফাক সাহেব দুর থেকে সবটা দেখছেন। তার বেশ ভাল লাগছে তার বউ ছেলেরা আজ ও তার কথা বিনাবাক্যে এভাবে মেনে চলেছে আর আনন্দের সাথে গ্রহণও করছে, বিষয়টাতে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তার নিজের পরিবারকে নিয়ে বেশ গর্ব হচ্ছে।
নহুরা বরন শেষে তৃতিকে নিয়ে গেল তার ঘরে। তার একটা নতুন শাড়ি সে পড়িয়ে দিল তৃতিকে। হুট করে বিয়েটা হয়ে যাওয়াতে তো কোন শপিংও করা হয় নি তৃতির জন্য। এখন শহরে এসেছে, একদিন গিয়ে মন মতো শপিং করে নিয়ে আসবে দুই জা মিলে। তৃতিকে শাড়িটা পড়িয়ে মন মতো সাজালো সে। তৃতি যেন পুতুলে মতো বসে আছে , তাকে যা করতে বলছে তা করছে শুধু। তার বাড়তি একটুও নড়াচড়া সে করে না, যেন কলের পুতুল। মেয়েটাকে জা হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছে নাহুরার। এখন তার দ্বায়িত্ব তৃতিকে এমনভাবে তৈরী করা যেন আরহাম কোন অভিযোগ করতে না পারে।
বাসার সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। বাসায় ঢুকার পর সেই যে নাহুরা তৃতি কে নিয়ে গেল আর দেখেনি আরহাম। ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে এসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো সে। নাহ্ তৃতি আসে নি। নহুরা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল সে আর তৃতি আজ ঘরে খাবে খাবার যেন ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সবাই যে যার মতো খাচ্ছে। আরহাম একবার নহুরার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়াতে মন দিল। মনোয়ারা বেগম মাথা নেড়ে সাই দিলেন। একটা কাজের লোককে ডেকে বললেন যেন খাবার ঘরে দিয়ে আসে। নহুরা যেমন ভাবে এসেছিল আবার চলেও গেল। আরহাম মনে মনে ভাবল," যাক মেয়েটা তাহলে খাবে, ভাবী ঠিক খাইয়ে দেবে।"
খাবার খেয়ে বাড়ির গার্ডেনে একটু হাটাহাটি করার অভ্যাস আছে আরহামের। বিদেশী কালচারে এতোদিন থাকার পর এখনও সেটা অভ্যাসে রয়ে গেছে। সে রাতে খাওয়ার পর একটু হেটে নেয়। এতে খাবার ভালো মতো হজম হয় আবার ঠান্ডা বাতাসে হাটার পর মন ফ্রেস থাকার কারণে ঘুমও ভাল হয়। আজ অনেকটা পথ জার্নি করে আসার কারনে একটু ক্লান্তিভাব এসেছ শরীরে। তাই আজ আর বেশী হাটাহাটি না করে ঘরের দিকে পা বাড়াল আরহাম।
জার্নি করে সবাই ক্লান্ত তাই খাবার পরই সবাই যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। হল রুমে একটা টিমটিম লাইট জ্বলছে। আরহাম খুব সাবধানে এগিয়ে গেল নিজের ঘরের দিকে। ঘরের বাইরে দাড়িয়ে দেখল ঘরের লাইট বন্ধ। কিন্তু বের হওয়ার সময় তো লাইট জ্বালিয়ে বের হয়েছিল সে। ঘরের দড়জা ঠেলে দড়জার পাশেই সুইচবোর্ডটা হাতড়িয়ে খুজল সে। লাইটা জ্বালিয়ে দড়জাটা বন্ধ করে বিছানার দিকে তাকাতে দেখল তৃতি একহাত ঘোমটা দিয়ে বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে আছে।
আরহাম ধির পায়ে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। এসব যে ভাবীর কাজ তা বুঝতে বাকী রইল না তার। এই জন্যই আজ দুজনে ঘরে খেয়েছে। আরহামের তখনই বোঝা উচিৎ ছিল। সে শান্তভাবে বিছানার পাশে এসে দাড়িয়ে তৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
- কি ব্যাপার বসে আছ যে? ঘুমাও নি এখনও?
- ভাবী এভাবে বসে থাকতে বলল তাই। কাপতে কাপতে বলল তৃতি।
আরহাম খানিকটা হাসল। তারপর তৃতিকে বলল, এভাবে বসে থাকতে হবে না। ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়।
বলে সে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ল। তৃতি বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো। শাড়িটা বেশ ভারী, এটা পাল্টে নিয়ে ঘুমালে ভাল হতো। গায়ে সামন্য কিছু গয়না ছিল সেগুলো খুলে রাখল সে। আসার পর তার ব্যাগ কোথায় রাখা হয়েছে জানে না সে, তাই আজ রাতের জন্য এই শাড়ি পড়েই থাকতে হবে তাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুরে দাড়ালো। আরহাম ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে। সেও গেল ফ্রেস হতে।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখল ঘরে বড় লাইটা অফ করে একটা টিমটিম লাইট জ্বলছে। বিছানার কাছে এসে দেখলো আরহাম বিছানায় নেই। সামনে তাকিয়ে দেখল সোফাতো গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে। সোফাতে শোয়ার কোন কারন খুজে পেল না তৃতি। সে ধীর পায়ে গিয়ে আরহামের পাশে দাড়ালো। বোঝার চেষ্টা করল। ঘুমিয়েছে কিনা। ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে, তার মানে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমালে লোকটাকে কি শান্ত আর নিষ্পাপ লাগে কিন্তু তিনি জেগে থাকলে তৃতি ভয়ে তার সামনে এক দন্ড দাড়াতে পাড়ে না, এতো গম্ভীর থাকে কোন লোকটা সবসময়। তৃতি আর আরহামকে ডিস্টার্ব করল না। গুটি পায়ে এসে বিছানার এক কোনায় শুয়ে পড়ল।
তৃতির এমন পরিবেশে থাকার অভ্যাস নেয়। নতুন একটা জায়গা, তার উপর এটা তার শশুড়বাড়ি। আগে কখনও একা একটা ঘরে কোন ছেলের সাথে রাত্রি যাপন সে করে নি তাই একটু অসস্থি লাগছে মনে। গত রাতে তো তৃতি ঘুমিয়ে পড়েছিল আরহাম আসার আগেই তাই এমনটা মনে হয় নি। হয়তো এতোটা অসস্থি লাগতো না যদি আরহাম স্বাভাবিক ভাবে তৃতিকে মেনে নিত, তাদের মধ্যে যদি নরমাল স্বামী স্ত্রীর মতো সম্পর্ক তৈরী হতো। কিন্তু তা এখনও হয় নি। তৃতি বেশ লাজুক একটা মেয়ে, আর আরহাম তো প্রয়োজনের বেশী একটা কথাও বলে না। যেটুকু কথা বলেছে তা গুনে রাখা যাবে। তৃতি ওর বাবা মার কথা খুব মনে পড়ছে। বাবা মা এখন একা একা কি করছে কে জানে? বাবা তো ওকে চোখে হাড়ায় সবসময়। বাবা মা কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল তৃতি।
সকালে তৃতির যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন প্রায় সকালের রোদ উঠা শুরু করেছে। তৃতি বেশ তাড়াহুড়ো করে উঠল বিছানা থেকে। আজ তার শশুরবাড়ীতে প্রথম দিন আর আজই এতো বেলা করে উঠল সে। ঘাড় ঘুরিয়ে সোফাতে দেখন সে। আরহাম নেয়। হয়তো উঠে পড়েছে আগে। কিন্তু তিনি উঠলে তৃতিকে ডাকল না কেন?
তৃতি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখলো তার ব্যাগটা ঘরের এককোনাতে রাখা। কখন রাখল এখানে? কাল রাতেই কি রেখেছিল। একটু খুজে দেখলে তো আর সারারাত এই ভারী শাড়িটা নিয়ে ঘুমোতে হতো না। তৃতি আর কিছু না ভেবে ব্যাগ থেকে একটা হালকা শাড়ি বের করে পড়ে নিল।
নিচে নেমে রান্নাঘরে যেতেই দেখল তার বড় জা আর শাশুড়ী সকালের নাস্তার আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। তৃতিকে দেখে তার শাশুড়ী বলে উঠলেন,,
- ওমা একি, এতো তাড়াতাড়ি উঠতে গেলে কেন? আজ একটু বেলা করে ঘুমাতে। কাল থেকে তো করতেই হবে কাজ। আজকের দিনটা তোমার ছুটি।
তৃতি একটা মিষ্টি হাসি দিল শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে। তার শাশুড়িও একটা হাসি দিয়ে বলল,
- আরহাম উঠেছে?
তৃতি ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিল উঠেছে। নহুরা রুটির জন্য আটা মাখাতে মাখাতেই বলল,,,
- আপনার ছোট ছেলে আবার কবে এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠে মা। ও তো সকাল সকাল উঠেই জগিং এ যায়। তবে এখন বিয়ে হয়েছে একটু বেলা করে উঠতেই পারে। রাতে তো আবার,,,, বলে একটা শয়তানী হাসি দিল।
তৃতির শাশুড়িও মুখ নিচু করে হেসে দিলেন।কিন্তু তৃতি, তার এখন লজ্জা পাওয়া উচিত। পাচ্ছেও কিন্তু কেন সে লজ্জা পাবে, তার তো এসব কথা শুনে রাগ করা উচিত। কারন কাল রাতে তার স্বামী তার সাথে না ঘুমিয়ে সোফাতে শুয়েছিল।এটা তো আর ওর জা কিংবা শাশুড়ি জানে না। আচ্ছা, তিনি এমনটা কেন করেছেন তার উত্তর চাইতে হবে আরহামের থেকে। কোন কারনে কি সে তৃতিকে ইগনোর করার চেষ্টা করছে, জানতে হবে তাকে।
এরমধ্যেই আরহাম জগিং থেকে ফিরেছে। সে ডাইনিং টেবিলে বসল। তৃতির শাশুড়ি ওকে একটা জুসের গ্লাস দিয়ে বলল আরহামকে দিতে। তৃতি রান্নাঘর থেকে গ্লাসটা এনে টেবিলের উপর রাখল। আরহাম একবার মুখ ঘুরিয়ে তৃতিকে দেখল। তারপর জুসটা নিয়ে খেতে শুরু করল। তৃতি সেখানে কিছু সময় দাড়ালো কিন্তু আরহাম আর কিছুই বলল না। তাই সে আবার রান্না ঘরে শাশুড়ী আর জা এর কাছে ফিরে এলো।
আরহাম দেশে আসার পর কিছু কম্পানিতে জবের জন্য এপ্লাই করেছিল। এতোদিন গ্রামে থাকার জন্য কোন খোজ নিতে পারে নি। কয়েকটা জায়গা থেকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক এসেছে। সে ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে নিল। ব্রেকফাস্ট করে ইন্টারভিউ এর জন্য বের হবে।
তৃতি আবার চা হাতে ঘরে এলো। আরহাম তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে জেল দিয়ে চুলগুলো সেটআপ করছিল। গ্লাসে তৃতিকে চা হাতে ঢুকতে দেখল সে। তৃতি এসে আরহামের পাশে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল," আপনার চা।" আরহাম চুল ঠিক করতে করতেই বলল, চা কে দিতে বলল? আমি তো এখন চা খাই না। নিয়ে যাও।
তৃতি হাতটা গুটিয়ে নিল। তার শাশুড়ি বলেছিল তৃতিকে আরহামের জন্য নিজে চা বানিয়ে নিয়ে যেতে।তৃতিও নিজ হাতে আরহামের জন্য চা বানিয়ে এনেছিল।কিন্তু তৃতি আরহামকে আর কিছু বলল না। আরহামের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বললো, আপনি কি কোথাও যাবেন এখন?
আরহাম তৃতির কথার কোন জবাব না দিয়ে বলল, খাবার কি টেবিলে দেওয়া হয়েছে। তৃতি নিচের দিকে মুখ করে বলল, হুম টেবিলে সাজানো হচ্ছে। আরহাম ফিনিসিং টাচ দিয়ে বলল, ওকে চলো। বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। তৃতি সেখানে ঠাই দাড়িয়ে রইলো, নড়তে পাড়ল না।
তৃতির সারাটা দিন বেশ ভালোই কাটল। সারাটা দুপুর সে তার জা আর শাশুড়ীর সাথে রান্না করেছে। তৃতি আগে থেকেই রান্না করতে পছন্দ করে। ফলে অনেক ধরনের রান্না সে পারে। তার শাশুড়ি আর জা অবাক হয়ে যায় তৃতির রান্নার দক্ষতা দেখে। আজ তৃতি বাসার সবার জন্য রান্না করেছে। এটা অবশ্য একটা নিয়ম ওই বাড়ি, বাড়ির নতুন বউ বিয়ের পরের দিন রান্না করে খাওয়াবে বাসার সবাইকে। কিন্তু তৃতির শাশুড়ি চায় নি আজ তৃতি রান্না করুক কারন কাল সবাই এতোটা জার্নি করেছে। এতোটা পথ জার্নি করে সবাই ক্লান্ত , আর এতোগুলো মানুষের রান্না। কিন্তু তৃতি বেশ উৎসাহের সাথে করেছে সব রান্না।
দুপুরে সবাই একসাথে টেবিলে বসে খেয়েছে। তৃতির সবার সাথে বেশ সখ্যতা হয়ে গেছে। যদিও আশফাক সাহেব আর মনোয়ারা বেগম একটু কথা কম বলেন তবুও তারা তৃতির সাথে বেশ কথা বলছেন। তৃতির ননদ ইবনীহা তো যেন টিয়া পাখির মতো পকপক করে চলেছে। খাওয়ার সময় এতো কথা বলার জন্য একবার সে বিষম খেয়েছে তবুও তার কথা বলা কমে নি। তৃতির বড় ভাসুর আবরারও প্রচুর মজার মানুষ, সেও তৃতির সাথে বেশ মজা করেছে। একদিনেই তৃতির সবার সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে। তৃতি মনে মনে বেশ খুশি এতো ভাল একটা শশুড়বাড়ি পেয়ে।
বিকালে পাড়ার সব মহিলারা এসেছিল। তারা শুনেছে গ্রাম থেকে এবাড়ির ছোট ছেলে বিয়ে করে ফিরেছে। একটু মজা করারও উদ্দেশ্য ছিল বোধ হয় তাদের। কিন্তু তৃতিকে দেখে তারা বাকরুদ্ধ হয়ে যান। আজও নাহুরা নিজে সাজিয়েছে তৃতিকে। রুপ যেন উপচে পড়ছে। একবার দেখলে বারবার তাকাতে মন চাইবে। তার থেকে বড় বিষয় তৃতির ব্যবহার, সবাইকে মুগ্ধ করে দিয়েছে। এসেই সবাইকে সালাম করে সবার অনুমতি নিয়ে বসে সে। সবার প্রশ্নের উত্তর বেশ শান্তভাবে এবং মেধা খাটিয়ে দেয়। কারো অভিযোগ করার কোন অবকাশ রাখে না।
সবাই তৃতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মনোয়ারা বেগমও বেশ খুশি হয়েছেন তা তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। সবাই চলে গেলে নহুরা তৃতিকে নিয়ে যায় নিজের ঘরে। সেই সন্ধ্যা থেকে আরহাম কি পছন্দ করে, কি খেতে ভালবাসে, ওর ডেইলি রুটিন সব গুলে খাইয়ে দিয়েছে তৃতিকে। নহুরার প্রত্যেকটা কথা তৃতি বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছ। কেন জানে না মানুষটার সম্পর্কে তার জানতে বেশ লাগছে। অনেকটা সময় গল্প করার পর ওরা গেল রাতের খাবার খেতে কিন্তু আরহাম এখনও ফেরে নি।
আরহাম যখন ফিরে তখন রাত প্রায় বারোটা মতো বাজে। ইন্টারভিউ দিয়ে কয়েটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছিল সে। সেখানে তারা কিছুতেই ছাড়ছিল না তাই বেশ রাত হয়ে গেছে তার। বাড়িতে ঢুকেই দেখে তৃতি টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছে। একবার ভাবল চলে যাবে কিন্তু আবার কি মনে করে এগিয়ে গেল তৃতির দিকে। তৃতিকে একটা ডাক দিতেই ও উঠে দাড়িয়ে পড়ল যেন ক্লাস টিচার এসে ওকে ডাকছে। আরহীমের বেশ মজা লাগল বিষয়টাতে। ও গম্ভীরভাবে তৃতির দিকে তাকিয়ে বলল,,
- এতো রাতে এখানে বসে কি কর?
- মা বলল আপনি ফিরলে যেন আপনাকে খেতে দেয় তাই অপেক্ষা করছিলাম।
আরহাম বন্ধুদের সাথে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে তাই তৃতিকে বলল,,,
- আমার জন্য এভাবে কষ্ট করে বসে থাকতে হবে না। আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তুমি ঘরে এসে ঘুমাও। বলে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগল।
তৃতি আরহামের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর চোখটা নামিয়ে ভাবল, কষ্ট হবে কেন? উনার জন্য অপেক্ষা করতে তো আমার ভাল লাগছিল। লোকটা বোঝে না কেন? আর নিজে খেয়ে এসেছে বলে হড়বড় করে উপরে চলে গেল আমি যে তার জন্য না খেয়ে বসে আছি একবারও জিজ্ঞাসাও করল। খাটাস কোথাকার যেন। তৃতি মুখে একটা ভেঙ্গচি কেটে খাবার গুলো ফ্রিজে গুছিয়ে রেখে দিল।
ঘরে এসে দেখলো আরহান ঘরে নেয়। হয়তো ওয়াসরুম গেছে। তৃতি বিছানাটা ঝেড়ে বিছানার একপাশে গিয়ে বসল। আরহাম ওয়াসরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হল। তৃতিকে বসে থাকতে দেখে বলল,,,,
- একি তখন তো নিচে ঝিমুচ্ছিলে তো এখনও না ঘুমিয়ে বসে আছ কেন? বলে সোফা গিয়ে বসল।
তৃতি দাড়িয়ে বলল,, আপনি আজকে বিছানায় শুবেন দয়া করে। বিছানাটা বেশ বড় , আমার বিছানাটার থেকেও বড়। দুজনের শুতে কোন সমস্যা হবে না।
আরহাম মৃদু হেসে বলল, শুয়ে পড় পাগলি।
তৃতি এবার আরও দৃড়ভাবে বলল, না আপনি বিছানায় না শুলে আমিও শোব না।
- তাই, তো কোথায় শুবে।
- আপনার সাথে সোফাতে।
আরহাম আঁতকে উঠে দাড়িয়ে পড়ল। তৃতি কথাটা বলে বেশ লজ্জা পেল। তারপর মিনমিন করে বলল, না মানে আপনার কোন সমস্যা হলে আমি সোফাতে শুচ্ছি কিন্তু আপনি বিছানাতে শোবেন প্লিজ।
আরহাম আর কিছু বলল না। জানে এই পাগলিকে বোঝানো যাবে না। সে ধীর পায়ে এসে বিছানার একপাশে শুয়ে তৃতির দিকে তাকিয়ে বলল," লাইটটা বন্দ করে শুয়ে পড়।"
চলবে,,,

Writer:- জাকিয়া সুলতানা
 

Delivered by FeedBurner

a