Leave a message
> কনে দেখা আলোয় পর্ব ২৩
-->

কনে দেখা আলোয় পর্ব ২৩



ফেইক আইডি ওপেন করে 'Kinonjol Inayat' আইডিটাতে সপ্তাহখানেক আগে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে নুহাশ।আর আইডির নামটা ইচ্ছে করেই কিনঞ্জলের ছোটবেলার এক প্রিয় বান্ধবীর নাম দিয়েছে যাতে কিনঞ্জল দেখা মাত্রই রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে নেয়।কিন্তু আজকেও কিনঞ্জলের লক করা আইডিটার সামনে থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে নুহাশকে।কিনঞ্জল রিকুয়েস্টটা আজকেও এক্সেপ্ট করেনি।কিনঞ্জলের বিয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে হলেও কিনঞ্জলের টাইমলাইনে ঘুরে আসত নুহাশ। ভাবতো হয়ত দেশের বাইরে,কোন তুষার রাজ্যে কিংবা সমুদ্রের তীরে স্বামীর গলা জড়িয়ে হাসি মুখে কোন ছবি আপলোড দিবে কিনঞ্জল।আর নুহাশ সেই ছবিটা দেখেই বুকে একরাশ যন্ত্রণা নিয়েও এই ভেবে খুশি হবে তার রেণু সুখেই আছে।তাই কিনঞ্জল যে ওকে ব্লক করে দিয়েছে তা বুঝতে খুব একটা বেশি সময় লাগে নি নুহাশের।
কিন্তু আফসোস!বিয়ের পর থেকে সেই একদিনের ফোনালাপ ব্যাতিত আর কোন খোজ খবর পায়নি কিনঞ্জলের।না ফেসবুকে আর না সামনাসামনি।তবে লুকিয়ে লুকিয়ে দু-একবার কিনঞ্জলের কলেজের সামনে গিয়েছে নুহাশ।দূর থেকেই কিনঞ্জলকে স্বামীর বাইক থেকে আবার মাঝেমাঝে গাড়ি থেকে হাত ধরে নেমে কলেজে ঢুকতে দেখেই চলে এসেছে।
কোন বাজে উদ্দেশ্যে কিংবা কিনঞ্জলের বিবাহিত জীবনে কোনরকম অশান্তি সৃষ্টি করতে নুহাশ কিনঞ্জলকে ফেইক আইডি দিয়ে রিকুয়েষ্ট পাঠায়নি উদ্দেশ্য শুধু কিনঞ্জলের অজান্তেই ওর কাছাকাছি থাকা আর একটু খবরাখবর নেওয়া।কেননা নুহাশ যে তার রেণুকে বড্ড বেশিই ভালোবাসে।হয়ত এতটা ভালো কিনঞ্জলের স্বামীও ওকে কখনো বাসতে পারবে না।কিনঞ্জল যদি সাক্ষরের সাথে সুখী হতে পারে হোক না!সব ভালোবাসার যে পরিপূর্ণতা পেতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই।কিছু ভালোবাসা না হয় প্রেমিক পুরুষের বুক পকেটে নিকোটিনের বাক্সেই আটকে থাকুক।কিনঞ্জলকে নুহাশ বাকিটা জীবন দূর থেকেই ভালোবেসে কাটাতে পারবে।সেই জন্যই নুহাশ ওদের বিচ্ছেদের ধাক্কাটা খানিকটা সামলে ওঠার পর থেকেই আবার পুরোদমে চাকরি খোঁজা শুরু করে দিয়েছিলো আর পাশাপাশি কোচিং,টিউশন তো আছেই।ভাগ্য ভালো কিনা খারাপ বলতে পারবে না তবে এ মাসেই একটা সরকারি কলেজের লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে নুহাশ।স্যালারি সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা প্লাস টিউশন,কোচিং করিয়ে আরও বেশ কিছু টাকা পকেটে আসে নুহাশের।যা দিয়ে ওর গ্রামে থাকা মা,বাবা,ছোট বোনকে খুব সুখেই রাখতে পারবে।তবে আফসোস হচ্ছে এই ভেবে যে চাকরিটা আজ থেকে আর তিন-চার মাস আগে পেলে হয়ত বাবা-মা,ছোটবোনটার পাশাপাশি কিনঞ্জলকে সুখে রাখার দ্বায়িত্বটাও ওর কাধেই থাকতো।এসব খামখেয়ালি চিন্তাভাবনা করতে করতেই নুহাশ রাতের আকাশের পানে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা সিগারেট মুখে পুরলো।দিয়াশলাই এর মাথার আগুনটা সিগারেটে ছুঁয়িয়েই একগাল বিষাক্ত ধোঁয়া মুখে পুরে সাথে সাথেই ধোঁয়াগুলো দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে বের করে দিলো।আজকাল দু-একটা সিগারেটের সঙ্গ বেশ ভালোই লাগে নুহাশের।

রাতে হুট করেই গালে কিছুর আঘাত পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় সাক্ষরের।ধরফরিয়ে আধশোয়া হয়ে উঠে বসতেই খেয়াল করল কিনঞ্জলের শরীরে কম্বল নেই,পরনের কোমর সমান টি-শার্টটাও পেটের উপর উঠে আছে,হাত একটা সাক্ষরের বালিশের পাশে পরে আছে।আর পুরো শরীরটা কম্বলের উপরে দিয়ে রেখেছে।এবার সাক্ষর নিশ্চিত ফাজিলটা ঘুমের মধ্যে আবারও হাত-পা ছুড়াছুঁড়ি করছিলো আর তখনই হয়ত ঘুমের ঘোরে সাক্ষরের গালে চড় বসিয়ে দিয়েছে।মনে মনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে কিনঞ্জলের কাপড় ঠিক করে,শরীরে কম্বল জড়িয়ে দিতে দিতে বিড়বিড়িয়ে বলল,
"মার!আরও মার!ফাজিল মেয়ে কোথাকার।আর কতো ভাবে মারবি?স্বামীকে ঘুমের মধ্যে চড় মারিস।আবার হাটু,পেট বের করেও ঘুমিয়ে থাকিস।আমাকে তো তোর মানুষ বলে মনে হয় না।মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর বউকে আদর না করে আমার জামাকাপড় ঠিক করে দেওয়া লাগে।কপাল নিয়ে জন্মেছি আমি।তোর বিয়ে চাচ্চু একটা খাটাশ লোকের সঙ্গে দিলো না কেনো?তখন আসল মজা বুঝতি,এতদিনে পেটে এক-দেড় মাসের ক্যাসেট বাজতো।"
এসব বলেই নিজেও কম্বল গায়ে দিয়ে শুতেই কিনঞ্জল এসে সাক্ষরকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে সাক্ষরের গায়ে এক পা উঠিয়ে দিলো।এবার সাক্ষর মনে মনে বেশ তেতে উঠলেও মুখে কিছু বলল না।তবে ভেবে রেখেছে আজ যদি কিনঞ্জল ওকে লাথি দেয় তাহলে ওর খবর বানিয়ে ছাড়বে।এর আগেও তিনদিন লাথি মেরেছে ওকে। শুধু কিনঞ্জল লজ্জা পাবে বলে কিছু বলেনি সাক্ষর তবে আজ আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।এরমধ্যেই কিনঞ্জল অনেকবার পাশ উলটে পাল্টে এসে শেষমেষ সাক্ষরের পেটে মাথা রেখে টি-শার্ট ধরে শুয়েছে।এবার সাক্ষর কিনঞ্জলের শোয়ার স্টাইল দেখে হেসেই দিলো।হাসতে হাসতেই টেনে কিনঞ্জলকে নিজের বুকের কাছে এনে জাপটে জড়িয়ে ধরল যাতে আর তিরিংবিরিং না করতে পারে।কপালে ঠোঁটজোড়া ছোঁয়াতেই কিনঞ্জলও নিবিড়ভাবে সাক্ষরের ঘাড়ে মুখ গুজে কাধেই নাকের পানিটুকু ঘষে মুছে ফেলল।ঠান্ডাটা আজকাল বড্ড জালাচ্ছে কিনঞ্জলকে!


(চলবে)


লেখা~ নাজমুন নাহার তৃপ্তি


 

Delivered by FeedBurner

a