Leave a message
> আদহাম পর্ব ৫ সত্য ঘটনা অবলম্বনে
-->

আদহাম পর্ব ৫ সত্য ঘটনা অবলম্বনে


আমার ফ্যামিলি থেকে তখন থেকে বিয়ের প্রেশার চলতেছিলো অনেক।
লাস্ট ২০১৭ তে আমার রিলেটিভ একজন এক প্রস্তাব নিয়ে আসে।
ছেলের বয়স ৩৭+ হবে। কিন্তু ছেলে প্রবাসী, বলতে লজ্জা করলেও বলি আমরা ছিলাম মধ্যবিত্ত। আমাদের অপেক্ষা আমার ওই রিলেটিভ ছিলো ভালো অবস্থানে কিন্তু সে আরো ও ভালো অবস্থায় যেতে চায়; উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশি তার।
তার ইচ্ছা ছিলো আমাকে সেই প্রবাসীর সাথে বিয়ে দিয়ে তারা ও বাহিরে সেটেল হওয়ার ট্রাই করবে তার সাহায্য নিয়ে; কারণ ওই প্রবাসী প্রচুর টাকাওয়ালা ছিল এবং তার বিজনেস ছিলো গোল্ডের।
তার আমাকে পছন্দ ও হইছিলো অনেক।
আল্লাহ সাথে ছিল হয়ত তাই ওই যাত্রায় আমার মামা বাধা দেন, এত বয়স্ক ছেলের সাথে তার উপর প্রবাসী এজন্য দিবেন না।
আদহাম ওই ছেলেকে দেখে বলতেছিলো, মানুষ নিজের মেয়ের মত মেয়েকে এমন একজন বয়স্ক লোকের কাছে বিয়ে দিতে চায় কিভাবে? এত শিক্ষিত হয়ে ও!
তুমি একটু অপেক্ষা কর সব ঠিক হবে।
আমার যত ফ্যামিলি সমস্যা যত সমস্যা সব কিছুর উপর ও ছিলো আমার ছায়ার মত আমার ভরসা ছিলো। আমি ভাবতাম এই একটা মানুষ আজীবন আমার সাথে থাকবে, কখনো ছেড়ে যাবে না।
আমাকে হাসানোর জন্য সে সময় ও বলে, আমি ও এখন থেকে বলবো, এই আম্মু আমার জন্য মেয়ে দেখতেছে। আজ ওই মেয়ে দেখতে আসছিলো, পরশু ওমুক মেয়ে দেখতে আসছিলো। আমার বিয়ে হয়ে যাবে। হাহাহা, তখন বুঝবা প্যারা কাকে বলে!
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, খবরদার এমন বলবা না বলে দিলাম, আস্ত গিলে ফেলবো।
আদহাম বলে, ওরে রাক্ষুসী বউ আমার! রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া বউ আমার, খালি রেজিষ্ট্রেশন করাই বাকি! এমন বউ যে, সেই বউ এর মুখ থেকে সারাক্ষণ শুনা লাগে, অন্য কারোর সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। বলে সেই একটা হাসি। আমিও আর মন খারাপ করে থাকতে পারিনা হেসে দেই।
আমার হাসির জন্য যেমন ও সবকিছু করতে পারে আর কান্না থামানোর জন্য ও।
এভাবে সকল সমস্যার সমাধান ছিলো একজনই, আমার আদহাম!
আমার সকালে প্রচণ্ড চা, কফি বা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস একদম খালি পেটে যার জন্য আমার আম্মু বা কেউই অনেক বকা দিয়েও ঠিক রাখতে পারতো না দুইদিন ও। কিন্তু ও আমাকে বুঝাতে শুরু করলো, এভাবে খেলে আমার ফিউচার এ বড় সমস্যা হবে। আমি কি সেটা চাই?? অনেক বুঝাতে বুঝাতে আমার এই অভ্যাস বাদ দিয়ে দিলাম! এতো বছরের অভ্যাস মানুষটার জন্য চলে গেলো একদম!
আমি বজ্রপাত খুব ভয় পেতাম ছোটবেলা থেকে। এমন বজ্রপাতে আমি দৌড়ে আম্মু আব্বুর কাছে গিয়ে পাশ দিয়ে শুয়ে পরতাম বা আব্বু আম্মুকে কল দিয়ে নিয়ে আসতাম আমার কাছে।
এমন এক রাতে তখন আমি নানু বাসায় ছিলাম, কি করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না। আর তখন ও জানতো না আমি ভয় পাই। কিন্তু যেই না অনেক বজ্রপাত শুরু হলো আমি ফোনে কথা বলা অবস্থায় শুরু করলাম কান্না ; আর বলতে থাকলাম তুমি ফোন রাখো, আমি নানুর কাছে যাব! আর ওর সেই হাসি শুনে কে! বলে যে, আল্লাহ! এই বুড়ি হইয়া তুমি ভয় পাস??
অন্য সময় হলে হয়তো রেগে যেতাম তখন আর এসব গায়ে লাগতেছে না! আমি তো ভয়েই শেষ।
পরে ও বললো, চুপ চাপ শুয়ে থাকো। আমি আছি সাথে, আমি পাহারা দিচ্ছি লাইনে থেকে তুমি ঘুমাও। আমি তো রাজি হচ্ছিলাম না, তবুও সাহস করে শুয়েই ছিলাম, কিন্তু কখন যে ঘুমিয়েছি তা টের পাইনি!
পরেরদিন সকালে বলললো আমি সকাল অব্দি লাইনে ছিলাম প্রায় ৬টা! ফাজিল তোমার একবার ও ঘুম ভাঙেনি।
আমি বললাম টের পাইছো যখন ঘুমিয়ে পড়েছি, লাইন কেটে দিলেই পারতে।
ও বললো কেন কাটবো? আমি পাহারা দিচ্ছিলাম আর যদি তুমি ভয় পেতে তখন? আমি মুচকি হাসি দিয়ে ভাবলাম, আমি ভাগ্যবতী! সত্যিই খুব ভাগ্যবতী!এই মানুষটা আজীবন আমার থাকবে!
অল্পস্বল্প খুনসুটি নিয়ে আমাদের দিনের শুরু হতো আর রাত শেষ হইত আমার মাঝরাত আর ওর রাতের শুরু!
একটা ঘটনা বলি..
আমাদের ভিতরে একবার, ২০১৮ সালে প্রথম রাগারাগি হয় দেড় বছর এর সম্পর্কে!
হুট করে অনলাইনে আসা বন্ধ ওর!
আমি তো বুঝিনি তখন ও ঠিক কি হবে!
আমার সারাদিন অপেক্ষা করতে করতে গেলো আর সারা রাতটা।
আমি ওইদিন রাত তিন টায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
ওটা ছিলো ওর ১ম অনুপস্থিতির পরেরদিন সকাল বেলা,ওর কোনো মেসেজ নেই! যে মানুষটা আমাকে গুড মর্নিং উইশ করতে কষ্ট করে খুব সকালে জেগে যেতো সেই মানুষটার সম্পূর্ণ একদিন কোনো মেসেজ কিংবা ফোনকল নেই!
এবার তো আমি টেনশনে পরে গেলাম, কিছু কি হয়েছে? অসুস্থ নাতো? ওর শরীর ভালো তো? অনেক চিন্তা মাথায় আসতে ছিলো; খুব অস্থির হয়ে ওর কাজিন কে মেসেজ করলাম। আদহামের সব রিলেটিভ ভাই বোনরা, ফ্রেন্ড সার্কেল,জুনিয়র সবাই আমাকে চিনতো এক নামে কারণ ও আমার আর ওর ফানি অনেক কনর্ভাসেশন দিতো মাইডে তে এবং কিছু পিক ও!
তো ওর কাজিন বললো, সে জানে না কিছু!
আমার কাছে তখন অন্ধকার ছাড়া কিছু ছিলো না। ওইদিন আমি চুপচাপ ছিলাম, কোচিং এ যাইনি বলে রাখি আমি ২য় বার এডমিশন টেস্ট দিবো তার কোচিং( প্রাইভেট)। যেকোনো উপায়ে আমাকে ওর কথা জানতে হবে।
কিন্তু কি উপায়ে! সে তো আর আমার কাছে না এবং দেশে ও না।
শুধুমাত্র মেসেঞ্জার ছিলো আর কিছুই না। এভাবে তিন দিনের দিন ওর কাজিন আদহামের আম্মুকে কল দিয়েছিলো তখন আদহামের সাথে কথা বলে এবং বলে তোর বউ তো মনে হয় পাগল হয়ে যাবে, আমাদের ম্যাসেজ দিতে দিতে।
কি হইছে তোদের?
আদহাম তখন আর কিছু বলেনা আর তারপর
রাগে মেসেঞ্জারে এসেই কল করে আমাকে বলে,
এই সমস্যা কি, তুই সবাইকে জ্বালাচ্ছিস কেনো?
আর আমি হাসি আর বলি, মানুষ একটু বলে তো তাই না? তুমি তো বলো নাই আমাকে যে, আসবেনা! আমার অনেক টেনশন হচ্ছিলো, অনেক ভয় পাইছি আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো ( এই কথাটা বোধহয় আমি ৪/৫বার বলছি)।
তার উপর ওর ভয়েস শুনে কান্না শুরু নিশ্বাঃস বন্ধ হওয়ার উপক্রম, কিন্তু এত শান্তি লাগছিলো আমি দাঁড়ানো থেকে বসে গেছিলাম।
আর একটা শব্দ করেনি, শুধু শুনে গেছে আর ঠিক মিনিট পর শুরু করলো বলা, প্লিজ কান্না বন্ধ করো। কান্না করো না। আমার স্যয়ার কান্না করো না।
কিন্তু আমি তো আর কান্না থামাতেই পারিনা,
ও চেষ্টা করেও পারলো না।
আমি হুট করে শুনি ও নিজেও কাঁদতেছে!আমি সাথে সাথে সাইলেন্ট মানে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে খেয়াল করে শুনলাম হ্যাঁ সত্যি ও কাঁদতেছে, আমার কলিজাটা কাঁদতেছে! আমি এবার নিজে ওকে চুপ করানোর জন্য শুরু করলাম বিভিন্ন কথা বলা।
ও বলতেছে না আমি কাঁদতেছিনা আমি কেন কাঁদব! পুরুষ মানুষরা কাঁদে নাকি। তারপর আবার সব ঠিকঠাক আগের মতোই কথা, খুনসুটি এবং ভালোবাসা।
এভাবে দিন দিন কেটে যাচ্ছিলো আমাদের।
আদহাম দেখতে সুন্দর আর স্মার্ট এবং ওয়েল সেটেল্ড হওয়ার কারণে আমার খুব কাছের একটা বান্ধবী যাকে অনেক কিছু শেয়ের করতাম সে বান্ধবী ওকে খুব পছন্দ করে!
আমার বান্ধবী ওকে ম্যাসেজ দিতে শুরু করে, "আপনার সাথে কিছু কথা আছে। একটু সময় দিন এবং এমন অনেক কিছু
আর আদহাম বলেছিলো, যা বলার মেসেজ এই বলুন আপু। আমি ফ্রি হয়ে দেখে নিবো কিন্তু তারপর ও কল দেয় কিন্তু আদহাম ব্যস্ততার জন্য রিসিভ করেনা।
তারপর আবার একদিন কল দেয়! তখন আদহাম রিসিভ করে, এবং কথা বলতে বলে।
তারপর আমার বান্ধবী শুরু করে আমার অতীত নিয়ে কথা বলা।
আমাকে এক জুনিয়ার প্রোপজ করছিলো।
অনেক পছন্দ করতো যা তখন আমার নিজেরই মনে ছিলো না, কিন্তু আমার ওই জুনিয়র এর সাথে ক্লোজ রিলেশন ছিলো! ইন ফ্যাক্ট সে এমন কথা ও বুঝাতে চেয়েছে ইনডিরেক্টলি আমার কারো সাথে শারীরিক জাতীয় কিছু ও হয়েছে!
আদহাম চুপচাপ শুনে গেছে এবং শেষে বলেছে...

চলবে...

লেখনীঃ NI Shu (অপরিচিতা)
 

Delivered by FeedBurner

a