নাহুরা তৃতিকে উঠেছিয়ে ওর কাপড় বদলে নিতে বলল, বাইরের কাপড়েই আছে এখনও। নহুরা উঠে দাড়াতেই তৃতি ওকে ধরে কান্না শুরু করল। নহুরা কোন রকমে ওকে বুঝিয়ে ফ্রেস হতে পাঠালো। নহুরারও খারাপ লাগছে এমন একটা সামান্য কারনে এভাবে মারাটা আরহামের মোটেও ঠিক হয় নি। আর যে কারনে মারল এই বাচ্চাটা তো বুঝতেও পারল না। বড় বোনের মতো তৃতিকে খাবার খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। মাথায় ততক্ষণ হাত বুলালো যতক্ষণ না তৃতি ঘুমিয়ে পড়ে। তৃতি ঘুমিয়েছে বুঝতে পেড়ে আস্তে করে লাইটা অফ করে বেড়িয়ে এলো সে।
ছাদে এসে দেখলো ছাদের এক কোনে আরহাম দাড়িয়ে সিগারেট খেয়ে চলেছে। নহুরা আরহামের পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,,,
- সিগারেট কবে থেকে খাওয়া শুরু করেছিস?
নহুরার আওয়াজ পেয়ে হাতের সিগারেটটা চট করে ফেলে দিল আরহাম। সিগারেট ফেলে নহুরার দিকে ঘুরে দাড়ালো। নাহুরা আবার গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
- কি হল প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না কেন? খালি সিগারেট খাস না কি অন্য কোন নেশার অভ্যাসও আছে?
আরহাম দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বলল, না না অস্তাগফিরুল্লাহ্, আর কোন নেশা নেই। শুধু সিগারেট তাও সব সময় না মাঝে মাঝে।
- মনে তো হয় না আর কোন নেশার অভ্যাস নেই। তাহলে বউটাকে এভাবে মারলি কেন। তাও তো যারা নেশা করে মারে তারা নেশার ঘোরে বোঝে না কি করছে, আর তুই সজ্ঞানে কিভাবে পারলি। বুক কাপলো না। মেয়েটা ফর্সা গালে পাচটা আঙ্গুলের দাগ একেবারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বাবা জানলে কি করবে বুঝতে পারছিস। তোকেই না বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
আরহামেরও বেশ খারাপ লাগছে। তখন ইবনীহার মুখে ও সব শুনে বেশ রাগ হচ্ছিল আরহামের তবে সেটা তৃতির উপর কিনা সেটা সে জানে না। ও ভাবতেই পারছিল না ওর মতো একটা ছেলের সাথে কিনা এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে যে বাইরে মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই ম্যানার জানে না। খেতে গিয়ে খাবার ছড়িয়ে দেয় এটা কোন কথা হলো। এই মেয়েকে নিয়ে সে বাইরে কিভাবে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটার রগগুলো ফেটে যাচ্ছিল।
আর সব রাগ ঝেড়েছে ওই মেয়েটার উপর। রাগের মাথায় কখন যে ও হাত উঠিয়েছে সে নিজেও বুঝে নি। পড়ে রাগটা একটু কমতেই অনুশোচনা শুরু হয়েছে। এভাবে না মারলেও পারত। বুঝিয়েও বলা যেত। সত্যি গ্রামের একটা মেয়ে না বুঝে করে ফেলেছে। ওরই তো উচিত ছিল তৃতিকে শিখানোর কিন্তু ও তা না করে কিনা মেয়েটাকে মারল। আর তার জন্য ছাদে বসে আছে সে। বুঝতে পারছে না কীভাবে দাড়াবে তৃতির সামনে। সেই কান্না মাখানো মুখটা কিভাবে দেখবে।
নহুরা আবর বলল, শোন মেয়েটা বাচ্চা। জানি ও তোর স্টাটাসের না। তোর একটা শিক্ষিত ম্যাচিউর মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়া উচিত ছিল যে তোর সাথে, তোর কলিগ, তোর ফ্রেন্ড সার্কেল সবার সাথে ভালোভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু দেখ এখন তোর মেয়েটার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ্ চেয়েছেন বলে হয়েছে। তার ইশারা ছাড়া কিন্তু একটা গাছের পাতাও নড়ে না। তাই এই ঘটনাটাকে নিজে জীবনে অভিসাপ না ভেবে আর্শিবাদও তো ভাবতে পারিস। আর রইলো যোগ্যতা, মেয়েটা কিন্তু এখনও একটা নরম মাটির দলার মতো তুই ওকে যেভাবে চাইবি নিজের মতো করে গড়ে নিতে পারবি।
ভাবীর শেষ কথাটা আরহামের বেশ ভাল লাগল। সে তো চাইলেই তৃতিকে নিজের মতো করে গড়ে নিলেই পারে। এতে বরং ভালো, একটা এডুকেটেড মেয়ে কখনও তার কথা মতো চলত না। নিজের মর্জিমাফিক কাজ করত কিন্তু এই মেয়েটা তো তেমন না। বরং ছোট হওয়াতে তাকে সম্মান করবে আর তার দেখানো পথে চলবে। এতে তাদের সাংসারিক জীবনে ঝামেলাও কম হবে। আরহাম নাহুরার দিকে চেয়ে ভারী করুন সরে বলল, আমি চেষ্টা করব ভাবী।
- ঠিক আছে। আর এখানে দাড়িয়ে থাকতে হবে না যা ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। রাত কম হয় নি।
আরহাম যখন ঘরে আসল তখন দেখল তৃতি গুটিসুটি হয়ে সুয়ে আছে। আর গালে সত্যি ওর অাঙ্গুলের দাগ বসে আছে এখনও। আরহাম ধীর পায়ে তৃতির দিকে এগিয়ে এলো। তৃতির সামনে মাটিতে বসে কিছুক্ষণ দেখল তৃতিকে। কেদে কেদে চোখ মুখ সব ফুলিয়ে ফেলেছে। আরহামের ভারী মায়া হল। সে তৃতির কপালে নিজের ঠোটটা স্পর্শ করল। বেশ গভীর ভাবে ছুয়ে দিল কপালটা। তৃতি মনে হল একটু কেপে উঠল। একটু নড়ে আবার শুয়ে থাকল। আরহাম আর একবার তৃতিকে দেখে ওয়াসরুমে গেল ফ্রেশ হতে।
পরের দিন আরহাম যখন তৃতির সাথে কথা বলতে গেল তখন খেয়াল করল তৃতি ওকে প্রচন্ড রকমের ভয় পাচ্ছে। আরহাম বুঝলো কাল একটু বেশী করে ফেলেছে। এখন কিভাবে তৃতির ভয় কমাবে সেটা বুঝছে না। আচ্ছা মেরেছে বলে ভয় পাচ্ছে আদর করে দিলে কি ভয় কমে যাবে?
আরহাম তৃতির খুব কাছে গেল। তৃতির হাতটা ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসল। তৃতিকে বুকে সাথে জরিয়ে ধরল। এভাবে কিছুক্ষণ ধরে থাকার পর। একটু আলগা করল। প্রথমে যখন জরিয়ে ধরেছিল তখন তৃতি খুব কাপছিল। আরহামেরও তৃতিকে ধরতে হাত কাপছিল।কিন্তু জরিয়ে ধরার পর মনে হল কাল থেকে তৃতিকে মারার জন্য যে অনুশোচনাটা হচ্ছিল তা তৃতিকে বুকে নিয়ে একেবারে কমে গেছে। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, তৃতি তো ওর বউ। এখন আসতে আসতে তৃতির কাপাকাপিটা কমেছে। আরহাম তৃতিকে সামনে দাড় করিয়ে কপালে নিজের ঠোট ছোয়ালো।
তৃতিকে ছেড়ে দিচ্ছিল কিন্তু তৃতি না ছেড়ে আরহামকে জাড়িয়ে ধরে কেদে দিল। আরহাম তৃতিকে থামাল না। কিন্তু কেন যেন তৃতির কান্নাগুলো আরহামের বুকে গিয়ে লাগছিল। কেন এমন হচ্ছে তার। তৃতি কি ওর জন্যই কাদছে তাই এমনটা হচ্ছে। অদ্ভুতভাবে আরহাম খেয়াল করল তৃতির মাথাটা ঠিক আরহামের বুকের কাছে এসে থেমেছে। আরহামের উচ্চতা খুব বেশীও না আবার কমও না। 5'11' উচ্চতার সুঠম দেহের অধিকারী সে। তৃতির মাথাটা ওর বুকে এসে লাগাতে সে বেশ খুশি হল, ও মনে মনে চাইত ওর বউয়ের হাইট যেন এমন হয় আর তৃতিরও তাই। তৃতি প্রায় অনেকটা সময় কেদে নিজের চোখে আর নাখের পানি আরহামের টিসার্টে মুছে আরহামকে ছেড়ে দিল। আরহাম নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, ছি এটা কি করলা?
তৃতি মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বলল, বেশ করেছি। আর আমাকে কাঁদাবেন? এরপর থেকে আমাকে কাঁদালে এমনই করব।
আরহাম আনমনে একটু হাসল। তারপর তৃতির দিকে তাকিয়ে বলল, কাল আমার অমন করা ঠিক হয় নি। তবে তুমি যা করেছ তাও ঠিক হয় নি। তৃতি মুখটা ঝুলিয়ে বলল, আমি কি করব আমি তো কিছু জানি না।
- আচ্ছা বেশ আমি শিখিয়ে দেব তবে প্রমিস করতে হবে আমি যা বলব তাই শুনতে হবে।
- করব না আমি প্রমিস। হুহ আসছে, লাগবে আমার কিছু শিখার।
আরহাম বুঝল এই মেয়েও তার মতোই ঘাড়ত্যাড়া আর প্রচুর ছেলেমানুষ । সে আর সে বিষয়ে কিছু না বলে বলল,, তুমি কোন ক্লাসে জানি পড়তে?
তৃতি নাখটা একটু উচু করে বেশ গর্বের সাথে বলল, ক্লাস টেনে। জানেন আমাদের গ্রামে আমি সব থেকে বেশী ক্লাস পর্যন্ত পড়েছি।
আরহাম ব্যঙ্গ করে বলল, তাই তাহলে আমার নিজেকে ভাগ্যবান বলা উচিত।
- কেন কেন?
- এই যে আমি তোমাকে পেয়েছি তাই।
তৃতি যেন সব বুঝেছে এমন ভাব করে বলল, ওহ্ হা তা ঠিক।
আরহাম হাসল। মনে মনে সিধান্ত নিল আশেপাশে ভালো কোন কোচিং এ তৃতিকে ভর্তি করিয়ে দেবে। এস এস সি টা গ্রামের স্কুল থেকেই দেবে। তারপর শহরের কোন ভাল কলেজে এনে ভর্তি করিয়ে দেবে। আর বাসায় তো সে থাকবেই গায়িড করার জন্য। যা হয়েছে হয়েছে, সেটা ও ভাগ্যের দোষ মনে করে ভুলে যাবে। কিন্তু বাকীটা সে নিচে রচনা করবে। সে তার বউকে উচ্চ শিক্ষিত বানিয়ে ছাড়বে। যেন পড়ে আর তার বউয়ের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে কিছু বলতে না পারে
আরহাম পরের দিন খোজ নিয়ে দেখল পাশের কোন ভাল কোচিং সেন্টার আছে কিনা। একটা মোটামোটি ভাল কোচিং পেয়ে গেল। কয়েকদিন পর গিয়ে তৃতিকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এলো। কিন্তু তৃতি জেদ ধরে বসে আছে সে পড়বে না। তার এক কথা বিয়ে হয়েছে এখন সংসার করবে নো পড়াশোনা। আরহাম তাকে কি বোঝাবে! এই বাচ্চা করবে সংসার, ও সংসারের কি বোঝে। একপ্রকার জোর করেই ভর্তি করিয়ে দিল তৃতিকে। আর তৃতি তো মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
রাতে ফেরার সময় কোচিং থেকে দেওয়া বুক লিস্ট অনুযায়ী কিছু বই কিনে আনল আরহাম। পরের দিন থেকেই কোচিং যেতে হবে। আরহামের একটা মাল্টিন্যাসনাল কম্পানিতে জব হয়েছে, স্যালারিও মাসআল্লাহ্ ভাল। কিন্তু তার সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত অফিসে থাকা লাগে। তাই নাহুরাকে বলেছে সে যেন তৃতিকে নিয়ে যাওয়া আসা করে। বাকী পড়াশোনাটা সে দেখবে, প্রত্যেকদিন অফিস থেকে এসে সে তৃতিকে পড়াবে।
খাওয়া- দাওয়ার পর আরহাম বসল তৃতিকে নিয়ে। তৃতি কিছুতেই পড়বে না, সে ঘুমানোর জন্য মুখটা বেজার করে রেখেছে। আরহাম একপ্রকার জোর করে তৃতিকে পড়তে বসালো। আরহাম তৃতিকে একটার পর একটা চ্যাপ্টার দেখিয়ে যাচ্ছে আর তৃতি। সে আরহামের পায়ের উপর মাথা দিয়ে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে গেছে। আরহাম তৃতির দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসল। মেয়েটা সত্যি একেবারে বাচ্চা। মনে হয় কোলে নিয়ে শুধু আদর করতে কিন্তু এখন এতো আবেগ দেখালে কিছুতেই হবে না। তৃতির ভবিষ্যৎটাও দেখতে হবে। এখন এতো আবেগে ভেসে গেলে তৃতি আর নিজের ক্যারিয়ারে কিছুতেই মন দিবে না।
আরহাম তৃতির মুখের দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওকে কোলে তুলে নিল। বিছানায় ভালো করে শুইয়ে দিকে অপর পাশে গিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল। তৃতি ইদানিং একটা কাজ করছে। আরহাম যতোই নিজের দিকে চেপে শুয়ে থাকুক না কেন তৃতি গিয়ে ঠিক আরহামের বুকের উপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকবে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। তৃতিকে শোয়াতেই সে সরে এসে আরহামের বুকে শুয়ে পড়ল। আরহামও তৃতিকে ভালোভাবে বুকে জাড়িয়ে শুয়ে পড়ল।
হোক না একটু অন্যায়। কিন্তু এ অন্যায়েও যে সুখ আছে। তৃতি যখন গুটিসুটি হয়ে বুকে এসে শোয় তখন মনে হয় যেন পৃথিবীর সব শান্তি এই বুকে বিরাজ করছে। আচ্ছা এমনটা কেন হচ্ছে। আরহাম কি তাহলে এই পিচ্চিটাকে ভালেবাসতে শুরু করেছে। আর ভালো না বেসেও কি উপায় আছে, এই বাচ্চাটা ঠিক ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে।
যতোই দিন যাচ্ছে তৃতির পড়াশোনার প্রতি অনীহা ধীরে ধীরে বাড়ছে। নাহুরার সাথে কোচিং এর নাম করে সে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। নাহুরাও এই বাচ্চা মেয়েটার আবদার ফেলতে পারে না। কোচিং থেকে আরহামকে কল করে বলা হয় যে তৃতির কোন ইমপ্রুভমেন্ট নেই। আরহাম কিছুতেই বুঝতে পারছে না কি করবে।
রাতে যখন পড়াতে বসে তখন একেকদিন তার একেক বাহানা থাকে। কিছুতেই মন দিয়ে পড়াতে পারে না। আর কিছুক্ষণ পর ঘুমে তলিয়ে যায়। আরহাম প্রচন্ড ফেডআপ কিন্তু তবুও ধৈর্য ধরতে হবে। একদিন তৃতি ঘুমিয়ে পড়ায় আরহাম তৃতিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল। মাঝ রাতে ঘুমটা হঠাৎ করে ভেঙ্গে গেলে দেখল তৃতি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আরহামের কি হল জানে না। সে তৃতির ঠোট জোরা নিজের ঠোটের মধ্যে নিয়ে নিল। অনেকটা আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে নিল। হাতদুটো গিয়ে স্থির হল তৃতির কোমরে। দুইহাত দিয়ে তৃতিকে আরও একটু উপরে তুলে আনল আরহাম।
তৃতিও আরহামকে কোন বাধা দিল না। যেন সে এমনটাই চাইছিল। তৃতিও আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে যেন সুখের সাগরে ভাসছে সে।আজ কি আরহাম তাহলে তাকে নিজের করে নিবে। ভুলে যাবে কি সব ব্যবধান, ভালবাসবে কি তাকে। আরহাম যাই করুক তৃতি আজ তাকে কোন বাধা দেবে না। এতো তার অধিকার। নেহাত আরহাম ভালো বলে এতোগুলো দিন সময় দিয়েছে। তৃতি একটু পরে ঘটা ঘটনাগুলোর কথা ভেবে ভেবে আরও আবেশে চোখটা চেপে ধরল।
অনেকটা সময় পর আরহামের হুস হলো সে কি করছে। তৃতিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেল। তৃতি পাশ ফিরে শুয়ে ভাবতে লাগল, আচ্ছা উনি এভাবে চলে গেল কেন? উনি আমাকে চাইছেন না। উনি কি আমাকে ইগনোর করছেন? তৃতি আর কিছু ভাবতে পারল না। পাশ ফিরে শুয়ে কাদতে লাগল। আরহামও ওয়াসরুম থেকে এসে এক পাশে শুয়ে পড়ল। সে তৃতির দিকে ফিরেও তাকালো না।
পরের দিন থেকে তৃতির বিহেবিয়ার পুরো পাল্টে গেল। আরহামও তৃতির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। কোন এক অপরাধবোধ যেন ওকে চেপে ধরে আছে। তৃতিকে পড়তে বসালে সে চুপচাপ থাকে কোন কথা বলে না। কিন্তু পড়াশোনাতে আগের মতোই লবডঙ্কা। আরহাম কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই মেয়ের পড়াশোনাতে এতো এলার্জী কেন? এজন্যই কি ওর বাবা এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দিতে রাজী হয়েছিল।
তৃতি এখন তার বেশী সময় অদ্রির সাথে কাটায়। অদ্রির সাথে ওই ও বাচ্চা হয়ে গেছে। সারাদিন দুজনে খুন সুটি করে বেড়ায় আর বাসার সবাই ওদের দেখে হাসে। অদ্রি এখন নহুরার থেকে তৃতির কাছে বেশী থাকে। অদ্রিকে খাওয়ানো, গোসল করানো সব তৃতি করে। এমন কি অদ্রি এখন রাতে ওদের সাথেই ঘুমায়। এতে আরহাম খুব একটা খুশি কিনা বোঝা যায় না। আর তৃতি আরহামের ধার ধারে না। সে নিজের মতো থাকে। এখন পড়তে বসালেও আরহামকে তৃতি আর অদ্রি দুজনকে সামলাতে হয়। যেন ওর দুটো বাচ্চা,,,
বেশ কিছুদিন ধরে আরহামের ফ্রেন্ডরা ওকে ধরছে ওর বউয়ের সাথে মিট করানোর জন্য। ওরা সবাই জানে আরহামের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়েটা একেবারে সাদামাটা আর গ্রামে হওয়ার জন্য কারও সাথে তৃতির পরিচয় করানো হয় নি। আরহাম ওদের বাসায় ডেকেছে কিন্তু ওরা বাসায় আসতে আগ্রহী না বরং কোন রেস্টুরেন্ট মিট করলেই হয়। সবার বউরাই থাকবে একসাথে গেটটুগেদার হয়ে যাবে।
রেস্টুরেন্টের কথা শুনেই আরহামের গলা শুকিয়ে গেছে। তৃতিকে নিয়ে বাইরে যাওয়া মানেই রিস্ক। বাসায় তাও সবাই আছে কোন মতে ম্যানেজ করা যাবে কিন্তু বাইরে গিয়ে যদি আবার সেদিনের মতো করে। কিন্তু বন্ধুদের এতো রিকুয়েষ্টে আরহাম আর না করতে পারলো না। ওর বন্ধুরা ওর বউ দেখার জন্য খুব এক্সসাইটেড কিন্তু আরহাম ভয়ে শেষ,,
তৃতিকে বলাতে সে বিশেষ কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে খুশি হয়েছে নাকি অখুশি তা আরহাম বুঝলে না। তবে আরহামের মনের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় চলছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।
চলবে,,,,
Writer:- জাকিয়া সুলতানা