বিয়ের বেনারসি গায়ে জড়িয়ে, জানালার ধারে দাঁড়িয়ে নিজ বরযাত্রীকে ফেরত যেতে দেখছে জাফরিন।তাদের হাতে পায়ে ধরে মিনতি করে চলেছে দুই বোন জামাই। বিয়েটা না ভাঙার জন্য অথচ বিয়ের সমস্ত আয়োজনকে নষ্ট করে দিয়ে আগত যাত্রী বউ ছাড়া ফেরত চলে গেলো।একটু আগে খবর এসেছে কন্যার বাবার বিদেশে দশতলা বিল্ডিং থেকে পড়ে স্পট ডেথ হয়েছে।হাজার হোক কোনো গার্ডিয়ান ছাড়া এরকম এতিম মেয়েকে বিয়ে করা যায় নাকী?
একদিকে পিতৃ হারানোর শোক অন্য দিকে ভালোবাসার মানুষের প্রত্যাখান। সব মিলিয়ে জাফরিনকে শোকের পুতুলে পরিণত করলো।বাবা আজমল শিকদার এবং মা সুফিয়া বেগমের তৃতীয় সন্তান জাফরিন।বড় বোন আনিসা এবং মেঝ বোন আলেয়া বিবাহিত।
আশেপাশের মানুষ আফসোস করতে লাগলো।আজ যদি তার একটা ভাই থাকতো, তবে তাদের অভিভাবক হতো।মেয়েটার বিয়ে এভাবে ভাংতো না।বিয়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়েই এগিয়ে এলো ঘরের বাইরে। তার কোমর অবধি চুল হাতে প্যাঁচ দিয়ে খোঁপা করে বসলো মায়ের কাছে। তাকে দেখে তার মা আরোও কান্নায় ভেঙে পড়লেন।দূর দেশে স্বামীর মৃত্যু, মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গা এসব সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালেন সুফিয়া বেগম।
দুই বোন বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। তার চাচা ব্যস্ত ও দেশের লোকের সাথে কথা বলতে। কিছুক্ষণ পূর্বেই তার ভাই মারা গেছেন।
জাফরিন উঠে দাঁড়ালো।এগিয়ে এসে চাচার কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলল,
"আমি জাফরিন শিকদার বলছি, আজমল শিকদার এর ছোটো মেয়ে। আমার বাবা এখন কোথায়?"
জাফরিনের এমন কাঠ কাঠ কন্ঠস্বর শুনে তার চাচা তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার দিকে। ফোনের অপর পাশেও ব্যক্তিটার মধ্যেও মনে হলো কিছুটা পরিবর্তন এলো।দুটো কাশি দিয়ে অপর পাশে থাকা মেয়েটি বলল,
"ম্যাম, আপনাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ রয়েছে।"
"আপনি বলুন, আমার বাবা কোথায়?"
"ম্যাম নিজেকে শান্ত করুন।"
"আমার কণ্ঠে নিশ্চয়ই অশান্তির কিছুই পাচ্ছেন না আপনি।বলুন আমার বাবা কোথায়।"
ফোনের অপর পাশ থেকে ইংরেজিতে কেউ কিছু বলে নির্দেশ দিলেন কিছু বলতে। দোভাষী মেয়েটা তখন বলল,
"দুঃখিত ম্যাম।আপনার বাবা কিছু সময় পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন।আমাদের কোম্পানির নতুন একটা বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হয়েছিল।উনি এটার দায়িত্বে ছিলেন।সকাল থেকে হয়তো উনার শরীর ভালো ছিল না।সাইডের কাজ চলাকালীন সময়ে উনি কোনো কারণ বশত নিচে পড়ে গিয়েছিলেন এবং উনার স্পট ডেথ।"
মেয়েটির কথা শেষ হলেও জাফরিন কিছুই বলতে পারলো না।তার গায়ে থাকা সোনার গয়না গুলো পড়ন্ত বিকেলের রোদের আলোয় ঝলমল করছে। গায়ের বেনারসিতে এখনো লেগে আছে বাবার পছন্দের আঁতর এর গন্ধ।আজকের দিন নিয়ে সে কতই না স্বপ্ন দেখতো। নিজ হাতে কিনে পাঠিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ের সকল গয়না, এমনকি বেনারসিও। তাকে এই সাজে দেখবে বলে যে মানুষ অপেক্ষা করেছিল সেই মানুষ আজ নেই।
"আমি কী আমার বাবাকে দেখতে পারি?"
"দুঃখিত ম্যাম।লাশ এখন হাসপাতালে আছে।"
"আমার বাবা সত্যি কী নেই?"
ফোনটা কেটে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল জাফরিন।তার চাচাতো বোন আশা এসে দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।জাফরিন যেন শক্ত পুতুলে পরিণত হয়েছে। তার চোখ দিয়ে কোনো পানি ঝরছে না।বিয়েতে আসা মেহমানগুলো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছে। আশেপাশের মানুষ আফসোস করছে। জাফরিনকে নিয়ে ঘরে যাওয়া হলো।ড্রয়িং রুমে বসে থাকা বড় দুলাভাইয়ের উদ্দেশ্যে সে বলল,
"ভাই, এই আয়োজন সব শেষ করুন।সামিয়ানা নামান।আমার বড্ড দম ফাপড় লাগছে ভাই। আমার বড্ড দম ফাপড় লাগছে।"
বড় বোন জামাই জাফরিনের যেন সত্যিকারের অর্থে ভাই।আধ ঘন্টার মধ্যে সব আয়োজন সরিয়ে ফেললেন।ধীরে ধীরে সন্ধ্যে হলো।ডাক্তার ডেকে স্যালাইন করা হলো সুফিয়া বেগমকে।
তার নাম্বারে বার বার কল আসছে। কল দিচ্ছে আত্মীয় স্বজন সবাই।তাদের খোঁজ নিতে। বিয়ে বাড়িতে মৃত্যুর শোক সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল।সবাই যার যার মতোন ব্যস্ত, কেউ ভাবছে বিদেশে তাদের বাবা মারা গেছে তাহলে কোম্পানি না হলেও কোটি টাকা দিবে। আবার কেউ ভাবছে এই সম্পত্তির সব তো মেয়েরা পাবে না। ভাইয়ের ছেলেরাও অংশীদার হবে।
দুই একজন তো সব কিছুই ছাড়িয়ে এসেছে।তারা বলছে যে মারা যাওয়ার সে তো গেছেই। লাশ আনার কী দরকার? লাশ না আনলে টাকা বেশি দিবে।
বাকী কয়েক জনের মাথা ব্যথা হচ্ছে জাফরিনকে নিয়ে। বিয়ে হলো না, প্রেমের সম্পর্ক ছিল।এখন এই মেয়েরে কে বিয়ে করবে? বিয়ের দিনেই যে মেয়ের বাবা মারা গেল সেই মেয়ে যে সংসারে যাবে সেই সংসার টিকবে?
(২)
স্পেনের মাদ্রিদ শহরে নেমে এসেছে রাত। তবুও এই শহর ব্যস্ত। ব্যস্ত শহরের মাঝেই নিজ এপার্টমেন্টে ট্রেড মিলে সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াতে থাকা ছেলেটির সমস্ত ধ্যান নিজেকে শান্ত করার। কিন্তু বার বার সে ব্যর্থ হচ্ছে। আজ সকালের ঘটনা সে ভুলতে পারছে না। নিছক এক্সিডেন্ট হিসেবে জানা এই ঘটনা কী সত্যি তাই।ঘামে ভিজে উঠেছে তার পিঠ।গায়ে থাকা পাতলা সাদা টি-শার্ট ভিজে উঠে তার দেহ অবয়ব স্পষ্ট। কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু নোনা জল।ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে দিয়ে নেমে এলো ট্রেড মিল থেকে।একজন পরিচারিকা গ্লাস এগিয়ে দিতেই সে বলল,
"হোয়াট হেপেন্ড টু এমিলি?ইজ শী হেয়ার?"
পরিচারিকা সম্মতি জানিয়ে বাইরে চলে যেতেই ভিতরে প্রবেশ করলো বয়স পঁচিশ এর এক মেয়ে।মেয়েটি প্রবেশ করার অনুমতি চাইলো।অনুমতি পাওয়ার পর রুমে প্রবেশ করে এগিয়ে দিলো একটা লাল রঙা ফাইল।
যে ফাইলটাতে রয়েছে মৃত ইঞ্জিনিয়ার আজমল শিকদার এর পরিবারের তথ্য। তার পরিবার এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
আজ তার মেয়ের বিয়ে ছিল। এই দিনের জন্য ছুটিও চেয়েছিলেন কিন্তু কোম্পানি ইস্যু করেননি।
ভদ্রলোক আজ মারা গেছেন।ভদ্রলোক
যে কোম্পানিতে চাকরি করতেন সেই কোম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকার হলেন মাশহুদ শেখ।আটাশ- ঊনত্রিশ বছর বয়সী মাশহুদ একজন সফল ব্যবসায়ী।তার বুদ্ধি কিংবা যুক্তিতর্ক এনে দিয়েছে সফলতা।
তার দাদা ছিলেন একজন বাংলাদেশী নাগরিক।এদেশে এসে প্রণয়ের সম্পর্ক হয় তার দাদীর সাথে। সে থেকে আর দেশে ফিরেন নি তিনি।অথচ দেশের মানুষের প্রতি ছিল আলাদা টান।আজকের ঘটনার মতোন ঘটনা মাঝে মধ্যেই সামাল দেয় তার কোম্পানি কিন্তু আজ যে মেয়েটা কিছু সময় পূর্বে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করছিল সেই মেয়ের কথা কিংবা কণ্ঠস্বর তাকে ভিতর থেকে চঞ্চল করে তুলেছে। খবর নিয়ে জানতে পেরেছে তার বিয়েটাও আজ ভেঙ্গে গেলো।মানুষ হিসেবেই তার খারাপ লাগছিল।এমিলিকে চলে যাওয়ার আদেশ দিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিলেন মাশহুদ। পেটানো শরীর বেয়ে ঝরে পড়া প্রতিটি পানিই যেন আজ তার ভিতরের অস্থিরতা লুকিয়ে রাখতে ব্যর্থ।
ফিরে এসে আজমল সাহেবের স্ত্রীর নাম্বারে একটি ম্যাসেজ পাঠালো সে।অপেক্ষায় রইল যদি কোনো রিপ্লাই আসে।
(৩)
রাত গভীর হতেই সমাবেশ বসেছে জাফরিনদের বাড়িতে।কাকা,ফুপু, ফুপারা যে যার মতোন কথা বলে চলেছে।বেশি কথাই হচ্ছে জাফরিনের বিয়ে নিয়ে।আগেই বলেছিল বিয়ে দিতে দেয়নি।এখন বিয়ের আসর ভাংগলো,এই মেয়ে কে নিবে?
কথা বলতে বলতে তারা জিজ্ঞেস করলেন,
"লাশ কী আনতেই হবে?"
জাফরিনের বড় ভাই তার বোনকে ধমক দিয়ে বললেন,
"চুপ থাক,এটা কেমন কথা।লাশ আনবো না কেন?"
"না মানে দশতলা থেকে পড়ছে। কেমন অবস্থায় আছে কে জানে?"
কথা গুলো হজম করতে পারলো না জাফরিন ঘর থেকে বেরিয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বলল,
"কিচ্ছু না থাকুক,খালি হাড় থাকুক তাও আমার বাবার লাশ আমি আনবো।আপনারা সিদ্ধান্ত দেওয়ার কে?আজ আমার পরিবারের এতবড় বিপদে আপনারা আসর বসিয়ে পান খাচ্ছেন?কসম করে বলতেছি, আমার বাপের লাশটা নিয়ে যে একটা কথা বলবে তাকে আমি লাশ দেখতেও দিবো না।আমাদের মনে আর কষ্ট দিয়েন না আপনারা।"
মায়ের কাছে ফিরে তার মাথায় জল পট্টি দিচ্ছিলো সে।বাইরে তাকে বেয়াদব উপাধি দেওয়া হচ্ছে।এতে তার কিছু যায় আসে না।যে লোকেরা আজকেই এসব বলতে পারে তাদের দিয়ে কিছু আশা করা যায় না।
পাশে থাকা মায়ের ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেল বিদেশি নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে,
There is no compensation for your loss. However, I am sorry for your grief. Take care of yourself.
Mashood Sheikh (CEO)
ম্যাসেজটা পড়ে ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো জাফরিনের অধরে। সে ফিসফিস করে বলল,
"আমার বাবার কোনো রোগ ছিল না মাশহুদ সাহেব।সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়নি।এটা আমার বিশ্বাস।"
(৪)
গতকাল যে মেয়ের বাবা মারা গেছেন, বরযাত্রী এসে ফেরত গিয়েছে, ভোর হতেই যদি জানতে পারে ফেরত যাওয়া বরযাত্রী পুনরায় এই বাড়িতে আসবে। অথচ তার জন্য নয়, তার চাচাতো বোনের জন্য। তখন সেই মেয়ের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ তা সে জানে না।
নিজেদের উঠানের কদবেল গাছটার নিচে বসে সে এই খবর টাই জানতে পেরেছে। আজ তার প্রাক্তন আসবে তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করতে।গতকাল চলে যাওয়ার পর সে একটা বারের জন্যও কল দেয়নি তাকে। হয়তো দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। যদি করতো তবে এমন সময় তাকে ফেলে চলে যেতো না।ছয় মাসের প্রণয়ের সম্পর্ক এরপর বিয়ে অবধি।
পানির গ্লাসটা মাটিতে রেখে স্মিত হাসলো জাফরিন।সম্মতি জানালো তার চাচাকে। অবশ্যই তারা বিয়েতে যাবে। কারণ সকল বোনদের মধ্যে আশা হচ্ছে তার প্রিয় বোন। বোন নয় বান্ধুবীও বলা যায়। তার বিয়েতে অবশ্যই তারা যাবে।
জাফরিনের এমন কথায় জান পরাণ অবাক হলো তার বড় আপা। সে কিছুটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
"তোর মাথা কি ঠিক আছে জাফরিন?তুই বিয়েতে যাবি?"
"কেন যাবো না?"
"না কেন যাবি না। দোষ তো তোর না, দোষ আমাদের কপালের। না হইলে কালকেই ক্যান আব্বা মারা যাবে?বরযাত্রী ফেরত যাবে?"
"আপা কান্না থামান।কথায় কথায় আপনারা দুই বোন কাঁদা বাদ দেন।"
"তুই বুঝবি না।আব্বার কথা ভুলতে পারি না।"
"আব্বার কথা আপনাদের কেউ ভুলতে বলে নাই।আব্বা আজ দুনিয়াতে নাই, এটা আমার বা আপনাদের দোষ না।আল্লাহ্ হায়াত দেয় নাই।এটা মানতেই হবে। আর আমার বিয়ে ভাংছে এতেও আমার দোষ নাই। কারণ যে ব্যক্তি আমার এই সময়, আমার আব্বা মারা যাওয়ার সময় আমাকে ছাড়তে পারে, যখন তাকে আমার সব থেকে বেশি দরকার। সেই ব্যক্তির সাথে আমি জীবন কীভাবে পার করবো?"
"মানুষ এত কিছু দেখবে না।সবাই দেখবে তিন মেয়ে ছিল তার।ছোটো মেয়ের গতি করতে পারলো না।"
"সবাই? কার কথা বলতেছেন আপনি?আপনার চাচা, ফুপুদের কথা?যারা কালকেই চিন্তা ভাবনা করতেছে কে কতটা সম্পত্তি পাবে?কত অংশের মালিকানা পাবে?কারণ আমাদের ভাই নেই বলে।এদের কথা ধরতেছেন আপনি?"
জাফরিনের কথায় এগিয়ে এলো তার মেঝ বোন।সে একজন শিক্ষিকা।এগিয়ে এসে দুই বোনের পাশে বসে বললেন,
"আপা, আব্বা কিন্তু জাফরিনকে এখনি বিয়ে দিতে চায়নি।আমাদের বিয়ে হয়েছিল আরো বয়স হয়ে। লেখাপড়া শেষ করে। আব্বা সব সময় চাইতেন তার মেয়েরা তার পরিচয় হোক।জাফরিনের বয়স মাত্র আঠারো বছর। এই বয়সে বিয়ে দেওয়ার কারণ ছিল কানাডায় গিয়ে যেন জাফরিনের একজন অভিভাবক থাকে। ওর কোনো বিপদ হলে যেন সেখানে তাকে আগলে রাখতে পারে। কিন্তু একবার ভাবুন তো যে ছেলে এই সময় তার হাত ছেড়েছে,চব্বিশ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই আশাকে বিয়ে করতে আসতেছে সেই ছেলের কাছে আমাদের বোনটা কতটা নিরাপদ ছিল?"
কথায় কথায় কাঁদবেন না আপা।মেয়ে মানুষ হওয়ার দরকার নেই আগে মানুষ হোন।
(৫)
নিজ রুমে বসে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং এ ব্যস্ত মাশহুদ। এই ডিলটা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজমল সাহেবের মৃত্যুর কারণে সকল ওয়ার্কার কাজ বন্ধ রেখেছে। তাদের সেফটি ইস্যু নিয়ে কথা বলছে টিম লিডার। কিন্তু মাশহুদ কে জানানো হয়েছে সাইডে যথেষ্ট সেফটির ব্যবস্থা করেছে।
নিছক দূর্ঘটনা মাত্র আজমল সাহেবের মৃত্যু। কিন্তু কোনো ভাবেই কাজে ফেরানো যাচ্ছে না শ্রমিকদের। তাদের দাবী, যেখানে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিরাপদ নেই সেখানে তাদের কাজের কী নিরাপত্তা। এই বিষয়ে ক্লায়েন্টদের অফিশিয়াল মেইলে কেউ অভিযোগ জানিয়েছে।সত্যতা যাচাই করার জন্যই আজকের এই মিটিং।
মাশহুদ একজন ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ।তার অধরে সব সময় লেগে থাকে স্মিত হাসী।এই মানুষটা তীব্র রাগ দেখাতে দেখাতেও হাসি ধরে রাখতে পারে। যে বিনয়ী, ক্ষিপ্র বুদ্ধিমত্তার মানুষ।সামনে থাকা ব্যক্তির মন বুঝতে তার খুবই স্বল্প সময় লাগে। প্রথমে সে তার সামনের পক্ষের কথা শুনবে, ধৈর্য্য ধরে তাদের সকল অভিযোগ মেনে নিবে কিন্তু এরপর তার যুক্তি এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে বলবে। শুধু এমনটাই নয় ব্যাক আপ প্ল্যান হিসেবে থাকবে পরিকল্পনা-২।ক্লায়েন্টদের একটা পছন্দ না হলে অন্যটা ঠিক পছন্দ হবে।প্রকৃত ব্যবসায়ী মানুষ আবেগী হয় না।তারা প্রফিট চেনে। ঠিক এমনি কেউ না কেউ থাকে ক্লায়েন্টদের দলে।শিকারীর মুখ থেকে শিকার ধরে আনার এই খেলায় অন্যতম খেলোয়াড় মাশহুদ এখনো জানে না যে তাকে নিয়ে খেলার মানুষ তার কতটা কাছে চলে এসেছে।
শিকারী যেদিন শিকার হবে সেদিনের অপেক্ষা ফুরিয়ে এসেছে।
মিটিং শেষ করে এমিলিকে ডাকলো মাশহুদ।যোগাযোগ করতে বলল। এমিলি কল দিলে দুই বার রিং হওয়ার পর ভেসে এলো এক নারীর কণ্ঠস্বর। যে কণ্ঠস্বর সমুদ্রের মতোন শান্ত অথচ এতটা শান্ত সমুদ্রে যদি গর্জন উঠে তবে?
"ম্যাম ভালো আছেন?"
" জি। বলুন, আমার বাবা এখন কোথায় আছেন?"
"লাশ ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। আপনাদের সাথে কিছু প্রয়োজন ছিল।"
"বলুন।"
"আপনার বাবার কোম্পানিতে কিছু ইন্সুইরেন্স ছিল।যেটার অংশীদার আপনারা তিন বোন হয়েছেন।"
"এসব বিষয় তো দূতাবাস থেকে করার কথা তাই না?আপনারা হুট করে এতটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন?কিছু লুকাতে চাইছেন?"
"সরি ম্যাম! আমরা কী লুকাতে চাইবো?"
"হতেও পারে আমার বাবার মৃত্যুটা আপনাদের কাছে নিছক কিন্তু আমার কাছে এমন নয়।"
"ম্যাম খুব দ্রুতই সকল কাগজ ইমেইল করা হবে। সকল কিছু চেক করে আমাদের কনফার্ম করার অনুরোধ রইল।"
অপর পাশ থেকে কল কেটে দিয়েছিল।মাশহুদ কিছুটা অবাক হলো।যে মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গেছে, বাবা মারা গেছে সেই মেয়ে এতটা শান্ত কেন?তার উচিৎ ছিল কল রিসিভ করেই কান্নাকাটি করা। কথা বলার সময় আটকে যাওয়া।অথচ সে এমন কেন? কেন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই?
(৬)
জাফরিনদের দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে তার ফুপুরা। পাশের বাড়িতে বিয়ে সেই ছেলের সাথেই। ফুপুরা কাঁদছিল এসে,তারা বলছিল তাদের কিছুই করার নেই। তারা কী করবে?গতকাল যখন বিয়ের কথা তাদের ভাই বলল তারা নিষেধ করেছিল অথচ তার ভাইয়ের পরিবার শোনেনি। শত হলেও গতকাল তাদের ভাই মারা গেছে, তাদের গলা দিয়ে আজ খাবার নামছে না তবুও তাদের থাকতে হচ্ছে কারণ ওটাও ভাইয়ের বাড়িই।জাফরিনের মা গেলেন না।বড় আপা যেতে না চাইলে জাফরিন বলল,
"ক্যান যাবেন না আপা?আজ না গেলে কাল আপনার চাচারা বলবে আপনাদের পেটে হিংসা। তার মেয়ের সুখ সহ্য হয় নাই। কেন এসব শুনবেন?আমাদের যাওয়া দরকার আমরা যাবো।আমাদের আব্বা নাই, এই দুঃখ আমার আপনার। বাইরের মানুষের না।তাই নিজের দুঃখ নিজের রাখেন।"
বিয়ে বাড়ির জাক জমক দেখে দুচোখ ভরে এলো।জাফরিনের। সামনে বসে থাকা বর বেশে ঈশানকে দেখে তার কান্না পাচ্ছিলো।গতকাল সকালেও তাকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখেছিল সে অথচ আজ সব মরীচিকা। জাফরিনকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হয়তো আশার বড় বোন তাকে টেনে নিয়ে গেল ঈশানের সামনে। আবদার করলো হাত ধুইয়ে দেওয়ার। জাফরিনের শক্ত স্বরে না বলা শুনে তার দিকে তাকিয়ে রইল ইশান সমেত বাকী সবাই।
"আমি কেন অন্যের বরকে হাত ধোওয়াবো?আমি যেমন আমার বরের হাত অন্যকে ধরতে দিবো না তেমনি অন্য কারোর হাত আমি কেন ধরবো?"
"এটা নিয়ম।স্বাভাবিক ভাবে বললেই পারিস সত্য মেনে নিতে পারছিস না।এত ভালো ছেলে,কানাডা প্রবাসী, দেখতে ভালো ছেলে হাত ছাড়া হলো তাই? আসলেই আশার কপাল ভালো ও জিতেছে।"
"আমাকে যে ধরে রাখতে পারেনি এটা তার ব্যর্থতা,
আমি যাকে ধরে রাখবো সে হবে ভাগ্যবান।নিশ্চয়ই কোনো কাপুরষ নয় যে এক এতিম মেয়েকে বিয়ের আসরে রেখে চলে যাবে। অথচ যে বর নিয়ে আপনাদের অহংকার, সেই বরের কানাডায় যাওয়ার টিকিট অবধি আমার টাকায় কেনা।এবার বুঝে নিন কে জিতেছে আর কে হেরেছে?"
(৭)
জাফরিনের গায়ে এখনো হলুদের গন্ধ লেগে আছে। গতকাল দুপুরে যখন তাকে পুনরায় হলুদ দিয়ে গোসল করাচ্ছিল, সেই কাঁচা হলুদের ছোঁয়া মনে হচ্ছে এখনো তার গালে।সামিয়ানার কোনো এক ফাঁক দিয়ে রোদ এসে পড়েছে তার চুলে। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে এক ভয়ংকর অভিব্যক্তি। শান্ত জলের মতোন তার দুই চোখ তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।ঈশান জানে এই মেয়েটা ক্ষণিকের জন্য হলেও তাকে চেয়েছিল।অথচ বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে যেতে পারছে না।জাফরিনের বাবার থেকে দশ লাখ টাকা তার বাবা নিয়েছে যেটা জাফরিন জানে না।জানতো শুধু তার বাবা, তাই কাল বিয়ের আসরে যখন তার চাচা মেয়ের বিয়ে বাবদ ১৫ লাখ দিতে চাইলেন তখন বেঁকে বসলেন ঈশানের বাবা।লাখ দশেক টাকা ফেরত দিতে হবে না আবার পনেরো লাখ টাকাও পাবে।
ছেলেকে গরুর মতোন হাটে বেঁচে দিলো সে। ঈশান প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু না করার মতোই প্রতিবাদ৷ যেন সে নিজেও রাজীই প্রস্তাবে।
তার নিজেরো জাফরিনের একটা অভিযোগ ছিল।জাফরিনের বাকপটুতা স্বভাব তার খুব একটা পছন্দ নয় । জাফরিন তাকে সম্মান করে কিন্তু ভুল করলে তাকে চোখে আংগুল দিয়েও দেখিয়ে দেয়। সে যে কেউ হোক না কেন। ঠিক যেমন আশার বড় বোনকে জবাব দিয়েছে।জবাব দেওয়ার কারণে কিছুটা উচ্চস্বরে কথা বলতে লাগলো আশার বোন।দ্রুত এগিয়ে এলো আশার বাবা নিজেও।
বরযাত্রীকে এমন কথা বলায় উপস্থিত মানুষের সামনে জাফরিনকে ধমকে উঠলেন তার চাচা।কেন সে তার মেয়ের বিয়েতে এসে ঝামেলা করছে।জাফরিন অধরে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলল,
"কে বলবে গতকাল আপনার ভাই মারা গেছে?কে বলবে কাল ফেরত যাওয়া বরযাত্রীকে ডেকে এনে আপনি নিজের মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন?"
"ভালো পাত্র হাত ছাড়া কেন করবো?"
"ঠিক তাই।এজন্যই বুঝি বিয়ের আগেই বর
পক্ষের কাছে আমার নামে বদনাম করেছিলেন?আর গতকাল হায় হায় করে কাঁদছিলেন লোক দেখানো ছিল?"
"তোর মতো একটা বেয়াদব মেয়ের সাথে কোনো কথাই বলা ঠিক না।"
জাফরিন অধরে হাসি ফুটিয়ে রেখে বলল,
"আজ কে এই লোকেদের সামনে বেয়াদব বলছেন, বিশ্বাস করুন,আমার কথাটা। ঠিক চব্বিশ ঘন্টা পর আপনি আমায় মা বলে ডাকবেন।ঠিক চব্বিশটা ঘন্টা।"
আশাকে সাজানোর দায়িত্বটা জাফরিনকেই দেওয়া হলো।সে বিরক্তবোধ করছিল।এটা নিয়ে তার ফুপু,ছোটো চাচার লেগেও গেল আশার বড় বোনের সাথে।ছোটো চাচা বলল, মেয়েটা এভাবে কষ্ট দেওয়ার কী দরকার?ওদের মন মেজাজ ভালো না। তাছাড়া এখানে ওরা এসেছে এটাই তো অনেক। ওদের অযথা এভাবে বিরক্ত যেন না করা হয়। জাফরিনের হাত ধরতেই সে তার ফুপুকে বলল,
"ফুপু কথা ছিল আমরা বোনেরা একজন অন্য জনের বিয়েতে একে অপরকে সাজিয়ে দিবো।"
আশার সাজগোজের জিনিসপত্রে হাত দিয়ে দেখতে পেলো এসব তার বিয়ের জন্য কেনা জিনিস। যা গতকাল সন্ধ্যে অবধিও তার ঘরে ছিল।ভ্রু-বিলাস করলো মেয়েটা।তার বুঝতে বাকী নেই এসব কে এখানে এনেছে।সাজানোর পর সে যখন চলে যাচ্ছিল তখন আশা বলল,
"তুই কী রাগ করেছিস?"
"কেন?"
"বড় আপা এসব এনেছে তাই।"
"আরে নাহ্,তোর স্বামীর হয়তো এসব সামর্থ হবে না।তাই তোকে আমার ব্যবহার করা জিনিস দিলো।রেখে দে এসব আমি কিছু মনে করবো না।"
জাফরিন ঘর থেকে বের হতেই আশার নানী বলল,
"আশারে দেইখা এই ছেরি হিংসা করতাছে। পোলার বেতন দেখতে হইবো না?মুখের সামনে নিলো খাইতে পারলো না। হিংসা করবো না?"
জাফরিন ফিরে এলো, তার হাত থেকে পানের বাটা নিয়ে কড়া করে রতন জর্দা দিয়ে একটা পান বানিয়ে মুখে দিতে দিতে বলল,
"আমার আব্বায় আমার জন্য কোটি টাকা রেখে গেছে।ওই পোলার চৌদ্দ গুষ্টি না এত টাকা দেখছে?পোলার বেতন ধুইয়া পান বানাইয়া খাইয়া ফেলেন নানী।আরাম পাইবেন।"
(৮)
আজমল সাহেবের লাশ দেখতে এসেছিল মাশহুদ। ফিরে যাওয়ার পূর্বে তার অটোপসি রিপোর্ট হাতে পেলো।সেখানে স্পষ্ট ভাবে লিখা ছিলো হৃদ রোগ জনিত কারণে সে মারা গেছেন। স্বভাব বশত কারণেই নিজের নিচের ঠোটের ভিতরের অংশ দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছিল মাশহুদ। আজ তার ব্লাইন্ড ডেটে যাওয়ার কথা।এই নিয়ে তার ব্লাইন্ড ডেটের সংখ্যা দাঁড়াবে শ' খানেক। এই দেশীয় মেয়েদের ডেট করে এক ধরনের আলাদা আমোদ পায় সে। কারণ এখানে কোনো কমিটমেন্ট থাকে না, না থাকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে একটা সম্পর্কে বয়ে নিয়ে যেতে হয় না।
খুব অল্প বয়সে সে দেখেছিল তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। মায়ের বিচ্ছেদের পর অন্যের হাত ধরে চলে যাওয়া কিংবা বাবার পুরো দিন কাজের মাঝে ডুবে থাকা মাশহুদ ছিল একান্তই একা।নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যই ঝুকেছিল কম্পিউটারের প্রতি। সে থেকেই কম্পিউটারের আসক্তি, এরপর প্যাশন। । যে কোনো বিষয়েই দক্ষতা নিয়ে কাজ করা ছেলেটা যেন বাবার প্রতিচ্ছবি। বাবা ভক্ত ছেলে বলেই তাকে নিয়ে তামাশা করে তার দাদা-দাদী। মাশহুদকে ব্যবসার সকল কিছুই তার বাবা-দাদা নিজ হাতে শিখিয়েছে। যার প্রধান একটি শিক্ষা ছিল,
"সব সময় নিজের কর্মচারীদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা।কারণ একজন ব্যবসায়ী একা নিজে কখনো সকল বিষয় দেখাশোনা করতে পারে না। তাকে নির্ভর করতে হয় অন্যের উপর। যদি কর্মীর সাথে ভালো ব্যবহার না করা হয় তবে সে কাজের প্রতি অবহেলা করবে আর যদি ভালো ব্যবহার করো তবে দায়িত্বশীল হবে এবং তোমার বিপদেও সাহায্য করবে।"
মাশহুদ এই কথাটা মানে বলেই তাকে লিডার বা বস বলে সবাই সম্মান করে।রিপোর্টটা হাতে পাওয়ার পর আজ তার কোথাও যেতে ইচ্ছে করলো না।এমিলিকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো মেইলের কোনো রিপ্লাই এসেছে কী না। না সূচক জবাব পেয়ে কিছুটা দমে গেল তার উত্তেজনা। এই মেয়ে সম্পর্কে জানার আগ্রহ তাকে অস্থির করে তুলছে। কেন এই মেয়েটা সবার থেকে আলাদা।যেন সমুদ্রের নিচে থাকা এক অভিশপ্ত নগরীর অধি পত্নী। যে শুধুই তার স্বকল্প-কল্পিত।
(৯)
দুই বোন জামাইকে দুই পাশে বসিয়ে মেইল খুললো জাফরিন। সন্ধ্যে বেলা ছোটো দুলাভাইয়ের বন্ধু এসেছেন। যিনি দূতাবাসে কর্মরত আছেন।মেইলটা খুলেই জাফরিন এগিয়ে দিলো তার দিকে।
সে সবটা দেখে বললেন,
"আংকেল তো তার সব কিছুই তিন মেয়ের নামে করে দিয়েছেন।"
"সব কিছু মানে?"
"ওদেশের কোম্পানিতে থাকা তার লাইফ ইন্সুইরেন্স ছিল এদেশের প্রায় এক কোটি বারো লাখ টাকার সমপরিমাণ। যেটার নমিনি দেওয়া আছে তার তিন কন্যা।বড় দুই আপা পাবেন ৫০ শতাংশ এবং জাফরিন নিজে ৫০ শতাংশ। আর কোম্পানির সকল কাগজ করে দিয়েছেন আন্টি এবং জাফরিনের নামে। আন্টির সম্মতি ছাড়া জাফরিন কোনো টাকা পয়সা তুলতে পারবে না বা লাশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না তেমনি জাফরিনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।"
দুই দুলাভাই সকল কিছু বুঝে নিচ্ছিলেন।এমন সময় বড় আপা বললেন তাদের কোনো টাকা লাগবে না।সবটা জাফরিনের থাক।দুই বোনের কথাতে সম্মতি জানালেন তার দুই দুলাভাই। কিন্তু তাদের ইচ্ছায় পানি ঢেলে দিয়ে জাফরিন বলল,
"আবেগে দুনিয়া চলে না বড় আপা।আজকে আপনি আবেগে পড়ে এসব বলছেন। আপনার ভবিষ্যৎ বলে কিছু আছে। আজ দরকার নেই ভবিষ্যতে লাগবে না এর কী গ্যারান্টি আছে?দুলাভাইরা না করুক তবুও আপনাদের ভাগ আপনারা নিবেন।শহরের বাসা গুলো আপাতত সব আম্মার নামে আছে। আব্বা গত বার এসে সব কিছুই আমাদের তিন বোনের নামে সমান ভাগে ভাগ করে দিছেন।গ্রামের সম্পত্তি কিংবা শহরের সব আম্মা আর আমাদের নামে আগে থেকেই করা। তাই কী এখন এইগুলা ফেরত দিবেন?আজ আব্বা না থাকতে আমার বিয়ে হয়নি বলে সব আমাকে দিবেন?কাল যখন হয়ে যাবে তখব তো সব আমার শ্বশুর বাড়ির লোক খাবে এর থেকে কী এটা ভালো না যে আপনার ভাগ আপনার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেন?"
"আমাদের কম নেই জাফরিন।"
"এটা আপনাদের হক।আর আমি কারোর হক চাই না।চাইলে আজ ইশান ও বাড়িতে বিয়ে করতে আসতে পারতো না।
দুলাভাই,আমার সাথে ইশানের বিয়ের কাবিন হয়েছিল। আপনারা সেই কাবিন ভাঙার ব্যবস্থা করেন।আজ বৌ তুলে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমি চাই কাবিন ভাঙ্গুক।"
বিয়ে বাড়িতে হুট করেই কান্নাকাটি শুরু হয়েছে। চলছে তর্ক বির্তক। আওয়াজ শুনে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো জাফরিনের দুই দুলাভাই এবং তার বন্ধু।ততক্ষণে জাফরিনের মামারাও চলে এসেছে। তাদের আসতে দেরি হয়েছে কারণ তারা দেশের বাইরে ছিল।তারা এসেই জানালেন,
"পাত্রের বাবা এখন না কী আশাকে নিবে না।কারণ আশার বাবা তাকে মাত্র লাখ পনেরো টাকা দিবে আর জাফরিনের নামে না কী এর থেকেও বেশি টাকা আছে। এটা তারা জেনেছে। বিদেশ থেকে কল দিয়ে জানিয়েছে তাদের। এখন তারা জাফরিনকে বৌ করে নিতে চায়।"
সবটা শুনে জাফরিন বেশ বিরক্ত হলো। সে জানতেও পারলো না ভিন দেশে বসে কেউ একজন পুতুল নাঁচ দেখাচ্ছে তাদের সবাইকে।
চলবে...
Writer:- সাদিয়া খান (সুবাসিনী)